দৃশ্য ১ঃ রাত ৯ টা। রুমা একা বসে অপেক্ষা করছে শাহেদের জন্য। এরই মধ্যে ৫ বার ফোন দেয়া হয়ে গেছে অথচ শাহেদ ফোন ধরেওনি বা কলব্যাক করেনি। অথচ বিয়ের আগে শাহেদ এমন ছিল না। টানা ৩ বছরের প্রেম তারপর বিয়ে। তখন তো প্রতি আধাঘন্টায় একবার ফোন করত। বিয়ের পর সব কেমন যেন আলাদা।
দৃশ্য ২ঃ রুপম এক বন্ধুর বাড়ীতে। অনেকদিন পর পুরনো বন্ধুরা সব এক সাথে হয়েছে। চুটিয়ে তাস খেলা হচ্ছে। কিন্তু রুপম একটু বিরক্ত সাথীর ওপর। একটু পর পর কল দিয়ে যাচ্ছে। অথচ রুপম আগেই বলেছিল আজ বাসায় ফিরতে দেরী হবে, তারপরও ফোন দেয়ার কি মানে। বিয়ের আগে ৪ বছর যেমন করত এখন কি তেমন করার কোন মানে হয়। বন্ধুদের সাথে একটু শান্তিতে সময় কাটাতে দিবে না।
দৃশ্য ৩ঃ একবছর হল তিথির সংসার কিন্তু আজো সে কবির কে বুঝতে পারলো না। না ভালোবাসার বিয়ে না। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে। তিথি আগেই ঠিক করে রেখেছিল যে অনেক ত্যাগ করতে হবে, কিন্তু এই একবছরে সম্পর্ক এক ইঞ্চিও উন্নতি হয়নি। এখন ভাবে বিয়ের আগে প্রেম থাকা বা অন্তত পরিচয় থাকাটা খুব জরুরী।
দৃশ্য ৪ লিখলাম না কারন এটাই আলোচনার বিষয়। কোন ধরনের বিয়ে ভালো, প্রেমের বিয়ে না পারিবারিক? এই প্রশ্নটা শুধু আমার না, বরং আরো অনেকের। রীতিমত বই লিখে ফেলা হয়েছে। বেশীর ভাগ মানুষ মনে করে (সারাবিশ্বের) যে প্রেম করে বিয়ে করাটা নিরাপদ। তাতে জেনে, শুনে, বুঝে একজনকে বিয়ে করা যায়। কিন্তু লাখ টাকা দামের প্রশ্ন হলো তাহলে প্রেমের বিয়েতে বিচ্ছেদের হার পারিবারিক বিয়ের দশগুন বেশী কেন?
প্রেমেরবিয়ে ছেলে এবং মেয়ে পস্পরকে চেনা ও জানার অধিক সুযোগ এবং স্বাধীনতা দেয়। তারা পস্পরকে অনেকদিন ধরে জানে বোঝে, পস্পরের শক্তি এবং দুর্বলতা সমন্ধে নিশ্চিত হয় এবং তারপর তারা ঘর বাঁধার কথা ভাবে। তাই স্বাভাবিক ভাবে বিয়ের পরের জীবনে তারা এইভাবে চলতে পারে এবং যে কোন সমস্যা, বিপদে আপদে পাশে দাড়াতে পারে। পস্পরের পছন্দ অপছন্দ সমন্ধে জানা থাকায় সেভাবে মেনে চলতে কোন সমস্যা হয়না। তাই তারা খুব সহজেই মানিয়ে চলতে পারে। তাই বিবাহিত জীবন তাদের জন্য স্বর্গীয় প্রমানিত হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোই আলাদা।
পক্ষান্তরে, পারিবারিক বিয়ের প্রেক্ষাপট পুরো আলাদা। ছেলে মেয়ে পস্পরকে ভালোভাবে চেনেনা জানেনা। তারা সব সময় দ্বিধার মধ্যে থাকে। কারন, জানে না কার কোনটা ভালো লাগবে, কোনটা লাগবে না। কে কি পছন্দ করে আর কোনটা করে না। তাই একে অন্যকে সাহায্য সহযোগীতা করতে সমস্যা হওয়ার কথা। বিবাহিত জীবন কাদের কাছে যন্ত্রণার আরেক নাম হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব তা বলে না, অন্ততঃ পরিসংখ্যান।
এ বিষয়ে সমাজ বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট সহ বহু লোক বহু কথা বলেছে এবং তাদের কথা গুলো আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছে। তাদের মতে সফল বিয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন দুইটা বিষয় হল ত্যাগ এবং অভিযোজন ক্ষমতা। প্রেমের বিয়েতে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের চাহিদা অত্যন্ত বেশী থাকে এবং চাহিদা ও প্রাপ্তির মধ্যে যে ব্যাপক দুরত্ব দেখা দেয় তা দূর করার সামর্থ্য তাদের থাকে না। যার পরিনতি সম্ভাব্য বিচ্ছেদে গড়ায়। পক্ষান্তরে, পারিবারিক বিয়েতে চাহিদা সর্বনিম্নস্তরে থাকে যে কারনে অপ্রাপ্তির বেদনা সহসাই আসেনা। প্রেমের বিয়ে এবং পারিবারিক বিয়ের কিছু সম্ভাব্য বিশ্লেষন নিম্নরূপ।
ভালোবাসা কি? মস্তিস্কের নিউরনে কিছু রাসাযনিক বিক্রিয়া। প্রকৃতিকে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে, যার জন্য তার দরকার নতুন প্রাণ। তাই যখনি মানব সম্প্রদায় সেই সক্ষমতা লাভ করে তার ভেতর সেই বিক্রিয়া শুরু হয়। তাই আমরা সিনেমার মত অপেক্ষা করতে শুরু করি সঠিক মানুষটির জন্য। কিন্তু জীবন সিনেমা নয় তাই মানুষটি সঠিক কিনা সহসাই বুঝতে পারিনা, কারন মস্তিস্কের সেই রাসায়নিক বিক্রিয়া। আমার এই লেখার মূল উদ্দেশ্য পারিবারিক বিয়ের সাফল্যের রহস্য কারন তার মূলেই আছে প্রেমের বিয়ের ব্যর্থতার কারন।
পারিবারিক বিয়ের সপক্ষে ও বিপক্ষে কিছু কথাঃ
সপক্ষেঃ
১) আধুনিক পারিবারিক বিয়েতে সঠিক পাত্র খুজে বের করার জন্য সম্ভাব্য সকল বিষয় বিবেচনা করা হয়। ছেলে বা মেয়ে কি করে, ছেলে ও মেয়ের পরিবার, শিক্ষা, অর্থ, সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা, চরিত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। যার ফলে জুটির সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
২) যেকোন সমস্যা, বিপদে আপদে তারা পরিবারের পুরো সহযোগীতা পায়, যার ফলে সম্পরক সহজে ভেঙ্গে পড়েনা।
৩) ছেলে এবং মেয়ের পরিবারের ভেতর আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মিল থাকার কারনে তাদের অভিযোজন করতে বা মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়।
৪) এ ধরনের বিয়ে তখনি হয় যখন ছেলে ও মেয়ে বিয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকে।
বিপক্ষেঃ
১) জোর করে বিয়ে দেয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে, যার পরিনতি ভয়ঙ্কর হয়।
২) অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বিয়ে দেয়া হয় যা অসুখী দাম্পত্য জীবনের সূত্রপাত ঘটায়।
যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজনের বিয়েতে সাফল্যের হার ৯৫% যেখানে প্রেমের বিয়েতে যা ৪৫-৫০%।
পারিবারিক বিয়েতে কি মেয়েদের অসম্মান করা হয়?
হয়তো, তবে প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমা মেয়েদের যে পরিমান কষ্ট করতে হয় তার তুলনায় অনেক কম। কারন পশ্চিমা ছেলেরা মেয়ের শিক্ষা, গুন, যোগ্যতা কিছুই দেখে না। শুধু দেখে মেয়ের ফিগার কেমন। পশ্চিমে তাই মোটা মেয়েদের বিয়ে হয়না। মেয়েরা প্রচুর পরিশ্রম করে নিজেদের ফিগার ঠিক রাখার জন্য। আমাদের সমাজে মেয়ের চোখ, নাক, দাঁত দেখে ঠিক ই কিন্তু এটাও ঠিক যে সেই সাথে মেয়ের গুন, শিক্ষা, পরিবার দেখেও বিয়ে হয়। এখানে তা হয় না। শরীর সব কথার শেষ কথা। এখানে ছেলেরা মেয়েদের টীজ করে না ঠিক ই তবে তাদের শরীর নিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলে যা আজো আমরা বলতে পারিনা। কারন এটাই এখানে স্বাভাবিক।
পারিবারিক বিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের সম্মান, সামাজিক, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তবে পারিবারিক বিয়ে কখনোই সুখী বিবাহিত জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করেনা। তবে এটাই অত্যধিক সফল।
বিবাহ বিচ্ছেদের কারন সমূহঃ
বিবাহ পরবর্তী জীবনে যে পরিবর্তন আসে না সহজে মানুষ মেনে নিতে পারেনা। কারন প্রেমের সময় মানুষের ভেতর যে আবেগ কাজ করে তা আস্তে আস্তে কেটে যেতে শুরু করে এবং বাস্তবতার নিরীখে পরস্পরকে বিচার করতে শুরু করে যা তাদের আগের নিরীক্ষার সাথে মেলেনা। শারীরিক ভালোবাসা বাস্তবের প্রয়োজনের কাছে পরাজিত হতে শুরু করে। তাছাড়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষ দুটি ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক পটভূমির, যা তাদের অভিযোজন করতে বেশ কষ্ট হয়। প্রেমের ক্ষেত্রে মানুষ বিশ্বাস করে যে তাদের ভালোবাসা যেকোন পাহাড় পাড়ি দিতে পারবে কিন্তু বাস্তবে তারা পস্পরকে নতুন করে চিনতে শুরু করে এবং প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির বিশাল ঘাটতি তাদের দ্রুত মাটিতে নেমে আস্তে বাধ্য করে।
কিন্তু পারিবারিক বিয়েতে আভিযোজন করতে সুবিধা হয় কারন তারা প্রায় এক ই পরিবেশে মানুষ, তাছাড়া তাদের ভেতর পরস্পরকে চেনার এবং জানার যে প্রয়োজন কাজ করে তা তাদের ত্যাগ এবং অতিরিক্ত আকাংক্ষার ঘুড়িতে লাগাম দেয়। তারা পস্পরের ভুল ত্রুটি গুলোকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে। বিয়ের আগে ও পরের তুলনায় যেতে পারে না।
কিছু কারন:
১. বিয়ের আগের এবং পরের জীবনে যে পার্থ্যক্য তার সাথে মানিয়ে নিতে না পারা।
২. প্রেমের বিয়েতে ছেলে এবং মেয়ের প্রায় সমবয়সী হয়। তাদের মানসিক বয়স সমান হয়না। তাই অনেক ক্ষেতে দেখা যায় ছেলেটি বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়।
৩. প্রেমের বিয়েতে যৌনতা বড় ভূমিকা রাখে। দেখা যায় তারা এই প্রযোজন পূরনে দ্রুত বিয়ে করে ফেলে যখন তারা সংসার করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
৪. ভিন্ন সামাজিক পরিবেশের মানুষ তখন অন্যের পরিবেশে অসচ্ছন্দ বোধ করা শুরু করে। ফলে পরিবারের সাথে দূরত্ব সৃ্টি হয় যার পরিনতিতে নিসঙ্গতা এবং দাম্পত্য জীবনে দূরত্ব।
৫. সঙ্গীকে ধোঁকা দেয়া বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারন। স্বামী বা স্ত্রীর বাইরে মানুষের একাধিক মানসিক বা শারীরিক সম্পরক থাকতে পারে। আমাদের দেশে এ ব্যাপারে কোন পরিসংখ্যান নেই, তারমানে আমরা এমন না তা ভাবার কোন কারন নেই। যারা এ ব্যাপারে পরিসংখ্যান আছে তা শুনলে বেশ ভয় পাবার কথা। আমেরিকার ৯০% মানুষ পরকীয়া প্রেমে বিশ্বাসী যাদের মধ্যে ৩৭% পুরুষ এবং ২২% মেয়ে তাদের সঙ্গীকে ধোঁকা দেয়। যুক্তরাজ্য এবং কানাডার পরিসংখ্যান প্রায় এক ই।
উপমহাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ বৃদ্বির কারন সমূহঃ
আমাদের উপমহাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের হার কত বেড়েছে তা ঠিক বলতে পারব না তবে গত দশকের চেয়ে তা প্রায় ৯% বেড়েছে। কারন গুলো মোটামুটিঃ
১. বিবাহবিচ্ছেদের সামাজিক গ্রহন যোগ্যতা বৃদ্ধিঃ আমাদের সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ কে এখন স্বাবাভিক ভাগে গ্রহন করতে শুরু করেছে, তাই আগে যারা শুধু সমাজের কথা চিন্তা করে কষ্টকর জীবন টিকিয়ে রাখতো তারা তা না করে ভেঙ্গে দিচ্ছে যা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার উন্নতি একটি ভালো লক্ষন।
২. মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাঃ মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, যে কারনে তারা অসুখী দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখতে উৎসাহী নয়।
৩. নিসঙ্গতাঃ যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরায় মানুষ এখন অনেক বেশী নিসঙ্গ আর বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তাদের পস্পরকে সময় দিতে ব্যর্থতা। যার পরিনতি বিবাহ বিচ্ছেদ।
৪. বিয়ের ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনঃ বিয়ের ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে যার ফলে বিয়ে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যো্গ নিতে অনেকেই অনুৎসাহী।
৫. কর্মজীবি স্বামী-স্ত্রীঃ স্বামী স্ত্রী উভয়েই কাজ করার কারনে তারা পস্পরকে সময় দিতে পারে না, তাছাড়া সংসারের কাজের দায়িত্ব ভাগাভাগিতে অনীহা। অফিসের কাজের ব্যাপক চাপ যা প্রভাব দাম্পত্য জীবনে যার পরিনতি ঝগড়া, কলহ এবং বিচ্ছেদ।
৬. পেশাগত প্রতিদ্বন্দীতাঃ পেশাগত প্রতিদ্বন্দীতা বিবাহ বিচ্ছেদের বড় কারন যেটা মূলতঃ শহর এলাকায় দেখা যায়। তবে সবচেয়ে প্রকট পশ্চিমে। ছেলেরা সাধারনত তাদের চেয়ে বেশী আয় করে এমন মেয়ের সাথে সংসার করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে না এবং মেয়েরা তাদের চেয়ে নিম্ন আয় করে এমন ছেলেকে স্বামী হিসেবে সম্মান করতে পারে না। যার কারনে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ আয়ের মেয়েরা সারাজীবন সংসার করতে পারে না।
সারা বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ঃ
MAP: Divorce Rates Around The World By Pamela Engel, May 25, 2014
বিজনেস ইন্সাইডার ডট কম এর প্রতিবেদন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডিভোর্সের কারনঃ
বিবাহবিডি ডট কম, সম্প্রতি “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ নির্নয়” শিরোনামে প্রশ্ন ভিত্তিক একটি জরিপ পরিচালনা করে। এতে অংশ গ্রহন করেন ৪১২ জন। যার মধ্যে ছিলেন দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছ্যেদ নেয়া ১০৪ জন ব্যাক্তি। উক্ত জরিপের তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশী বিভাগীয় ও জেলা শহরে বসবাসকারীদের মাঝে যা যথাক্রমে বিভাগীয় শহরে ৪৯.০৩ % ও জেলা শহরে ৩৫.৫% ।
এবং উচ্চ শিক্ষিত নাগরিকদের মাঝেই বিচ্ছেদের প্রবনতা উল্লেখযোগ্য হারে বেশী – যা উচ্চতর ডিগ্রী ৪৯.৪২%, স্নাতক / সম্মান / সমসমান ৩৬.৫৮% , উচ্চ মাধ্যমিক বা সম সমান ৯.২% । জরিপে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে ৫৮.৬৫% চাকুরীজীবি ও ২০.১৯% ব্যবসায়ী তাছাড়াও ৪.৮১% প্রবাসে কর্মরত রয়েছেন। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা মধ্যবিত্ত ৭২.১২ %, নিম্ন মধ্যবিত্ত ১৭.৩% , উচ্চ বিত্ত ৪.৮% ও নিম্ন বিত্ত ৭.৭৬% ।
জরিপে অংশগ্রহনকারী (৪১.৪% যৌথ পরিবার, ৫৯% একক পরিবার থেকে আসা ) ডিভোর্স ব্যাক্তিদের প্রশ্ন করা হয় কিভাবে তাদের সংগীর সাথে পরিচয়ের সুত্রপাত (বিয়ের সম্মন্ধ) হয়েছিলো। এর মধ্যে, ৩০.৭৬% এর পরিচয় হয় নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে, ২৫ % এর পরিচয় হয় ট্রেডিশনাল ঘটকের সাহায্যে, ও ৪৩.৩% প্রেম ঘটিত পরিচয় ও অনলাইন ম্যাট্রিমনি বা স্যোশাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় মাত্র ১.৯২% ।
অংশগ্রহন কারী ৪৬% মনে করেন সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থ্যক্য ৫ বছরের কম হওয়া ভাল আর ৩১% মনে করেন সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থ্যক্য ১০ বছরের বেশী হওয়া উচিত নয়। তবে বেশীর ভাগ অংশগ্রহন কারীই মনে করেন, অতিরিক্ত বয়সের পার্থ্যক্য বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারন নয়।
জরীপে অংশগ্রহনকারীদের প্রশ্ন করা হয় – কোন বিষয় গুলো আপনার সাথে ঘটলে আপনি একেবারেই সহ্য করবেন না, প্রয়োজনে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন এর প্রতি উত্তরে উঠে আসে প্রধান ৮ টি বিষয় –
১) পরকীয়া ২) ক্রমাগত ভুল বুঝাবুঝি ও দুরত্ব বৃদ্ধি ৩) সংসারে কাজ কর্মে তীব্র অনিহা, সঙ্গীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা ৪) আসক্তি (মাদক / নারী / পরপুরুষ / জুয়া) ৫) মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ৬) সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ প্রবনতা ৭) স্বামী বা স্ত্রীর পরিবার হতে দুর্ব্যবহার বা অবমূল্যায়ন ৮) সঙ্গীর একঘেয়ে স্বভাব বা একক কর্তৃত্ব পরায়নতা। তাছাড়াও সন্তান ধারনে অক্ষমতা বা সন্তান ধারনে সঙ্গীর দ্বিমত পোষণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম / ভারতীয় টিভি সিরিয়াল বা বিদেশী সংস্কৃতির অতিরিক্ত প্রভাব বা আসক্তির মত বিয়য়গুলোও জরিপে উঠে আসে।
জরীপে অংশগ্রহনকারীদের কাছে সর্বশেষ জানতে চাওয়া হয় কোন ৫টি বিষয় বিচ্ছেদ এড়াতে পারে বলে আপনি মনে করেন? এর মধ্যে ৫ টি বিষয় ক্রমান্বয়ে যে বিষয় গুলো ঊঠে আসে –
১) একে অপরকে সম্মান করা ২) সঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত থাকা ৩) আপস করার মানসিকতা ৪) সঙ্গীর সাথে মিথ্যাচার না করা ৫) সঙ্গীকে কখনো অবজ্ঞা বা অবহেলা না করা।
বিবাহবিডি ডট কম এর জরিপ তথ্যঃ
বিবরন | সকল অংশগ্রহনকারী (৪১২ জন) | ডিভোর্স গ্রহনকারী (১০৪ জন) |
অংশগ্রহন কারী | পুরুষ – ৭৬.৫% নারী- ২৩.৫% |
পুরুষ – ৭৮.৪৫% নারী- ২১.৫৫% |
অংশগ্রহনকারীদের বয়স | ১৮-২৪ বছর = ৬.২% ২৫-৩৫ বছর = ৬৪.৯% ৩৬-৫৫ / এর অধিক = ২৮.৯% |
১৮-২৪ বছর = ৩৮.৪৬% ২৫-৩৫ বছর = ৫২.৮৮% ৩৬-৫৫ / এর অধিক = ৮.৬৫% |
অংশগ্রহনকারীদের অবস্থান | ৬১.৫ % বিভাগীয় শহরে ২৩.২% জেলা শহরে ১১.৮% উপজেলা শহরে ৩.৫% ইউনিয়ন / গ্রামে |
৪৯.০৩ % বিভাগীয় শহরে ৩৫.৫% জেলা শহরে ১৩.৪৬% উপজেলা শহরে ১.৯২% ইউনিয়ন / গ্রামে |
অংশগ্রহনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা |
৪৪.৩% উচ্চতর ডিগ্রী ৪১.৯% স্নাতক / সম্মান / সমসমান ৯.৯% উচ্চ মাধ্যমিক সম সমান ৩.৯% উচ্চ মাধ্যমিক এর নীচে |
৪৯.৪২% উচ্চতর ডিগ্রী ৩৬.৫৮% স্নাতক / সম্মান / সমসমান ৯.২% উচ্চ মাধ্যমিক সম সমান ৪.৮% উচ্চ মাধ্যমিক এর নীচে |
অংশগ্রহনকারীদের বৈবাহিক অবস্থা |
৫০.৪ % বিবাহিত ২২% অবিবাহিত ২৫.৭% ডিভোর্স ১.৯% বিধবা / বিপত্নীক |
১০০% ডিভোর্স |
অংশগ্রহনকারীদের পেশা |
৫৯.২% চাকুরীজীবি ১৬.৬% ব্যবসায়ী ১৩.১% বেকার ( নারী) ৮.৬% অধ্যয়নরত ২.৬% প্রবাসে কর্মরত |
৫৮.৬৫% চাকুরীজীবি ২০.১৯% ব্যবসায়ী ১৫.৩৮% বেকার ০.৯৬% অধ্যয়নরত ৪.৮১% প্রবাসে কর্মরত |
অংশগ্রহনকারীদের পরিবারের ধরন |
৬৫.৪% একক পরিবার ৩৪.৬% যৌথ পরিবার |
৪১.৪% যৌথ পরিবার ৫৯% একক পরিবার |
অংশগ্রহনকারীদের আর্থিক অবস্থা |
৭৩.৭ % মধ্য বিত্ত ২০.৬% নিম্ন মধ্যবিত্ত ৪.৬% উচ্চ বিত্ত ১.১% নিম্ন বিত্ত |
৭২.১২ % মধ্য বিত্ত ১৭.৩% নিম্ন মধ্যবিত্ত ৪.৮% উচ্চ বিত্ত ৭.৭৬% নিম্ন বিত্ত |
আপনি কি মনে করেন আর্থিক অসচ্ছলতা বিবাহবিচ্ছেদের একটি কারন | ৬০.৮% এ প্রশ্নে একমত নয় ৩৯.২% মনে করেন আর্থিক অসচ্ছলতা বিবাহবিচ্ছেদের একটি কারন হতে পারে |
৫৮.৮% এ প্রশ্নে একমত নয় ৪১.২% মনে করেন আর্থিক অসচ্ছলতা বিবাহবিচ্ছেদের একটি কারন হতে পারে |
জীবন সংগীর সাথে পরিচয়ের সুত্রপাত | নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে ২৭.১% ঘটকের সাহায্যে ১৩.৭ % প্রেম ঘটিত ৩৭.৪% অনলাইনে পরিচয়ঃ ৩.৪% অবিবাহিত / প্রযোজ্য নয় ১৮.৪% |
নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে ৩০.৭৬% ঘটকের সাহায্যে ২৫ % প্রেম ঘটিত ৪৩.৩% অনলাইনে পরিচয়ঃ ১.৯২% |
জরীপে অংশগ্রহনকারীদের প্রশ্ন করা হয় – কোন বিষয় গুলো আপনার সাথে ঘটলে আপনি একেবারেই সহ্য করবেন না , প্রয়োজনে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন। | এর উত্তরে যে ৮ টি বিষয় উঠে আসে (ক্রমানুসারে) ১) পরকীয়া ২) ক্রমাগত ভুল বুঝাবুঝি ও দুরত্ব বৃদ্ধি ৩) সংসারে কাজ কর্মে তীব্র অনিহা, সঙ্গীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা ৪) আসক্তি (মাদক / নারী / পরপুরুষ / জুয়া) ৫) মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন ৬) সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ ৭) স্বামী বা স্ত্রীর পরিবার হতে দূর্ব্যবহার / অবমূল্যায়ন ৮)সঙ্গীর একঘেয়ে স্বভাব বা একক কর্তৃত্ব পরায়নতা |
এর উত্তরে যে ৮ টি বিষয় উঠে আসে (ক্রমানুসারে) ১) পরকীয়া ২) ক্রমাগত ভুল বুঝাবুঝি ও দুরত্ব বৃদ্ধি ৩) সংসারে কাজ কর্মে তীব্র অনিহা, সঙ্গীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা ৪) আসক্তি (মাদক / নারী / পরপুরুষ / জুয়া) ৫) মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন ৬) সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ ৭) স্বামী বা স্ত্রীর পরিবার হতে দূর্ব্যবহার / অবমূল্যায়ন ৮)সঙ্গীর একঘেয়ে স্বভাব বা একক কর্তৃত্ব পরায়নতা |
সঙ্গীর সাথে অতিরিক্ত বয়সের পার্থক্য বিচ্ছেদের কোন কারন হতে পারে | ১৫.৩% হ্যাঁ, মনে করি ৫৬.৯% না মনে করিনা ২৭.৮% অতিরিক্ত বয়সের পার্থক্য বিচ্ছ্যেদের কারন হতেও পারে |
২৪.৩% হ্যাঁ, মনে করি ৫৩.৯% না মনে করিনা ১৭.৮% অতিরিক্ত বয়সের পার্থক্য বিচ্ছ্যেদের কারন হতেও পারে |
আপনার মতে সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থক্য কেমন হওয়া ভালো | ২ বছরের বেশী নয় – ৭.৬% ৫ বছরের কম – ৫২.১% ১০ বছরের বেশী নয় – ৩৫.৫% সমবয়সী হলে ভাল মনে করি – ৪.৬% |
২ বছরের বেশী নয় – ৮.৬৫% ৫ বছরের কম – ৪৬% ১০ বছরের বেশী নয় – ৩১% সমবয়সী হলে ভাল মনে করি- ১৪% |
আপনি কি মনে করেন – সন্তান ধারনে সঙ্গীর দ্বিমত পোষণ কি দাম্পত্য কলহের একটি কারন, যা বিচ্ছেদ পর্যন্ত পৌছাতে পারে? | হ্যাঁ, মনে করি ৫১.৭% না, মনে করি না ৪৮.৩% |
হ্যাঁ, মনে করি ৫৮.২% না, মনে করি না ৪১.৮% |
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল বা বিদেশী সংস্কৃতির অতিরিক্ত প্রভাব বা আসক্তি কি দাম্পত্য অশান্তি – ক্ষেত্র বিশেষে বিচ্ছেদের কারন হতে পারে? | হ্যাঁ, হতে পারে ৭৪.২% না, মনে করি না ২৫.৮% |
হ্যাঁ, হতে পারে ৬২.৯% না, মনে করি না ৩৭.১% |
কোন ৫টি বিষয় বিচ্ছেদ এড়াতে পারে বলে আপনি আপনি মনে করেন? | উত্তর গুলো ক্রমানুসারেঃ একে অপরকে সম্মান করা সঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত থাকা আপস করার মানসিকতা সঙ্গীর সাথে মিথ্যাচার না করা সঙ্গীকে কখনো অবজ্ঞা না করা |
উত্তর গুলো ক্রমানুসারেঃ একে অপরকে সম্মান করা সঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত থাকা আপস করার মানসিকতা সঙ্গীর সাথে মিথ্যাচার না করা সঙ্গীকে কখনো অবজ্ঞা না করা |
কোনটি ভালো?
এটা নির্ভর করে প্রতিটা মানুষের নিজস্বতার ওপর। যে যেটা বিশ্বাস করে তার সেটা করাই ভালো। তবে প্রেম করে বিয়ে না করলে আমি সুখী হবনা বা পরিবারের মতে বিয়ে করলেই সুখী হব এমনটা ভাবা ঠিক না।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেন, যে মানুষের জীবন সঙ্গী বেছে নিতে হলে একটু ভেবে চিন্তে নেয়ায় ভালো। শুধু আবেগের বশে কিছু করা ঠিক না। আমি সব কিছু মেনে নিতে পারব, কিন্তু বিয়েতে আমি ই সব কিছু না। কারন সঙ্গীর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে যা এতো সহজ না।
আয়োজনের বিয়েতে মূলত দুটো পরিবার এক হয়, পক্ষান্তরে প্রেমের বিয়েতে দুজন্ মানুষ। আমাদের আমরা দুজন শুনতে যতই রোমান্টিক শোনাক না কেন বাস্তবে পরিনতি খুব কম ক্ষেত্রেই ভালো হয়। কারন প্রেম আর সংসার এই দুই পুরো ভিন্ন বিষয়। কারন তখন মাথার উপর থাকে দায়িত্বের বিশাল বোঝা।
অসফল বিয়ের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ নয়, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাদের সন্তানেরা। এ ক্ষেত্রে তারা যদি বিচ্ছেদ ঘটায় বা না ঘটায় যেতাই করুক তাদের সন্তানদের এর কুফল ভোগ করতে হয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাদের সন্তানেরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়ে, কিংবা বিয়ের ব্যাপারে তাদের মনোভাব ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পূর্ব বা পশ্চিম উভয় ক্ষেত্রেই এটা সঠিক। আমরা প্রগতিগতভাবে অনেক এগিয়ে গেছি কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। তাই বিয়ের ব্যাপারে আমাদের আরো বেশী সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নিরেট আবেগ বা শুধুই স্বার্থের কারনে বিয়ের মতো সিদ্ধান্ত নেয়ে উচিত না। কারন যখন আমরা বুঝতে শুরু করি ততদিনে অনেক বেশী দেরী হয়ে যায়।
তথ্য সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, বিজনেস ইন্সাইডার, ও বিভিন্ন ব্লগ ১