বিয়ে হলো সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দুটি বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিয়ের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ তাদের দাম্পত্য জীবন শুরু করে। আর তাই বিয়ে যুগ যুগ ধরে মঙ্গলজনক ও ঐতিহ্যবাহী বন্ধন হিসেবে মনে করা হয়। পারিবারিক ও প্রেমের দু’ভাবে বিয়ে হয়ে থাকে। অচেনা অজানা মানুষ নাকি পূর্ব পরিচিত ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধলে সুখী হওয়া যায়? এ নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক। অনেকে মনে করে বাবা-মা বা অভিভাবকের মনোনীত পাত্র-পাত্রী বিয়ে করলে তাদের আশীর্বাদে সুখী হওয়া যায়। আবার অনেকে মনে করেন নিজেদের পছন্দে বিয়ে করলে দাম্পত্য সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো থাকে।
সাম্প্রতিক কালে কিছু গবেষনায় উঠে এসেছে, প্রেমের বিয়ে গুলোর চাইতে পারিবারিক মাধ্যমে আয়োজিত বিয়ে গুলোর স্থায়ীত্ব বেশী হয়ে থাকে, আবার বিচ্ছেদের পরিমাণটাও হয় কম। যদিও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নীরব সহিংসতার শিকার ঘটনা গুলো পারিবারিক রক্ষনশীলতায় অপ্রকাশিতই রয়ে যায়। আসুন দেখি পারিবারিক বিয়ে ও প্রেমের বিয়ে নিয়ে তুলনামূলক কিছু বিশ্লেষন –
অপরিপূর্ণতা ও প্রত্যাশা
প্রেমের বিয়ের চায়তে পারিবারিক বিয়ে গুলতে জীবন সঙ্গীদের মধ্যে প্রত্যাশার পরিমাণ একদম কম থাকে কারন পারিবারিক বিয়ে গুলোতে বর কনে একে অন্যের মধ্যে তেমন কোন বোঝাপড়া থাকেনা ফলে একে অন্যের উপর প্রত্যাশা ও কম থাকে। ফলে বিয়ের পর ও প্রত্যাশা না পুরনের কারনে কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়না এবং দ্বন্দ ও কম হয়।
সামঞ্জস্যতার বিচার
পারিবারিক ভাবে নির্ধারিত বিয়ে গুলো সম্পূর্ণ সামাজিক মর্যাদা ও বংশ সহ সকল বিষয়ের সামঞ্জস্যতা রক্ষা করা হয় । সমসামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন পরিবারের মধ্যকার সম্পর্ক হয় দীর্ঘস্থায়ী, অপর পক্ষে ভালোবাসার সম্পর্কের বিয়েতে বংশ মর্যাদার পরিবর্তে শুধু ভালবাসাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বেশী, কথায় বলে প্রেম অন্ধ হয়।
সঠিক সঙ্গী নির্বাচনে পরিবারের অবদান
জীবন সঙ্গী নির্বাচন করা সহজ কোন কাজ নয় । নিজের জীবন সঙ্গী খুজে বের করা মুখের কথা নয়। পারিবারিক ভাবে নির্ধারিত বিয়েতে এই ঝামেলা একদমই থাকে না কারন পরিবারের সদস্যরা এই দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং তারা সবাই মিলে একজন আদর্শ সঙ্গী খুজে বের করেন। ফলে পারিবারিক বিয়ের পাত্র বা পাত্রী নির্বাচনে সম্পূর্ণ পরিশ্রম পরিবারের সদস্যরা বহন করে এবং সানন্দে করে ।
বিয়ে শুধু দুজন মানুষের না, বরং দুটি পরিবারের সম্পর্ক
পারিবারিক ভাবে নির্ধারিত বিয়ে কোন একটা নির্দিষ্ট সম্পর্ককে না বুঝিয়ে অনেক গুলো সম্পর্কের ভিত্তিকে বোঝায়। এরকম সম্পর্ক গুলতে কোন দম্পত্তির মধ্যে যদি কোন মতো বিরোধ হয় তখন পরিবারের সবায় মিলে বিরোধ মেটানোর ব্যবস্থা করে, দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক জোড়া দিতে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। পরিবার এই সমস্যাকে একান্ত নিজের সমস্যা বলে মনে করে।
ভালোবাসার পাগলামি
প্রেমের বিয়েতে জীবনসঙ্গী একে ওপরের প্রতি যে ভালোবাসার টান অনুভব করে পারিবারিক বিয়েতে টানটা কম হয় এবং আকর্ষণ ও কম থাকে। পারিবারিক বিয়ে গুলোতে ভালোবাসার পাগলামিটা কম থাকে। পারিবারিক বিয়েতে ভালোবাসার পাগলামি তখন সৃষ্টি হয় যখন একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে।
বিচ্ছেদের বিভীষিকা
পারিবারিক বিয়েতে সব দম্পত্তিরা সুখী হবে এমন কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। এসকল বিয়ের ক্ষেত্রেও দম্পত্তিদের মধ্যে অসুস্থ সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে পরিবার তাদের সামাজিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে তালাক বা বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে, অভিভাবক মনে করে তালাকের মতো সিদ্ধান্তে মানুষ জানাজানি হলে তাদের সম্মানহানী হবে, ফলে তারা যেকোন পরিস্থিতিতে তালাকের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনা। এমন অবস্থায় বিবাহিত দম্পত্তিরা না পারে সুখে সংসার করতে না পারে এ সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে। তাদের জীবন হয়ে পরে বিভীষিকাময়।