ছোট নীড়েই আনন্দ

বাড়িটা ছোট।  ঘরগুলোও তেমন খোলামেলা নয়। দুটো শোবার ঘর, খাওয়ার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর আর এক চিলতে বারান্দা।নতুন দম্পতিদের সংসার শুরু হয় সাধারণত এ রকম বাড়ি বা ফ্ল্যাট দিয়েই। ঘর সাজানোর বাজেটও সাধারণত সীমিত হয়। পছন্দ হলেই কিছু কিনে ফেলা যায় না। সঞ্চয় করে প্রয়োজনীয় আসবাবগুলো কেনা হয় একটু একটু করে। তবে ভালোবাসা আর রুচির স্পর্শে এই ছোট্ট নীড়েই গুছিয়ে তুলতে পারেন আপনার সংসার। বিয়ের মৌসুম শেষ হলো মাত্র। এবার সংসার শুরু করার পালা। অনেকেই বিয়ের পর স্বতন্ত্রভাবে সংসার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। উল্টোটাও হয়। যেটাই হোক নতুন বাসস্থানটি সাজানো নিয়ে ভালো লাগা থাকে দুজনের মধ্যেই। মাত্র সংসার শুরু করেছেন রাহানুমা হারুন। পুরোপুরি এখনো বাড়ি গুছিয়ে তুলতে পারেননি। সকালে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে সন্ধ্যার পরই কেনাকাটা শুরু হয়। ‘কেনাকাটার তালিকায় প্রথমেই আছে খাট, আয়না, খাওয়ার টেবিল, সোফা। এরপর কিনব ফ্রিজ। উপহার হিসেবে অনেক বাসনকোসন পেয়েছি। এ কারণে প্রয়োজন ছাড়া এখন এগুলো আর কিনব না। তবে সবকিছুর শুরুতে প্রথমেই দুজনের পরিকল্পনা করে নেওয়াটা জরুরি’, বলেন রাহানুমা হারুন।

খোলামেলা পরিবেশ:
ছোট ঘর, শুনলেই মন খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছে করে চারপাশের দেয়ালটাকে আরেকটু সরিয়ে দিতে। দেয়াল না পিছিয়েও ঘরকে বড় দেখানো যাবে ইচ্ছে করলেই। স্থপতি মো. শওকত রাব্বি চৌধুরী জানালেন সে রকমই কিছু পদ্ধতির কথা। ছোট ঘরকে বড় দেখানোর জন্য খাটো ও হালকা আসবাব ব্যবহার করতে পারেন।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাব না কেনাই ভালো। বাড়ির মধ্যে কোনো কোনা অথবা কলাম থাকলে সে ক্ষেত্রে কিছুটা জায়গা নষ্ট হয়। ইতিবাচকভাবে দেখলে এতে কিছুটা জায়গাও বের হয়। এই জায়গাটুকুতে শেলফ বানিয়ে তাতে বিভিন্ন জিনিস রাখার পরামর্শ দিলেন মো. শওকত রাব্বি চৌধুরী। নিচু উচ্চতার চেয়ারের জন্য সর্বনিম্ন তিন ফুটের চেয়ার বানাতে বা কিনতে পারেন। উচ্চতা এর কম হলে বসার সময় স্বস্তি নাও পেতে পারেন।

নিচু উচ্চতার খাটে আপনার শোবার ঘরকে বড় দেখাবে। এ ছাড়া মেঝেতে ম্যাট্রেস পেতে শোবার ব্যবস্থাও করতে পারেন। বিছানার দুপাশে টেবিল ল্যাম্পও ভালো লাগবে।ছোট ঘরে হলুদ, কমলা, উজ্জ্বল নীল রংগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এই রঙগুলো আলো প্রতিফলিত

করে, ফলে ঘর বড় দেখায়। চাইলে রঙের বদলে ওয়াল ম্যাটও ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই এ বিষয়ে যাঁরা পারদর্শী তাঁদের সাহায্য নিতে হবে। কারণ ওয়াল ম্যাট দেয়ালে লাগানোর সময় বাতাস ঢুকে গেলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা তৈরি হবে। এ ছাড়া ভালো মানের প্লাস্টিক পেইন্ট ব্যবহারে ঘরে চকচকে ভাব আসে। এটাতেও আপনার ঘর দেখতে বড় লাগবে বলে জানান মো. শওকত রাব্বি চৌধুরী ।

নান্দনিক বাসন:
সারা দিন ব্যস্ততার মধ্যে একসঙ্গে বসে সময় কাটানো হয় না অনেকেরই। সকালের চা কিংবা রাতের খাওয়ার সময়টায়ই যা একটু গল্প করা হয়। এ কারণে খাবার পরিবেশনের পাত্রগুলো যদি একটু নান্দনিক নকশার হয় তাহলে তা মন ভালো রাখার মন্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে।ক্লে ইমেজের স্বত্বাধিকারী রেহানা আক্তার জানান, ‘সাধারণত নতুন দম্পতিরা একসঙ্গে সবকিছু কেনেন না। একটু একটু করে প্রয়োজনমতো বাসন কিনে নিয়ে যান। ক্লে ইমেজে দম্পতিদের জন্য ডিনার সেট, নাশতা খাওয়ার সেট, চা খাওয়ার সেট পাওয়া যায়। বিশেষ কিছু রং ব্যবহার করি আমরা নতুন সংসারকে রঙিন করে তোলার জন্য। তাঁরা চাইলে বাসনের একদিকে আমরা তাঁদের নামও লিখে দিই।’

খাবারের বাসনগুলো দৃষ্টিনন্দন হলে পরবর্তী সময়ে এগুলো অন্য কাজেও ব্যবহার করা যায়। যেমন প্লেট পুরোনো হয়ে গেলে টবের নিচে রাখতে পারেন। ঠিক একইভাবে কাপের হাতল ভেঙে গেলে সেটিকে টব কিংবা রান্নাঘরে চামচ রাখার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

কম বাজেটেই ষোলো আনা:
নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগবে, এমনটি নয়। একটু পরিকল্পনা করে নিলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নতুন দম্পতিদের দেশীয় জিনিসের প্রতি কিছুটা আকর্ষণ থাকে। কাঠের আসবাবের থেকে এগুলোর দামও কিছুটা কম হয়ে থাকে।কাঠের আসবাবের বদলে বিভিন্ন বোর্ডের তৈরি আসবাব ব্যবহার করা যায়।এ ক্ষেত্রে বেতের আসবাব, রট আয়রনের আসবাব, হোগলা পাতার তৈরি আসবাবও রুচিশীল পরিবেশ তৈরি করবে।

ডেকর ইডের আসবাব ডিজাইনার তৌহিদা হক জানান, ‘মানুষের জীবনযাত্রা ও রুচির পরিবর্তনে বদলে গেছে বাড়ি সাজানোর ধরনও। বাড়ি সাজানোর সময় শুধু প্রয়োজন ছাড়াও একটু সৌন্দর্যের ছোঁয়া সবাই চায়। অনুষঙ্গগুলো রুচিকর হলে তা বাড়ির পরিবেশে নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলবে।’হোগলা পাতার তৈরি আসবাবগুলো একসঙ্গে দুটি কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন। দম্পতিদের জন্য ডেকোর ইডেতে আছে মিনি প্রিক্স সোফাসেট। এতে আছে একটি দুই সিট, একটি এক সিটের সোফা এবং একটি সেন্টার টেবিল। এর নিচের অংশে ড্রয়ার

 

বানিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া মোড়া, বেবি চেয়ার, অটোমান চেয়ারগুলো নতুন সংসারের জন্য সাশ্রয়ী ও উপযুক্ত বলে জানান তৌহিদা হক।

দেশীয় উপকরণে তৈরি টেবিল ল্যাম্প, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, ঝুড়ি, শো-পিস দামেও কম হবে, দেখতেও ভালো লাগবে। এগুলোর ফাঁকফোকর দিয়ে ছোট গাছ বা মানিপ্ল্যান্ট রাখার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। দেয়ালে পেইন্টিং ঝোলাতে পারেন। তবে সেটি আপনার ঘরের অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে যাচ্ছে কি না, সেটি খেয়াল করবেন। ঘরের বিভিন্ন কোনায় রাখা টেবিল ল্যাম্পের আলো মায়াবী ও রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করে। দেয়ালে আয়নাও লাগাতে পারেন। আয়নার প্রতিফলনে ঘরকে কিছুটা বড় লাগে। প্রয়োজনীয় চাবি রাখার জন্য দেয়ালেই ব্যবস্থা রাখুন।

স্নানঘরের নান্দনিকতা:
স্নানঘর ছোট হোক কিংবা বড়, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যদি জায়গা থাকে তাহলে ছোট গাছ রাখুন। প্রাণবন্ত ভাব আসবে। ছোট মোমদানি কিংবা দু-একটি শো-পিসও রাখতে পারেন। বেসিনের বা তাকের ওপর জায়গা না হলে দেয়ালেও কোনো কিছু ঝোলাতে পারেন। এতে করে বৈচিত্র্য তৈরি হবে। শাওয়ার কার্টন ব্যবহার করলে সব জায়গায় পানি ছড়িয়ে যাবে না। মেঝেতে ম্যাট্রেস রাখতে পারলে ভালো, ভেজা জায়গায় পা পিছলে পড়ার ভয় থাকবে না। মেঝে সব সময় শুকনা রাখার চেষ্টা করুন।বাথরুমের সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ও অন্যান্য প্রসাধনী রাখার পাত্রের সেট পাওয়া যায়। চাইলে দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিনে নিতে পারেন। ছোট-বড় কয়েক আকৃতির তোয়ালে রাখুন। কোনোটি হাত মোছার জন্য, কোনোটি গোসলের পর ব্যবহারের জন্য।

বাড়তি একটু জায়গা:
বাড়িতে প্রয়োজনের তুলনায় একটি ঘর বেশি পেলে মনের মতো করে সাজান। সেটাকে টিভি দেখার ঘর কিংবা পড়ার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। নিচু বিছানা, উজ্জ্বল নকশার শতরঞ্জি, নিচু চেয়ার, অনেক কুশন দিয়ে বৈচিত্র্য তৈরি করতে পারেন। তবে একটি ঘরের সব আসবাব নিচু হলে দেখতে ভালো লাগবে না। উঁচু আসবাবগুলো পেছনে বা দেয়ালের সঙ্গে লাগিয়ে রাখুন। নিচু আসবাবগুলো সামনের দিকে রাখুন। সারা দিন পরে যেখানে নিজেদের মতো করে কাটানো যাবে একান্ত কিছু মুহূর্ত। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার জন্যও কিন্তু এমন একটি ঘরের কথাই প্রথমে মনে আসবে।

উজ্জ্বলতা বাড়াতে:
নতুন দম্পতির বাড়িতে রঙের ছটা না থাকলে দেখতে কিছুটা বেমানান লাগে। বাড়িতে উজ্জ্বলতা আনার কিছু জন্য কিছু পদ্ধতির কথা জানালেন এথনিকার স্বত্বাধিকারী নাসিরা মানসুর। উজ্জ্বল রঙের শতরঞ্জি, পর্দা, কুশন ব্যবহারে ঘরে বৈচিত্র্য আসবে। প্রিন্ট করা সুতির পর্দা ব্যবহার করলে ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারবে। একরঙা পর্দা ব্যবহার করলে প্রিন্ট করা কুশন কভার পছন্দ করুন। উল্টোটাও করতে পারেন। শোবার ঘরের কোনায় সম্ভব হলে ছোট একটা বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। না হলে শতরঞ্জির ওপরেও অনেক রঙের কুশন রাখা যায়। এতে করে বাড়তি বসার জায়গাও হবে, কিছুটা ভিন্নতাও আসবে।

– রয়া মুনতাসীর

ওকে সময় দিচ্ছেন তো?

কাজ তো থাকবেই, তবু দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরকে সময় দেওয়া জরুরি। আধুনিক জীবনে ‘কোয়ালিটি টাইম’-এর কথা উচ্চারিত হচ্ছে বারবার। অর্থাৎ, কতটা সময় দিলাম, তার চেয়েও বড় কীভাবে সময় দিলাম…

ব্যস্ত জীবন। ব্যস্ত দিন। স্বামী-স্ত্রী দুজনরেই দম ফেলার অবকাশ নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দুজন দুদিকে। স্বামী তো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস নিয়েই ব্যস্ত। ওদিকে ভোরে সন্তানদের স্কুলের জন্য তৈরি করে দিয়ে স্ত্রীও অফিসমুখী। শুধু কর্মজীবী স্ত্রীই নন, গৃহিণীর কাজের পরিমাণও কোনো অংশে কম নয়। ভোর থেকে শুরু হয় তাঁর কর্মযজ্ঞ। এই ব্যস্ততার মধ্যে কখন যে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে খানিকটা দূরে সরে গেছেন, টেরও পাননি। দিনের পর দিন একসঙ্গে থাকলেও শেষ কবে খুনসুটিতে মেতেছিলেন, মনে করতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দাম্পত্য জীবনে কোয়ালিটি টাইম বা গুণগত সময়ের খুব প্রয়োজন। তাহলে অনেক ব্যস্ততার মধ্যে পুরোনো সেই দিনের মতো এখনো ভালোবাসার রেশ থাকে সম্পর্কে। ১০ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকার চেয়ে এক ঘণ্টার গুণগত সময় অনেক বেশি কার্যকর সম্পর্কের বুনটে।

কাজের বাইরে একান্তে

সারা সপ্তাহেই ব্যস্ততা। এর মধ্যেও দুজন দুজনের জন্য খানিকটা সময় রাখতেই পারেন। অফিস থেকে ফেরার পথে স্বামী-স্ত্রী কোনো কফি শপে গিয়ে কফিতে চুমুক দিতে দিতে কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারেন। তখন সংসারের হালচাল, সন্তানের ভবিষ্যৎ কিংবা অফিসের সমস্যাগুলো ছাপিয়ে নিজেদের জন্য একটু সময় দিন। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোরশেদা বেগমের মতে, গুণগত সময় মানেই পরিবারের জন্য একান্ত কিছু সময়, যে সময়টুকুতে সব ধরনের সমস্যা দূরে সরিয়ে শুধু ভালোবাসার আবেশে থাকবেন দুজন। তখন পরস্পরের প্রতি অভিযোগগুলো তুলবেন না। তাহলে দাম্পত্য জীবনের অনেক সমস্যা মাথা চাড়া দেবে না।

এই দিন তোমার-আমার

মনে হতেই পারে, কেন প্রয়োজন কোয়ালিটি টাইম? এই তো বেশ ভালো আছি। সংসারের জন্যই তো কাজ করছি। স্বামী-সন্তানের দেখভাল করেই তো জীবন কাটিয়ে দিলাম। তবুও কোথায় যেন বেদনার সুর বাজে। অনেকে তো বুঝতেই পারেন না যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলাফলে কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় দাম্পত্যে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ কিংবা ভার্চুয়াল জগতের হাতছানি। এটি যেন না হয়। হাজারো কাজের মধ্যে একটি দিন বেছে নিন। সেই দিনে স্বামী-স্ত্রী বাইরে ঘুরতে যেতে পারেন। রাতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতে পারেন। অল্প আয়োজনে রিকশায়ও আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করতে পারেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার বিটপী দাশ সব সময় চেষ্টা করেন পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটাতে। ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে না গেলে স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বাড়িতে বসে সিনেমা দেখেন। বন্ধুদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, ‘কাজের বাইরে আসলে পুরো সময়টা আমার স্বামী-সন্তানের জন্য বরাদ্দ। সন্ধ্যার চা এবং রাতের খাবার সব সময় স্বামীর সঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করি। এই সময়টুকু না দিলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত থাকে না।’

এগিয়ে আসতে হবে স্বামীকেও

শুধু স্ত্রী একাই কোয়ালিটি টাইম নিয়ে ভাববেন, তা নয়। পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য দুজনেরই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে, বিশেষ করে স্বামীদের। তাঁরা অনেক সময় মনে করেন, সব দায়িত্ব শুধু স্ত্রীদেরই। বিষয়টি তেমন হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ ভাবেন, দামি উপহার কিংবা কেনাকাটার টাকা দিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ; বরং স্ত্রীকে হঠাৎ তাঁর প্রিয় কোনো ফুল, বই বা ছোট্ট কিছু দিয়ে অবাক করে দিতে পারেন। ব্যস্ততার মধ্যেও যে তাঁকে মনে রেখেছেন, এতেই স্ত্রী খুশি হবেন। কাজ তো থাকবেই, তবুও অফিস থেকে ফিরে একসঙ্গে এক কাপ চা খেলে ক্ষতি কী?

প্রাধান্য দিন সঙ্গীর পছন্দকে

সবচেয়ে প্রাধান্য দিতে হবে সঙ্গীর ছোট ছোট পছন্দকে। খুব সূক্ষ্ম ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিলে দাম্পত্য জীবন সুখকর হয়ে উঠবে। পারস্পরিক ভুল বোঝাঝুঝি বড় আকার ধারণ করে না, এমনটাই মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান তাহনিয়্যাত আহমেদ। সঙ্গীকে সব সময় বুঝিয়ে দিতে হবে, আপনার জীবনে তাঁর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। পর্যাপ্ত সময় না দিলে তিনি একাকিত্ববোধে ভুগতে পারেন। পরিস্থিতি এমন হওয়ার আগেই দিনের একটি সময় সঙ্গীর জন্য বরাদ্দ রাখুন।

তৌহিদা শিরোপা

পরকীয়া

বিয়ের পর দুই বছর পাড় হয়ে হয়েছে শাহেদ-প্রিয়ার, ভালোই চলছে সবকিছু। এরই মধ্যে সেদিন সকালে শাহেদের মোবেইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন এলো অপরিচিত একটি নম্বর থেকে। প্রিয়া দেখলো শাহেদ ফোনটি রিসিভ করছে না। প্রিয়া ভাবলো হয়তো শাহেদের অফিসের কোনো ফোন…

সে প্রতিদিনের মতো শাহেদের বাইরে যাওয়ার জোগার করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। সব ঠিকঠাক, হঠাৎ প্রিয়া লক্ষ্য করে সে যখন অন্য ঘরে থাকে তখন শাহেদ যেন কার সঙ্গে কথা বলে। তাকে দেখে দ্রুত ফোনটি কেটে দেয়, প্রিয়া জানতে চায় কার ফোন ছিল? উত্তর দিতে কেমন যেন গলা কেঁপে ওঠে শাহেদের। সে একবার বলে অফিসের ফোন তো আরেকবার বলে বন্ধুর। এটা বলে যখন বুঝতে পারে কিছু একটা লুকাচ্ছে এটা প্রিয়া বুঝতে পারছে, সে তখন রেগে যায়। আর তাকে অবিশ্বাস করা হচ্ছে বলে উল্টো প্রিয়াকেই বকা দেয়।

প্রিয়া শাহেদকে কখনো এই রূপে দেখেনি। এতো বিশ্বাস, ভালোবাসা, একসাথে অনেক কিছু করার স্বপ্ন সবই তাহলে মিথ্যা হতে চললো…তার সুখের সংসার এভাবে ভেঙ্গে যাবে? প্রিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তারপর প্রিয়া খোঁজ নিয়ে জানে বর্ষা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে শাহেদ নিয়মিত ফোনে কথা বলে, মাঝে মাঝে দেখাও করে। এটা জানার পরে শাহেদ সম্পর্কে আর কিছু জানার মতো মানসিক অবস্থা প্রিয়ার ছিল না…

আমরা নিশ্চিন্তে আমাদের স্বামী, স্ত্রী, ভাইবোন আর সন্তানদের বিশ্বাস করি। আমরা দেখি নিয়মিত তারা কাজের জন্য বের হচ্ছে সময় মতো ফিরেও আসছে কিন্তু আসলে তারা অন্য রকম অসামাজিক কোনো কাজে জড়িয়ে পড়ছে কিনা তার কি খোঁজ রাখছি?

পরিবারের একজনের এধরনের পরকীয়ার সম্পর্ক ধ্বংস করে দিতে পারে ব্যক্তি এবং পারিবারিক বিশ্বাস আর শ্রদ্ধার সম্পর্ককে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মিথ্যা মোহের বশবর্তী হয়ে পরকীয়ার মতো একটি সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত না হয়ে, বিবাহিত জীবনকে আরও সুন্দর এবং সুখী হতে যে বিষয়গুলোর আমাদের চর্চা করতে হবে:

সততা

সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল স্তম্ভ হচ্ছে সততা। প্রতিটি সম্পর্কের বিষয়ে সততা দেখাতে হবে। একজনকে অন্যজনের অনেক কাছে নিয়ে আসবে যখন সে বলতে পারবে,‘যাই হোক তুমি আমার সম্পর্কে সত্যটাই জানবে’।

ক্ষমা

একদিনে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। কোনো ভুল হলে প্রথমেই সম্পর্ক ভেঙ্গে দেওয়ার চিন্তা না করে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে।

বোঝাপড়া

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া থাকাটা খুব জরুরি।

বিশ্বাস

এমন কিছু কখনো করা যাবে না যাতে করে দুজের মধ্যে বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। শুধুমাত্র অবিশ্বাসই একটি সম্পর্ক ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

সময় কাটানো

একসঙ্গে সময় কাটাতে আগ্রহী হতে হবে। দুজনের একান্ত সময়টুকু আনন্দময় করে তুলতে নতুন নতুন পরিকল্পনা করতে হবে।

বন্ধুত্ব

‘বিয়ের আগে আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম’। তো, বিয়ের পরে কী হলো? বিয়ের পর সম্পর্কটাকে আরও মজবুত করতে চাই দুজনের নিবিড় বন্ধুত্ব।

ধৈর্য

দাম্পত্য জীবনের পুরো সময়টাই হানিমুন মুডে থাকতে পারবো…এটা ভাবলে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হতে পারে। দুঃসময় আসতে পারে, এমন অবস্থায় ভেঙ্গে না পড়ে ধৈর্য ধরতে হবে।এক বিয়েতে বিশ্বাস এক সঙ্গীর সঙ্গেই সারাজীবন কাটানোর জন্য মনস্থির করতে হবে।

ভালোবাসা

সব সম্পর্কের মূলে থাকে ভালোবাসা। সঙ্গীর জন্য ভালোবাসা থাকতে হবে এবং সেই ভালোবাসার প্রকাশও করতে হবে।তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এরকম অনেক বিষয় নিয়েই সন্দেহ দেখা দেয়, যেগুলোর হয়তো তেমন বাস্তব প্রমাণ নেই। তাই সন্দেহ করার আগে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলে বা খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন।

আমরা কখনোই চাই না সুখের সংসার কোনো সন্দেহে ভেঙ্গে যাক। কিন্তু এটাও হওয়া উচিৎ নয় যে দিনের পর দিন একজনকে ঠকিয়ে অপরাধী পার পেয়ে যাবে।

সুত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪