অবশেষে রহস্যের উদঘাটন। নারীদের মতো পুরুষদের চোখে সহজে পানি আসে না। কিন্তু কেন? সেই উত্তর অবশেষে পাওয়া গেল। সর্বভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষ ও নারীদের মস্তিষ্কে কিছু পার্থক্য থাকে। যার জন্য পুরুষরা নারীদের মতো অনুভূতিহীন ও আবেগপ্রবণ হন না। কয়েকজন পুরুষের মধ্যে কোনও আবেগ বা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাও থাকে না।
কার আবেগ বেশি নারী না পুরুষের? এই আলোচনা আমরা হরহামেশায় করে থাকি। মস্তিষ্কের সংযোগকারী বিভিন্ন স্নায়ুজালের পার্থক্যের কারণেই মানুষের আবেগগত আচরণের পার্থক্য হয়। কিছু মানুষ বেশি আবেগী হয় এবং কিছু মানুষের ভেতর আবেগ কম দেখা যায়। আমাদের আবেগ এর উৎপত্তি হচ্ছে মস্তিস্কে।
যে কোনো নারীদের চাইতে পুরুষের আবেগের ভিন্নতা রয়েছে। ব্যস্ততা বা সংসারের চাপে নয়, মস্তিষ্কের গঠনের কারণে ছেলেদের হৃদয়ে আবেগ খেলে কম। এ কথা জরিপে নয়, গবেষণা করে পাওয়া গেছে। শুধু আবেগ নয় মস্তিষ্কের গঠনের ভিন্নতার কারণে উদাসীন হওয়ারও প্রবণতা পুরুষদের বেশি।
অপরের প্রতি সহানুভূতির অভাব ও অন্যের অনুভূতির তোয়াক্কা না করাকেও আবেগহীন-উদাসীনতার উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়। পুরুষের অপরাধ বোধও নারীর তুলনায় কম হয়। এই বিষয়গুলো আসলে বিবেক ও সহমর্মীতার উন্নয়নে বাধাগ্রস্ততার সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষণা অনুযায়ী, মস্তিষ্কের যে অংশ অপরের আবেগ এবং অনুভূতি বোঝার সঙ্গে জড়িতে সেই অংশে ‘অ্যান্টেরিয়র ইন্সুলা’ বা ‘গ্রে ম্যাটার’য়ের ঘনত্ব, সাধারণভাবে বেড়ে ওঠা ছেলেরা যাদের মধ্যে আবেগ বর্জিত আচরণ দেখা যায়- তাদের বেশি। ছেলেদের আবেগ বর্জিত আচরণের তারতম্যের ১৯ শতাংশের ব্যাখ্যা মেলে এই ঘনত্বের তারতম্য থেকে। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
গবেষণার প্রধান, সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ বেজেল’য়ের নোরা মারিয়া রাশলে বলেন, “আমাদের গবেষণা দেখায় যে, আবেগবর্জিত আচরণ বাড়ন্ত ছেলেদের মস্তিষ্কের গঠনের তারতম্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।”
এই গবেষণায় ‘ম্যাগনেটিক রেজোনান্স ইমেজিং (এমআরআই)’য়ের মাধ্যমে ১৮৯ জন কিশোরের মস্তিষ্কের বিকাশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। উদ্দেশ্যে ছিল আবেগ বর্জিত আচরণের কারণে মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আসে কি না তা দেখা। দেখা যায়, ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে আবেগ বর্জিত আচরণ ও মস্তিষ্কের গঠনের মধ্যে সম্পর্ক ভিন্ন।
গবেষণাটি বলে, “অংশগ্রহণকারীদের অ্যান্টেরিয়র ইন্সুলাতে গ্রে ম্যাটারের মাত্রার তারতম্যের রিপোর্ট কিংবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এই তারতম্যের মাত্রার ভিন্নতা, সেই সঙ্গে আবেগবর্জিত আচরণ একজন ব্যাক্তির পরিণত বয়সের আচরণের পূর্বাভাস দিতে পারে।”
বাড়ন্ত ছেলেদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে অ্যান্টেরিয়র ইনসুলা বা ধূষর কোষের সংখ্যা বেশি থাকে। মস্তিষ্কে এই ধূষর কোষের মাধ্যমেই অন্যের দুঃখে মানুষ সহানুভূতিশীল হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের মস্তিষ্কে এই ধূষর কোষের সংখ্যা কমতে থাকে। মূলত মস্তিষ্কের গঠনই নির্ধারণ করে সেই মানুষটির আবেগ, অনুভূতি কেমন হবে।