বিভিন্ন দেশে বিয়ের মজার রীতি

কোন কোন সমাজের বিয়ের রীতি অন্য সমাজের বিপরীত। কোনো সমাজের বিয়ের রীতি আবার আরেক সমাজে হাসির উদ্রেক করে। বেশ মজাও দেয়। সে রকমই কয়েকটি দেশের মজার বিয়ের রীতি এখানে তুলে ধরা হলো।

বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে ঘটক ছেলের পক্ষ থেকে মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মেয়ের পক্ষ হয়েও ছেলের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে আসেন।আমাদের দেশে ঘটকদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে ছেলে ও মেয়ে উভয়কে পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয়, সুদর্শন ও যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করা।

পেশাদার ও শখের- এ দুই শ্রেণীর ঘটক দেখা যায় বাংলাদেশে। পেশাদার ঘটকরা প্রতিটি ঘটকালির জন্য নির্দিষ্ট অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী গ্রহণ করে থাকেন। আর শখের ঘটকালি হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে ঘটকের দায়িত্ব পালন করা।বাংলাদেশে বিয়ের অতীত রীতিনীতি বিষয়ে চীনের সঙ্গে খুব বেশি অমিল নেই। এ জন্য একটি ঘটনা বলা যেতে পারে-

তখন শীতকাল, পিঠা আর টাটকা সবজি খাওয়ার জন্য একবার প্রত্যন্ত এক গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাই। ঘটনাক্রমে সেদিনই ওই বাড়িতে মেয়ে দেখার জন্য ছেলের পক্ষের লোকজন আসেন।সবাই মেয়ে দেখার অপেক্ষায় আছেন। অবশেষে মেয়েটি শাড়ি পরে ঘোমটা দিয়ে এসে দাঁড়ালো। ছেলেপক্ষ থেকে তাকে হাঁটতে বললেন। মেয়েটি হাঁটলো। ঘোমটা খুলে চুল দেখাতে বলা হলে চুল দেখালো।

এরপর ছেলেপক্ষ তাকে হাসতে বললো। কোরান থেকে কিছু সুরা পাঠ করতে বলার পর হাত ও পায়ের নখ দেখাতে বলা হলো। মেয়েটিও একে একে সব করে দেখালো। অবশেষে ছেলেপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মেয়ের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলো।এই পুরো দৃশ্য পাত্র উপভোগ করলো ও তার আত্মীয়দের কাছে বিয়ের সম্মতি প্রকাশ করলো।

চীন:

চীনের ইতিহাস সুদীর্ঘ। বিস্তীর্ণ তাদের ভূখণ্ড। তাই, চীনের বিভিন্ন জায়গায় বিয়ের আচার ও রীতিনীতিও ভিন্ন। তবে মূল বিষয়গুলো প্রায় একই রকম।প্রাচীন চীনে একটি বিয়ের মোট ৬টি অনুষ্ঠান হতো। এগুলোর মধ্যে আছে মেয়ে পক্ষকে যৌতুক দেওয়া, বিয়ের বাগদান, ভোজ ইত্যাদি। সেসময় একটি ছেলে যদি এক মেয়েকে পছন্দ করতো, তাহলে তিনি মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ঘটককে পাঠাতেন।

সেখানকার ঘটক দু’পক্ষের নাম, বয়স, পারিবারিক অবস্থা ইত্যাদি তথ্য দু’পক্ষকে জানিয়ে দিতো। দু’পক্ষ মোটামুটি রাজি হলে ঘটক মেয়েপক্ষের বাড়িতে ছেলেপক্ষকে যাওয়ার দিন নির্ধারণ করে দিতো।ছেলেপক্ষ মেয়ের বাড়িতে গিয়ে মেয়েকে দেখা ছাড়াও মেয়ের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ও মেয়ের চরিত্র, মেজাজ-মর্জি যাচাই করে নিতো। তবে বিয়ের আগে মেয়েপক্ষ ছেলের বাড়িতে যেতো না।

বিয়ের দিন নিয়ে চীনের আরো কিছু মজার রীতিনীতি আছে। যেমন: বিয়ের দিন কনে লাল পোশাক পরে। বর্তমানে অবশ্য অনেক কনে পাশ্চাত্যের অনুকরণে সাদা রংয়ের লম্বা স্কার্ট পরেন। শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় কনেকে কাঁদতে হয়।কনের বিদায়ের সময় বাবা-মাও চোখের জলে বুক ভাসায়। চীনের কোনো কোনো অঞ্চলে স্বামীর ঘরে প্রবেশের আগে কনেকে আগুন জ্বালানো একটি গামলা পার হতে হয়।এ রীতির অর্থ হলো, সব অমঙ্গল আগুনে পুড়ে যাক ও নতুন দম্পতির জীবন আগুনের মতো উজ্জ্বল হোক।

ফ্রান্স:

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ও প্রেমময় দেশগুলোর একটি হচ্ছে ফ্রান্স। সাদা রং ফ্রান্সের বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রধান রং। সাজগোজের অলংকার, ফুল, কনের কাপড় সবই সেখানে সাদা হয়ে থাকে। এ থেকে বোঝা যায়, ফরাসিদের চোখে বিয়ে হচ্ছে শান্তি ও পবিত্রতার প্রতীক।

ব্রিটিশ:

বিয়ে সর্বদাই পবিত্র হওয়া উচিত। আর তাই পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ-রীতির বিয়ে অনুষ্ঠানে কনে পদ্মফুল হাতে রাখে। ব্রিটিশদের চোখে এই ফুল সৌভাগ্যের প্রতীক।ব্রিটিশদের বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণত দুপুরে আয়োজিত হয়। তাদের বিয়ের কেক তৈরিতে হরেক রকম ফল ব্যবহার করা হয়। এ কেককে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয়।

জার্মানি:

জার্মানরা খুব শান্ত প্রকৃতির বলে ধারণা করা হলেও বিয়ে নিয়ে তাদেরও উন্মাদনার শেষ নেই। তাদের বিয়েতে বিশেষ পার্টির আয়োজন করা হয়। এই পার্টিতে বর ও কনেকে কেন্দ্র করে নানা মজা করা হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি হচ্ছে, নাচতে নাচতে আনন্দের সঙ্গে থালা-বাসন ছুঁড়ে ফেলা।আবার যদি স্বামী স্ত্রীকে দেখতে চায়, তাহলে স্ত্রীর বন্ধুকে ঘুষ দেওয়ার মতো টাকা দিতে হয়। নইলে স্ত্রীকে দেখার অনুমোদন দেয় না বন্ধুরা।

গ্রিস:

গ্রিসের বিয়ের রীতিনীতিকে খুব সুস্বাদু একটি মিষ্টি রীতি বলা যেতে পারে। সেখানে কনেরা নিজের হাত মোজার ভেতরে কিছু মিষ্টি ক্যান্ডি রাখে। এ ব্যতিক্রমী কাণ্ডের কারণ, নিজের বিবাহিত জীবনকে আরো মিষ্টিময় করে তোলা। এছাড়া গ্রিকরা ঐতিহ্যবাহী রাউন্ড ডান্সের গোলাকার নৃত্যের মাধ্যমে বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানায়।

রাশিয়া:

রাশিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে যে শব্দ সবচেয়ে বেশি শোনা যায়, তা হলো ‘তিক্ত’। অনুষ্ঠানে যদি কেউ উচ্চস্বরে বলে, “তিক্ত, তিক্ত”, তাহলে সবাই একসঙ্গে তিক্ত বলবে। আর স্বামী ও স্ত্রীকে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে চুমু খাবে।এরপর যতবার অতিথিদের মধ্য থেকে উচ্চস্বরে তিক্ত, তিক্ত বলা হবে, ততবার দম্পতিকে মিষ্টি চুমু দিয়ে অতিথিদের প্রতি সাড়া দিতে হবে।অন্তত দশ-বারো বার চুমু খেলে তবেই অতিথিরা সন্তুষ্ট হয়। কারণ, রুশদের ধারণা, স্বামী-স্ত্রীর চুমু মদের তিক্ততাকেও মিষ্টি করতে পারে!

রহমত উল্যাহ

প্রকাশ করেছেন

Best Marriage Media Bangladesh

Best Marriage Media in Bangladesh | Bibahabd is the Leading Bangladeshi Matrimony website, Provides online and offline matchmaking service for marital relationship.

মন্তব্য করুন