প্রেমের অনুভূতিতে শারীরিক প্রতিক্রিয়া

‘প্রেম যে কাঁঠালের আঠা, লাগলে পরে ছাড়ে না।’ সত্যি প্রেমের অনুভূতি এক অদ্ভুত অনুভূতি।  প্রেমে পড়লেও জ্বালা আবার এর স্বাদ না নিলেও যেন মন ভরে না! আর এ কারণে জীবনে একবারের মতো হলেও প্রেমে পড়েনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া আসলেই মুশকিল।  প্রেমে পড়ার অসাধারণ এই অনুভূতিটা সব মানুষই পেতে চায়।  পৃথিবীর তাবড় তাবড় স্নায়ুচিকিৎসকরা এই নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করে চলেছেন।  খুঁজে পেয়েছেন আশ্চর্য কিছু তথ্য।

মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যায়:  একথা সত্যি যে মানুষ প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন আসে। এবং পরিবর্তন আসে বলেই উলটে যায় চেনা পৃথিবী। চূড়ান্ত যুক্তিবাদী ব্যক্তিও অসঙ্গত আচরণ করতে পারেন। গম্ভীর ব্যক্তির ঠোঁটেও ফুটে উঠে হাসি। ব্যবহারের দিক থেকেও একজন মানুষ আমূল পালটে যেতে পারেন। হয়ে উঠতে পারে ব্যাকুল, ভীত এবং অস্থির। সদ্য প্রেমে পড়েছেন এমন ব্যক্তির মস্তিষ্ক স্ক্যান করে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন নিউরোলজিস্টরা। জানা যায়, প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কের সামনের দিকের অংশ, অর্থাৎ ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়।এই অংশটি মানুষের বোধ-বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলত, প্রেমে পড়লে প্রথমেই মানুষ বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়। ঠিক-ভুল বিচারবোধ হারায়। আরও বেশি হারায় যদি, প্রেমিক/প্রেমিকার ফটো দেখানো হয়। ক্ষণিকের জন্য মানুষের ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

লন্ডন ইউনিভার্সিটি অব কলেজের নিউরো-এসথেটিক্সের প্রফেসর সেমির জেকির মতে, ‘ভালোবাসার মানুষের ফটো দেখালে মানুষের মস্তিষ্কের বেশকিছু অংশ যেমন অ্যাকটিভ হয় ওঠে, ঠিক তেমনই ক্ষণিকের জন্য মানুষের ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এমনটা আরও বেশি হতে পারে হঠাৎ কোনও মানুষের প্রেমে পড়লে। ব্যক্তি সৎ, না অসৎ, কেমন মানুষ, আর বিচার করার মতো অবস্থা থাকে না। তাই অনেক সময় ভুল ব্যক্তির প্রেমে পড়ে মানুষ। তারপর সারাজীবন অশান্তি ভোগ করে। মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, মস্তিষ্কের যে অংশগুলি ভয় ও নেতিবাচকতা নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলিও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যে কারণে প্রেমে পড়লে মানুষ অনেকবেশি হাসিখুশি হয়ে ওঠে। নেতিবাচক ধারণাগুলি পুরোপুরিভাবে মুছে যায় মন থেকে।

শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে: বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এক ধরণের হরমোন আমাদের মনে উত্তেজনা ছড়ায় আর তার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ওইসব ঘটে৷ প্রেমে পড়লে যে হরমোনের জন্য মন এত উতলা হয়-সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক: প্রেমে পড়লে দেহ-মনে যেসব প্রতিক্রিয়া হয় তার জন্য দায়ী টেস্টোস্টেরন নামের এক হরমোন৷ কেউ বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি আকৃষ্ট হলে টেস্টোস্টেরন বাড়তে শুরু করে৷ প্রেমের ওই প্রাথমিক ধাপেই দেখা দেয় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাত কাঁপার মতো উপসর্গগুলো৷ দেখা গেছে, প্রেমে পড়া মানুষের দেহে অন্য সব মানুষের তুলনায় টেস্টোস্টেরন অনেক বেশি থাকে।  প্রেমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে নেমে পড়ে ডোপামিন৷ এই হরমোন-এর অন্য নাম, ‘সুখের হরমোন’৷ শুধু প্রেমে পড়লেই যে এই হরমোন ক্রিয়াশীল হয় তা কিন্তু নয়, কোকেন বা সিগারেটের নেশা করলেও ডোপামিন উজ্জীবিত হয় ৷ এ কারণেই অনেকে বলেন, প্রেমে পড়া আর নেশা করা একই। সেরোটোনিন নামে এক ধরণের হরমোন আছে যা আমাদের মনের আনন্দ আর আবেগকে স্থির রাখে ৷ প্রেমে পড়লে সেরোটোনিন কমে যায় ৷ ফলে প্রেমিক-প্রেমিকার আবেগ সংবরণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ৷ তারা তখন ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারেনা ৷

ক্ষুধা কমে যায়: প্রেমের যে পর্যায়ে বুক ধড়ফড় করে, হাত ঘামায় তখন অ্যাড্রেনালিন নামের একটা হরমোনও খুব বেড়ে যায় ৷ এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষুধা কমে যায়৷ কম খাওয়া-দাওয়া করার ফলে শরীর দ্রুত ভেঙে পড়তে থাকে ৷ প্রেমে পড়ার তিন-চার মাস পর সাধারণত সম্পর্কে একটা স্থিতি আসে ৷ তখন শুরু হয় আরেক হরমোন অকসিটোসিনের কাজ ৷ এই হরমোনের কারণে দু-জনের সম্পর্কটা আরেও ঘনিষ্ঠ হয় ৷ প্রেমিক-প্রেমিকা যখন চুম্বন করেন, তখনও দুজনের শরীরে অকসিটোসিন তৈরি হয় ৷ আর এভাবেই দুজন দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের পথে এগিয়ে যান ৷

ঘুম কম হয়: প্রেমে পড়লে কমপক্ষে একঘণ্টা কমে যায় রাতের ঘুম। একটি সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে এই তথ্য। জার্নাল অফ অ্যাডোলেসেন্ট হেলথে প্রকাশিত হয়েছিল গবেষণাটি। আর তার কারণ হল, রাতে ঘুমাতে গেলেই প্রিয় মানুষটির কথা সবচাইতে বেশি মনে পড়তে থাকে এবং শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। ফলে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে না শরীর এবং ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়।

শরীরের নানান ব্যথা কমে যায়:  স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ মেডিসিনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরের নানান ধরনের ব্যাথা সেরে যায়। ভালোবাসা মস্তিষ্কের নিউরাল রিসেপটরের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ব্যাথার অনুভূতি কমিয়ে দেয়। তাই ভালোবাসাকে বিজ্ঞানীরা ব্যথার ওষুধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ভুলোমন: প্রেমে পড়লে সব কিছু ভুলে যাওয়া শুরু হয়৷ আর তার জন্য দায়ী হল অক্সিটসিন হরমোন। প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটসিন হরমোন উৎপন্ন হয়, যা স্মৃতিশক্তি কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। আর তাই মানুষ কিছুটা অন্যমনষ্ক এবং ভুলোমনা হয়ে যায় প্রেমে পড়লে। স্বাদ বেশি লাগে: প্রেমে পড়লে নাকি খাবারের স্বাদও বেশি লাগে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেওয়া হয়েছে এমন তথ্য। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নতুন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে তাদের কাছে সব খাবারের স্বাদই অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই লাগছে।  সূত্র: সংগ্রহিত