বিচ্ছেদ হয়ে গেছে কিন্তু প্রাক্তন সঙ্গীকে ভুলতে পারছেন না!

নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তবুও আপনার প্রাক্তন সঙ্গীর জন্য কষ্ট হচ্ছে? আপনি সবসময় তার সম্পর্কে ভেবেই যাচ্ছেন? সে কিভাবে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতো, কিভাবে হাসতো, তার স্পর্শ এসব ভুলে যেতে পারছেন না? হ্যাঁ, কেউ আপনার জীবন জুড়ে বেশী সময় থাকলে তাকে ভুলে যাওয়া দুই একদিনে সম্ভব নয়।  সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হল যে, কেউ যদি আপনার সাথে প্রতারণা করে তাহলে সেই সব স্মৃতিগুলোকে কবর দেওয়া আরোও কষ্টকর। মানসিকভাবে শান্তিতে থাকতে চাইলে, প্রাক্তনকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

এক্ষেত্রে যেসব কাজ করতে পারেন: 
প্রাক্তন সঙ্গীর ছবি এবং পোস্ট দেখা বন্ধ করুন।  ফেসবুকে তাকে আনফ্রেন্ড করুন।  প্রত্যেকটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলিতে ব্লক করুন।  তার বাড়ির পাশ দিয়ে চলাচল বন্ধ করুন। তার ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয়া বন্ধ করুন।  আপনার ফোনবুক থেকে তার নাম্বার ডিলেট করে দিন।

আপনার বন্ধুদের সাথে তার সম্পর্কে কথা বলা বন্ধ করুন।  আপনার বন্ধুদের গুরুত্ব দিন, সময় দিন।  এগুলো আপনার জন্য কঠিন হতে পারে এবং আপনি ব্যর্থও হতে পারেন। তাই আপনাকে কঠিন চেষ্টা করতে হবে।  কেবল সময়েই আপনাকে ভালো রাখতে পারে।  তাই সেসব কষ্টদায়ক আবেগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য নিজেকে যথেষ্ট সময় দিন।

নিজের মনকে অন্য কিছুতে পূরণ করুন এবং নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। অলস মন আপনাকে বিষন্নতা দেবে।  তাই জিমে যেতে পারেন।  নিজেকে আকর্ষনীয় করুন।  বন্ধুদের কাছে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনার পরামর্শ নিন।  এ কাজগুলো আপনাকে সেসব চিন্তা থেকে দুরে রাখবে।

সব পরিস্থিতিতে নিজেকে শক্ত রাখুন।  আপনি সেই সম্পর্ক থেকে কি অভিজ্ঞতা নিয়েছেন সে সম্পর্কে ভাবুন।  আপনার প্রাক্তন সঙ্গীর উপর ফোকাস করবেন না, নিজেকে ফোকাস করুন।  এই সময়টা আপনার একাকীত্বের সময়।  একাকীত্বের অভিজ্ঞতা নিন।  ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে ভাবুন।   প্রাক্তনের খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করুন।  যদি ভুল করে প্রাক্তন সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েই ফেলেন, তাহলে নিজেকে বকা দিন।

তাড়াহুড়া করে ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন না তো?

হয়তো নতুন নতুন ভালো লাগছে কাউকে। দুজনের আলাপ-পরিচয় হয়েছে, মন বোঝার চেষ্টা চলছে, কয়েকবার বাইরে বেড়াতেও গিয়েছেন। এই ব্যাপারটাকেই সহজ ভাষায় ডেট করা বা ডেটিং বলে। ডেটিং হছে সম্পর্ক শুরু করার আগের ধাপ। জানেন কি, অসংখ্য ভুল সম্পর্ক তৈরি হবার পেছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে ডেটিং-এর সময় তাড়াহুড়া করা। কারণ এতে ভালো করে কিছু ভেবে দেখার আগেই সম্পর্ক হয়ে যায় এবং এক সময়ে সেই সম্পর্কই সর্বনাশ ডেকে আনে। সম্পর্ক হুট করে ভেঙে দেয়ার জিনিস যেমন নয়, তেমনই হুট করে তৈরি করার ব্যাপারও নয়। সম্পর্ক তৈরি করা চাই সময় নিয়ে, আস্তে আস্তে। যে সম্পর্ক যতটা সময় নিয়ে শুরু হবে, তার টিকে থাকার সম্ভাবনাও ততটাই বেশি।

কীভাবে বুঝবেন তাড়াহুড়া হচ্ছে কিনা? জানিয়ে দিচ্ছি কিছু লক্ষণ। এই ১০টি লক্ষণ মিলে গেলে বুঝবেন যে প্রেমের শুরুতে ভীষণ তাড়াহুড়ো করছেন আপনি এবং এখনই তা বন্ধ করা উচিৎ।  নতুবা শেষ হবে আপনার মন ভাঙার মধ্যে দিয়ে!

নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য আপনি প্রেম চান: হয়তো কিছুদিন আগেই অন্য একটা সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটেছে আপনার জীবনে। কিংবা হয়তো একা থাকতে থাকতে বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন আপনি। যদি কেবল এই কারণেই সম্পর্ক করতে চান কারণ আপনি নিঃসঙ্গ, তাহলে বুঝতে হবে তাড়াহুড়া করে ভুল সম্পর্কে জড়াতে চলেছেন অচিরেই।

ঘনঘন মেসেজ আদান-প্রদান চলছে: আপনি একটু পর পরই তাঁকে মেসেজ দিচ্ছেন বা কল করছেন।  তিনি কখনো জবাব দিচ্ছেন, কখনো দিচ্ছেন না। অর্থ একটাই, আগ্রহ আপনার তরফ থেকে অত্যন্ত বেশি। এবং এতটা আগ্রহ দেখালে সেই সম্পর্কটি শেষ পর্যন্ত না টেকার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা প্রত্যেক মানুষেরই খানিকটা প্রাইভেসি প্রয়োজন আছে। দুই পক্ষের মাঝে সমান সমান আগ্রহ থাকলে তবেই সম্পর্ক স্থায়ী হয়।

অল্প দিনেই কিছু আর গোপন নেই : সম্পর্কের শুরুতেই সবকিছু পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেয়া ভালো। কিন্তু সেটার অর্থ এই নয় যে নিজের বা পরিবারের ব্যাপারে সকল তথ্য বা দুর্বলতা প্রকাশ করে দিতে হবে। যেমন, আপনার পিতা কী কাজ করেন সেটা আপনি বলতে পারেন, কিন্তু আপনার পিতার কাছে কী পরিমাণ অর্থ আছে সেটা বলা অনুচিত। সম্পর্কের শুরুতেই এই অন্ধ বিশ্বাস ভালো নয়।

তাঁকে নিয়ে প্রায় সারাদিন কাটাচ্ছেন : সারাদিন তার সাথে চ্যাট বা কথা হচ্ছে, ঘন ঘন দেখা করতে যাচ্ছেন অথবা তার আথেই সারাক্ষণ থাকা হচ্ছে? জেনে নিন, সম্পর্কের শুরুতেই আসলেই খুব তাড়াহুড়া করছেন আপনি। এমন আচরণে সঙ্গীর চোখে নিজের মুল্যও কমিয়ে দিচ্ছেন।

একতরফা ‘ভালবাসি’:   সঙ্গী এখনও আপনাকে কিছু জানান নি, কিন্তু আপনি নিজেই ‘ভালবাসি’ বলে ফেলেছেন এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন।  এতে সঙ্গীর সম্মতি আছে কিনা, সেটা নিয়েও বিশেষ ভাবছেন না আপনি। অবস্থা যদি এমন হয়ে থাকে, নিজের লাগাম টেনে ধরার সময় হয়েছে আপনার।

নেগেটিভ ব্যাপারগুলো আমলে নিচ্ছেন নাঃ সঙ্গীর ভালো না লাগার ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবছেন না আপনি, এসবের সাথে জীবন কাটাতে গেলে কী হবে সেটা নিয়েও ভাবছেন না। সমস্ত ভালো না লাগার ব্যাপারগুলো দেখেও না দেখার ভান করছেন? জেনে রাখুন, এভাবে সম্পর্ক তৈরি হলে পরিণতি হবে খুব খারাপ।

বিয়ের পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছেনঃ সম্পর্ক এখনও শুরুও হয়নি, আপনি ভাবছেন কীভাবে বিয়েতে তাঁকে রাজি করানো যায়। কীভাবে পরিবারকে রাজি করাবেন, বিয়ে কীভাবে হবে, সন্তান কয়জন নেবেন ইত্যাদি ভাবতে শুরু করেছেন। এমনকি বন্ধুদেরকেও এসব বলে ফেলেছেন আপনি, বিভোর আছেন সুখ স্বপ্নে। ব্যাপার যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়ে গেছে নিশ্চিত।

যত দ্রুত সম্ভব যৌন সম্পর্ক চানঃ আপনার মনে হয় যত দ্রুত সম্ভব যৌন সম্পর্ক করে ফেলা উচিত। শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেলেই সঙ্গী আর আপনাকে ছেড়ে যাবেন না, এমনটাই মনে করেন আপনি। সত্যি কি তাই? তাহলে অবশ্যই সম্পর্কের শুরুতে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া করছেন আপনি।

তার বাসায় যাবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেনঃ প্রেম এখনও শুরু হয়নি, কিন্তু আপনি তার বাসায় যেতে চান। তার পরিবারের সাথে পরিচিত হতে চান এবং এই কারণে তাঁকে চাপও দিচ্ছেন। মনে হতে পারে, এতে ভুল কী আছে? তাহলে জেনে রাখুন, পরিবারের কাছে আপনাকে নেয়ার মতন হলে তিনি নিজেই নেবেন। এটা সেই সম্মান, যা জোর করে আদায় করার মাঝে কোন সার্থকতা নেই।

তাঁকে বদলে ফেলার জন্য চাপ দিচ্ছেনঃ আপনি তাঁকে বদলে ফেলতে চান এখনই। হয়তো সিগারেট ছেড়ে দিতে বলছেন, কিংবা বাঁধা দিচ্ছেন পছন্দ মত পোশাক পরিধানে। তার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কথা বলছেন, ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন। কাউকে চাপ দিয়ে বদল করে সম্পর্কের নাম ভালোবাসা নয়। বরং কেউ আপনার জন্য নিজ থেকে নিজেকে সংশোধন করাই ভালোবাসা। আর সেটার জন্য প্রয়োজন সময়।

নতুন সম্পর্কের শুরুতে তাড়াহুড়া আপনাকে আবারও মন ভাঙার দিকেই নিয়ে যাবে। তাই ধৈর্য রাখুন। ভালোবাসা যদি আসার থাকে, সেটা ঠিক আসবে।  সঠিক সময়ে সঠিক সম্পর্কই সুখ আনবে, তাড়াহুড়া নয়।   উৎস –প্রিয়.কম

সম্পর্ক রক্ষায় বৈজ্ঞানিক উপায়

পারিবারিকভাবে হোক বা প্রেম করে- উভয় ক্ষেত্রেই ডিভোর্সের পরিমাণ আশঙ্কাজনক।  রেস্টুরেন্টে বসে কয়েক ঘণ্টার প্রেমালাপ বা সপ্তাহে দু’দিন ঘোরাঘুরি করা আর বিয়ের পর এক ছাদের নিচে থাকার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যতই পূর্ব পরিচিত হোক না কেন, বিয়ের পরই একজন মানুষকে গভীরভাবে চেনা যায়।  কেউই শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারছে না যে, কোনো দম্পতির কখনই ডিভোর্স হবে না।  যেকোনো সময় যে কারো ডিভোর্স হতে পারে, জনমনে এ ধরনের একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  ২০১৫ সালে শুধুমাত্র ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনেই ডিভোর্স কার্যকর হয়েছে মোট ৩,৫৩০টি!

দাম্পত্য জীবনে যারা একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, সঙ্গীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তারা সুখী হতে পারে না। অন্যদিকে পারিবারিকভাবে হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রে দু’জন অপরিচিত মানুষের স্বভাবগত পার্থক্যের পাশাপাশি পূর্বের প্রেমের সম্পর্ক, সত্য গোপন করা, সন্দেহ প্রবণতা, বোঝাপড়ার অভাব, অনীহা কিংবা ভয়ের কারণে শারীরিক সম্পর্ক উপভোগ না করা বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।কারণগুলো জানা থাকলে ডিভোর্সের দিকে ধীরে ধীরে এগোনো দম্পতিরা চাইলে হয়তো তাদের সম্পর্কটা রক্ষা করতে পারবেন।

সঠিক সময়ে বিয়ে করা: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ২৭-৩০ বছরের মধ্যে বিয়ে করেন তাদের দাম্পত্য জীবন তুলনামূলক বেশি মজবুত ও স্থায়ী হয়ে থাকে। অন্যদিকে যারা টিনএজ (১৩-১৯ বছর) বা ৩২+ বয়সে বিয়ে করে তাদের ডিভোর্সের হার বেশি। বিশেষ করে কম বয়সে বিবাহ বন্ধনে যারা আবদ্ধ হয় তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বয়সে বেশি ফারাক থাকলে সেটাও ডিভোর্সের দিকে ঠেলে দেয়। যেসব দম্পতির বয়সের পার্থক্য ১ বছর তাদের ডিভোর্সের হার ৩ শতাংশ। বয়সের পার্থক্যটা পাঁচ বছরে দাঁড়ালে ১৮ শতাংশ এবং ১০ বছর হলে ৩৯ শতাংশ দম্পতির বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে থাকে।

পেশা গত সচ্চলতা :  ১৯৭৫ সালের পরে হওয়া বিয়েগুলোর উপর গবেষণা করে অ্যালেকজান্ড্রা কিলওয়্যাল্ড দেখেছেন, যাদের স্বামী ফুল-টাইম কাজ করে তাদের ডিভোর্সের হার ২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে যাদের স্বামী ফুল-টাইম কাজ করে না তাদের ডিভোর্সের হার ৩.৩ শতাংশ।শুনতে খারাপ লাগলেও গবেষণা এটাই বলছে যে, কলেজ গ্রাজুয়েট দম্পতিদের চেয়ে হাই স্কুল না পেরোনো দম্পতিদের মাঝে ডিভোর্সের হারটা প্রায় দ্বিগুণ। কারণ স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তিদের উপার্জন কম হওয়ায় তাদের জীবনযাত্রা বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। আর যেখানে পদে পদে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, সেখানে সাধারণত ভালোবাসাময় সুখী দাম্পত্য জীবন কাটানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। ফলাফল বিবাহ-বিচ্ছেদ।

নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা: ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষক গটম্যান ও অন্যান্য গবেষকরা ‘ওরাল হিস্টোরি ইন্টারভিউ’ নামের একটি সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেন। সেখানে দম্পতিদেরকে তাদের দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বলতে দেয়া হয়। দম্পতিদের কথা পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা ভবিষ্যদ্বাবাণী দিতে সক্ষম হয়েছিলেন কোন কোন দম্পতি ডিভোর্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  ২০০০ সালে জার্নাল অব ফ্যামেলি সাইকোলজি-তে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। ৯৫ জন নবদম্পতির ‘ওরাল হিস্টোরি ইন্টারভিউ’ নিয়ে সেগুলো খতিয়ে দেখা হয়েছে কোন কোন দম্পতির বৈবাহিক বন্ধন কতটা মজবুত কিংবা দুর্বল।

সঙ্গীর প্রতি নেতিবাচক ভাব প্রদর্শন:  মনোবিজ্ঞানী জন গটম্যান ডিভোর্সের পেছনে চারটি প্রধান কারণকে দায়ী করেছেন। যে দম্পতিদের মাঝে এই চারটি বিষয় উপস্থিত থাকে, তাদের ডিভোর্স হওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক।

১. সঙ্গীকে ছোট করে দেখা, অবজ্ঞা করা। ২. সঙ্গীর স্বভাব-চরিত্রের ব্যাপারে লাগাতার সমালোচনা করা।৩. দাম্পত্য জীবনের কোনো সংকটে বা কঠিন পরিস্থিতে নিজেকে সবসময় নির্যাতিত কিংবা ভুক্তভোগী হিসেবে উপস্থাপন করা।৪. একে অন্যের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়া।

বাড়াবাড়ি রকমের রোমান্টিকতা:  বৈবাহিক জীবনের শুরুতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটু বাড়তি উচ্ছ্বাস, আগ্রহ কাজ করে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন সমস্যা সৃষ্টি করে। মনোবিজ্ঞানী টেড হিউসটন ১৬৮ জন দম্পতিকে তাদের বিয়ের পর থেকে টানা ১৩ বছর নজরে রেখেছিলেন। বিভিন্ন সময় দম্পতিদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে ইন্টারপার্সনাল রিলেশনস অ্যান্ড গ্রুপ প্রসেস জার্নালে একটি পেপার প্রকাশ করেন। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য যে, যাদের দাম্পত্য জীবনের শুরুতে তুলনামূলক কম ‘হলিউড রোমান্স’ থাকে, তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক মজবুত হয়।”

বাদানুবাদে নীরবতা : ২০১৩ সালে জার্নাল অব ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামেলিতে একটি লেখা প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, সমস্যার সমাধান না করে এ ধরনের নীরবতা পালন বা কথা বলতে না চাওয়ার স্বভাবটা দাম্পত্য জীবনকে ডিভোর্সের দিকে ঠেলে দেয়। প্রায় সাড়ে ৩৫০ নব-দম্পতির সাক্ষাৎকারের ‍উপর ভিত্তি করে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৪ সালে কমিউনিকেশন মনোগ্রাফ জার্নালে আরেকটি লেখা প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যেসব দম্পতির একজন কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেয়ে বিনিময়ে সঙ্গীর কাছ থেকে নীরবতা পায়, তারা দাম্পত্য জীবনে খুব একটা সুখী নয়।

গবেষক পল শ্রড বলেন, স্বামী-স্ত্রী দু’জনই একে অপরকে সৃষ্ট সমস্যার জন্য একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে নয়, সমস্যার সমাধানের জন্য কে কতটা অবদান রাখার চেষ্টা করছে সেদিকে নজর দেয়া উচিত। পরস্পরের যদি সম্মান ও শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ন রেখে দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন ঝামেলা মিটিয়ে ফেলার জন্য খোলামেলাভাবে কথা বলা জরুরি।

সূত্র: সংগৃহিত

গোপন কথা কাকে বলবেন, আর কাকে বলবেন না

একসঙ্গে বাস করলে কারো না কারো সাথে বন্ধুত্ব করতেই হয়।  আর বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত বিশ্বাস।  কিন্তু সেই বিশ্বাসের মর্যাদা কি সবাই দেয়? তাই বলে কী কাউকে বিশ্বাস করবেন না?  কিন্তু কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতেই হয়।  বিশ্বাস করে ভাগাভাগি করে নিতে হয় নিজের কিছু একান্ত গোপন কথা।  এ কারণেই কাউকে না কাউকে খুঁজেন নিজের মনের কথা বলার জন্য।  কিন্তু আজকাল কাউকে বিশ্বাস করে কোনাে কথা বলা মানেই যেচে বিপদ ডেকে আনা।

আজকাল মানুষ অনেক বেশি স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক।  সকলেই যেন আরেকজনের দোষ-ত্রুটি আর দুর্বলতা খুঁজে বেড়ান।  আর তাই কারো সাথে নিজের গোপন কথা ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকাটাই শ্রেয়।  অন্তত ছয়টি শর্ত মনে রেখে গোপন কথা বলুন।

এক— প্রথমেই চেষ্টা করুন গোপন কথাটা কেবল নিজের কাছেই রাখার।  কেননা একটা কথা মনে রাখবেন, যে কথা আপনি নিজে গোপন রাখতে পারেন না। সে কথা অন্যের কাছে বলে গোপন রাখতে বললে তিনি তা করবেন কীভাবে। তাই নিজের গোপন কথা চাইলে আপনার নোটবুকেও লিখে রাখতে পারেন।

দুই— কিন্তু একান্তই যদি কাউকে গোপন কথা বলতেই হয়, তাহলে খুব আপন কাউকে বলুন।  যে আপনার কাছের মানুষ।  খুব কাছের মানুষ।  যাকে আপনি বিশ্বাস করেন। যার সাথে আপনার মতের বেশ মিল এবং ঝগড়া হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।  যেন আপনার সাথে ঝগড়া হলে আপনার গোপন কথা ফাঁস করে না দেয়।  যত আপন মানুষই হোক, সম্পর্ক কখনো না কখনো বদলে যেতেই পারে।  তাই এমন কাউকে বেছে নিন, যিনি কখনো আপনার দুর্বলতার সুযোগ নেন নি বা নেবেন না।

তিন— আপনার কি এমন কোন আপনজন বা বন্ধু আছে, যে আপনার সুখ-দুঃখের সাথী। বিপদের সময় পাশে থাকেন, কখনো আপনার প্রতি যার ভালোবাসায় কোনো খাদ দেখতে পান নি, তার ওপরে আস্থা রাখুন।  কারণ বিপদেই প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়।  সুখের পায়রা টাইপের বন্ধুকে কখনো নিজের গোপন কথা বলবেন না ।

চার— একটু খেয়াল করে দেখুন, যাকে বিশ্বাস করে নিজের গোপন কথা বলতে চাচ্ছেন, তিনি মানুষটা কেমন? তিনি কি অন্যের গোপন কথা এসে আপনাকে বলেন? আর বলেন তোমাকেই বললাম আর কাউকে বলো না।  তাহলে জেনে রাখুন, এই মানুষটি আপনার গোপন কথাও আরেকজনকে বলে বেড়াবে। এবং একই কথা বলবে। আর তাই, যত আপনই হোক না কেন এমন চরিত্রের মানুষকে নিজের ব্যক্তিগত কথা ভুলেও কখনই বলবেন না।  এরা খুব ভয়ঙ্কর। এদের কাজই অন্যের কথা শোনা ও সবাইকে বলে বেড়ানো। এদের থেকে সাবধান।

পাঁচ— এমন কাউকে নিজের গোপন কথা জানাবেন না, যার সাথে আপনার কোনো না কোনো স্বার্থ জড়িত।  স্বার্থে কখনো আঘাত লাগলে তিনি যেই হোক না কেন সেই তথ্য আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন।

ছয়— কখনো কারো ওপর রাগ বা অভিমান করে এমন কিছু বলে বসবেন না, যেটা পরে আপনার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  রাগের মাথায় কারো সাথে নিজের গোপন প্রসঙ্গ আলোচনা না করাই ভালো।  কারণ রাগের মাথায় আমরা এমন অনেক কিছু বলে ফেলি যেটা হয়তো পুরোপুরি সঠিক নয়।

যে কারণে কিছু বিয়ে থেকে ভালবাসা হারিয়ে যায়

“প্রেম ধরে রাখার চেয়ে প্রেমে পড়া অনেক বেশি সহজ বলে মনে হয়।” —ড. ক্যারেন কাইজার।  ভালবাসা নেই এমন বিয়ের সংখ্যা যে খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে, তা দেখে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ বিয়ে হল এক জটিল মানব সম্পর্ক আর অনেকেই কোনরকম প্রস্তুতি না নিয়েই বিয়ে করে ফেলে।  ড. ডিন এস. ইডেল বলেন, “ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আমরা যে গাড়ি চালাতে জানি, তা কিছুটা হলেও দেখাতে হয় কিন্তু বিয়ের লাইসেন্স শুধু নাম সই করলেই পাওয়া যায়।”

এই কারণেই, অনেক বিয়ে সফল ও সুখী হলেও বেশ কিছু সংখ্যক বিয়েতে সমস্যা দেখা দেয়। বর বা কনে অথবা দুজনেই অনেক আশা নিয়ে বিয়ে করে কিন্তু এই সম্পর্ককে চিরদিন টিকিয়ে রাখার জন্য যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দরকার, তা তাদের থাকে না।

ড. হ্যারি রিস বলেন, “লোকেরা যখন প্রথমবারের মতো ঘনিষ্ঠ হয় তখন তারা পরস্পরের কাছ থেকে মনে অনেক জোর পায়।” তারা প্রত্যেকে মনে করে যে তাদের সঙ্গীই হল “পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি, যে তাদের মতো করেই সমস্ত কিছু দেখে থাকে। কিন্তু, এইরকম অনুভূতি কখনও কখনও হারিয়ে যায় আর তখন তা বিয়ের অনেক ক্ষতি করতে পারে।” তবে, খুশির বিষয় হল যে অনেক বিয়েতেই এমনটা হয় না। কিন্তু আসুন আমরা সংক্ষেপে কয়েকটা বিষয় দেখি, যে কারণে কিছু বিয়ে থেকে ভালবাসা হারিয়ে যায়।

স্বপ্নভঙ্গ —“আমি এইরকমটা চাইনি” অনেক সিনেমা, বই এবং জনপ্রিয় গানগুলোতে ভালবাসার এক কাল্পনিক ছবি আঁকা হয়। তাই, একটা ছেলে ও মেয়ে যখন বিয়ে করার চিন্তা নিয়ে মেলামেশা করে তখন তারা মনে করে তাদের স্বপ্ন বুঝি সত্যি হচ্ছে কিন্তু বিয়ের কিছু বছর পর বুঝতে পারে যে তারা এমন স্বপ্ন দেখেছে, যা কখনোই সত্যি হবার নয়! বিয়ে যদি রূপকথার প্রেমকাহিনীর মতো তাদের স্বপ্নকে সত্যি না করে, তাহলে সফল হতে পারে এমন এক বিয়েকেও তখন সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে মনে হতে পারে।  অবশ্য, বিয়েতে কিছু চাওয়াপাওয়া থাকা যুক্তিসংগত। যেমন স্বামী বা স্ত্রীর কাছ থেকে ভালবাসা, মনোযোগ ও সমর্থন চাওয়া ভুল নয়। কিন্তু, দেখা যায় যে এই চাওয়াগুলোও অনেক সময় পূরণ হয় না।

অমিল —“কোন কিছুতেই আমাদের মিল নেই” সাধারণত বিয়ের পর স্বামীস্ত্রীদের বুঝতে সময় লাগে না যে তাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের অতটা মিল নেই যতটা আছে বলে বিয়ের আগে মেলামেশা করার সময় তাদের মনে হয়েছিল।

ড. নিনা এস. ফিল্ডস লেখেন, “বিয়ে স্বামীস্ত্রীদের সেই সমস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রকাশ করে দেয়, যা বিয়ের আগে তারা নিজেরাও জানত না।” তাই, বিয়ের পরে কিছু দম্পতি হয়তো বলতে পারে যে তাদের মধ্যে একেবারেই কোন মিল নেই। ড. আ্যরোন টি. বেক বলেন, “যদিও কিছু দম্পতির রুচি ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে সামান্য মিল খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু বেশির ভাগ লোকেরাই এমন কাউকে বিয়ে করে যাদের রীতিনীতি, অভ্যাস এবং আচরণ তাদের চেয়ে একেবারে আলাদা।” আর অনেক দম্পতিরাই জানে না যে এই অমিলগুলোকে কীভাবে দূর করা যায়।

ঝগড়া-বিবাদ—“আমরা সবসময় ঝগড়া করি” স্বামীস্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল হবেই।  কিন্তু প্রশ্ন হল যে, কীভাবে তা মিটমাট করা যায়? ড. ড্যানিয়েল গোলম্যান লেখেন, ‘এক আদর্শ বিয়েতে স্বামীস্ত্রীরা একে অন্যের দোষত্রুটিগুলো খোলাখুলিভাবে বলতে পারে। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় যে, তারা প্রচণ্ড রেগে গিয়ে খুবই খারাপভাবে অভিযোগ করে, যা তাদের জীবনসাথির চরিত্রকে ছোট করে।” যখন এইরকমটা হয়, তখন কথাবার্তা যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠে যেখানে নিজ নিজ মতামতকে একরোখাভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং ভাষা যোগাযোগের মাধ্যম না হয়ে বরং অস্ত্র হয়ে ওঠে।  বিশেষজ্ঞদের একটা দল বলেন: “নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এমন ঝগড়া-বিবাদের একটা খারাপ দিক হল যে, সেখানে স্বামীস্ত্রী এমন কিছু বলে ফেলে, যা তাদের বিয়ের ভিতকে নড়বড়ে করে দেয়।”

উদাসীনতা—“আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি” বলা হয়ে থাকে যে ভালবাসার বিপরীত শব্দ ঘৃণা নয় বরং উদাসীনতা।

সত্যি বলতে কী, ঝগড়া-বিবাদের মতো উদাসীনতাও বিয়েকে ভেঙে দিতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল যে, কিছু স্বামীস্ত্রীরা ভালবাসা নেই এমন বিবাহিত জীবনের সঙ্গে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে তারা এই অবস্থা পরিবর্তনের সমস্ত আশাই ছেড়ে দিয়েছে।

প্রেমের অনুভূতিতে শারীরিক প্রতিক্রিয়া

‘প্রেম যে কাঁঠালের আঠা, লাগলে পরে ছাড়ে না।’ সত্যি প্রেমের অনুভূতি এক অদ্ভুত অনুভূতি।  প্রেমে পড়লেও জ্বালা আবার এর স্বাদ না নিলেও যেন মন ভরে না! আর এ কারণে জীবনে একবারের মতো হলেও প্রেমে পড়েনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া আসলেই মুশকিল।  প্রেমে পড়ার অসাধারণ এই অনুভূতিটা সব মানুষই পেতে চায়।  পৃথিবীর তাবড় তাবড় স্নায়ুচিকিৎসকরা এই নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করে চলেছেন।  খুঁজে পেয়েছেন আশ্চর্য কিছু তথ্য।

মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যায়:  একথা সত্যি যে মানুষ প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন আসে। এবং পরিবর্তন আসে বলেই উলটে যায় চেনা পৃথিবী। চূড়ান্ত যুক্তিবাদী ব্যক্তিও অসঙ্গত আচরণ করতে পারেন। গম্ভীর ব্যক্তির ঠোঁটেও ফুটে উঠে হাসি। ব্যবহারের দিক থেকেও একজন মানুষ আমূল পালটে যেতে পারেন। হয়ে উঠতে পারে ব্যাকুল, ভীত এবং অস্থির। সদ্য প্রেমে পড়েছেন এমন ব্যক্তির মস্তিষ্ক স্ক্যান করে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন নিউরোলজিস্টরা। জানা যায়, প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কের সামনের দিকের অংশ, অর্থাৎ ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়।এই অংশটি মানুষের বোধ-বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলত, প্রেমে পড়লে প্রথমেই মানুষ বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়। ঠিক-ভুল বিচারবোধ হারায়। আরও বেশি হারায় যদি, প্রেমিক/প্রেমিকার ফটো দেখানো হয়। ক্ষণিকের জন্য মানুষের ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

লন্ডন ইউনিভার্সিটি অব কলেজের নিউরো-এসথেটিক্সের প্রফেসর সেমির জেকির মতে, ‘ভালোবাসার মানুষের ফটো দেখালে মানুষের মস্তিষ্কের বেশকিছু অংশ যেমন অ্যাকটিভ হয় ওঠে, ঠিক তেমনই ক্ষণিকের জন্য মানুষের ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এমনটা আরও বেশি হতে পারে হঠাৎ কোনও মানুষের প্রেমে পড়লে। ব্যক্তি সৎ, না অসৎ, কেমন মানুষ, আর বিচার করার মতো অবস্থা থাকে না। তাই অনেক সময় ভুল ব্যক্তির প্রেমে পড়ে মানুষ। তারপর সারাজীবন অশান্তি ভোগ করে। মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, মস্তিষ্কের যে অংশগুলি ভয় ও নেতিবাচকতা নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলিও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যে কারণে প্রেমে পড়লে মানুষ অনেকবেশি হাসিখুশি হয়ে ওঠে। নেতিবাচক ধারণাগুলি পুরোপুরিভাবে মুছে যায় মন থেকে।

শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে: বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এক ধরণের হরমোন আমাদের মনে উত্তেজনা ছড়ায় আর তার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ওইসব ঘটে৷ প্রেমে পড়লে যে হরমোনের জন্য মন এত উতলা হয়-সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক: প্রেমে পড়লে দেহ-মনে যেসব প্রতিক্রিয়া হয় তার জন্য দায়ী টেস্টোস্টেরন নামের এক হরমোন৷ কেউ বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি আকৃষ্ট হলে টেস্টোস্টেরন বাড়তে শুরু করে৷ প্রেমের ওই প্রাথমিক ধাপেই দেখা দেয় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাত কাঁপার মতো উপসর্গগুলো৷ দেখা গেছে, প্রেমে পড়া মানুষের দেহে অন্য সব মানুষের তুলনায় টেস্টোস্টেরন অনেক বেশি থাকে।  প্রেমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে নেমে পড়ে ডোপামিন৷ এই হরমোন-এর অন্য নাম, ‘সুখের হরমোন’৷ শুধু প্রেমে পড়লেই যে এই হরমোন ক্রিয়াশীল হয় তা কিন্তু নয়, কোকেন বা সিগারেটের নেশা করলেও ডোপামিন উজ্জীবিত হয় ৷ এ কারণেই অনেকে বলেন, প্রেমে পড়া আর নেশা করা একই। সেরোটোনিন নামে এক ধরণের হরমোন আছে যা আমাদের মনের আনন্দ আর আবেগকে স্থির রাখে ৷ প্রেমে পড়লে সেরোটোনিন কমে যায় ৷ ফলে প্রেমিক-প্রেমিকার আবেগ সংবরণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ৷ তারা তখন ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারেনা ৷

ক্ষুধা কমে যায়: প্রেমের যে পর্যায়ে বুক ধড়ফড় করে, হাত ঘামায় তখন অ্যাড্রেনালিন নামের একটা হরমোনও খুব বেড়ে যায় ৷ এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষুধা কমে যায়৷ কম খাওয়া-দাওয়া করার ফলে শরীর দ্রুত ভেঙে পড়তে থাকে ৷ প্রেমে পড়ার তিন-চার মাস পর সাধারণত সম্পর্কে একটা স্থিতি আসে ৷ তখন শুরু হয় আরেক হরমোন অকসিটোসিনের কাজ ৷ এই হরমোনের কারণে দু-জনের সম্পর্কটা আরেও ঘনিষ্ঠ হয় ৷ প্রেমিক-প্রেমিকা যখন চুম্বন করেন, তখনও দুজনের শরীরে অকসিটোসিন তৈরি হয় ৷ আর এভাবেই দুজন দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের পথে এগিয়ে যান ৷

ঘুম কম হয়: প্রেমে পড়লে কমপক্ষে একঘণ্টা কমে যায় রাতের ঘুম। একটি সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে এই তথ্য। জার্নাল অফ অ্যাডোলেসেন্ট হেলথে প্রকাশিত হয়েছিল গবেষণাটি। আর তার কারণ হল, রাতে ঘুমাতে গেলেই প্রিয় মানুষটির কথা সবচাইতে বেশি মনে পড়তে থাকে এবং শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। ফলে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে না শরীর এবং ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়।

শরীরের নানান ব্যথা কমে যায়:  স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ মেডিসিনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরের নানান ধরনের ব্যাথা সেরে যায়। ভালোবাসা মস্তিষ্কের নিউরাল রিসেপটরের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ব্যাথার অনুভূতি কমিয়ে দেয়। তাই ভালোবাসাকে বিজ্ঞানীরা ব্যথার ওষুধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ভুলোমন: প্রেমে পড়লে সব কিছু ভুলে যাওয়া শুরু হয়৷ আর তার জন্য দায়ী হল অক্সিটসিন হরমোন। প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটসিন হরমোন উৎপন্ন হয়, যা স্মৃতিশক্তি কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। আর তাই মানুষ কিছুটা অন্যমনষ্ক এবং ভুলোমনা হয়ে যায় প্রেমে পড়লে। স্বাদ বেশি লাগে: প্রেমে পড়লে নাকি খাবারের স্বাদও বেশি লাগে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেওয়া হয়েছে এমন তথ্য। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নতুন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে তাদের কাছে সব খাবারের স্বাদই অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই লাগছে।  সূত্র: সংগ্রহিত

দাম্পত্য সম্পর্কের অশনি সংকেত গুলো জেনে রাখুন

বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ দুজন মানুষের মাঝে খুব সহজেই ফাটলের সৃষ্টি করতে পারে কিছু কিছু বিষয়। এর মাঝে একটি হলো শারীরিক সম্পর্ক। আপাতদৃষ্টিতে এ বিষয়টি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও সেক্স থেরাপিস্টরা জানিয়েছেন, সুস্থ যৌন জীবন বিবাহিত জীবনের জন্য খুবই জরুরি।  তারা এমন কিছু লক্ষণের কথা বলেছেন, যা দম্পতির মাঝে দেখা দিলে বুঝতে হবে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।  এ লক্ষণগুলো গুলোকে বিশেষজ্ঞগন দাম্পত্য সম্পর্কের অশনি সংকেত হিসাবে চিহ্নিত করেন —

দম্পতির মাঝে শারীরিক সম্পর্ক নেই: সেক্স থেরাপিস্ট সারি কুপার জানিয়েছেন, বছরে ১০ বারের কম যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ হন এমন সম্পর্ককে ‘সেক্সলেস রিলেশনশিপ’ বলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে গভীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অনেক সময় তারা শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কোনো কথাই বলেন না। ফলে তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়তেই থাকে। একটা সময়ে সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় থাকে না।

দুজনের মাঝে একজন কোনো আকর্ষণ বোধ করেন না: সঙ্গী তার প্রতি কোনো আকর্ষণ বোধ করছেন না—এমন ভাবনাটা সাধারণত সম্পর্ক তেতো করে তুলতে যথেষ্ট, জানিয়েছেন সেক্স থেরাপিস্ট লরি ওয়াটসন। বিশেষ করে নারীর জন্য এ ব্যাপারটি বেশি প্রযোজ্য।

সম্পর্কে অবিশ্বাসের সূচনা : পরকীয়া বর্তমানে অপরিচিত কোনো বিষয় নয়। অনেক সময়ই পরকীয়া করতে গিয়ে সঙ্গীর হাতে ধরা পড়েন অনেকে। এতে বিশ্বাস ভেঙে যায় এবং সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়। অনেক সময়ে যৌন জীবনে অসন্তুষ্টি থেকেই পরকীয়ার পথে পা বাড়ান বিবাহিত মানুষ। এদিক থেকে বোঝাপড়ার অভাব মেটাতে পারলেই কেবল অবিশ্বাস দূর করা সম্ভব হয়।

সম্পর্কের মাঝে কোনো শারীরিক আকর্ষণ নেই: লম্বা সময় একত্রে জীবন কাটানোর জন্যই মানুষ বিয়ে করে। এ ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি আকর্ষণবোধ না করলে সম্পর্ক টেকে না, বলেন সেক্স থেরাপিস্ট মৌসুমি ঘোষ।

অসুস্থতার কারণে দূরত্ব তৈরি হয় : যৌন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কারণে দম্পতির মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। এ ছাড়া মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার কারণেও দূরত্ব তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের সহায়তা ছাড়াও দম্পতিদের পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকা জরুরি। নয়তো এই অসুস্থতার অজুহাতে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে।  সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

সঙ্গীর বয়স বেশী হলে কি কি সমস্যা হতে পারে

স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্কটি শুধু সম্পর্কের বেড়াজালের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, সব কিছু ছাপিয়ে জীবনের অংশ হয়ে উঠে তা।  অন্য সব সম্পর্কের মত জন্মসুত্রে পাওয়া নয় এই সম্পর্ক।  অনেক জেনে বুঝে, বিচার করে তবেই আপন করে নেয়া হয় কাউকে।  তাই অন্য যেকোনো মানুষের থেকে বেশি আপন হয় এই মানুষটি।  শ্রদ্ধা ও ভালবাসার মেলবন্ধন ঘটে এই সম্পর্কে।

স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে অনেকটাই উদার হয়েছে আমাদের সমাজ। । তারপরও কিছু ব্যাপার মনোভব এখনও রয়ে গেছে আগের মতই, যা হয়তো সেভাবে মেনে নেবার প্রবনতা গড়ে উঠেনি।  যেমন আপনার সঙ্গিনী যদি আপনার থেকে বয়সে বড় হন তবে মানুষ আর কিছু না হোক অন্তত একবার হলেও ঘুরে আপনার দিকে তাকাবে।

আসলে বিধিনিষেধ এসেছে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কিছু “মেডিক্যাল কন্ডিশনও” প্রভাব ফেলে এই সম্পর্কের উপরে।সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিবে পারে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রে।  আসুন জেনে নিই এমন কিছু সমস্যার কথা, যখন সঙ্গিনী বা স্ত্রী হন বয়সে বড়।

লোকের নিন্দা :
স্ত্রী বা প্রেমিকা যখন বয়সে বড় হন তখন প্রথমেই যে ব্যাপারটির মুখোমুখি হতে হয় লোকজনের নিন্দা। প্রেমিকযুগল বা স্বামী-স্ত্রীর দিকে বাঁকা চোখে তাকান অনেকেই। হতে হয় অবজ্ঞার স্বীকার, হেয় করে অনেকেই। অনেকে পুরুষটিকে এমন কথাও বলে যে, সে বয়সে বড় নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে বা বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করেছে।

যে যাই বলুক না কেন, এটা মনে রাখবেন যে আপনাদের ভালোবাসাই আপনাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আর এই শক্তি পরাস্ত করে দিতে পারে সব কিছুকেই। তাই লোকের কথায় কান না দিয়ে একে অপরের প্রতি আস্থা রাখুন।

বন্ধুবান্ধবের কটুক্তি :
সবচেয়ে বেশি অসহায় লাগে যখন এমন পরিস্থিতিতে বন্ধুরাও পাশে থাকে না। বরং তারাও করে চলে কটুক্তি। স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য নিয়ে অনেকে আড়ালে, এমনকি সামনাসামনিও ঠাট্টা করে থাকে। বন্ধুদের এমন আচরণ মনে আঘাত হানার জন্য যথেষ্ট।

এমন বন্ধুদের এড়িয়ে চলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ তারা আপনাদের সম্পর্কে অশান্তি সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই করবে না। বরং যারা আপনাদের সমস্যাগুলো বুঝবে, পাশে দাঁড়াবে বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য তাদেরকেই বেছে নিন।

পরিবারের অসহযোগিতা :
সঙ্গিনীর বেশি বয়স নিয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি থাকে পরিবারের। পরিবারের সদস্যরা এ সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো ধরনের সহযোগিতাই করেন না। খুব কম পরিবারই আছে যারা এমন বিয়ে সহজেই মেনে নেয়। আমাদের সমাজের পরিবারগুলো এখনো গতানুগতিক সম্পর্কের বাইরে বেরোতে পারেনি। তাই পরিবারের সদস্যরা যে সমস্যা করবে, এটাই স্বাভাবিক।

পরিবার যে সহযোগিতা করবে না, বিয়ের সময়েই এটা মাথায় রাখুন। তাহলে কষ্ট কম পাবেন। পরিবারে চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনারা একে অপরকে কতখানি চান। এক সময় না এক সময় পরিবার মেনে নেবেই। পরে ধীরে ধীরে পারিবারিক সব সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।

চেহারায় বয়সের ছাপ :
স্ত্রী যখন স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হবেন, তখন স্বাভাবিক ভাবেই স্ত্রীর চেহারায় বয়সের ছাপ আগে পড়বে। অনেকেই এটা নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন। অনেক পুরুষই তখন স্ত্রীকে লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সংকোচবোধ করেন। আবার অনেক নারী স্বামীর সাথে কোথাও যেতে চান না। ফলে পরস্পরের মধ্য একটা টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়ে যায়।

চেহারায় বয়সের ছাপ পড়া খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। সম্পর্ক গড়ে তোলার সময়ে এ জিনিসটা মাথায় না থাকলেও পরবর্তীতে এটা সমস্যার সৃষ্টি করে। এই সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে আসুন, একজন আরেকজনের পাশে থাকুন। কারণ আপনাদের সম্পর্কে ভালোবাসাটাই মুখ্য, বয়স বা চেহারা নয়।

মানসিক চাপ :
স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্যের কারণে পারিবারিক ও সামাজিক নানা সমস্যার ফলে উভয়ের মধ্যেই মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে নারীর মনে তা গভীর প্রভাব ফেলে। ফলে সে নিজেকে দোষী ভাবা শুরু করে। এই মানসিক চাপ যেমন দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, তেমনি এর কারণে সম্পর্ক ভেঙেও যেতে পারে।  পরস্পরের সাথে অধিক সময় কাটান। একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করুন। দূরত্ব সৃষ্টি হলেও তা উত্তরণের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ম্যারেজ কাউন্সিলারের সহায়তা নিন।

যৌনজীবনে সমস্যা :
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুব বেশি হলে একটা সময়ে গিয়ে যৌনজীবনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। কারণ নারী-পুরুষের শারীরিক চাহিদা এক রকম হয় না। বিশেষ করে নারীদের বয়স বেড়ে গেলে তাদের শারীরিক চাহিদা দিন দিন কমে যায়। অপরদিকে পুরুষদের শারীরিক চাহিদা অনেক বয়স পর্যন্ত বহাল থাকে।  এখানেও একে অপরের মধ্যে সমঝোতার প্রয়োজন। কারণ শারীরিক ব্যাপারটি এমন একটি বিষয়, যা সহজে এড়ানো যায় না। তাই এ ব্যাপারে ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন হয়।

গর্ভধারণে সমস্যা :
নারীর জীবনে গর্ভধারণ করা অতি স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু সাধারণ ৩৫ বছরের পরেই গর্ভধারণের ব্যাপারটি মেয়েদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই বিয়ের আগে বা বিয়ের পর পরই ঠিক করে নিন যে আপনারা সন্তান কবে নিতে চান। বেশি দেরি না করাটাই ভালো। কেননা স্ত্রীর বয়স বেশি হলে তা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।

সমঝোতার সমস্যা :
সমবয়সী দুজন ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে মেয়ের মানসিক বয়স ছেলের চেয়ে দু বছরের বেশি হয়। স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য বেশি হলে মানসিক বয়সের পার্থক্য আরো বেশি হবে। এই মানসিক বয়সের পার্থক্যের কারণে মাঝে মাঝেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার অভাব হতে পারে, হতে পারে ভুল বোঝাবুঝিও। অনেক সময় স্ত্রীকে মনে হতে পারে অনেক বেশি পরিপক্ব আর স্বামীকে মনে হতে পারে অনেক বেশি ছেলেমানুষ। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও হতে পারে অমিল। বিয়ের প্রথম দিকে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও পরবর্তীতে এসব সমস্যা বাড়তে থাকে।

একে অপরের চিন্তাভাবনা, মতামত, সিদ্ধান্ত ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিন। সমস্যা হলে খোলাখুলি আলোচনা করুন। একে অপরেয প্রতি আস্থা রাখলে আশা করা যায় সকল সমস্যা উতরে যাবে।

তবে সবারই যে এমন সমস্যা হবে এমন কোন কথা নেই। কিছু মানুষের সমস্যার কারণে ঢালাওভাবে কাউকে বিচার করা ঠিক নয়। যদি নিয়মিত চর্চা করেন কিছু বিষয় তবে আপনার কাছে বয়সের পার্থক্য মনে হবে শুধুমাত্র একটি সংখ্যা।  যেমন –

• যে কোন দরকারে সাহায্য নিতে পারেন আপনার স্ত্রীর। তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগতে পারে আপনাদের যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে।
• আপনাদের বেড়ে উঠার সময় ও পরিবেশ ভিন্ন। তাই ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এই ব্যাপারটি আপনাদের সন্তানের জন্য হয়ে উঠবে আশীর্বাদস্বরূপ। তাদের জবনে নানান বৈচিত্র্যের সমাগম ঘটবে, ফলে পরবর্তীতে তা তাদের জীবন গড়তে সহায়তা করবে।
• স্ত্রী বয়সে বড় বলেই সর্বদা স্বামীর উপরে হুকুম খাটাবার চেষ্টা করবেন না। তাতে সমস্যা কেবল বাড়বেই। মনে রাখবেন যে দাম্পত্যে সকলেই সমান। কেউ বড় বা ছোট নয়।
• লোকে কি বলবে এই ভয়ে অনেক দম্পতিই সামাজিকতা এড়িয়ে চলেন এইসব ক্ষেত্রে। তেমনটা মোটেও করবেন না। মনে রাখবেন, পরস্পরের জন্য ভালবাসাই আপনাদের সম্পর্কের সৌন্দর্য।

মনে রাখবেন বয়স যাই হোক না কেন, প্রেমিক প্রেমিকা বা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সত্যিকারের ভালবাসা থাকলে এসব সমস্যাগুলো কেবল বড় বড় বুলি হিসেবেই গণ্য হবে। আসল কথা হল স্ত্রী আপনার থেকে যতই বয়সে বড় হন না কেন পারস্পারিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধাবোধ থাকলে সম্পর্ক হয়ে যাবে অটুট। হয়তো আপনাদের আন্তরিকতা বদলে দিবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকেও।   Source : bissoy.com

আপনার সঙ্গী কি আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে?

আপনার সঙ্গী কি আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছেন? বিষয়টা বুঝলেও তা পুরোপুরি স্পষ্ট হচ্ছে না আপনার কাছে? অথচ কোন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সঙ্গীর প্রতিনিয়তই স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছে।  তাই দিনের শেষে সঙ্গীকে দোষারোপ করায় মন খারাপ হচ্ছে আপনারই।

এমন পরিস্থিতিতে ভালবাসা, পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ একটু একটু করে কমতে শুরু করে ঠিকই। তাই মন ভাঙার আগেই জেনে রাখুন কীভাবে বুঝবেন আপনি প্রতারিত হচ্ছেন।

১. অন্য কোন নারীর সঙ্গে আপনার সঙ্গী যদি বেশিরভাগ সময়ই ফোনে কিংবা চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন, তাহলে সে বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার আপনার নিশ্চয়ই আছে। হাতে-নাতে ধরা পড়লে সাধারণত পুরুষরা বলে দেন ওই মহিলারই তাঁর প্রতি আকর্ষণ আছে। সে-ই সামনে থেকে এগিয়ে এসে কথাবার্তা বলে চলেছে। আর সামান্য বন্ধু ভেবে ভদ্রতার খাতিরেই তিনি কথা বলছেন। এমনটা হলে আপনার মনে সন্দেহ না হওয়ার কোনও কারণ নেই। পার্টনারের সেই মহিলার প্রতি সামান্য দুর্বলতা না থাকলে তিনি কখনওই গার্লফ্রেন্ড থাকতে বেশিরভাগ সময়টা মহিলাকে দিতেন না।

২. আপনি নিজের কাজে ব্যস্ত। আর সেই ফাঁকে নতুন বান্ধবীর সঙ্গে সিনেমা দেখা অথবা শপিং সারছেন আপনারই বয়ফ্রেন্ড। এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে উল্টো কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে আপনাকেই! বলা হচ্ছে, তাঁর অবসর সময়টা তিনি আপনার সঙ্গেই কাটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনি ব্যস্ত থাকাতেই তা আর হয়নি। তাই অগত্যা নতুন বান্ধবীর সঙ্গেই জুটি বাঁধতে হল। পার্টনারের থেকে এমন উত্তর পেলে একটু নজর রাখুন।

৩. ‘এতো পজেসিভ হওয়ার কিছু হয়নি। তুমি একটু বেশিই ভাবছ।’ বয়ফ্রেন্ড এবং গার্লফ্রেন্ড, উভয়ই এই অজুহাত আমরা প্রায় শুনে থাকি। নতুন বন্ধু বা বান্ধবীর সঙ্গে ঘুরাঘুরি-খেতে যাওয়া, গল্প করা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই সাফাই দেওয়া শুরু হয়। আর তারপর অতিরিক্ত সন্দেহ করার জন্য দোষ গিয়ে পড়ে পার্টনারের ঘাড়েই। অনেক গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড একটু সন্দেহের উদ্রেক হয় ঠিকই, তবে যদি সম্পর্কে তৃতীয় কোনও মানুষের গন্ধ পান, সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকাটাই শ্রেয়।

৪. শুধু ফোনে কথা বলা বা চ্যাটিং পর্যন্তই সম্পর্ক সীমাবদ্ধ থাকে না। নতুন বান্ধবীর সঙ্গে মাঝে-মধ্যেই গোপনে দেখা-সাক্ষাৎও চালু রাখতে পারে আপনার সঙ্গী।  আপনি জিজ্ঞেস করলে অজুহাত দেন, বন্ধুর সঙ্গে কফি খেতে গিয়েছিলেন। তখনই বুঝবেন অ্যালার্ম বেজে গিয়েছে।  এবার চোখ খোলার পালা।

৫. ইদানীং সঙ্গীর মধ্যে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন? তাঁর কথা বার্তা, হাব-ভাব, বডি ল্যাঙ্গুয়েজে, অমনোযোগিতা চোখে পড়ার মতো কোনও পরিবর্তন? কিংবা আপনার সঙ্গে একটু গা-ছাড়া ব্যবহার করছেন! তার মানে আপনাদের জীবনে হয়তো তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

মনে রাখবেন, যে সঙ্গী অন্যকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে মিথ্যে অজুহাত দিতে পারেন, তিনি কিন্তু নতুন জনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়তে পারেন আপনার অজান্তেই।  আর প্রশ্ন করলে উল্টো আপনার উপরই চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে বলবেন, ‘ও আমার বান্ধবী।  আমরা শারীরিক সম্পর্ক করিনি।  টেনশন করো না।’

এই সমস্যা গুলো নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। জল এতখানি গড়িয়ে যাওয়ার আগেই নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ ভাবতে শুরু করে দিন।  সুত্র – ডেইলি বাংলাদেশ

শরীর কেন্দ্রিক দাম্পত্য কতটুকু সুখের!

শিরোনামের কথাগুলো উল্টো করে বলি, ‘কেবল শরীর দিয়ে কি দাম্পত্য হয়?’  উত্তর হচ্ছে, ‘না, হয় না।’ কেবল শরীর দিয়ে দাম্পত্য হয় না।  দাম্পত্যে শরীরটা একটা অংশ বটে, কিন্তু সম্পর্কের সবটুকু শরীর কেন্দ্রীক নয়।   এই শরীরকে সবটুকু ভাবতে গেলেই তৈরি হয় যত গোলযোগ।  আমাদের সমাজে প্রায়ই দাম্পত্য সম্পর্ক শরীর থেকে শুরু হয়।  অল্প বয়সের আকর্ষণকে আমরা প্রায়ই প্রেম ভেবে ভুল করি, সেই ভুলে আবার ভুল একজন মানুষকে বিবাহের বন্ধনে বেঁধেও ফেলি। অন্যদিকে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে পরিবারই আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দেয় সঙ্গী। বিয়ের আয়োজন হয়, বিয়ে হয়, সংসার হয়, শরীরের সম্পর্কও হয়। তারপর আসে মনের জানাশোনার পালা, তারপর তৈরি হয় দাম্পত্য।

এই মনকে জানতে-শুনতে গিয়ে যদি মনের মিলটাই না হয়, তখন? তখনই শুরু হয় টানাপোড়েন, জীবনের দেহজুড়ে পাওয়া, না পাওয়ার দীর্ঘ হিসাব-নিকেশ। সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ, যন্ত্রণাময় কাটাকুটি।  অনেকেই ভাবতে পারেন, ‘এক ছাদের নিচে থাকছি, ছেলেপুলে হয়েছে, সংসার আছে, নিয়মিত যৌন সম্পর্ক হচ্ছে – দাম্পত্যে আর কী চাই?’
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই কিন্তু ভুলে গেলেন।  সেটা হলো মনের মিল।  দাম্পত্য সম্পর্কে মনের মিলটাই কিন্তু সবার আগে চাই।

একটা বয়সের পর শরীরের পাশাপাশি মনেরও একটা চাহিদা তৈরি হয়, তীব্র একটা দাবি তৈরি হয়। বয়স যত বাড়ে, সেই দাবিটিও তত বাড়ে।  আর সেই দাবি যদি পাশের মানুষটি পূরণ করতে না পারে, দাম্পত্যে তখন সংঘাত অবধারিত।  তখন শুরু হয় জীবনজুড়ে কাটাকুটির অঙ্ক আর সম্পর্কের যন্ত্রণাময় ব্যবচ্ছেদ।   কারো কারো সম্পর্ক মোড় নেয় পরকীয়ার দিকে।  নিজের দাম্পত্যে যা নেই, সেটাই পাওয়ার আশার কেউ কেউ হাত বাড়ান অন্যদিকে।

অনৈতিক কিছু সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়ে আরও এলোমেলো হয়ে যায় সম্পর্কের সুতো।   সত্যি বলতে কী, শরীর আর মন কিন্তু প্রায়ই আলাদা হয়ে যায়।  বিশেষ করে তখন, যখন আমরা ধরে নিই দাম্পত্যের অর্থ কেবল যৌন সম্পর্কের বৈধতা কিংবা সন্তান জন্ম দেওয়ার আয়োজন।  এসবের বাইরে দাম্পত্য অনেক বড় কিছু।  দাম্পত্য মানে বন্ধুত্ব, দাম্পত্য মানে এই বিশাল বড় পৃথিবীতে নিজের একটি ছোট দুনিয়া। সেই দুনিয়ায় আমি, আমরা নিরাপদ, যেখানে সবাই আপন।

মা-বাবার পর নিজের স্বামী বা স্ত্রীই জগতে সবচেয়ে আপন।  সবচাইতে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক এই মানুষটির সাথেই তৈরি হয় আমাদের, জীবনসঙ্গীর সাথেই আমরা পার করি জীবনের একটি বিশাল অংশ। তাহলে ভাবুন তো, সেই মানুষটির সাথে মনের মিল না হলে কি চলে? যার সাথে জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো সাথে মনের মিল করার চেষ্টা করলে কি কখনো সুখী হতে পারবেন?

উত্তর হচ্ছে, ‘না, পারা যাবে না।’  সম্পর্কের পৃথিবীর কিছু নিজস্ব সমীকরণ আছে, সেই সমীকরণ মানতে হয়।  দাম্পত্যে যদি সুখী হতে হয়, তাহলে সুযোগ করে দিতে হবে শরীর-মনের যুগপৎ সহাবস্থানের। সঙ্গীকে করে নিতে হবে আত্মার আত্মীয়, এমন কেউ যার সাথে বিনিময় করা যায় নিজের সব আবেগ ও অনুভূতি।

কেবল সাথে থাকাই দাম্পত্য নয়, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে পাশে থাকাটাই সত্যিকারের সম্পর্কের নীতি।  সব বন্ধনের সীমা ছাড়িয়ে কেবল মনের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটাই আসল দাম্পত্য। মনের বন্ধন সঠিক হলে তারপর শরীর আসবে, সংসার আসবে। সুখের সাথে সন্ধি করে কেটে যাবে জীবন।

তবে, শেষে গিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠতে পারে, ‘শরীর আর মন কি সত্যিই আলাদা? শরীর আর মনকে কি আলাদা করা যায়?’ যায় হয়তো! মাঝে মাঝে আমরা এমন কারো সাথে থাকি, যার সাথে আমাদের মন থাকে না। মাঝে মাঝে মন এমন কারো কাছে থাকে, যার পাশে শরীর যেতে পারে না।
কারণ, এই এক মানবজীবনে শরীর আর মন একসুরে, একই ছন্দে বারবার বেজে ওঠে না। কেবল একজনের জন্যই হয়তো সমগ্র অস্তিত্ব একসাথে সাড়া দেয়। আর সেই একজনকেই হয়তো আমরা আমরা ‘মনের মানুষ’ বলি।  সুত্রঃ  প্রিয় ডট কম