সুখী হতে চায় না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। মানুষের মধ্যে সুখী জীবন পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সুখটা কেউ তৈরি করে নিতে চায় না। বরং মানুষ সুখ কিনতে চায়।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সুখ বৈষয়িক বা জাগতিক কোনো ব্যাপার নয়। সুখ বহুলাংশে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার।
হার্ভার্ডের মনোবিজ্ঞানী ড্যান গিলবার্ট বলেন, তোমার সুখ তোমাকেই সংশ্লেষণ (Synthesize) করতে হবে। তোমার শরীরে মনস্তাত্ত্বিক একটি (ইমিউন সিস্টেম) রয়েছে যা তোমার পারিপার্শ্বিকতা বা তোমার বিশ্বকে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করার মাধ্যমে তোমাকে সুখী করে তুলবে। নতুন কাপড়-চোপড় কেনা বা লটারির অগাধ টাকা অর্জন তোমার জীবনের সব দুঃখ দূর করে দিয়ে অনাবিল আনন্দ ও সুখ বয়ে আনবে, এ ধরনের কল্পনা মানুষের চিন্তাশক্তিকে ভুল পথে পরিচালিত করে।
যেভাবে সুখ তৈরি করবেনঃ
সুখের বিপরীতে আছে দুঃখ তাই আপনার জীবনে সুখ-দুঃখ দুটি পরিস্থিতিই আসবে এ সত্যি মেনে নিতে হবে।
প্রাপ্তির তালিকা করুন। আপনি কি কি পান নি সেটা নিয়ে হতাশাবোধ না করে কি কি পেয়েছেন তার হিসেব রাখুন।
নিজেকে ভালবাসুন। অন্য কাউকে নিজের জীবনের সুখের কারন ভাববেন না।
অন্যের জীবনের সাথে নিজের জীবনের তুলনা করবেন না। নিজের আবস্থান কে নিজে সম্মান করুন।
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। কাজে বা জীবনে ব্যর্থতা আসবেই তাই বলে আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না।
পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমাতে হবে। অধ্যাপক স্যান্তোস বলেন- “এখানে চ্যালেঞ্জটা হলো, প্রতি রাতে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানো এবং সেটা হতে হবে সপ্তাহের সাতটি রাতেই। এই সাধারণ বিষয়টি অর্জন করা অনেকের কাছে অনেক কঠিন বলে মনে হয়। বেশি ঘুমানোর ফলে বিষণ্ণতায় ভোগার সম্ভাবনা হ্রাস পায় এবং আপনার ভেতর ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।”
গবেষণায় এসেছে, পানিশূন্যতা, পানির অভাব মানুষের মনের উপর প্রভাব ফেলে। মানুষকে বিষাদগ্রস্ত করে, মানুষের মনে অবসাদ তৈরি করে। বিশেষ করে এটা মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। তাই সুখ তৈরি করতে নিজের মনের অবস্থা ভালো রাখুন।
কথায় আছে স্বাস্থ্যই সকল ‘সুখের’ মূল তাই সুখ তৈরি করতে খাদ্যভাস মেইনটেইন করতে হবে, ধ্যান বা ইওগা করতে পারেন, সকাল-বিকাল হাটা বা ব্যায়াম করতে পারেন। -সর্বচ্চ সময়টা পরিবার কে দিন, কাজের ফাকে তাদের খোঁজ খবর রাখুন।
ভালো বন্ধু বা সঙ্গ বাছায়ে সতর্ক থাকুন।
মানুষের সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব দিন ও সুসম্পর্ক ধরে রাখুন। প্রয়োজন হলে কাউকে এড়িয়ে চলুন কিন্ত সম্পর্ক খারাপ হবে এমন কিছু করবেন না।
ক্ষমা করতে শিখুন। আপনি যত বেশী ক্ষমা করতে পারবেন আপনি মানসিক দিক থেকে তত সুখী হতে পারবেন।
জীবনটা কে ব্যস্ত মহলের চাপে রাখবেন না। নিজের জন্য আলাদা করে সময় বের করে রাখুন এবং ঐ সময়ে আপনি কেবল তাই করবেন যা ঐ দিন ঐ সময় আপনার করতে ইচ্ছে হবে। দেখবেন নিজেকে অন্যরকম সুখী মনে হবে।
সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করবেন এবং অন্যকে উপদেশ দিবেন। দেখবেন আপনার চিন্তা করা ও অন্যের মধ্যে চিন্তাচেতনা বাড়াতে আপনার অন্যরকম ভালো লাগবে। এটাও এক ধরনের সুখ।
সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে বাস্তব যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন কেননা ভার্চুয়াল পরিবেশ আপনাকে সমসাময়িক সুখ দিতে পারবে।
সামাজিক কাজগুলোতে অংশগ্রহন করুন। বেশী বেশী দান করুন। নিজেকে অন্যের মাঝে বিলীন করার মাঝেও সুখ রয়েছে।
অতিমাত্রায় ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন না। বেশী বেশী ভবিষ্যৎ চিন্তা আপনার বর্তমান সময়ের সুখগুলো নষ্ট করে দেয় এবং হতাশা তৈরি করে।
নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও নিজের প্রতি আস্থা রাখতে পারলে আপনি নিজেকে সুখী করতে পারবেন খুব সহজেই। আপনি সুখ যেমন কিনতে পারবেন না তেমনি কয়েকদিনে নিজেকে সুখী মানুষ হিসাবে গড়তেও পারবেন না। সুখবোধ কে নিজের ভিতরে ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে এবং কঠিন সময়ে নিজের মনোবলকে চাঙ্গা রাখতে হবে কেননা দুঃখ ছাড়া সুখ বোধ তৈরি করা সম্ভব নয়।