সখি ভালোবাসা কারে কয়!

ভালোবাসা মানুষের মনের এক অদ্ভুত অনুভূতি। ভালোবাসার আরেক নাম কেউ কেউ প্রেম ও বলে থাকেন। যখন কেউ ভালোবাসা অনুভূতি অনুভব করে তার মনের উপর বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। ভালোবাসা বা প্রেম একটি মানবিক আবেগ তবে যুগের সাথে ভালোবাসার ধরন ও বহিঃপ্রকাশের বেশ ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

ভালোবাসার প্রকৃত কোন সংজ্ঞা নেই তবে রয়েছে নানান বিতর্ক ও মতামত। পৃথিবীতে এমন কোনো কবি বা সাহিত্যিক নেই যিনি ভালোবাসা নিয়ে কিছু সৃষ্টি করেননি, কবি রফিক আজাদের মতে-

“ভালোবাসা মানে দু’জনের পাগলামি,পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,বিরহ-বালুতে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও খুঁজেছেন ভালোবাসার প্রকৃত উত্তর তাই তো লিখেছিলেন –

‘তোমরা যে বল দিবস-রজনী, ভালোবাসা, ভালোবাসা, সখী ভালোবাসা কারে কয়? সে তো কেবলই যাতনা নয়।’

ভালোবাসা কাল্পনিক নির্মলেন্দু গুণের কবিতার মতোই-

‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই’।

লেখক সমরেশ বসুর মতে – ভালবাসা। কী কঠিন! ভালবাসা, কী যে নিষ্ঠুর আর কী বিচিত্র তাঁর সংবেদ!

বাংলা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নারী-পুরুষের মনে গড়ে উঠা ভালোবাসা ও প্রেম নিয়ে অসংখ্য মতামত দিয়েছেন তার গল্প, উপন্যাস গুলোতে তার মতে –

“ভালোবাসাবাসির ব্যাপারটা হাততালির মতো। দুটা হাত লাগে। এক হাতে তালি বাজে না। অর্থাৎ একজনের ভালোবাসায় হয় না।

ভালোবাসা কি? এ অনুভূতি কেন হয় বা কেমন? এ প্রশ্ন জীবনে একবার হলেও মনে জাগেনি বা জানতে চায়নি এমন মানুষ পাওয়া সম্ভব নয়। শুধু কবি-সাহিত্যিকগন নয় মনোবিজ্ঞানীগন ও বিজ্ঞানীরাও গবেষণা করেছেন মানব মনের ভালোবাসা নামক অনুভূতি নিয়ে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, একজন ব্যক্তি অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক মোট চার মিনিট ৯০ সেকেন্ড সময় নেয়। গবেষকরা এটাও দেখেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির কিছু বিষয় বিবেচনা করে। তার মধ্যে ৫৫ শতাংশ হলো তার অঙ্গভঙ্গি বা বাহ্যিক রূপ, ৩৮ শতাংশ কণ্ঠস্বর ও কথা বলার ভঙ্গি এবং মাত্র ৭ শতাংশ তাদের মূল বক্তব্য শোনে।

যুক্তরাষ্ট্রের রটার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেলেন ফিসার জানান -প্রেমের তিনটি স্তর রয়েছে। এই তিনটি স্তরের প্রতিটি স্তরই ভিন্ন ভিন্ন হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়।

স্তরগুলো হলো- ভালোবাসার ইচ্ছে, আকর্ষণ ও সংযুক্তি।

ভালোবাসা হলো পার্থিব জীবনের এক বিস্ময়কর অনুভূতি। যা আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দরতম ও টিকে আছে।

ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা না থাকলেও রয়েছে কিছু বৈশিষ্ট্যঃ

ভালোবাসা কখনও পারফেক্ট হয় না। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি ভালো খারাপ সব জেনেও কারও সঙ্গ ভালো লাগা।

নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ভালো লাগা মানুষটিকে মনে করা।

ভালো লাগার মানুষটিকে না পেলে হয়তো জীবনের কোন অর্থ নেই এরকম অনুভূতি হবে।

বিপরীত স্বভাবের মানুষের প্রতি ভালোবাসা বা প্রেম জন্মাতে পারে।

ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টিশীল তাই চিন্তা – চেতনার উন্মোচন ঘটতে পারে।

ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হতে দেখলে ঈর্ষাবোধ সৃষ্টি হবে।

ভালো লাগার মানুষটিকে বার বার কল্পনা করা বা তার উপস্থিতি অনুভব করা।

মনে ভালোবাসা জন্মালে সহজাত ভাবে ব্যাক্তিকে আগের চেয়ে আরো বেশি আকর্ষণীয় এবং প্রফুল্ল দেখাবে।

ভালোবাসার মানুষটির সাথে বার বার দেখা করার বা কাছে যাওয়ার অজুহাত খোঁজা।

হয়তো কোন ব্যাক্তির মাঝে বিশেষ কোন মুগ্ধতা নেই তবুও প্রবল আকর্ষণ অনুভব করা।

ভালোবাসার উল্টো পিঠে যাতনা জেনেও ভালোবাসতে ইচ্ছে করা।

ভালোবাসা কোন সময় কেন্দ্রিক থাকেনা আবার ভালোবাসা একদিন এর জন্যও হয় না। প্রতিদিন একটু একটু করে বা দীর্ঘ সময় ধরে এটি বিরাজ করতে পারে।

যে কোন বিষয়কে পরোয়া না করে, চক্ষুলজ্জা ডিঙ্গিয়ে কাউকে নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার যে প্রবল ইচ্ছা বা ভাবনা মনে জাগে তাই ভালোবাসা।

কারও প্রতি সহানুভূতি বা শ্রদ্ধাবোধও ভালোবাসার একটি অন্যতম লক্ষণ।

ভালোবাসার নেই কোন সংজ্ঞা, চিত্র বা পরিমাপ। কারও প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মনের কনে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে যে অনুভূতিগুলো নাড়া দেয় তাই ভালোবাসা। তবে শুধু ভালবাসলেই হয় না এ ভালোবাসা ধরে রাখতে পরিচর্চার প্রয়োজন।

কথায় আছে –

ভালোবাসার বাগানে সম্পর্কগুলো হলো এক একটি জীবন্ত গাছ আর সেই বাগানের মালী হিসেবে নিজেকে বসিয়ে দিয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করলেই ভালোবাসা সুগন্ধ ছড়াতে থাকবে আপনার চারপাশে। তাই ভালোবাসার যত্ন নিতে হয়। গাছে পানি না দিলে যেমন গাছটি মরে যায়, ভালোবাসার যত্ন না নিলে ভালোবাসাও মরে যায়!