স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধানঃ প্রভাব ও পরিণতি

বিয়ে সমাজ স্বীকৃত উপায়ে নারী ও পুরুষ একই যোগসুত্রে মিলিত হয়ে স্বীয় জৈবিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি উত্তরাধিকার সৃষ্টির মাধ্যম। এই বিয়ের স্থায়িত্ব ও গভীরতা পারস্পরিক মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক সাম্যাবস্থাসহ পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত নিয়ামকের উপর নির্ভরশীল। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিয়ে বলতে নারী পুরুষের বয়সের পার্থক্য, শিক্ষা ও সম্পদের পার্থক্যকে বোঝায়। স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কে বয়স অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বামী-স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য দ্বারা সাধারণত তাদের সম্পর্কের মধ্যকার বোঝাপড়া নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল তিন হাজার মানুষের উপর একটা জরিপ চালায় এবং তথ্য প্রকাশ করে যা হলো – স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য কম হওয়া উচিত। এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হয় এবং সম্পর্কের স্থায়িত্বতা বৃদ্ধি পায়। আর বয়সের পার্থক্য বেশি হলে বিচ্ছেদের হারও বেশি হয়।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সির রিচার্চ এসিষ্টেন্ট রেন্ডাল ওলসন এর মতে, স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধান যদি ১ বছর হয়, তাহলে তাদের বিচ্ছেদের সম্ভাবনা সমবয়সী স্বামী-স্ত্রীর তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি, যদি ৫ বছর হয় তাহলে এই সম্ভাবনা ১৮ শতাংশ, ১০ বছর হলে ৩৯ শতাংশ, ২০ বছর হলে ৯৫ শতাংশ বেশি হয়। তিনি বয়সের পার্থক্য ৩০ বছর হলে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ১৭২ শতাংশ বেশি বলেও উনার বক্তব্যতে ব্যক্ত করেন।

বিচ্ছেদের হার কমাতে সন্তান ধারন ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিয়ের আগেই যদি প্রথম সন্তান হয়, তাহলে বিয়ে ভাঙার সম্ভাবনা সন্তানবিহীন দম্পতির থেকে ৫৯ শতাংশ কমে যায়।  আর যদি বিয়ের পরে সন্তান হয় তাহলে এই সম্ভাবনা ৭৬ শতাংশ কমে যায়।  এতে বলা যায়, সন্তান বেশি থাকলে দম্পতির সুখের পরিমাণের সম্ভাবনাও বেশি হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়, একই স্তরের শিক্ষার দম্পতির থেকে ভিন্ন স্তরের শিক্ষার দম্পতির বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ৪৩ শতাংশ বেশি থাকে। আবার, দুই বছর একসাথে থাকলে দম্পতির বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ৪৩ শতাংশ আর ১০ বছর একসাথে থাকলে বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে লিখিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের আদর্শ ব্যবধান ধরা হয় ৩ বছরকে।  স্বামী যদি স্ত্রীর চেয়ে ৩ বছরের বড় হয় তবে দু জনের মানসিক পরিপক্কতা সমান হবে এবং নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার সময় পাবে।  তবে ২০ থেকে ৩০ বছর সময়কালটায় এ ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না।

২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের অনলাইন ম্যাট্রিমনি সাইট, বিবাহবিডি ডট কম বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ নির্নয় শিরোনামে প্রশ্ন ভিত্তিক একটি জরিপ পরিচালনা করে।  এতে অংশ গ্রহন করেন ৪১২ জন।  যার মধ্যে ছিলেন দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদ নেয়া ১০৪ জন ব্যক্তি।

অংশগ্রহন কারী ৪৬% মনে করেন সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থ্যক্য ৫ বছরের কম হওয়া ভাল আর ৩১% মনে করেন সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থ্যক্য ১০ বছরের বেশী হওয়া উচিত নয়।  তবে বেশীর ভাগ অংশগ্রহনকারীই মনে করেন, অতিরিক্ত বয়সের পার্থক্য বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারন নয়।

উপরের জরিপ থেকে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণকারী বিয়ের ক্ষেত্রে ৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যবধান পছন্দ করে না। অনেকেই আবার সমবয়সীও বেশি পছন্দ করে।

সমবয়সী দম্পতি আর বয়সের ব্যবধান থাকা দম্পতির আচার-আচরণে থাকে বিস্তর তফাৎ। বেশি বয়সের পার্থক্য দম্পতিদের মধ্যে তৈরি করে মানসিক শূণ্যতার। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনার সাথে সাথে বয়সের ব্যাপারটাও খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।