সন্দেহের ভূত অনেকের মাথাতেই চেপে বসে। দাম্পত্যেই সাধারণত বেশি দেখা যায় এমন পরিস্থিতি। কখনো স্বামী, কখনো স্ত্রী মনে করেন যে তাঁর সঙ্গীর অন্য কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। যদিও তা বাস্তবে সত্য নয়। এই সন্দেহপ্রবণতাকে বলা হয় মরবিড জেলাসি, যার আরেকটি পোশাকি নাম ওথেলো সিনড্রোম। শেক্সপিয়ারের নাটকের চরিত্র ওথেলো এই সন্দেহের ভূতের কবলে পড়ে তাঁর স্ত্রী ডেসডিমোনাকে হত্যা করেছিলেন।
ভ্রান্ত বিশ্বাস, খুঁতখুঁতে মনোভাব থেকে এ সমস্যা হয়ে থাকে অনেকের। এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। সাধারণত ব্যক্তিত্বের ধরন, পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব, আর্থিক অসংগতি, নিজের যৌন দুর্বলতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, মাদকে আসক্তি, মানসিক রোগ ইত্যাদি কারণে সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠে ব্যক্তি। সন্দেহের কারণে অতি উৎকণ্ঠা, বিষণ্নতা, খুঁতখুঁতে বা মারমুখী আচরণ, ঘুমের সমস্যাও দেখা যায়। সন্দেহ দিনের পর দিন চলতে থাকলে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল দেখা যায়, পারিবারিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সন্দেহভাজনকে হত্যা, সন্তান হত্যা, গুরুতর আঘাত বা আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
সন্দেহের বিষয়টি যখন বড় আকার ধারণ করে, তখন সেটাকে বলা হয় প্যারানয়েড ডিলিউশন। যাঁর মধ্যে এ সমস্যা থাকে, তিনি তাঁর সঙ্গীকে অবিশ্বাস করেন, বিশ্বাস করেন আশপাশের সবাই তাঁর ক্ষতি করতে চায়, কখনো মনে করতে পারেন তাঁর কাছের মানুষেরা তাঁর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে ইত্যাদি। অপর দিকে ওথেলো সিনড্রোমের ক্ষেত্রে সন্দেহটি খুবই সুনির্দিষ্ট, সঙ্গীর অন্য কারও সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে—এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের মধ্যেই সন্দেহ সীমাবদ্ধ।
সন্দেহের ভূত তাড়াতে:
দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে সাধারণ ভুল-বোঝাবুঝি বা সন্দেহ তৈরি হলে বিষয়টিকে বড় হতে না দিয়ে শুরুতেই তা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করুন।
আপনার সন্দেহটি সঠিক কি না, তা বারবার যাচাই করে দেখুন।
সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া সঙ্গীকে দোষী সাব্যস্ত করবেন না, সন্দেহের ঘটনাটি তাঁর দিক থেকেও দেখুন।
সন্তানদের এই বিষয়ে জড়াবেন না।
গোপনে নজরদারি এড়িয়ে চলুন, গোয়েন্দার ভূমিকায় না থেকে বন্ধুর ভূমিকায় বিষয়টি জানার চেষ্টা করুন।
অধীনের কর্মচারী, কাজের লোক, গাড়িচালক বা নিরাপত্তাকর্মীদের কাছ থেকে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন না।
আপনাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে তৃতীয় কেউ ষড়যন্ত্র করছে কি না, তা যাচাই করুন।
আপনি নিজে সন্দেহের শিকার হলে, সাময়িক সমাধানের জন্য মিথ্যা বলবেন না।
হঠকারী আচরণ এড়িয়ে চলুন।যদি মনে হয়, এটি সাধারণ ভুল-বোঝাবুঝির চেয়ে কিছু বেশি বা দুজনের কারও মধ্যে কোনো মানসিক সমস্যা রয়েছে, তবে দেরি না করে দ্রুত মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আহমেদ হেলাল (প্রথম আলো)