কোন কমিউনিটি সেন্টারে যাবেন ?

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকাতে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে উঠেছে কমিউনিটি সেন্টার। পানচিনি, বাগদান, বিবাহ, বিবাহত্তোর সংবর্ধনা, জন্মদিন, বিভিন্ন ধরনের সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ  যে কোন অনুষ্ঠানে ব্যাপক মানুষের সমাগম নিশ্চিত করা যায়। শুধু মানুষের সমাগমই নয় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কাজ, অন্দর সজ্জাসহ অনেক কাজ কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ বা তাদের মনোনীত লোক করে থাকেন। নিজেদের শুধু তদারকি করলেই চলে। এলাকা ভেদে কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়ার হার ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার তারতম্য রয়েছে।

 ভবনের বৈশিষ্ট্য ও অন্দর সজ্জাঃ-

কমিউনিটি সেন্টারের ভবনসমূহ নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে রয়েছে। এলাকা ভেদে ভবনগুলো নীচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত বিস্তৃত। বেশীর ভাগ ভবনের প্রতিটি তলা/ ফ্লোরই টাইলস করা, কিছু রয়েছে মোজাইক। দৃষ্টিনন্দন অন্দর সজ্জা, সুসজ্জিত বসার ব্যবস্থা এবং সুপরিসর ডাইনিং রুম যে কাউকে অবিভূত করে তুলবে। রয়েছে বর ও কনে বসার আলাদা ব্যবস্থা। আগত অতিথিদের মন সুরে ভরিয়ে দিতে রয়েছে অভ্যন্তরীন সিমফনি। প্রায় প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টারই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত। কেবল মাত্র অভিজাত এলাকাগুলোতে অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টারেই নিজস্ব জেনারটের সাহায্যে লোডশেডিং এর সময় শীতাতাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সচল রাখা হয়।

 ডাইনিং ও হলরুমে আসন সংখ্যাঃ-

কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে জায়গা অনুযায়ী আগত অতিথিদের বসার জন্য গড়ে ১৫০ থেকে ৩০০ টি আসন থাকে। কোথাও কোথাও পুরুষ মহিলা বসার আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। ডাইনিং রুম  বা খাবার ঘরেও কমিউনিটি সেন্টারের জায়গা অনুসারে একসাথে ৪০০ জন থেকে ৭০০ জন একত্রে বসে আহার করতে পারবে। বেশীর ভাগ কমিউনিটি সেন্টারেই পুরুষ ও মহিলার খাবারের ব্যবস্থা আলাদা থাকে।

 ভাড়ার হার ও বুকিং দেওয়ার পদ্ধতিঃ-

কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে ভাড়ার হার বছরে দুটি সময় ওঠা নামা করে। গ্রীষ্মের তুলনায় শীতের সময় অনুষ্ঠানাদি বেশি থাকায় এই সময় ভাড়া কিছুটা বেশি। তবে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে ভাড়া তুলনামূলক অনেক কম। যেমন খিলগাঁও থানাধীন খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টারে শীত বা গ্রীষ্মকালে সারাদিন ৯,০০০ টাকা, অর্ধবেলা ৭,৫০০ টাকা, বাসাবো সিটি কর্পোরেশন কমিউনিটি সেন্টারে শীত বা গ্রীষ্মকালে সারাদিন ১২,০০০ টাকা, অর্ধবেলা ৬,৫০০ টাকা, পল্লবী থানাধীন পল্লবী ২নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে শীত বা গ্রীষ্মকালে সারাদিন ৪,২৫০ টাকা, অর্ধবেলা ৪,৭৫০ টাকা, সবুজবাগ থানাধীন বাসাবো কমিউনিটি সেন্টার শীত বা গ্রীষ্মকালে সারাদিন ২০,০০০ টাকা, অর্ধবেলা ১৫,০০০ টাকা, সূত্রাপুর থানাধীন সূত্রাপুর  কমিউনিটি সেন্টার শীত বা গ্রীষ্মকালে সারাদিন ১১,০০০ টাকা, অর্ধবেলা ৫,৯০০ টাকা। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে উঠা খিলগাঁও থানাধীন কমিউনিটি সেন্টারগুলোর গ্রীষ্মকালে সারাদিনের জন্য ২০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০টাকা পর্যন্ত এবং অর্ধবেলা (দুপুর/ রাত) ১০,৫০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত। শীতকালে সারাদিনের জন্য ৩০,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত এবং অর্ধবেলা (দুপুর/ রাত) ১৫,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত।

রামপুরা থানাধীন কমিউনিটি সেন্টারগুলোর গ্রীষ্মকালে সারাদিনের জন্য ২০,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০টাকা পর্যন্ত এবং অর্ধবেলা (দুপুর/ রাত) ১০,০০০ টাকা থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। শীতকালে সারাদিনের জন্য ২৫,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত এবং অর্ধবেলা (দুপুর/ রাত) ১৭,০০০ টাকা থেকে ৩৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।

ধানমন্ডি থানাধীন কমিউনিটি সেন্টারগুলোর গ্রীষ্মকালে অর্ধবেলার (দুপুর/ রাত) জন্য ২৫,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত। শীতকালে অর্ধবেলার (দুপুর/ রাত) জন্য ৩০,০০০ টাকা থেকে ৭০,০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন কমিউনিটি সেন্টারগুলো ১,০৫,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্ধবেলার ভাড়া নিয়ে থাকে।

মিরপুর / পল্লবী থানাধীন কমিউনিটি সেন্টারগুলোর শীত বা গ্রীষ্মকালে সারাদিনের জন্য ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩৫,০০০টাকা পর্যন্ত এবং অর্ধবেলা (দুপুর/ রাত) ৮,৫০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত।

এলাকা ভেদে সর্বনিম্ন ৫ দিন থেকে ৩ মাস পূর্বে বুকিং দিতে হয়। অভিজাত এলাকাতে খালি থাকার উপর নির্ভর করে বুকিংটা। বুকিং মানি বা অগ্রীম বাবদ মোট ভাড়ার শতকরা ১০ ভাগ থেকে শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত বুকিং এর সময় পরিশোধ করতে হয়।

 বাবুর্চি ও ওয়েটার বা খানসামাঃ-

যেকোন বড় আয়োজনে খাবার অন্যতম বিষয়। খাবার রান্নার জন্য কমবেশী প্রতিটি কমিউনিটি সেন্টারেরই নিজস্ব বাবুর্চি রয়েছে। খাবারের মেন্যু অনুযায়ী উপকরণ সরবরাহ করলে তারা নিজ দায়িত্বে মানসম্মত রান্না করে থাকেন। এজন্য অবশ্য তাদের আলাদা পারিশ্রমিক প্রদান করতে হয়। এলাকাভেদে ৫০০ জন থেকে ৭০০ জন লোকের রান্নার জন্য সবুজবাগ, বংশাল, সূত্রাপুর, লালবাগ, চকবাজার, খিলগাঁও ও রামপুরা থানাধীন কমিউনিটি সেন্টারের নিজস্ব বাবুর্চিদের পারিশ্রমিক ৫,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা,মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও পল্লবী থানাধীন কমিউনিটি সেন্টারের বাবুর্চিদের পারিশ্রমিক জনপ্রতি বা প্লেট প্রতি ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা,  পর্যন্ত প্রদান করতে হয়। এছাড়া ধানমন্ডি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বেশীর ভাগই বাবুর্চি নেই।

কোন কোন কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষ ওয়েটার বা খানসামা বিনামূল্যে সরবরাহ করে থাকে। কোথাও আবার ওয়েটার বা খানসামাদের অনুষ্ঠান প্রতি একজনকে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করতে হয়। ২০০ জন লোকের জন্য ১০ জন থেকে ১২ জন এবং ৫০০ জন লোকের জন্য ১৫ জন থেকে ২০ জন ওয়েটার বা খানসামা প্রয়োজন হয়। এদের কিছু সংখ্যক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। রান্না ও খাবার পরিবেশনের সময় নিজেদের তদারকিটা  থাকতে হবে।

 ক্যাটারিং ব্যবস্থাঃ-

কমিউনিটি সেন্টারে ক্যাটারিং সার্ভিস এ প্যাকেজ আকারে জনপ্রতি সাদা পোলাও , মুরগীর রোষ্ট, রেজালা (গরু), বোরহানী, ফিরনী, টিকিয়া ও সালাদ  এই ৭ পদের জন্য ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা নিয়ে থাকে। তবে এখানে রেজালা (খাসী) হলে সাথে আরো ৩০/৪০ টাকা অতিরিক্ত যোগ করতে হবে।

অপর ক্যাটারিং প্যাকেজে কাচ্চি বিরিয়ানী, রেজালা (গরু), বোরহানী, ফিরনী, টিকিয়া ও সালাদ  এই ৬ পদের জন্য ৩০০ টাকা থেকে ৩২৫ টাকা প্রদান করতে হয়। এছাড়া যদি নিজেরা ব্যবস্থা করা যায় তবে ক্যাটারিং প্যাকেজে খরচ হয় ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত।

 বর কনের ষ্টেইজ ও প্রধান গেইটের সাজসজ্জাঃ-

অনুষ্ঠানে বর কনের ষ্টেইজ, প্রধান গেইট ও অন্যান্য সাজসজ্জা নিজেরাও করা যায় আবার ঝামেলা এড়াতে কমিউনিটি সেন্টার কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে চাহিদা অনুসারে বর কনের ষ্টেইজ সাজাতে এলাকা অনুযায়ী ২,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে সাজসজ্জা যদি অতি আকর্ষনীয় হয় সে ক্ষেত্রে খরচ ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়।  অনেক কমিউনিটি সেন্টারে কর্তৃপক্ষ নিজেরাই প্রধান গেইট সাজিয়ে দেয়। কোথাও কোথাও চাহিদা মোতাবেক গেইট সাজাতে  ৭,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

সুত্রঃ অনলাইন ঢাকা

মন্তব্য করুন