সঙ্গী বিষণ্ণতায় ভুগলে সম্পর্কে টানাপোড়ন হতে পারে – তবে এর থেকে পরিত্রানও সম্ভব। এই প্রবন্ধে আমরা বিষণ্ণ সঙ্গীর সঙ্গে জীবন স্বাভাবিক করার ৫টি উপায় নিয়ে আলোচনা করব। যখন একজন ব্যাক্তি গুরুতর বিষণ্ণতায় ভোগেন, তার কাছের মানুষগুলো সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং তাদের প্রতিদিন এগুলো নিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়। তবে বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষটির সঙ্গীটি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। আসলেই বিষণ্ণতা সম্পর্কের টানাপোড়ন সৃষ্টি করতে পারে, এজন্যে সঙ্গীটির কিছু কৌশল আয়ত্ত করা প্রয়োজন যেন তিনি এই দুরাবস্থার মোকাবেলা করতে পারেন এবং সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের থেকে বিষণ্ণ সঙ্গীর সঙ্গে জীবন স্বাভাবিক করার ৫টি উপায় দেয়া হলঃ
নিজেকে বোঝান যে আপনার সঙ্গীটি আপনার দলেই আছেন
যখন একজন ব্যাক্তি গুরুতর বিষণ্ণতায় ভোগেন, তার কাছের মানুষগুলো সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং তাদের প্রতিদিন এগুলো নিয়ে কষ্ট সহ্য করতে হয়। এটি স্বাভাবিক, কেননা আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোর কাছে সবচাইতে সত্য এবং অকপট থাকতে পারি। বন্ধু বান্ধব এবং সমাজের অন্যান্যদের সামনে আমরা এক ধরনের মুখোশ পড়ে থাকি এবং মন ভাল থাকার অভিনয় করি।
যদিওবা এই আচরন স্বাভাবিক, তবুও একজন বিষণ্ণ মানুষের সঙ্গে জীবনাতিপাত করলে মনে হতে পারে সে তার সবচেয়ে খারাপ আচরনগুলো আপনার জন্যে রেখে দেন। এটি অবশ্য অনেকাংশে সত্যি। তারা আসলে সত্যিকারে যেমনটি অনুভব করছেন, তা আপনার সামনে তারা প্রকাশ করেন। তবে আপনার জন্যে ব্যাপারটা অতটা সুখকর নাও হতে পারে।
যদি আপনি মনে করেন যে তাদের অসুস্থতাটা অন্যায়ভাবে আপনার ওপর চাপানো হচ্ছে, তবে মনে রাখবেন, আপনি এবং আপনার সঙ্গীটি একই দলে আছেন। তিনি কখনই আপনাকে দুঃখ দিতে বা দূরে ঠেলে দিতে চান না। বরং তিনি আশা করেন যে আপনি তাকে গ্রহন করে নিবেন – তিনি যেমনই থাকুক না কেন। এমনও হতে পারে যে আরোগ্য লাভের জন্যে তারা আপনার সাহায্যও চাইছেন – যা হল আমাদের পরবর্তী বিষয়।
আপনার সঙ্গীকে ভাল হয়ে উঠতে সাহায্য করুন
এই প্রসঙ্গের ভেতরে ঢোকার আগে আমাদের বুঝতে হবে যে একজন বিষন্ন সঙ্গীকে সাহায্য করে এবং তাদের সামর্থ করার মধ্যে সূক্ষ্ম বিভেদ আছে। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে আপনার কারনে, তিনি যেন একই পথে চলতে থাকার বাহানা না পান বা চিকিৎসা না নিয়ে তার বিষন্নতা জিইয়ে রাখার কোনও ছুতা না মিলে। এভাবেই কো-ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয় এবং অনেকদিন ধরে বিষণ্ণতা জিইয়ে থাকার একটি কারনও এই কো-ডিপেন্ডেন্সি।
তবে আপনার সঙ্গীকে মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্যে সাহায্য করা এবং তাকে সামর্থ করা একই ব্যাপার নয়। আদতে, তা অনেকটাই উল্টো। তাদের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করতে উৎসাহিত করা এবং তাদের দুর্বল মুহূর্তে পাশে থাকার মাধ্যমে আপনি তাদের আরোগ্য লাভের যাত্রায় সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে তাকে সময়মত ওষুধ খেতে মনে করিয়ে দেয়া বা পরামর্শকের কাছে সময়মত যাওয়ার কথা বলাতেই তার সাহায্য করা হতে পারে।
সব কথা গায়ে মাখবেন না
যখন আপনার সঙ্গীটি উত্তেজিত হয়ে কিছু বলছেন, আপনার মনে রাখতে হবে তার কোনও কথাই গায়ে মাখা যাবে না। যদিওবা মনে হতে পারে সে আপনাকে চরম ঘৃনা করে, এটি আসলে সত্য নয়।
বিষণ্ণতার একটি বড় উপসর্গ হল, বাস্তব সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা। জীবনকে এক দুর্বিসহ দাসত্ব মনে হতে পারে আর সবকিছুই বাস্তবের চেয়েও বেশী খারাপ মনে হতে পারে। আপনার সঙ্গীকে এই মনোভাব অসাড় করে ফেলতে পারে। আপনার সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যাবার, সুন্দর সময় কাটাবার এমনকি কথা বলার শক্তি বা ইচ্ছা তার চলে যেতে পারে।
এটি আপনার বা আপনাদের সম্পর্কের কারনে হচ্ছে না বরং তারা যেই অসুস্থতায় ভুগছেন তার কারনে হচ্ছে। মনে রাখবেন, বিষণ্ণতায় ভোগা এবং সম্পর্কে অসুখী হওয়া দুটি ভিন্ন ব্যাপার – যদিওবা সর্বদা এটি মনে নাও হতে পারে।
তাদের সময় দিন, খারাপ মুহুর্তগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে
কোনও কোনও দিন অন্য দিনের তুলনায় খারাপ হতে পারে, সবচেয়ে খারাপ দিনগুলি একেবারেই অসহ্য মনে হতে পারে। এরকম সময়ে আপনার প্রয়োজন তাকে কিছু সময় দেয়া, যেন খারাপ মুহুর্তগুলো তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেন। এটা বোঝার চেষ্টা করুন যে তারা ঘুম থেকে উঠেই হতাশ অনুভব করতে থাকেন এবং এই মনোভাবের জন্যে আবার নিজেকে দুষতে থাকেন। এসব দিনগুলোতে বিছানা থেকে ওঠাই চরম কষ্টের হতে পারে।
খারাপ দিনগুলোতে আপনার সঙ্গী হয়ত সারাদিন বিছানায় শুয়ে বা সোফায় বসে টিভি দেখেই কাটাতে পারেন। যদিও আপনি যানেন এটি তাদের জন্যে ভাল না – তবুও বুঝতে চেষ্টা করুন, হয়ত এর চেয়ে বেশি তার পক্ষে আর করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় আপনার তাকে সময় দেয়া প্রয়োজন, যেন তিনি এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেন।
তার কাজের তিরস্কার না করে সে যেমন, তেমনিভাবে তাকে ভালবাসা আর গ্রহন করে নেয়াই এসময়ে তাকে সাহায্য করার সবচেয়ে ভাল উপায়। আপনার এই কাজগুলো করা এবং না করার কারনে আপনার সঙ্গী সুস্থ হতে পারেন অথবা আরও খারাপ অবস্থায় চলে যাওয়ার কারন হতে পারে।
নিজের কাজের সীমা নির্ধারন করুন
এটা ঠিক যে, আপনি আপনার সঙ্গীর আরোগ্যের জন্যে যে কোনও কিছু করতে প্রস্তুত। তবে সমস্যা হচ্ছে, আপনি যদি বেশি সময় এবং পরিশ্রম তার আরোগ্যের পেছনে ব্যয় করেন, তবে এক সময়ে আপনার এটি দুর্বিসহ লাগতে পারে। আরও বেশি সময় চালিয়ে গেলে আপনার এটি তীব্র বিরক্তিকরও লাগতে পারে।
আপনার অবস্থান এবং ব্যাক্তিগত বাধ্যবাধতার উপর আপনার সীমা নির্ভর করবে। যেমন – আপনি তাকে প্রতিদিনের ওষুধ খেতে মনে করিয়ে দিতে পারেন কিন্তু তারা আসলে খাচ্ছে কিনা তা আপনি তদারক করবেন না, সেটা হবে আপনার সীমা। কেননা, সময়মত ওষুধ খাওয়া তাদের কর্তব্য – আপনার নয়।
তেমনিভাবে, দুই সপ্তাহে কমপক্ষে একবার আপনি অন্য বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাবেন, যদিওবা আপনার সঙ্গী হয়ত বাড়িতে থাকতেই গো ধরে বসে আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আপনার সঙ্গীকে কিছু সীমা নির্ধারন করে দেয়া এবং পরবর্তীতে সেগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা।
আপনার সঙ্গীকে চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করুন
আপনার সঙ্গীটিকে যেভাবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন তা হল তাদের চিকিৎসা নিতে উদ্বুদ্ধ করা। মুলত, বিষণ্ণতা মস্তিষ্কের রসায়নের সমস্যা। আপনার সঙ্গীটি আহত হলে যেমন আপনি তাকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতেন, তেমনিভাবে বিষন্নতার জন্যেও তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া জরুরী। তার আরোগ্য হবার সময়টাতে ধৈর্য্য ধারন করে এবং তার পাশে থেকে তাকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে আপনি সাহায্য করতে পারেন।
দি কেবিন ঢাকা মানসিক সুস্থতার চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে বিশেষায়িত যেখানে বিশেষ বস্তুর প্রতি এবং প্রক্রিয়া আসক্তি উভয়ের উপর এবং পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার নানা দিক যেমন উদ্বেগ, বিষন্নতা, অনুভুতির বৈকল্য, ব্যক্তিত্বের বৈকল্য/রোগ এবং ব্যক্তি ও পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে না চলতে পারার রোগ ইত্যাদির উপর গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে এইরকম প্রতিষ্ঠান এই প্রথম। দি কেবিন ঢাকা দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পেশাদার চিকিৎসা প্রদানকারীদের দ্বারা ক্লায়েন্টদের মানসিক সুস্থতার জন্য আধুনিক এবং কার্যকর চিকিৎসা প্রদান করেন। দি কেবিন ঢাকা বিনামূল্যে প্রাথমিকভাবে ফোনে মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করে থাকে। আপনি বা আপনার সঙ্গী বিষন্নতায় ভুগলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে ক্লিক করে যোগাযোগ করুন।