আবেগপ্রবণ পুরুষ

পুরুষ আর আবেগ! বিষয়দু’টোকে অনেকেই ঠিক মেলাতে পারেন না। বেশিরভাগ পুরুষই আবেগের বহিঃপ্রকাশে অস্বস্তিবোধ করেন। সিনেমার পরদায় অবশ্য নায়কদের আমরা মেলোড্রামাটিক দৃশ্যে দেখে থাকি। তবে বাস্তবে সেই দৃশ্য অনেক পুরুষই পছন্দ করেন না। আর তাঁদের স্ত্রীদেরও এ ব্যাপারে অনুযোগ রয়েছে।

শুধু যে পুরুষদের মধ্যে আবেগের অভাবই তাঁদের অনুযোগের বিষয়, তা নয়! পুরুষরা যৌনমিলনের সময়ে আবেগতাড়িত হন না—এটাও অনেক স্ত্রীরাই অভিযোগ করে থাকেন। তবে পুরুষরা আবার পালটা প্রশ্ন করেন এই বলে যে সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়াটাই এক ধরনের আবেগ। এটাই কি যথেষ্ট নয়! সকলের আগে ভেবে দেখা প্রয়োজন যে আবেগপ্রবণতা আসলে কী। মোটের উপর যে কোনও কাজে প্যাশনের অভাব, উৎসাহ না দেখানোকেই আবেগের অনুপস্থিতি বলে ধরি আমরা। মিলনের সময় শীতল প্রতিক্রিয়াও ঠিক তাই।

তবে পুরুষ ও মহিলা উভয় পক্ষেরই কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন। অনেক পুরুষই আছেন যাঁরা মিলনের সময়ে নিজের দুর্বলতা ঢাকার উপায় হিসেবে শীতল ব্যবহার করেন। আবার অনেক পুরুষ ভাবেন আবেগপ্রবণ হওয়াটা আদৌ পুরুষালি গুণ নয়। তাই মিলনের সময়ে বেশি আবেগে ভেসে যাওয়ার পক্ষপাতি নন তাঁরা।


আমাদের সমাজে ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের সেখানো হয় চোখের জল না ফেলতে। কোনও পুরুষ কান্নাকাটি করলে তা অনেকসময় হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। তাই, অনেক পুরুষই তাঁদের অনুভূতি, মুড, সেন্টিমেন্ট ইত্যাদিকে চেপে রাখেন। ধীরে ধীরে এটাই তাঁদের অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়।

মিলনের সময়েও মহিলাদের মতো নিজেকে অতটা মেলে ধরতে পারেন না অনেক পুরুষই। পুরুষদের দোষ দেওয়ার আগে মহিলাদের এই বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন। সাধারণত, অনেক পুরুষই সেক্সুয়াল কমিটমেন্ট চট করে করতে চান না। অর্থাৎ, একটি কমিটেড সম্পর্কে না থাকলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে মিলিত হতে চান না। পেড সেক্স অবশ্যই এর ব্যতিক্রম। কিন্তু অনেকের কাছেই যৌনমিলন হল আবেগের চরম বহিঃপ্রকাশ। অনেক মহিলাই এটা বুঝতে পারেন না।


স্ত্রীরা চাইতেই পারেন যে তাঁদের স্বামীরা আবেগপ্রবণ হবেন—এতে দোষের কিছু নেই। তবে সকলেই যে একরকম হবেন তা তো নয়। ধৈর্য ধরুন। স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন। ধীর ধীরে তিনিও আপনার প্রতি ইমোশনাল হবেন।


আপনার স্ত্রী যদি আপনার থেকে আরও বেশি আবেগ প্রত্যাশা করেন, তাহলে নিজেকে একটু বদলানোর চেষ্টা করে দেখুন না। এতে কিন্তু আপনার পৌরুষ চলে যাবে না! আবার স্ত্রীরাও একটু চেষ্টা করে দেখুন না, স্বামীরা যদি নিজের মতো থাকেন, তাহলে সম্পর্কে খুব একটা সমস্যা হবে না।

যে যেমন তাঁকে সেরকম থাকতে দিলেই সবচেয়ে ভাল। দু’জনেই একটু মানিয়ে নিতে পারলে সুস্থ সম্পর্কে আর কীই বা চাই!

তরুণদের বিয়ে ভীতি

পুরুষের বিয়ে ভীতি। শুনতে নিশ্চয়ই অবাক করার মত কথা। হ্যাঁ, আজকাল তরুণদের একটা বড় অংশের বিয়ে ভীতি রয়েছে। আর এই বিয়ে ভীতির কারণ অর্থ-বিত্তের অভাব, বেকারত্ব, শারীরিক অসুস্থতা, পাত্রী অপছন্দ, নতুন জীবনে পদার্পণ বা দাম্পত্য আতংক এসব কিছুই নয়। বিয়ে ভীতিতে আক্রান্ত তরুণ-যুবকদের বৃহত্তর অংশ মনে করে তাদের জীবন শেষ হয়ে গেছে। তারুণ্য-যৌবনে শরীরের ওপর অত্যাচার-অবিচার, ক্ষেত্রবিশেষে মাদক সেবন এবং নারীর সংস্পর্শে এলে নিজের নিষ্ক্রীয়তার অভিজ্ঞতা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌনজীবন নিয়ে ভুল ধারণা এবং মানসিক সমস্যা এবং কিছু কিছু মেয়েদের অতিরিক্ত জ্ঞান তরুণদের বিয়ে ভীতির প্রধান কারণ। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা নেই তা বলা যাবে না। তবে ডাক্তারদের চেম্বারে আসা বিয়ে ভীতিতে আক্রান্ত তরুণদের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগেরই কোন শারীরিক সমস্যা নেই। গত ছয়মাসে আমার চেম্বারে আসা বিয়ে ভীতিতে আক্রান্ত শতাধিক তরুণ ও যুবকের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় শতকরা ৮০ ভাগের কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই।

শতকরা ৫ ভাগের প্রয়োজনীয় কিছু হরমোনের ঘাটতি রয়েছে যা চিকিৎসাযোগ্য, শতকরা ১০ ভাগের শরীরে প্রয়োজনীয় শুক্রাণুর অভাব রয়েছে (আলগেস পাকিস), শতকরা ২/৩ ভাগের শরীরে কোন শুক্রাণু নেই (অ্যাজোসপারসিযঅ)। এছাড়া শতকরা যে ২০ ভাগের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা অন্ততঃ ৫ ভাগের যৌন সমস্যা (ইম্পোর্টেন্স) রয়েছে। এ তথ্য আন্তর্জাতিক গবেষণা তথ্যের সঙ্গে সঙ্গাতিপূর্ণ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমাদের দেশের তরুণরা অধিক সুঠাম ও সক্ষম। তবুও তরুণদের বিয়ে ভীতি কেন। এসব তরুণদের কাছে চেম্বারে আমি পাঁচটি প্রশ্ন করে থাকি। কেমন করে তারা বুঝতে পেয়েছে তারা ফুরিয়ে গেছে বা শারীরিক যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের এই ধারণার পিছনে কোন বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে কি? শারীরিক শক্তি ফিরিয়ে কোন ওষুধ সেবন করেছে কি, ইত্যাদি ইত্যাদি। তরুণ-যুবকদের বিচিত্র সব জবাব, অভিজ্ঞতা, এসব তুলে ধরার কোন ইচ্ছা আমার নেই। এছাড়া রোগীর গোপন তথ্য প্রকাশ মেডিক্যাল এথিকস অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। তাই এসব নিয়ে দীর্ঘ বর্ণনার কোন ইচ্ছে নেই। তবে এ কথাটি সত্য, তরুণদের বিয়ে ভীতির কারণের পিছনে যেমন অজ্ঞতা, মানসিক সমস্যা এবং তরুণদের একটি বড় অংশের বাস্তব অভিজ্ঞতা নেতিবাচক হওয়ায় (যার শতকরা ৯৯ ভাগ বিয়ের পর ঠিক হয়ে যায়) বিভ্রান্তি বাড়ছে। পাশাপাশি একশ্রেণীর তথাকথিত যৌন সমস্যা চিকিৎসক নামধারীদের অজ্ঞতা এবং ভুল চিকিৎসার কারণে তরুণদের যৌন ভীতি বেড়ে যাচ্ছে। বিয়ে করেনি এমনসব তরুণদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেক্স স্টিমুল্যান্ট ট্যাবলেট দেয়া হয়। ফলে এসব তরুণরা মনে করে তাদের নিশ্চয়ই যৌন সমস্যা রয়েছে। এতে তরুণদের সাময়িক শারীরিক ফিটনেস বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। এমনকি একাধিক তরুণ অকপটে শিকার করেছেন ডাক্তারের দেয়া যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন। এসব বিয়ে ভীতি বা যৌন ভীতিতে আক্রান্তদের বেশির ভাগের প্রায় একই মন্তব্য যতদিন ট্যাবলেট সেবন করেন ততদিন ভালো থাকেন। ওষুধ সেবন শেষ তো সবশেষ। অথচ এসব তরুণের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগই শারীরিকভাবে সুস্থ এবং কেবলমাত্র যথাযথ কাউন্সিলিং করতে পারলে কোন প্রকার যৌন উত্তেজক ওষুধ ছাড়াই তরুণদের বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে আমি আগেও বলেছি শুধু বাংলাদেশের তরুণদেরই বিয়ে ভীতি এবং যৌন ভীতি বেশি। এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেবো। আমি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চর্ম ও যৌন রোগের ওপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার সময় সিঙ্গাপুর ডিএসসি ক্লিনিকে কিছুদিন অবজারভার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেই। প্রচুর বাংলাদেশী তরুণ আসতো এ ক্লিনিকে। সিঙ্গাপুর ডিএসসি ক্লিনিক বাংলাদেশের যেকোন প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ে বড় কেবলমাত্র যৌন রোগীদের চিকিৎসা করা হয় এই ক্লিনিকে। আমি দেখেছি সিঙ্গাপুরে চাকরিরত বাংলাদেশী তরুণরাও নানা ভুল ধারণার কারণে নানা ধরনের যৌন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব তরুণের অনেকেরই যৌন জীবন নিয়েও রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। কয়েকমাস আগে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের অন্যতম চিকিৎসক ডাঃ শক্তির সঙ্গে আমার পূর্ব নির্ধারিত মিটিং ছিল। তিনি একাধিকবার আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যা হোক, ডাঃ শক্তি যৌন সমস্যার রোগীদের চিকিৎসা করেন। বাংলাদেশ থেকে বেশকিছু রোগী যায় ব্যাংকক হাসপাতালে। ডাঃ শক্তি আমাকে প্রায় একই রকম তথ্য দিলেন। বাংলাদেশী রোগীদের শারীরিক বা যৌন সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যাই বেশি।

থাক এসব কথা। তরুণদের বিয়ে ভীতি আসলে মোটেও শারীরিক সমস্যার কারণে হয় না। যৌবনে অধিকাংশ পুরুষই কিছু অনাকাঙ্খিত অভ্যাসের শিকার হয়। এর জন্য শরীরের যৌন শক্তি শেষ হয়ে যাবে এটা নিতান্তই ভুল ধারণা। শরীরে যৌন শক্তি নামে আলাদা কোন শক্তি নেই। শারীরিক সুস্থতা, সুঠাম দেহ, মানসিক প্রশান্তি থাকলে এবং পরস্পরের সুন্দর সম্পর্কও সমঝোতা থাকলে প্রাত্যহিক জীবনের অন্যসব কাজের মত দাম্পত্য জীবনও সুখের হতে পারে। তাই বিয়ে ভীতির কারণে তরুণদের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করা উচিত নয়। এছাড়া এজন্য অযথা ডাক্তারের চেম্বারে যাবারও কোন দরকার নেই। তবে বিয়ের পর যদি কোন শারীরিক সমস্যা থাকে এবং এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশংকা তৈরি হয় তখন যেকোন সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। যদি ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে তা আবশ্যই চিকিৎসায় ভালো হয়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা-ওষুধ ছাড়াই কাউন্সিলিং তরুণদের বিয়ে ভীতি দূর এবং বিবাহ পরবর্তী জীবন সুন্দর হতে পারে।

লেখকঃ ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম,
চুলপড়া, যৌন সমস্যা ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার এন্ড কসমেটিক্স সার্জন

সম্পর্ক সুস্থ রাখতে ক্রোধ থেকে দূরে থাকুন!

চরম অসন্তুষ্টি ও ক্রোধের কারনে যে কোন সম্পর্কের মধ্যে খুব বাজে অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।  রাগ করে যখন সঙ্গী আপনার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে তখন পৃথিবীটায় শূন্য মনে হতে থাকে।  প্রথমত ভালোবাসার মানুষের এরকম রুপ দেখলে মনটায় ছোট হয়ে যায়, আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে পড়ে। নিজের ভালোবাসার উপর সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে।

যখন আপনার ভালোবাসার সঙ্গী আপনার সাথে ক্রোধপূর্ণ আচরণ করে তখন সেই মানুষটাকে একেবারে অচেনা মনে হয়, মনের ভেতর কষ্ট পাহাড় বাঁধে।এই কষ্টটা কারো সাথে ভাগ করে নেওয়া যায় না, নিজের মনে নিরব রক্তক্ষরণ হয়। এ ধরনের আচারন যদি পুনঃ পুন হতে থাকে তবে ভালোবাসা কমতে থাকে অনেক সময় ভালোবাসা শেষ হয়ে সম্পর্কটায় ভেঙ্গে যায়।

কিভাবে ক্রোধকে কমিয়ে মায়া বাড়াবেন তার কিছু উপায় আলোচনা করা হলোঃ

হঠাৎ রেগে গেলে উত্তর দেওয়ার আগে ১০ পর্যন্ত গুনুনঃ  যদি হঠাৎ রেগে যান তবে সাথে সাথে উত্তর না দিয়ে কিছুটা সময় গ্রহণ করুন, মনে মনে ১০ পর্যন্ত গুনুন, এর ফলে কথা গুলো সতর্ক ভাবে বলতে সময় পাবেন,  পরবর্তীতে নিজের কথার জন্য নিজেকে অনুতাপ করতে হবে না।

নিজেকে সঙ্গীর স্থানে রাখুনঃ সবসময় সঙ্গীর স্থানে নিজেকে রেখে দেখবেন, রেগে আপনি সঙ্গীর সাথে যে ব্যবহার করেন, তার স্থানে আপনি থাকলেও একই অভিজ্ঞতা আপনার হবে।  কিছুটা হলেও কষ্টটা অনুভব করতে পারবেন।

মনোযোগ সহকারে শুনতে চেষ্টা করুনঃ  সঙ্গী রেগে যে কথা গুলো আপনার উদ্দেশ্যে বলে, কথা গুলো যদি সঙ্গীকে হুবহু তাকে শুনান তবে সে বুঝতে পারবে তার কথা গুলো কতটা তিক্ত ছিলো।  মনোযোগ সহকারে সঙ্গীর কথা গুলো শুনুন ।

ভালোবাসার ছোঁয়াঃ যখন দেখবেন সঙ্গী রেগে যাচ্ছে, তখন তাকে জড়িয়ে ধরুন, আদর করুন অথবা যারা বিবাহিত তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন এতে করে সঙ্গীদের মধ্যকার ভালোবাসার আবেগ বৃদ্ধি পায় সব রাগ অভিমান চলে যায়।

সঙ্গীর প্রতি মায়া বৃদ্ধি করুনঃ  প্রতিদিন সময় করে আপনার সঙ্গীর চোখে চোখ রাখুন, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন, তার প্রতি মায়া বৃদ্ধি করুন। আপনার প্রতি তার অনুভূতি গুলোকে বোঝার চেষ্টা করুন।  মায়া যতো বাড়বে ভালোবাসাও ততো বাড়বে অপরদিক থেকে সম্পর্কের ক্রোধের পরিমাণও অনেক কমে যাবে।  রাগ বা ক্রোধ এক প্রকার মানবীয় আবেগ, ক্ষোভ থেকে সৃষ্টি হয়।  সব মানুষের ভেতরে ক্রোধ থাকে তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, এই ক্রোধটা যেন সম্পর্কের মাঝে এসে না পড়ে।  ভালোবাসার সম্পর্ক দীর্ঘ স্থায়ী করতে হলে সঙ্গী একে অন্যকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।

দৈহিক সম্পর্কের মানসিক ও স্বাস্থ্যগত সুফল

যৌন সম্পর্ক মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের মনে এমন আকাঙ্খা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়।  বৈবাহিক জীবনে অনেকেই মনে করেন সেক্সে কোনো উপকার নেই। একটি ভালো যৌন সম্পর্কের পর মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে তৃপ্তি লাভ করে। যৌন সম্পর্ক ও অর্গাজম যে শুধু তৃপ্তির ব্যাপার, তা-ই নয়, বরং এটি আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সেক্স থেরাপিস্টরা বারবার নিয়মিত যৌন সম্পর্কের সুফলের কথা বলে আসছেন। এখানে তার কয়েকটি আলোচনা করা হলো-

আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে: ক্লিনিক্যাল সেক্সিওলজিস্ট এবং সনদপ্রাপ্ত সেক্স কোচ সানি রডজার্সের মতে, নিয়মিত যৌনতার ফলে আপনার জীবনের পরিধি বাড়তে পারে।  ‘আপনি যখন প্রতিবার অর্গাজম করেন তখন আপনার শরীর ডিএইচইএ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ করে। এ হরমোনটি দেহের ইমিউন সিস্টেমের জন্য খুবই উপকারী এবং এটি আপনার চামড়াকে আরও স্বাস্থ্যবান করে, যা আপনাকে আরও তরুণ দেখাতে সাহায্য করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী:  যৌন সম্পর্ক আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখবে। রডজার বলেন ‘যৌনতা কষ্ট এবং উদ্বেগ কমায়, পক্ষান্তরে রিলাক্সেশন বাড়ায়।’  অ্যান্ড্রোফিনস নামের এক প্রকার হরমোন মূলত এর জন্য দায়ী। যৌনতার ফলে এ হরমোনটি নিসৃত হয় এবং এটি মানুষের ডিপ্রেশন কমিয়ে মন চাঙ্গা করতে সাহায্য করে।

সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়: সেক্স থেরাপিস্ট লরি ওয়াটসন বলেন,  ‘সঙ্গীকে স্পর্শ করার মাধ্যমে তার আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া যায়। যৌনতার কারণে অক্সিটোসিন নামের এক ধরনের হরমোন নিসৃত হয়, ফলে সঙ্গীর সঙ্গে আপনাকে আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হতে উৎসাহিত করে।

যৌনতা হতে পারে ভালো ওষুধ:  নিয়মিত যৌন সম্পর্ক বেশ কয়েকভাবে আপনার শরীরের উপকারে আসতে পারে। রডজার বলেন, ‘বোস্টন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বীর্যপাত প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। পুরুষের জন্য তাই যৌনতা স্বাস্থ্যকর হতে পারে। অর্গাজমের ফলে নিসৃত অক্সিটোসিন হরমোন প্রাকৃতিকভাবেই মনযন্ত্রনা, মাথা ব্যাথা ও মাংসপেশির পীড়া দূর করতে সাহায্য করে।’

ক্যালরি ক্ষয় করে:  রডজার বলেন, ‘প্রতিবার যৌনতায় একটি যুগল অন্তত ১০০ ক্যালরি ক্ষয় করে। যদি কোনো যুগল সপ্তাহে তিনবার মিলিত হয়, তাহলে কোনো ধরনের ব্যয়ামাগারে যাওয়া ছাড়াই তারা বছর শেষে ১৫ হাজার ক্যালরি ক্ষয় করতে পারবে।’

মানসিক চাপ কমায়: ওয়াটসন বলেন, ‘অর্গাজমের ফলে অনেক দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। আমার একজন নারী রোগী ছিলেন যিনি ১২ বছর ধরে সপ্তাহে তিনবার সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হয়ে আসছিলেন। কিন্তু তার কোনো অর্গাজম হচ্ছিল না। পরে আমি তার এ সমস্যাটির সমাধান করি।  অর্গাজম মানসিক চাপ কমায় বলে সে আমার কাছে স্বীকার করেছে।’

পিএলওএস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সেক্স করলে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মস্তিষ্কের এ অংশটি মানুষের মন ভালো বা খারাপের জন্য দায়ী।  এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সঙ্গীর সঙ্গে মানসিক ও শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হলে সেটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।   উৎস-প্রিয় ডেস্ক 

বিয়ে করুন যথা সময়ে, এর স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক!

বিয়ের কথাটা শুনলেই কেমন যেন লাগে। চিন্তার বিষয়, বয়স হয়েছে তো! সে যাই হোক।  বিয়ে করুন উপযুক্ত সময়ে। কারণ বিয়ে করার স্বাস্থ্যগত সুফল অনেক! কি ধরণের সুফল থাকতে পারে বিয়ে করার পর?

কেউ যদি মনে করে থাকেন বিয়ে করার কারণে আপনার মৃত্যুর দিন তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসবে তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ ২০১৩ এর এক রিসার্চে দেখা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তারা বিবাহিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের মধ্যে যারা আছে তাদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মারা যায়। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে জীবনসঙ্গী মানুষকে আবেগ অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়, সামাজিকভাবে একত্রে রাখে, মানসিকভাবে সমর্থন দেয়, যার সব কিছুই সুস্থ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।

মানসিক চাপ কম থাকে :  যদিও মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে তারপরও তার উপস্থিতি আপনার মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি ছড়িয়ে দিবে। মানুষ যখন কোন মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তখন শরীরে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতের চেয়ে অবিবাহিতদের শরীরে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত পরিমাণে মানসিক চাপ শরীরে সমস্যার জন্ম দেয়, বিশেষ করে হজমের সমস্যার সৃষ্টি করে। রিসার্চে জানা গেছে স্ট্রেস হরমোন বিবাহিতদের শরীরে সেরকম ভাবে ক্ষতি করতে পারে না কিন্তু অবিবাহিতদের শরীরে নানা সমস্যার বাসা তৈরি করে।

হার্ট এ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস পায়:  ভালোবাসা হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিবাহিত অথবা কোন সম্পর্কের মাঝে আছে তাদের হার্ট-অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসঙ্গ মানুষের চেয়ে কম। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে সঙ্গীর নিবিড় সঙ্গ এবং নতুন পরিবারের নতুন সব আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু- বান্ধবের সাথে ভালো বন্ধনের কারণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। কারণ পরিবারের সাথে থাকলে মানুষ উৎফুল্ল থাকে। মনে কোন মানসিক চাপ থাকলে তা শেয়ার করতে পারে। এতে মনের উপর চাপ কম পড়ে।

বিয়ে শরীরের হাড় মজবুত করে।  অবাক হচ্ছেন? আসলেও তাই। বিয়ে শরীরের হাড় শক্ত করে এবং বিভিন্ন হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমায়। বিয়ে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রেখে হাড়ের এক ধরণের রোগ “অস্টিওপরোসিস” হওয়ার ঝুঁকি কমায়। একজন ভালো জীবনসঙ্গী পত্নীর মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুখী দাম্পত্য জীবন মহিলাদের হাড়ের খনিজ ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য জরুরী।

অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হওয়া:  কেউ যখন আপনার পাশে সারাক্ষণ থেকে আপনার পরিচর্যা করবে তখন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন একা থাকবেন সে ক্ষেত্রে আপনার সুস্থ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। কারণ তখন আপনার সব কাজগুলো আপনার নিজেরই করতে হবে। এছাড়াও আপনি যখন কার সান্নিধ্যে থাকবেন তখন বেঁচে থাকার একটা কারণ খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে জীবন সঙ্গী আপনার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়।

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমে:  জীবনে কতবার আপনি আপনার জীবনসঙ্গীকে আকস্মিক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেছে? গবেষণায় দেখা গেছে তালাক প্রাপ্ত মহিলা এবং পুরুষেরা বিবাহিতদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। গবেষকদের মতে বিয়ে দুটি মানুষকে পাশাপাশি রাখে এবং এসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণামের হাত থেকে রক্ষা করে।

বিষণ্ণতা কমায়:  একাকীত্বের কারণে অথবা অন্য সমস্যার কারণেও মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগতে পারে। আর মানুষ যখন হতাশায় ভুগে তখন কি পরিমাণ মানসিক বিপর্যয় ঘটছে তার নিজের, তা সে বুঝতে পারে না। কারণ বিষণ্ণতার প্রথম উপসর্গ হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির হ্রাস পাওয়া। তাই বিষণ্ণতাকে সনাক্ত করতে এবং দূর করতে প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। যে সব সময় আপনার সাথে থাকবে, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারবেন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:  ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মানুষ মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এর বেশি মানুষ আরোগ্য লাভ করতে সক্ষম হত যদি তারা বিবাহিত হত। এই সাফল্যের হার কেমোথেরাপির থেকেও বেশি। একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীল সম্পর্কই প্রথম ধাপের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। আর এই বন্ধনই ক্যান্সারের সাথে লড়ে সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়। একজন উপর্যুক্ত সঙ্গিনী তার সঙ্গীকে খারাপ এবং জীবনের জন্য ঝুঁকিকর কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে। যেমনঃ মদ্যপান, মাদক সেবন ইত্যাদি।

স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা কমায়:  যদি জীবনে এমন সঙ্গী থাকে যার কাছে গেলে মনে শান্তি আসে তাহলে বার্ধক্য কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে যারা তালাকপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় বিয়ে করে নি তাদের স্মৃতি শক্তি নষ্ট হওয়ার প্রবণতা প্রায় তিন গুন বেশি হয় এবং যারা মাঝ বয়সে বিধবা হওয়ার পর আর বিয়ে করেনি তাদের স্মৃতিভ্রংশ প্রবণতা ছয়গুণ বেড়ে যায়। গবেষকরা বলেন বিবাহিত এবং সারাজীবন মানসিকভাবে এবং সামাজিকভাবে পাশাপাশি থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং স্মৃতি শক্তি কম হ্রাস পায়।

বিভিন্ন অসুখ থেকে মুক্তি: সুখী দম্পতিদের কখনো টাইপক-২ ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ফাইব্রোমাইলজিয়া মত অসুখ হতে দেখা যায় না।  যেকোনো জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে উপর খারাপ ভাবে প্রভাব ফেলে। তাই সুস্থ থাকতে হলে সুখী দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করা অতীব জরুরী।  সূত্র: উর্বশী, জাগো নিউজ । 

প্রেমের অনুভূতিতে শারীরিক প্রতিক্রিয়া

‘প্রেম যে কাঁঠালের আঠা, লাগলে পরে ছাড়ে না।’ সত্যি প্রেমের অনুভূতি এক অদ্ভুত অনুভূতি।  প্রেমে পড়লেও জ্বালা আবার এর স্বাদ না নিলেও যেন মন ভরে না! আর এ কারণে জীবনে একবারের মতো হলেও প্রেমে পড়েনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া আসলেই মুশকিল।  প্রেমে পড়ার অসাধারণ এই অনুভূতিটা সব মানুষই পেতে চায়।  পৃথিবীর তাবড় তাবড় স্নায়ুচিকিৎসকরা এই নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা করে চলেছেন।  খুঁজে পেয়েছেন আশ্চর্য কিছু তথ্য।

মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যায়:  একথা সত্যি যে মানুষ প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে কিছু পরিবর্তন আসে। এবং পরিবর্তন আসে বলেই উলটে যায় চেনা পৃথিবী। চূড়ান্ত যুক্তিবাদী ব্যক্তিও অসঙ্গত আচরণ করতে পারেন। গম্ভীর ব্যক্তির ঠোঁটেও ফুটে উঠে হাসি। ব্যবহারের দিক থেকেও একজন মানুষ আমূল পালটে যেতে পারেন। হয়ে উঠতে পারে ব্যাকুল, ভীত এবং অস্থির। সদ্য প্রেমে পড়েছেন এমন ব্যক্তির মস্তিষ্ক স্ক্যান করে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন নিউরোলজিস্টরা। জানা যায়, প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কের সামনের দিকের অংশ, অর্থাৎ ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়।এই অংশটি মানুষের বোধ-বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলত, প্রেমে পড়লে প্রথমেই মানুষ বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়। ঠিক-ভুল বিচারবোধ হারায়। আরও বেশি হারায় যদি, প্রেমিক/প্রেমিকার ফটো দেখানো হয়। ক্ষণিকের জন্য মানুষের ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

লন্ডন ইউনিভার্সিটি অব কলেজের নিউরো-এসথেটিক্সের প্রফেসর সেমির জেকির মতে, ‘ভালোবাসার মানুষের ফটো দেখালে মানুষের মস্তিষ্কের বেশকিছু অংশ যেমন অ্যাকটিভ হয় ওঠে, ঠিক তেমনই ক্ষণিকের জন্য মানুষের ফ্রন্টাল কর্টেক্স কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এমনটা আরও বেশি হতে পারে হঠাৎ কোনও মানুষের প্রেমে পড়লে। ব্যক্তি সৎ, না অসৎ, কেমন মানুষ, আর বিচার করার মতো অবস্থা থাকে না। তাই অনেক সময় ভুল ব্যক্তির প্রেমে পড়ে মানুষ। তারপর সারাজীবন অশান্তি ভোগ করে। মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, মস্তিষ্কের যে অংশগুলি ভয় ও নেতিবাচকতা নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলিও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। যে কারণে প্রেমে পড়লে মানুষ অনেকবেশি হাসিখুশি হয়ে ওঠে। নেতিবাচক ধারণাগুলি পুরোপুরিভাবে মুছে যায় মন থেকে।

শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে: বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এক ধরণের হরমোন আমাদের মনে উত্তেজনা ছড়ায় আর তার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ওইসব ঘটে৷ প্রেমে পড়লে যে হরমোনের জন্য মন এত উতলা হয়-সেগুলো সম্পর্কে জানা যাক: প্রেমে পড়লে দেহ-মনে যেসব প্রতিক্রিয়া হয় তার জন্য দায়ী টেস্টোস্টেরন নামের এক হরমোন৷ কেউ বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি আকৃষ্ট হলে টেস্টোস্টেরন বাড়তে শুরু করে৷ প্রেমের ওই প্রাথমিক ধাপেই দেখা দেয় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাত কাঁপার মতো উপসর্গগুলো৷ দেখা গেছে, প্রেমে পড়া মানুষের দেহে অন্য সব মানুষের তুলনায় টেস্টোস্টেরন অনেক বেশি থাকে।  প্রেমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজে নেমে পড়ে ডোপামিন৷ এই হরমোন-এর অন্য নাম, ‘সুখের হরমোন’৷ শুধু প্রেমে পড়লেই যে এই হরমোন ক্রিয়াশীল হয় তা কিন্তু নয়, কোকেন বা সিগারেটের নেশা করলেও ডোপামিন উজ্জীবিত হয় ৷ এ কারণেই অনেকে বলেন, প্রেমে পড়া আর নেশা করা একই। সেরোটোনিন নামে এক ধরণের হরমোন আছে যা আমাদের মনের আনন্দ আর আবেগকে স্থির রাখে ৷ প্রেমে পড়লে সেরোটোনিন কমে যায় ৷ ফলে প্রেমিক-প্রেমিকার আবেগ সংবরণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ৷ তারা তখন ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারেনা ৷

ক্ষুধা কমে যায়: প্রেমের যে পর্যায়ে বুক ধড়ফড় করে, হাত ঘামায় তখন অ্যাড্রেনালিন নামের একটা হরমোনও খুব বেড়ে যায় ৷ এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে ক্ষুধা কমে যায়৷ কম খাওয়া-দাওয়া করার ফলে শরীর দ্রুত ভেঙে পড়তে থাকে ৷ প্রেমে পড়ার তিন-চার মাস পর সাধারণত সম্পর্কে একটা স্থিতি আসে ৷ তখন শুরু হয় আরেক হরমোন অকসিটোসিনের কাজ ৷ এই হরমোনের কারণে দু-জনের সম্পর্কটা আরেও ঘনিষ্ঠ হয় ৷ প্রেমিক-প্রেমিকা যখন চুম্বন করেন, তখনও দুজনের শরীরে অকসিটোসিন তৈরি হয় ৷ আর এভাবেই দুজন দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের পথে এগিয়ে যান ৷

ঘুম কম হয়: প্রেমে পড়লে কমপক্ষে একঘণ্টা কমে যায় রাতের ঘুম। একটি সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে এই তথ্য। জার্নাল অফ অ্যাডোলেসেন্ট হেলথে প্রকাশিত হয়েছিল গবেষণাটি। আর তার কারণ হল, রাতে ঘুমাতে গেলেই প্রিয় মানুষটির কথা সবচাইতে বেশি মনে পড়তে থাকে এবং শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। ফলে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে না শরীর এবং ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়।

শরীরের নানান ব্যথা কমে যায়:  স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ মেডিসিনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরের নানান ধরনের ব্যাথা সেরে যায়। ভালোবাসা মস্তিষ্কের নিউরাল রিসেপটরের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ব্যাথার অনুভূতি কমিয়ে দেয়। তাই ভালোবাসাকে বিজ্ঞানীরা ব্যথার ওষুধ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ভুলোমন: প্রেমে পড়লে সব কিছু ভুলে যাওয়া শুরু হয়৷ আর তার জন্য দায়ী হল অক্সিটসিন হরমোন। প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটসিন হরমোন উৎপন্ন হয়, যা স্মৃতিশক্তি কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। আর তাই মানুষ কিছুটা অন্যমনষ্ক এবং ভুলোমনা হয়ে যায় প্রেমে পড়লে। স্বাদ বেশি লাগে: প্রেমে পড়লে নাকি খাবারের স্বাদও বেশি লাগে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় দেওয়া হয়েছে এমন তথ্য। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নতুন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে তাদের কাছে সব খাবারের স্বাদই অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই লাগছে।  সূত্র: সংগ্রহিত

কেউ বলে না, “You Are Doing a Great Job Mommy!” 

মা হবার পর নিজের শারীরিক পরিবর্তন, মানসিক পরিবর্তন, হরমোনাল ইমব্যালান্স, ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, বাচ্চার কলিক, ব্রেস্টফীডিং সবকিছু মিলিয়ে মেয়েটা এমনিতেই সবসময় কিছুটা বিক্ষিপ্ত, কিছুটা নির্লিপ্ত, কিছুটা বিরক্ত, কিছুটা হতাশ অবস্থায় থাকে। বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগছে কিনা, ক্ষিধে পেয়েছে কিনা, স্কিনে র‍্যাশ বের হলো কিনা, পেটব্যথা করছে কিনা – ইত্যাদি নানান চিন্তায় সে সবসময় আচ্ছন্ন থাকে।
 
যে মেয়েটা চোখে সবসময় কাজল দিতো, এখন সে দিনের পর দিন আয়নার দিকে তাকানোর ও সময় পায় না, কাজলের জায়গায় তার চোখের কোণায় এখন নির্ঘুম রাতের রাতজাগা পাখি হবার কারণে কালি পড়েছে। সবসময় প্রতিটা ড্রেসের সাথে ম্যাচিং অথবা পারফেক্ট কনট্রাস্টে কানের দুল আর আংটি-ব্রেসলেট পরা মেয়েটি এখন দিনের পর দিন মলিন ম্যাক্সি, অথবা লুজ টিশার্ট আর পালাজ্জো পরে দিন কাটে।
 
কখনো স্ট্রেইট আয়রন করা, কখনো বা কার্ল করা, কখনো ব্রেইড করে হেয়ারস্টাইল করা মেয়েটি এখন দিনের পর দিন একই খোঁপায় চুল বেঁধে রাখে, কখনো কখনো দিনশেষে মাথায় চিরুনি বুলানোর ও সময় পায় না।  কিন্তু এমনটা কি হবার কথা ছিল? সন্তান যখন গর্ভে থাকে, তখন থেকেই আশেপাশের মানুষের(!) পরামর্শ আর শুভাকাংক্ষিতায় মেয়েটি নিজেকে ভুলে যেতে শুরু করে। বারবারই মনে হয়, আমি মনে হয় আমার ১০০% দিতে পারছি না, আমি মনে হয় ভালো মা হতে পারব না, আমি তো কিছুই জানি না, আমি ছাড়া সবাই বাচ্চার ভালো বোঝে।
 
হরমোনের পরিবর্তন আর শারীরিক কারণে ধীরে ধীরে এই মন খারাপ ভাবটা ডিপ্রেশনে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। আর সেটা আরও প্রখর হয় সন্তান জন্মদানের পর। এই সময়টাকে বলা হয় পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা বেবি ব্লুজ। এবং নিজের দিকে না তাকানো আর নিজেকে সময় না দেয়ার কারণে ডিপ্রেশনের প্রখরতা আরো বাড়তে থাকে।  এ সময় বাচ্চা কেমন আছে সবাই জিজ্ঞেস করে। মা কেমন আছে খুব সীমিত সংখ্যক মানুষই জানতে চায়। রাত জাগতে হয়, ব্রেস্টফীডিং এর কারণে শরীরে ক্লান্তি থাকে, অনেকের ব্লাড প্রেশার হাই হয়ে যায় ঘুমের অভাব আর স্ট্রেস এর কারণে।
 
তার মধ্যে মাথায় হাত বুলানোর মতো মানুষ খুব কমই থাকে।  মিষ্টি করে হেসে কেউ বলে না, “You Are Doing a Great Job Mommy!” সচরাচর কেউ বলে না, “তুমি একটু ঘুমাও, বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসো, আমি ততক্ষণ তোমার বাচ্চাটাকে রাখছি।” এইটুকু সহমর্মিতা আর সহযোগিতা কিন্তু সব নতুন মায়েরই প্রাপ্য।
আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে কিছুদিন আগে কথা হচ্ছিল। ও কথায় কথায় বললো, “দোস্ত মেয়ের গায়ে তেল-লোশন মাখি। নিজের গায়ে মাখার সময় পাই না। আমার অবস্থা পুরা বস্তির মতো, স্কিন বুড়ো মানুষের মতো হয়ে গিয়েছে।”
 
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর কথাটা শুনে। আমি সাথে সাথেই ওকে বললাম, “প্লিজ দোস্ত, এমন করিস না। যখন মেয়ের গায়ে মাখবি, নিজেও ইউজ করবি। নিজের যত্ন নিবি, না হলে একসময় কঠিন ডিপ্রেশনে চলে যাবি। নিজের মন ভালো রাখাটা জরুরী। নিজেকে ভালোবাসাটা খুব জরুরী। না হলে একসময় নিজের চারপাশের মানুষদেরও তুই ভালো রাখতে পারবি না।”
 
সে বলল তার এক আত্মীয় নাকি তাকে লোশন মাখতে দেখে বলেছে শুধু নিজে না মেখে বাচ্চাকেও যেন মাখায়!!! পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হয়। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আশেপাশের মানুষের সহযোগিতা তো অবশ্যই কাম্য।  কিন্তু আপনি নিজে কি নিজেকে সহযোগিতা করছেন? নিজের ভালো থাকাটা যে কতটা ইম্পরট্যান্ট সেইটা কি বুঝতে পারছেন? সন্তান অবশ্যই আপনার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আপনি নিজেও কিন্তু আপনার প্রায়োরিটি। সন্তানের যত্নের পাশাপাশি নিজের ও যত্ন নিন।
 
যা করতে ভালো লাগে, তাই করুন। সব ব্যস্ততার মাঝেও নিজেকে আলাদা করে সময় দিন। বই পড়ুন, মুভি দেখুন, সময় করে বেড়িয়ে আসুন, কেনাকাটা করুন, ক্র্যাফটিং বা ছবি আঁকতে ভালোবাসলে সেটাই করুন, লেখালেখির হাত থাকলে লিখুন। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখুন, আড্ডা দিন। নিজের ত্বকের যত্ন নিন, চুলের যত্ন নিন, সাজগোজ করুন।  আপনার মন ভালো থাকবে। এতে আপনার বাচ্চা আর আপনার সংসার টাও ভালো থাকবে। # সংগ্রহিত পোষ্ট

সঙ্গী বিষণ্ণতায় ভুগলে কি করবেন?

সঙ্গী বিষণ্ণতায় ভুগলে সম্পর্কে টানাপোড়ন হতে পারে – তবে এর থেকে পরিত্রানও সম্ভব।  এই প্রবন্ধে আমরা বিষণ্ণ সঙ্গীর সঙ্গে জীবন স্বাভাবিক করার ৫টি উপায় নিয়ে আলোচনা করব।   যখন একজন ব্যাক্তি গুরুতর বিষণ্ণতায় ভোগেন, তার কাছের মানুষগুলো সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং তাদের প্রতিদিন এগুলো নিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়। তবে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষটির সঙ্গীটি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। আসলেই বিষণ্ণতা সম্পর্কের টানাপোড়ন সৃষ্টি করতে পারে, এজন্যে সঙ্গীটির কিছু কৌশল আয়ত্ত করা প্রয়োজন যেন তিনি এই দুরাবস্থার মোকাবেলা করতে পারেন এবং সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে পারেন।   মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের থেকে বিষণ্ণ সঙ্গীর সঙ্গে জীবন স্বাভাবিক করার ৫টি উপায় দেয়া হলঃ

নিজেকে বোঝান যে আপনার সঙ্গীটি আপনার দলেই আছেন

যখন একজন ব্যাক্তি গুরুতর বিষণ্ণতায় ভোগেন, তার কাছের মানুষগুলো সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং তাদের প্রতিদিন এগুলো নিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়। এটি স্বাভাবিক, কেননা আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোর কাছে সবচাইতে সত্য এবং অকপট থাকতে পারি। বন্ধু বান্ধব এবং সমাজের অন্যান্যদের সামনে আমরা এক ধরনের মুখোশ পড়ে থাকি এবং মন ভাল থাকার অভিনয় করি।

যদিওবা এই আচরন স্বাভাবিক, তবুও একজন বিষণ্ণ মানুষের সঙ্গে জীবনাতিপাত করলে মনে হতে পারে সে তার সবচেয়ে খারাপ আচরনগুলো আপনার জন্যে রেখে দেন। এটি অবশ্য অনেকাংশে সত্যি। তারা আসলে সত্যিকারে যেমনটি অনুভব করছেন, তা আপনার সামনে তারা প্রকাশ করেন। তবে আপনার জন্যে ব্যাপারটা অতটা সুখকর নাও হতে পারে।

যদি আপনি মনে করেন যে তাদের অসুস্থতাটা অন্যায়ভাবে আপনার ওপর চাপানো হচ্ছে, তবে মনে রাখবেন, আপনি এবং আপনার সঙ্গীটি একই দলে আছেন। তিনি কখনই আপনাকে দুঃখ দিতে বা দূরে ঠেলে দিতে চান না। বরং তিনি আশা করেন যে আপনি তাকে গ্রহন করে নিবেন – তিনি যেমনই থাকুক না কেন। এমনও হতে পারে যে আরোগ্য লাভের জন্যে তারা আপনার সাহায্যও চাইছেন – যা হল আমাদের পরবর্তী বিষয়।

আপনার সঙ্গীকে ভাল হয়ে উঠতে সাহায্য করুন

এই প্রসঙ্গের ভেতরে ঢোকার আগে আমাদের বুঝতে হবে যে একজন বিষন্ন সঙ্গীকে সাহায্য করে এবং তাদের সামর্থ করার মধ্যে সূক্ষ্ম বিভেদ আছে। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার কারনে, তিনি যেন একই পথে চলতে থাকার বাহানা না পান বা চিকিৎসা না নিয়ে তার বিষন্নতা জিইয়ে রাখার কোনও ছুতা না মিলে। এভাবেই কো-ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয় এবং অনেকদিন ধরে বিষণ্ণতা জিইয়ে থাকার একটি কারনও এই কো-ডিপেন্ডেন্সি।

তবে আপনার সঙ্গীকে মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্যে সাহায্য করা এবং তাকে সামর্থ করা একই ব্যাপার নয়। আদতে, তা অনেকটাই উল্টো। তাদের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করতে উৎসাহিত করা এবং তাদের দুর্বল মুহূর্তে পাশে থাকার মাধ্যমে আপনি তাদের আরোগ্য লাভের যাত্রায় সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে তাকে সময়মত ওষুধ খেতে মনে করিয়ে দেয়া বা পরামর্শকের কাছে সময়মত যাওয়ার কথা বলাতেই তার সাহায্য করা হতে পারে।

সব কথা গায়ে মাখবেন না

যখন আপনার সঙ্গীটি উত্তেজিত হয়ে কিছু বলছেন, আপনার মনে রাখতে হবে তার কোনও কথাই গায়ে মাখা যাবে না। যদিওবা মনে হতে পারে সে আপনাকে চরম ঘৃনা করে, এটি আসলে সত্য নয়।

বিষণ্ণতার একটি বড় উপসর্গ হল, বাস্তব সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা। জীবনকে এক দুর্বিসহ দাসত্ব মনে হতে পারে আর সবকিছুই বাস্তবের চেয়েও বেশী খারাপ মনে হতে পারে। আপনার সঙ্গীকে এই মনোভাব অসাড় করে ফেলতে পারে। আপনার সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যাবার, সুন্দর সময় কাটাবার এমনকি কথা বলার শক্তি বা ইচ্ছা তার চলে যেতে পারে।

এটি আপনার বা আপনাদের সম্পর্কের কারনে হচ্ছে না বরং তারা যেই অসুস্থতায় ভুগছেন তার কারনে হচ্ছে। মনে রাখবেন, বিষণ্ণতায় ভোগা এবং সম্পর্কে অসুখী হওয়া দুটি ভিন্ন ব্যাপার – যদিওবা সর্বদা এটি মনে নাও হতে পারে।

তাদের সময় দিন, খারাপ মুহুর্তগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে

কোনও কোনও দিন অন্য দিনের তুলনায় খারাপ হতে পারে, সবচেয়ে খারাপ দিনগুলি একেবারেই অসহ্য মনে হতে পারে। এরকম সময়ে আপনার প্রয়োজন তাকে কিছু সময় দেয়া, যেন খারাপ মুহুর্তগুলো তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেন। এটা বোঝার চেষ্টা করুন যে তারা ঘুম থেকে উঠেই হতাশ অনুভব করতে থাকেন এবং এই মনোভাবের জন্যে আবার নিজেকে দুষতে থাকেন। এসব দিনগুলোতে বিছানা থেকে ওঠাই চরম কষ্টের হতে পারে।

খারাপ দিনগুলোতে আপনার সঙ্গী হয়ত সারাদিন বিছানায় শুয়ে বা সোফায় বসে টিভি দেখেই কাটাতে পারেন। যদিও আপনি যানেন এটি তাদের জন্যে ভাল না – তবুও বুঝতে চেষ্টা করুন, হয়ত এর চেয়ে বেশি তার পক্ষে আর করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আপনার তাকে সময় দেয়া প্রয়োজন, যেন তিনি এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেন।

তার কাজের তিরস্কার না করে সে যেমন, তেমনিভাবে তাকে ভালবাসা আর গ্রহন করে নেয়াই এসময়ে তাকে সাহায্য করার সবচেয়ে ভাল উপায়। আপনার এই কাজগুলো করা এবং না করার কারনে আপনার সঙ্গী সুস্থ হতে পারেন অথবা আরও খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়ার কারন হতে পারে।

নিজের কাজের সীমা নির্ধারন করুন

এটা ঠিক যে, আপনি আপনার সঙ্গীর আরোগ্যের জন্যে যে কোনও কিছু করতে প্রস্তুত। তবে সমস্যা হচ্ছে, আপনি যদি বেশি সময় এবং পরিশ্রম তার আরোগ্যের পেছনে ব্যয় করেন, তবে এক সময়ে আপনার এটি দুর্বিসহ লাগতে পারে। আরও বেশি সময় চালিয়ে গেলে আপনার এটি তীব্র বিরক্তিকরও লাগতে পারে।

আপনার অবস্থান এবং ব্যাক্তিগত বাধ্যবাধতার উপর আপনার সীমা নির্ভর করবে। যেমন – আপনি তাকে প্রতিদিনের ওষুধ খেতে মনে করিয়ে দিতে পারেন কিন্তু তারা আসলে খাচ্ছে কিনা তা আপনি তদারক করবেন না, সেটা হবে আপনার সীমা। কেননা, সময়মত ওষুধ খাওয়া তাদের কর্তব্য – আপনার নয়।

তেমনিভাবে, দুই সপ্তাহে কমপক্ষে একবার আপনি অন্য বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাবেন, যদিওবা আপনার সঙ্গী হয়ত বাড়িতে থাকতেই গো ধরে বসে আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আপনার সঙ্গীকে কিছু সীমা নির্ধারন করে দেয়া এবং পরবর্তীতে সেগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা।

আপনার সঙ্গীকে চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করুন

আপনার সঙ্গীটিকে যেভাবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন তা হল তাদের চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করা। মুলত, বিষণ্ণতা মস্তিষ্কের রসায়নের সমস্যা। আপনার সঙ্গীটি আহত হলে যেমন আপনি তাকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতেন, তেমনিভাবে বিষন্নতার জন্যেও তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া জরুরী। তার আরোগ্য হবার সময়টাতে ধৈর্য্য ধারন করে এবং তার পাশে থেকে তাকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে আপনি সাহায্য করতে পারেন।


দি কেবিন ঢাকা মানসিক সুস্থতার চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে বিশেষায়িত যেখানে বিশেষ বস্তুর প্রতি এবং প্রক্রিয়া আসক্তি উভয়ের উপর এবং পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার নানা দিক যেমন উদ্বেগ, বিষন্নতা, অনুভুতির বৈকল্য, ব্যক্তিত্বের বৈকল্য/রোগ এবং ব্যক্তি ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে না চলতে পারার রোগ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে এইরকম প্রতিষ্ঠান এই প্রথম। দি কেবিন ঢাকা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেশাদার চিকিৎসা প্রদানকারীদের  দ্বারা ক্লায়েন্টদের মানসিক সুস্থতার জন্য আধুনিক এবং কার্যকর চিকিৎসা প্রদান করেন। দি কেবিন ঢাকা বিনামূল্যে প্রাথমিকভাবে ফোনে মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করে থাকে।  আপনি বা আপনার সঙ্গী বিষন্নতায় ভুগলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন।  এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে ক্লিক করে  যোগাযোগ করুন

সন্তান-সম্ভবা মায়ের নিয়মিত যত্ন ও সন্তানের বৃদ্ধি

মা পৃথিবীর মধুরতম ডাক। আমাদের পৃথিবীর আলো দেখাতে তারা সীমাহীন কষ্ট সহ্য করেন। গর্ভাবস্থায় তাই মায়ের দরকার বাড়তি পুষ্টি, বাড়তি যত্ন। কিন্তু আমরা কি প্রত্যেকে আসলেই জানি সঠিক ভাবে কীভাবে যত্ন নিতে হবে!? মায়ের যত্ন কখনই তার নিজের একার পক্ষে করা সম্ভব না কারণ গর্ভ ধারণের পর অনেক মায়ের অবস্থাই নাজুক হয়ে যায়। আপনার কাছের মানুষটিকে মানসিক, নৈতিক সহায়তা করতে জেনে নিন কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।

সঠিক সময়ে নিয়মিত ভাবে চেক-আপ না করালে মা ও শিশু উভয়ের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই WHO (world health organisation ) ১৩ টি Antenatal visit নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ৪ টি অবশ্যই করতে হবে। এর মানে হলো, গর্ভাবস্থায় কাছের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়মিত এই পরীক্ষা করতে হবে দেখার জন্য যে বাচ্চা বা মায়ের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা।

০১) ১৬ সপ্তাহের মধ্যে – রক্তশূন্যতা, সিফিলিস, প্রসব জনিত কোন জটিলতা আছে কিনা। জন্ম পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য শিক্ষাও নিতে হবে।
০২) ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে- বাচ্চা ঠিক মত বাড়ছে কিনা, পেটের বেড়ে যাওয়া অংশ মেপে পরীক্ষা করাতে হবে।
০৩) ৩২ তম সপ্তাহে- এক্লামশিয়া ( উচ্চ রক্ত চাপ, প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া আছে কিনা ), জন্ম পরিকল্পনাকে আরও উন্নত করা।
০৪) ৩৬ তম সপ্তাহে -বাচ্চার পজিশন, জরায়ুতে কীভাবে আছে, মাথা নাকি পা বা শরীরের অন্য অংশ নীচের দিকে তা জানতে হবে। জন্ম পরিকল্পনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শেষ হলো ভিজিটের পালা। কিন্তু এর সাথে কিছু টেস্ট-ও করতে হবে। ডাক্তাররা প্রায়ই এসব টেস্ট করতে দেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রসব জনিত কোন জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা আগেই নির্ণয় করা।

রুটিন টেস্টঃ

০১. Hb %, CBC, VDRL
০২. Random Blood Sugar
০৩. Ultrasonogram of whole abdomen

বিশেষ টেস্টঃ

০১. TORCHES test, HBS Ag
০২. Maternal serum alpha fetoprotein
০৩. Ultrasound examination
০৪. Cervical cytology ( pap smear )

গর্ভাবস্থার বিপদচিহ্ন সমূহঃ

এই বিপদচিহ্ন গুলোর একটিও দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

০১. তীব্র মাথা ব্যাথা
০২. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
০৩. যোনিপথে রক্তপাত হওয়া
০৪. তলপেটে ব্যথা
০৫. চোখে ঝাপসা দেখা
০৬. হাত পা ফুলে যাওয়া
০৭. বাচ্চার নড়া চড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া

গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য। কারণ পূর্বে আপনি যাই খেতেন তা শুধু আপনার উপর প্রভাব ফেলত। আর এখন এটা আপনার বাচ্চার সুস্থতার সাথে জড়িত। খুব বেশি না কিন্তু সুষম খাদ্য খেতে হবে।  সাধারণত দিনে ২১০০ ক্যালরি খাদ্য একজন সুস্থ মানুষের জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু গর্ভাবস্থায় চাহিদা বেড়ে যায়। ২৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন হতে পারে।

০১. প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে। সবুজ শাক-সবজি, মাছ-মাংস খেতে হবে। অবশ্যই নিয়মিত খেতে হবে, পাশাপাশি ভাত, ডাল, শস্য দানা, আলুও খেতে হবে।

০২. আয়রন ও ফলিক এসিড এর চাহিদা বেড়ে যায়। আয়রন প্লাসেন্টা তৈরি হওয়ার জন্যে রক্ত যোগায়। ব্রকলি, কচু শাক, পালং শাক তাই গর্ভাবস্থায় জরুরী। ঘাটতি থাকে নিয়মিত ট্যাবলেট খেতে হবে। ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে রক্ত দিতে হতে পারে।

বাচ্চার ( সাপ্তাহিক ) অঙ্গ গঠনঃ  প্রথম তিন মাসে বাচ্চার সব অঙ্গ গঠন শুরু হয়। তাই এ সময় খুব সাবধানে থাকতে হয়।

০১) ৫ম সপ্তাহ – মস্তিস্ক, সুষুম্না কাণ্ড, হৃদপিণ্ড ও খাদ্যনালী গঠন হওয়া শুরু হয়।
০২)  ষষ্ঠ – ৭ম সপ্তাহ- হাত ও পা কুঁড়ির আকার ধারণ করে। কান ও চোখ তৈরি শুরু হয়। হৃদপিণ্ড তৈরি হতে থাকে ও সঠিক তালে স্পন্দিত হয়।
০৩)  ৮ম সপ্তাহ – ফুসফুস তৈরি শুরু হয়। মস্তিষ্ক বাড়তে থাকে।
০৪)  ৯ম সপ্তাহ – কনুই ও পায়ের পাতা দেখা সম্ভব হয়। স্তনের বোটা ও লোম তৈরি হয়। সব প্রয়োজনীয় অঙ্গ তৈরি হওয়া শুরু হয়।
০৫)  ১০ম সপ্তাহ- চোখের পাপড়ি আরও উন্নত হয়। অন্ন নালি ঘুরে নতুন অবস্থান নেয়। মুখ সুন্দর আকার নেয়।
০৬)  ১১তম-১২তম সপ্তাহ – মাথা শরীরের অর্ধেক আকার ধারণ করে। হাত পা সরু ও লম্বা হয়। বাচ্চা আঙ্গুল দিয়ে হাত মুঠো করতে পারে।

যা যা করা যাবে না ও সাধারণ কিছু উপদেশঃ

০১. ভারি কাজ করা যাবে না ( সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা কম করতে হবে, ভারি জিনিস ওঠানো যাবে না, ঝাঁকুনি দেয়া যানবাহন বা রাস্তায় চলা যাবে না।
০২. ধূমপান, মদ পান বন্ধ করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে ও বিশ্রাম নিতে হবে।
০৩. অনেক ওষুধ আছে যা খেলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে বা বিকলাঙ্গ হতে পারে। প্রায়ই ব্যবহার করা হয় এমন কিছু ওষুধের নাম হচ্ছে – celecoxib, ibuprofen, all oral contraceptives, testosterone, griseofulvin, sulfisoxazole, povidone iodine, metronidazole, methotrexate এরকম আরও কিছু ওষুধ।  এ সময় যে কোন ওষুধ খাওয়ার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সন্তান মায়ের জন্য অতি আদরের মানিক রতন। বাচ্চার মঙ্গলের জন্যে মা সবই করতে পারেন। একটু সচেতন থাকলেই এড়ানো যাবে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক পরিস্থিতি। নিয়ম গুলো যত্নের সাথে পালন করুন। সুস্থ, সুন্দর বাচ্চার হাসি মুখ দেখার শুভকামনা রইল।

লিখেছেনঃ শারমিন আখতার চৌধুরী

স্বাস্থ্যকর ভালোবাসা

প্রকৃত অর্থে ভালোবাসার কোনো মৌসুম নেই, নির্দিষ্ট কোনো দিন বা মাসও নেই। ভালোবাসার অনুভব যে কারও মনে সঞ্চারিত হতে পারে যেকোনো সময়। সর্বব্যাপী এই ভালোবাসা কেবল প্রেমিক-প্রেমিকা বা কবি-সাহিত্যিকদেরই মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু নয়, বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরও এর প্রতি রয়েছে প্রবল আগ্রহ। তবে তাঁদের আগ্রহের কারণটা ভিন্ন এবং বলতে পারেন নন-রোমান্টিকও। মানব স্বাস্থ্যের ওপর ভালোবাসার প্রভাবই তাঁদের প্রধান ঔত্সুক্য। তাঁদের গবেষণালব্ধ ফল ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তিদের জন্য উদ্দীপকই বটে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভালোবাসা স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক। তবে এখানে ভালোবাসা বলতে আকর্ষণের প্রাথমিক উদ্দামতা, মোহগ্রস্ততা বা কেবল নর-নারীর আদিম প্রেমকে বোঝানো হচ্ছে না; ভালোবাসা বলতে অন্তরঙ্গ ও উপভোগ্য একটি স্থায়ী সম্পর্কের ওপর জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ভালোবাসার ইতিবাচক প্রভাব বুঝতে গবেষণা করা হচ্ছে বিবাহিত ব্যক্তিদের ওপর। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে, সুখী দম্পতিরা দীর্ঘায়ু হন; তাঁদের হার্ট অ্যাটাক ও ক্যান্সার হওয়ার হারও অসুখী দম্পতি বা অবিবাহিত ব্যক্তিদের চেয়ে কম। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত মহিলাদের হূদরোগ, লিভার সিরোসিস ও আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা একাকী ব্যক্তিদের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। অন্যদিকে একাকী পুরুষদের এই আশঙ্কা সুখী বিবাহিত ব্যক্তিদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।

নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন আনলিমিটেড লাভ-এর গবেষক ইসথার এম স্টার্নবার্গ বলেন, যেকোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসোল হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়। এই কর্টিসোল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। ভালোবাসা সেই চাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে কমে যায় কর্টিসোল নিঃসরণও। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষকেরাও ভালোবাসার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার বিষয়টি সমর্থন করেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যানডেস পার্ট বলেন, স্থিতিশীল, দীর্ঘস্থায়ী ভালোবাসার বন্ধন শরীরে এনডরফিন নামের এক ধরনের রাসায়নিকের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এনডরফিন আবার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রাকৃতিক ঘাতক কোষের পরিমাণ বাড়ায়।

প্রগাঢ় ভালোবাসা বার্ধক্য বিলম্বিত করে, যৌবনের স্থায়িত্ব বাড়ায়। ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক হার্টম্যাথ ইনস্টিটিউট স্বেচ্ছায় ভালোবাসা অনুভবের এক অনুশীলন উদ্ভাবন করে এবং গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সেই অনুশীলনটি করায়। নিয়মিত অনুশীলনের ছয় মাসের মাথায় বার্ধক্যরোধী হরমোন হিসেবে পরিচিত ডিহাইড্রোএপিএন্ড্রোস্টেরন বা ডিএইচইএ হরমোনটি তাদের দেহে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং নয় মাসের মাথায় তা ৯০ শতাংশ বাড়ে।

হূদ-স্বাস্থ্যের ওপরও ভালোবাসার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। ১০ হাজার বিবাহিত পুরুষের ওপর এক গবেষণা চালান আমেরিকান গবেষকেরা। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিসের মতো হূদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে জীবনযাপন করছিলেন তাঁরা। ফলে হূদরোগের কারণে বুকে তীব্র ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি ছিল সবারই। তাঁদের দুটি দলে ভাগ করা হয়। প্রথম দলে ছিলেন সেই সব পুরুষ, যাঁরা স্ত্রীর সত্যিকারের ভালোবাসায় সিক্ত। অন্যদিকে যাঁরা মনে করতেন স্ত্রীরা তাঁদের ভালোবাসেন না, তাঁরা ছিলেন দ্বিতীয় দলে। পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দলের পুরুষদের মধ্যে ওই ধরনের তীব্র বুকে ব্যথা হওয়ার হার ছিল প্রথমোক্ত দলের প্রায় দ্বিগুণ।

২০০৭ সালে হিউম্যান কমিউনিকেশন রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ভালোবাসার অনুভূতি কেবল কাগজে লেখার মাধ্যমেই কমানো যায় হূদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোলেস্টেরল! পাঁচ সপ্তাহব্যাপী গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন তিনবার ২০ মিনিট করে তাঁদের ভালোবাসার মানুষটিকে উদ্দেশ করে মনের অভিব্যক্তি লিখতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, তাঁদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য হারে।

এমনকি কেবল ভালোবাসা-জড়ানো নিবিড় আলিঙ্গনও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনায় পরিচালিত এক গবেষণায় অংশ নেওয়া যুগলেরা প্রথমে পাশাপাশি বসে গল্প করেন, এরপর গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরেন একে অন্যকে। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, মহিলাদের ক্ষেত্রে কর্টিসোল হরমোন এবং রক্তচাপ দুই-ই হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে নারী-পুরুষ উভয়েরই শরীরে বন্ধনের হরমোন বলে পরিচিত অক্সিটোসিনের নিঃসরণ বেড়েছে। সাইকোসোমাটিক মেডিসিন জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

শারীরিক বেদনা উপশমেও ভালোবাসার ভূমিকা রয়েছে। এমআরআই পরীক্ষায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের যে অংশ ব্যথার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, সুখী দম্পতিদের সেই অংশ অধিক কার্যকর হয়ে থাকে। প্রায় সোয়া লাখ ব্যক্তির ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, বিবাহিত ব্যক্তিদের মাথা ব্যথা, কোমর ব্যথা-জাতীয় উপসর্গ অবিবাহিতদের চেয়ে কম হয়। প্রকৃত ভালোবাসা জীবনকে সুখময় করে, মানসিক চাপ মোকাবিলা সহজ করে, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমায়, কমায় মাদকাসক্তির আশঙ্কাও।

ভালোবাসার যে স্বাস্থ্যকর একটা দিক আছে, তা জেনে হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকারা আনন্দিতই হচ্ছেন। ভালোবাসা হতে পারে বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান বা সহপাঠী-সহকর্মীর প্রতি। এমনকি পোষা জীবটির প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসাও আপনাকে দিতে পারে স্বাস্থ্যগত সুবিধাটুকু। তাই ভালোবাসুন। ভালোবাসুন আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনীকে, আপনার আত্মীয়-বন্ধু-পরিজনকে, ভালোবাসুন মানুষ এবং সৃষ্টির সব জীবকে। ভালোবাসুন এবং সুস্থ থাকুন।