সম্পর্কের অস্বস্তিকর মুহুর্তগুলো এড়ানোর কিছু প্রন্থা

দুজন মানুষ যখন কোনো সম্পর্কে জড়ান, তখন তারা একে অপরের কাছে অনেক কিছুই আশা করেন। আর এর ব্যাপ্তয় ঘটলেই দুজনের মধ্যে চলে রাগ কিংবা অভিমান। অনেক সময় তর্ক কিংবা কথা কাটাকাটি চলাকালেও এমনটা হতে পারে। যদি শুরুতেই সঙ্গীর এই অভিমান ভাঙানো না যায় তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই সম্পর্কে এর খারাপ প্রভাব পড়ে। পরবর্তীতে এটি সম্পর্ক ভাঙনেরও কারণ হতে পারে।  কাজেই শুরুতেই নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে নেয়াই ভালো। এক্ষেত্রে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে করতে পারেন কিছু কাজ-

মুখে বলি ভালোবাসি:  ভালোবাসি কথাটির গভীরতা অনেক। ভালোবাসার অনুভূতির কথা প্রকাশ না করলে ভালোবাসা হয়ে যায় এক তরফা, বেশী দেরি না করে খুব দ্রুত বলে ফেলতে হবে মনের কথাটা, অন্যথায় হারিয়েও ফেলতে পারেন আপনার মনের মানুষটাকে।মন দেওয়া নেওয়ার পর ভালোবাসার সম্পর্ক যখন অনেকটা গভীর হতে থাকে তখন সব জড়তা ভেঙ্গে একে অন্যকে ভালবাসি কথাটা মুখে বলে জানান দিতে থাকি কিন্তু প্রতি উত্তরে যদি ধন্যবাদ বা নীরবতা আসে, তাহলে বিচলিত হবেননা এবং কোন রকম অস্বস্তিভাব দেখাবেন না। নীরব থাকা মানে আপনার সঙ্গী আপনাকে ভালোবাসেনা তা নয় কারন আপনি জানেন আপনার সঙ্গী আপনাকে কতটা ভালোবাসে।

অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে পরিবারের সাথে পরিচয়ঃ  প্রেম করছি বাসার কেউ দেখে না ফেলে, চুরি করে প্রেম করলে পরিবারের কেউ দেখে ফেললে খুব অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এরকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে হলে আমদের উচিৎ পরিবারের সদস্যের সাথে সঙ্গীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। এবং জড়তা ভেঙ্গে ফেলা।

নতুন সম্পর্ক বনাম প্রাক্তনঃ  বর্তমান ভালোবাসার সম্পর্কে অনেক সময় প্রাক্তন সম্পর্কের সামনে অস্বস্থিতে পড়তে হয়। যুগল যখন কোন লোকালয়ে তাদের একান্ত সময় কাটায় হঠাৎ প্রাক্তনের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে এসময় বিচলিত ও অস্থির না হয়ে, খুব সহজ ভাবে বিষয়টিকে গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখবেন কোন সম্পর্ক মিথ্যা দিয়ে হয়না। অতীত সম্পর্কে সবটায় জানিয়ে রাখতে হবে বর্তমানকে।

অনিচ্ছাকৃত অপমানঃ সব সম্পর্কে খুঁটিনাটি সমস্যা হয়, ঠিক তেমনি ভালোবাসার সম্পর্কে মধ্যেও হয়। কোন বিষয়ে যখন কোন যুগলেরা কথা কাটাকাটি করে অবশ্যই মুখ ফস্কে এমন কোন কথা বলবেননা যেটা সঙ্গীকে অপমানিত করে। যদি এরকম কোন অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়, আমাদেরকে তখনই ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে এবং পরে এই বিষয়ে আলোচনা করা যাবেনা।

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতাঃ  বর্তমানের জনপ্রিয় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে প্রেমিক যুগলরা বিভিন্ন ছবি পোস্ট করে থাকে, এক্ষেত্রে এমন কোন ছবি পোস্ট করা উচিৎ না যা অন্যের জন্য কোন অস্বস্থির কারন হয়ে দাড়ায়। এসকল মাধ্যম গুলো ব্যবহারে হতে হবে আধিক সতর্ক।

আমাদের সবার উচিত জীবনের প্রতি আস্থা রাখা,  সমাজ, জীবন, পারিপার্শ্বিকের প্রতি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়ুন। সব কিছু ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে শিখুন। সম্পর্কে যতই টালমাটাল পরিস্থিতি আসুক, ইতিবাচক থাকলে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনও পরিস্থিতি অতিরিক্ত বিশ্লেষণ করবেন না। স্বামী যদি কোনওদিন ভালো করে কথা না বলেন তার মানেই যে উনি আপনার ব্যাপারে আগ্রহ হারাচ্ছেন, তা মোটেই নয়! স্বামীর জায়গা থেকেও বিভিন্ন পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন। দু’জনে দু’জনের পাশে থাকলে বহু দুঃসময়ই পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব।

দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি

দাম্পত্য জীবনে আনন্দের জন্য নিজেদের কিছু কিছু ভাললাগার বিষয় তৈরি করে নিতে হয়।  ব্যবসায়-কাজের ফাঁকে আমার স্ত্রীর পছন্দের কোন একটি জায়গায় বেড়াতে যাওয়া বা আমার পছন্দের কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া পারস্পরিক বোঝাপড়ায় অনেক বেশি সহায়ক হয়।

একসঙ্গে চমৎকার কোন রোমান্টিক সিনেমা দেখতে যাওয়ার মাধ্যমে উৎযাপন করতে পারেন ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক ভালবাসার মধ্য দিয়ে।   আর স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাটার ভিত্তিটা কয়েক দিন বা কয়েক মাসে গড়ে উঠেনা।  দাম্পত্য সম্পর্কটা হলো চারা গাছের মত যাকে বড় করতে হয় পরম যত্নে, এবং পরিপূর্ন হয় ধীরে ধীরে।  একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, সহনশীলতার মাধ্যমেই ভালবাসার এই চর্চা করা সম্ভব।  সংসারে স্বামী ছাড়াও থাকতে পারে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ। এক সঙ্গে থাকলে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমেই সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।   সংসারে সুখের জন্য কোন কাজই কেবল ছেলেদের জন্য নয়, আবার কোনটাই কেবল মেয়েদের জন্য নয়; পরিবারের নারী-পুরুষের সমন্বিত কাজেই সংসারে সুখ-শান্তি বজায় থাকে। স্বামী-স্ত্রী দুজন যেহেতু ভিন্ন দুটি পরিবার থেকে এসে একসঙ্গে বসবাস করছে; তাই দু’জনের মধ্যে কিছু অমিল থাকতেই পারে।  কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে হয়ত দুজন কিছুতেই একমত হতে পারছে না।  সে ক্ষেত্রে যার যার মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যেমন স্বাধীনতা থাকবে তেমনি স্বামী বা স্ত্রীর মতামতের প্রতি আপনাকে হতে হবে শ্রদ্ধাশীল।

দাম্পত্যে যা যা করবেন:

১।  একজন আরেকজনকে প্রতিদিন অন্তত একবার করে বলুন আমি তোমাকে ভালবাসি! বিয়ের পর কখনই এই কথা বলেননি ভাবছেন তো কি হয়েছে! সাহস করে মন খুলে স্ত্রীকে বা স্বামীকে বলুন না প্লিজ। দেখবেন আপনার দাম্পত্য জীবনে আনন্দ কি পরিমাণ বেড়ে গেছে।
২।  ছোটখাটো ভুলেও ক্ষমা চেয়ে নিন।আবার ছোটখাটো ভুলকে ক্ষমা করতেও দিধা করবেন না। তাতে কেউ কারও কাছে ছোট হয়ে যাবেন না। বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জন্ম নেবে এবং একে অন্যকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি হবে।
৩।  একে অন্যকে ধন্যবাদ দিন। প্রতিদিনই ছোট-বড় অনেক কাজে দম্পতিরা একে অন্যের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রতিবারই স্ত্রীকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানান।
৪।  প্রশংসা করুন। আপনার স্বামী বা স্ত্রী নিশ্চয়ই কিছু না কিছু গুণে গুণান্বিত। তার গুণগুলো খুঁজে বের করুন। সময় পেলেই তার গুণের প্রশংসা করুন।
৫।  চমকে দিন প্রিয় মানুষটিকে পছন্দের একটি জিনিস উপহার দিয়ে। চেষ্টা করুন সঙ্গীকে বিভিন্ন কারণে বিভিন্নভাবে চমকে দিয়ে আনন্দের উৎস বাড়াতে। কিছুই করার না থাকলে বেড়িয়ে আসুন নদীর ধারে কিংবা লেকের পারে।
৬।  সন্তানের ভাল-মন্দ যে কোন বিষয়ে দুজনের দায়িত্ব স্বীকার করে নিন। একে অন্যের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেবেন না।

দাম্পত্যে বিরত থাকুন:

১।  সঙ্গীকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকুন। সবার সামনে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সমালোচনা করবেন না। প্রয়োজনে একান্তে বলুন।
২।  একে অপরের কাছে বেশি কিছু আশা না করাই ভাল।  সঙ্গীর সীমাবদ্ধতাকে সহজে মেনে নিন।
৩।  বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে গিয়ে স্ত্রী বা স্বামীকে বঞ্চিত করবেন না।
৪।  আপনার সঙ্গী পছন্দ করেন না এমন কাজ তাকে দিয়ে করাতে যাবেন না।  এতে দাম্পত্য জীবনে তিক্ততার সৃষ্টি হয়।
৫।  দাম্পত্য জীবনে ঝামেলা হতে পারে এমন বিষয় এড়িয়ে চলুন।