মানবিক সম্পর্ক

মানুষ সর্বদা দলবদ্ধ ও সামাজিক জীব। তাই আসঙ্গ লিপ্সা মানুষের আজন্মের অভিলাষ। একাকিত্বে মানুষের যন্ত্রনা অনেকগুণ বেড়ে যায় এবং মানুষ ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য মানুষ একের পর এক সম্পর্ক গড়তে থাকে। তবে সম্পর্কগুলি মানুষের মধ্যে চিরস্থায়ী নয়, মানুষ সম্পর্ক ভাঙ্গে আবার নতুন করে গড়ে তোলে। এভাবে ভাঙ্গা গড়ার স্রোতধারাই জীবনের বহমানতা এবং চির সত্য।

আসলে সম্পর্কগুলি বহতা নদীর মত, সে কখনও সুমধুর তালে বয়ে যেতে থাকে আবার মাঝে মাঝে বাঁক নেয়। তাই জীবনের ঘাঁটে ঘাঁটে এর পরিবর্তন সাধিত হয়। আবার কখনও নতুনত্বের বিচিত্র রূপ নিয়ে সে আপন গতিতে বয়ে চলে। এই বয়ে চলার মধ্যে কোন কোন ঘাঁটে থাকে সংস্কারের জোয়ার আবার কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনের জোয়ার। আবার সম্পর্ক প্রবাহের বুকে কখনও সোনার তরী ভেসে বেড়ায় যেখানে তরিখানা অসংখ্য ধনে ভরে থাকে আবার কখনও সেখানে হতাশার ছবিচিত্র জেগে থাকে। এটা মানুষে মানুষে সম্পর্কের স্বাভাবিক রূপ। জন্ম থেকেই মানুষের জীবনের আকাশে সম্পর্কগুলি মেঘের মত এসে এসে জমা হতে থাকে, তার মধ্যে কোন সম্পর্কে কার আগ্রহ বেশি তা দিয়ে তৈরি হয় তাঁর জীবনের গল্প।

প্রথমে ঘর থেকেই সম্পর্কগুলির পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়। তারপর বিশাল পৃথিবী জুড়ে মানুষের সম্পর্ক কখনও ভেঙ্গে যায় আবার কখনও জেগে থাকে। কারণ মানুষ সবার আগে পারিবারিক তারপর সামাজিক । তবে যে সম্পর্ক জেগে থাকে নতুন করে তার পরিবর্তন সাধিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি তার পরিবর্তন না ঘটে তাহলে সে মৃত হয়ে যায়, যে মৃত সম্পর্ক নিয়ে মানুষ চিরদিন ধরে বেঁচে থাকতে পারেনা। কারণ ক্রমাগত বদলের মধ্য দিয়ে মানুষ বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে যায়। এই বদলের মধ্যেই থাকে সম্পর্ক ভাঙ্গা গড়ার মন্ত্র, আবার কখনও কখনও প্রয়োজন। জীবনের একটা সময় প্রায় সকল মানুষই পার করে যখন সম্পর্ককে সে স্বার্থের কারনে টিকিয়ে রাখে, আবার কখনও অভ্যাসের কারনে, কখনও কখনও মনুষ্যত্বের কাঁধে ভর করে রক্তের বন্ধনে সম্পর্ক টিকে থাকে।

কখনও কখনও মানব চরিত্রে মনুষ্যত্ব ও ভালবাসা দ্বৈত রূপে প্রকাশিত হয়। দেখা যায় মানুষের ভালোবাসার আকুতি দু-একটা সম্পর্কে থাকলেও অধিকাংশ সম্পর্কেই ভালোবাসা ক্ষণিকের জন্য জন্মে আবার তা আকস্মিক ভাবেই শেষ হয়েও যায়। তাই ভালবাসাহীন সম্পর্কের মাঝে থাকে লেফট রাইট করার প্রবণতা যা মানুষকে অনেকটা একঘেয়ে করে রাখে এবং সুযোগ পেলেই যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। আবার কখনও তা জেগে থাকে  শুধুমাত্র মনুষ্যত্বের কারণে এই টিকে থাকা সম্পর্কের কোন কোন ক্ষেত্রে দায় থাকে কিন্তু দায়িত্ববোধ সেখানে অনুপস্থিত। এ থেকে প্রমাণিত হয় মানুষের ভালবাসার সম্পর্কটি গড়ে ওঠে ক্ষণিকের জন্য। যখন কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদী ভালোবাসায় আপ্লূত করে রাখে তখনই মানুষ হয়ে ওঠে অতিমানব।

মানুষের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করাই মানবিকতার লক্ষণ। তাই সম্পর্ক সবসময়ই মানবিক হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবই ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের সোপান, সব সম্পর্কই ভাঙতে পারে আবার সব সম্পর্কই নতুন করে মানুষ গড়তে পারে। তবে সম্পর্কের একটি মেয়াদ থাকে। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন ও পরিবর্তিত রূপে মানুষ মানুষের কাছে আসতে সক্ষম, নাহলে মানবিক সম্পর্ক মরে যায়। মরে যাওয়া সম্পর্ককে কেউ নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে পারে না, কেবল পরিবর্তনের ভেতর দিয়েই আবার মরে যাওয়া সম্পর্কটি নতুন প্রভাতের মত এসে মানুষের চোখে আলো দেয়, আশা দেয়। আসলে আমরা পরিবর্তনশীলতায় বিশ্বাসী। জীবন ও আশা পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল, যেখানে পরিবর্তন নেই সে জায়গাটি মানুষ বাদ দিয়ে সামনে চলে যায় অন্যকোনদিকে, যেখানে মানুষ পরিবর্তনের জোয়ার অনুভব করে। অপরিবর্তনীয় জায়গাটি অচলায়তনের মত একা পড়ে থাকে যাকে মানুষ কখনই কামনা করে না।

মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। আশা সমাজ জীবনকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। বেঁচে থাকার আশা জীবনকে করে গতিশীল, মোহময়। পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার আকুতিই মানুষে মানুষে সম্পর্ক সৃষ্টির মহান উদ্দেশ্য। সম্পর্কগুলো আবর্তিত ও পরিবর্তিত হতে থাকে মানব সমাজের সাংস্কৃতিক নিয়মে। সম্পর্ক নানা কারণে পরিবর্তিত হতে পারে । যেমন বাংলাদেশে যে মেয়ের বিয়ে হয়না সে বাবার বাড়ির মমত্ব হারিয়ে ফেলে, কারণ বিয়ে হওয়া মানে তার প্রতিষ্ঠা পাওয়া। আর মেয়েটি প্রতিষ্ঠা পায়নি বলেই এই কঠিন সত্য তার সম্মুখে এসে হাজির হয়। যদিও ধীর গতিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার নিয়মের পরিবর্তন ঘটছে কিন্তু সব সমাজে সব দেশে এখনও এই নিয়ম বলবত আছে, মানে পরিবর্তন ঘটেনি। যে পরিবারটিতে তার জন্ম হয়েছিল সময়ের স্রোতে তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। সময় এবং সম্পর্ক একই সুত্রে ঘূর্ণয়মান, একে অতিক্রম করা যায়না। আর সম্পর্কের বাঁক এভাবেই ঘুরে মরে।

সম্পর্ক কখনও মধুর হয়, কখনও দ্বন্দ্বময় হয়, কখনও আধিপত্যময়, কখনও শত্রুতা মূলক হয়, আবার কখনও বন্ধুত্বের হাতছানিতে অসম্ভব সুন্দর হয়ে যায়। আধিপত্য মানব জীবনের এবং সম্পর্কের আর একটি বিষয়। মানুষ বেঁচে থাকার মধ্যে চায় একটি সুন্দর সম্পর্কের ভীত। পরিবার যদি আধিপত্য প্রধান হয় তবে বেঁচে থাকার মধ্যে সুখের বদলে তিক্ততা দর্শনীয় হয়ে ওঠে বেশি। আধিপত্যের রূপ বিভিন্ন ধারায় মানুষের মধ্যে বাসা বাঁধে। যেমন স্বামী আধিপত্য বিস্তার করে স্ত্রীর উপর। পিতা মাতা উভয়ের আধিপত্য সন্তানের উপর। সন্তানের আধিপত্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল লোকটির উপর। অর্থাৎ সবল মানুষটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল লোকটির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে। তবে এই আধিপত্য বিস্তারের মধ্যেও কখনও ভালবাসা থাকে যেমন সন্তানের প্রতি মানুষের ভালবাসা অমোঘ।

এভাবে যতদিন মানুষ একের উপর অন্যে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে ততদিনই সম্পর্ক একটি করে নাম নিয়ে টিকে থাকে। যখন সময়ের পরিবর্তনে একের প্রতি অন্যের আধিপত্য ম্লান হয়ে আসে তখন সম্পর্কটাও ফিকে হয়ে আসতে থাকে। আধিপত্যও ফিকে হয় সময় ও জীবনের পরিবর্তনের সাথে, তারপর মানুষ দূরে সরে যেতে  থাকে। একে বলা যেতে পারে আধিপত্যময় সম্পর্ক।

গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এই আধিপত্যময় সম্পর্কের মধ্যে একটি স্বার্থের স্পষ্ট রেখা ফুটে থাকে। যে মানুষ কাউকে সম্পর্কের দ্বারা নির্ভরশীল করে রাখে সে আধিপত্যের মালিক, আর যে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য, সমাজের জন্য কারো উপর নির্ভর করে থাকে, তখনকার সময়ের জন্য সে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। দুজনেরই সম্পর্কটা সেই সময়ের জন্য মূলত স্বার্থের কারনে টিকে থাকে।

স্বার্থ ছাড়া সম্পর্ক হয়না। যেমন মা বাবার সাথে মানুষের সম্পর্ক থাকে উভয়ের স্বার্থের সম্পর্ক। কথাটা শুনে অনেকেই চমকে যাবে। বলবে মা বাবার চেয়ে নিঃস্বার্থ সম্পর্ক হয়না, এর মধ্যে কোন স্বার্থের ব্যাপার নেই, কিন্তু আসলে তা নয়। আমরা দেখেছি বাবা মায়ের সন্তানদের মধ্যে যে বেশি প্রতিভাবান তাঁর প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি। এটা স্বার্থের বহিঃপ্রকাশ, কারণ ঐ সন্তানটি তাঁদেরকে সমাজের প্রশংসা ও প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। এক কথায় মা বাবা সন্তানকে লালান পালন করার কারণ হল নিজের ছায়া তারা সন্তানের মধ্যে দেখতে পায় এবং একটি শিশুকে মানুষ করে তোলার মধ্যে একটি নির্মল আনন্দ অনুভুব করে। এটা মানব সত্তার একটি বৈশিষ্ট্য এবং এক ধরণের স্বার্থ। আর সন্তান অসহায় অবস্থায় মা বাবার কাছে যে আশ্রয় পায় তেমন নির্ভরশীলতার আশ্রয় পৃথিবীর কোথাও নেই। কিন্তু সন্তান বড় হয়ে একসময় নিজের জীবনের চাপে মা বাবা থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকে। তারপর এক সময় বাবা মার আবেদন ফুরিয়ে যেতে থাকে তখন কেবল ভালবাসা দিয়ে আর মানবতা দিয়ে অনেকেই সেই সম্পর্ককে সৌন্দর্য মণ্ডিত করে রাখতে পারেনা। এটা একধরনের স্বার্থপরতা।

সময় অনুসারে সম্পর্কের রূপের ভিন্নতা প্রকাশ পায়। এমনতর ভিন্নতাই বলে দেয় কোনটি মানুষের স্বার্থ আর কোনটি নিঃস্বার্থ সম্পর্ক। নিঃস্বার্থ সম্পর্ককে খুঁজে মরা যায় কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না। হয়তো যেখানে পূর্ণ মানুষের বাস সেখানে পাওয়া যেতে পারে। যেমন মানুষ জানে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শ্রেষ্ঠ, একে অন্যকে ছাড়া জীবনের পথে চলতে পারে না। এ সম্পর্কটি মূলত ভালবাসার সম্পর্ক। অথচ স্বার্থান্ধ মানুষেরা এটাকে প্রথার মধ্যে বেঁধে ফেলেছে। তাই স্বামীর আধিপত্য স্ত্রীর উপর এমন ভাবে বর্তে থাকে যা অনেক সময় স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে না। স্ত্রীর বেঁচে থাকার স্বার্থ সেই সম্পর্কের মধ্যে নিহিত থাকে বলে স্ত্রী পায় স্বামীর কাছে সংসারে ভালভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। এই নিশ্চয়তা যদি রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারে তাহলে বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় মানুষের সংস্কারগুলি পাল্টে যেতে থাকে আর ঘন ঘন বিবাহ বিচ্ছেদ দেখা দিতে থাকে। কারন তখন স্ত্রীকে আর স্বামী নামক প্রভুর দায় মেনে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। যা মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, যেখানে স্বামীস্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্কের কোন দায় থাকেনা, আর সেখানেই পাওয়া যায় প্রকৃত সম্পর্কের বিষয়টি। আবার যে সম্পর্কগুলো নির্দ্বিধায় মৃত্যু পর্যন্ত টিকে থাকে সেখানে ভালবাসাও থাকে এবং স্বার্থও থাকে। ভালবাসা মানে একের প্রতি অন্যের প্রকৃত প্রেম ও নির্ভরতা বেশি থাকে, আর স্বার্থ মানে দুজন দুজনার কাছে এত অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন তারা মনে করতে থাকে এত সহমর্মিতা হয়ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। যখন মানুষ একের প্রতি অপরে গভীর মমতা ও স্বচ্ছন্দ নির্ভরতার আবেদন অনুভব করে এবং একে অন্যের উপস্থিতি জীবনের জন্য অনিবার্য বলে মনে করতে থাকে তখন সম্পর্কটি হয়ে যায় সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অভিপ্রায়। তবে বিয়ের ভুমিবিস্তারে স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কের সাথে পরবর্তী প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাই মূলত মানুষের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়, তাই ভালোবাসার সম্পর্কের চেয়ে দৈহিক সম্পর্কটাই হয়ে যায় মুখ্য। দেহকে ঘিরেই তখন ভালবাসা জন্ম নেয়। আসলে দৈহিক সম্পর্কই হল মানব সমাজ টিকিয়ে রাখার একটি ব্যবস্থা। মানব ধারা টিকে থাকার জন্যই মানুষের জৈবিক সম্পর্ক যা সকল যুক্তির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিতে পৃথিবীতে টিকে থাকে এবং সমাজকে টিকিয়ে রাখে। তাই সম্পর্কটি জটিল হলেও এই সম্পর্কটি মানব সমাজের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও আকাঙ্ক্ষিত।  বন্ধুত্ব একটা মধুর সম্পর্কের দিক নির্দেশক। যে সম্পর্কটি শুরু হয় সমমনা দুটি মানুষের একই রকম ভাবনার মধ্য দিয়ে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের ধারায় দুটি মানুষ আর সমমনা থাকেনা, বিভিন্ন কারণে বন্ধু দুজন এক সময় দুরকম ভাবতে শুরু করে। তখন বন্ধুত্বের সম্পর্কটি পানসে হয়ে যায় এবং তা ভেঙ্গে যেতে বাধ্য হয়। কারণ বন্ধুত্বের কংকাল বহন করা মানুষের কাছে ভীষণ ভাবে ওজন দায়ক ও অসহনীয় মনে হতে থাকে। মানুষ বিশ্বাস করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্বার্থহীন সম্পর্ক। কখনও কখনও তা হলেও  সকল ক্ষেত্রে তা নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বার্থই হয়ে ওঠে বন্ধুত্বের মুখ্য বিষয়। সে ক্ষেত্রে যতক্ষণ স্বার্থ থাকে ততক্ষণই সম্পর্ক থাকে তারপর অন্য কোথাও মানুষ বন্ধুত্বের হাতটি বাড়ায়। যার কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্ক একসময় ভেঙ্গে যায় আবার নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এভাবে সম্পর্ক গুলি আপন গতিতে ও অস্তিত্বে একজন থেকে আর একজনে ক্রমাগত ভাবে প্রবাহিত হয়। এই সম্পর্ক প্রবাহকে মানব প্রবাহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। সম্পর্ক প্রবাহিত হয় বলেই পৃথিবীতে মানব ধারা টিকে আছে। পৃথিবীর মানব ধারার মধ্যে সম্পর্ক যেমনি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি স্বার্থও গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্বার্থান্ধতা কোনক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা দুর্বল মানুষের প্রতি সবল মানুষের অন্যায় করার অভিসন্ধি। যদি এক শ্রেণী ক্রমাগত লাঞ্ছিত হতে থাকে তাহলে সেখানে ধীরে ধীরে শত্রুতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে । মানুষে মানুষে শত্রুতার সম্পর্ক কখনও কাম্য নয়।

পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মানবিক সম্পর্ক রক্ষা করতে হয়।  আর সম্পর্কের জন্যই মানুষের চরিত্রে মানবিকতা বেশি বেশি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দুইপক্ষকেই মানবিক হতে হয় এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট হতে হয়। একপক্ষ সম্পর্কের ব্যাপারে নির্বিকার থাকলে আর একপক্ষ সেই সম্পর্ককে ধরে রাখে না । মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে সম্পর্কটি নতুনত্ব পায়, কিন্তু যদি পরস্পরের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ না থাকে তখন মানবিক সম্পর্কটিও ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে থাকে। সম্পর্কগুলির সর্বদাই পরিচর্যা প্রয়োজন। পরিচর্যা ছাড়া কোন সম্পর্কই টিকে থাকতে পারেনা। পরিচর্যার মাধ্যমেই মানবিক সম্পর্ক টিকে থাকে। মানবিক সম্পর্কই  মানুষের একমাত্র সাধনা। নির্লিপ্ততা কোন সম্পর্কের ধারক নয়। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে মানুষের জীবন ধারার পরিবর্তন হয় এবং তার সাথে সাথে মানুষের সম্পর্কগুলোরও পরিবর্তন ঘটিয়ে সে বেঁচে থাকে। পরিবর্তন মানুষকে নেশার মত আকৃষ্ট করে। তাইতো আধুনিক জীবনের সম্পর্কগুলো পরিবর্তিত হয়ে সুন্দর ও মানবিক রূপ গ্রহণ করুক এটাই মানুষের কাম্য।

লিখেছেনঃ রোজানা নাসরীন, টরন্টো

আলিঙ্গনের মানে

প্রেমের উষ্ণতা বোঝাতেই হোক বা বন্ধুত্বের গভীরতা…আলিঙ্গন বরাবরই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই, শুধুমাত্র দু’টি মানুষের শারীরিক ঘনিষ্ঠতার মধ্যেই এর গুরুত্বকে সীমিত রাখলে চলবে না! সম্পর্ক যাই হোক না কেন, পারস্পরিক বিশ্বাস, ভরসা, আত্মীয়তা—সবই ফুটে ওঠে এই বিশেষ কাজটির মাধ্যমে!

বিয়ার হাগ: একে অপরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতার পরিচায়ক এই আলিঙ্গনটি ‘ডেডলক হাগ’ বলেও পরিচিত। সাধারণত কাছের কোনও মানুষকে দূরে সরে না যাওয়ার আকুতি ফুটে ওঠে এর মধ্যে দিয়ে। সঙ্গীকে হারানোর ভয় বা এক ধরনের ইনসিকিউরিটিও থাকে কিছু ক্ষেত্রে। তবে সম্পর্ক মজবুত হলেও যে এরকম ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গন করতে পারবেন না, এমনটা নয়!

পোলাইট হাগ: সাধারণত ঝগড়ার পরে বা কোনও কারণে সঙ্গী যদি আপনার সঙ্গে কমফর্টেবল বোধ না করেন, তাহলে এরকম আলিঙ্গন হতে পারে। এতে দু’জনের শরীরের মধ্যে কিছুটা জায়গা ফাঁকা থাকে, অর্থাৎ দু’জনে শারীরিকভাবে অতটাও ঘনিষ্ঠ হন না। আলিঙ্গনের সময় সঙ্গী যদি এরকম দায়সারা আচরণ করেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন।

স্ট্যান্ড-স্টিল হাগ: সাধারণত এক্ষেত্রে, একজন সঙ্গী যতটা প্যাশনের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন, উলটোদিকের মানুষটি ততটাই শীতল, শান্ত। তিনি আলিঙ্গনের জন্য হাতটুকুও তোলেন না! অর্থাৎ, পারস্পরিক আদানপ্রদানের বড্ড অভাব। এর কারণ অবশ্য বাইরে থেকে বোঝা দুর্বোধ্য। তবে আপনার সঙ্গী হয়তো এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না যে পুরোপুরি সম্পর্কের মধ্যে থাকা উচিত কি না!

ইন্টিমেট হাগ: এর আক্ষরিক অর্থ নিশ্চয়ই আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না! দু’জনেরই গভীর আবেগ আর আই কনট্যাক্ট এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। শারীরিক ঘনিষ্ঠতার থেকেও এক্ষেত্রে চোখে চোখ রেখে ভালবাসা ব্যক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

বাডি হাগ: সঙ্গীকে একপাশ থেকে আলিঙ্গন করলে বা কাঁধের এক দিক থেকে হাত রাখলে বোঝা যায় যে শুধুমাত্র রোম্যান্স নয়, বরং পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভরসার জায়াগা আপনাদের মধ্যে রয়েছে। আর আপনারা একে অপরের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ও বটে!

প্যাম্পারড হাগ: সঙ্গীর কপালে আলতো চুমু বা পিঠে হাত রাখা! মূলত আপনার কেয়ারিং স্বভাবেরই প্রতিফলন বলা চলে একে। সাধারণত বয়স্ক মানুষেরাও কম বয়সিদের স্নেহের বশে এরকমটা করে থাকেন।

ব্যাক হাগ: সঙ্গীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাই এরকম আলিঙ্গনের বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমেও কিন্তু নিরাপত্তার আশ্বাস ব্যক্ত করা সম্ভব। দু’পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়াও যে মজবুত, তাও বোঝা যায়।    

সম্পর্কে দূরত্ব …

ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক যদি স্বাচ্ছন্দে চলতে থাকে, সেটা যথেষ্ট শান্তির। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সম্পর্কে শুরু হতে পারে টানাপোড়েন। সেটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে যথেষ্ট খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার নিজের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যেকোনোভাবেই সম্পর্কে দুরত্ব চলে আসতে পারে। এই অবস্থাকে বাড়তে দিলে হয়তো ভুল বোঝাবুঝি হবে, বিচ্ছেদও হতে পারে। তবে মনে রাখবেন, আপনার হাতেই আছে এই সমস্যার সমাধান। সেটা কীভাবে তা জেনে নিন:

নিজের ভুল স্বীকার করা

ভুল যে কারোই হতে পারে। আর আপনার ভুলেই যদি সমস্যা তৈরি হয়, তাহলে সেটা স্বীকার করে নিন। ভুল চেপে রেখে বসে থাকবেন না। তাতে সমস্যা সমাধান হবে না। আর নিজের ভুল চেপে অযাচিত ঝগড়া করাটাও মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর ঝগড়া করলে আশেপাশের লোকজন আপনাকে ইন্ধনও দিতে পারে, তাতে সমস্যা আরও ডালপালা মেলবে। তাই ভালোবাসার সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে = নিজেকে একদম নির্দোষ না ভেবে ভুল স্বীকার করে মিটমাট করে ফেলুন।

সরি বলতে শিখুন

ভালোবাসার সম্পর্কে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো ইগো। এই ইগোর জন্য কত সম্পর্কই যে নষ্ট হয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। কোনো একটা সমস্যা হলে আপনি ভাবেন যে আমি আগে থেকে কেন সরি বলবো। প্রত্যাশা করতে থাকেন যে সঙ্গী কখন সরি বলবে। এইরকম ইগো ধরে বসে থাকবেন না। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে ইগো ঝেড়ে ফেলে সরি বলতে শিখুন। এতে করে দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।

সময় দিন

অনেক সময়ে সম্পর্কের দুরত্ব বাড়তে বাড়তে সমস্যার তৈরি হয়। এই দূরে থেকে যখন আর সমস্যার সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব হয়না তখন কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করুন। একটি দিন বা অন্তত একটি বিকেল পরস্পরকে সময় দিন। সম্ভব হলে কিছু ভালোলাগার কথা বলুন তাকে। চেষ্টা করুন তার মনকে বুঝতে। এতে করে দেখবেন ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে ভালোবাসা ফিরে আসবেই।

উপহার দিন প্রিয় কিছু

যেকোনো মানুষই ছোটখাট কোনো উপহার পেলে আনন্দ পেয়ে যায়। আর সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হলে বিশেষ কোনো উপহার হতে পারে দারুণ কোনো উপায়। সেইসঙ্গে এর ফলে ভুল বোঝাবুঝিও চলে যাবে। তাই ভুল বোঝাবুঝিকে দূরে রাখতে প্রিয় মানুষটিকে প্রিয় কোনো উপহার কিনে দিতে পারেন।

অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা

আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। নিজে থেকে হয়তো ঠিক করতে পারছেন না, খারাপ বোধ হচ্ছে। আপনার কথার হয়ত প্রাধান্য থাকছে না। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিতে পারেন। যার সঙ্গে আপনাদের উভয়েরই ভালো বোঝাপড়া আছে তাঁকে সমস্যার কথা খুলে বলতে পারে। সে হয়তো কোনো সমাধান দিতে পারে। আপনার না বলতে পাড়া কথাগুলো সঙ্গীকে বলতে পারে। এতে রাগ অভিমাব কমবে, দুরত্ব কমবে।

পছন্দের পার্থক্য

দু’জন আলাদা মানুষের মধ্যে যে পছন্দের পার্থক্য থাকবে এ তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অনেক সময় এর থেকেই আসে মতবিরোধ। কিন্তু খেয়াল মতবিরোধ যেন ঝগড়ার আকার না নেয়।

সম্বন্ধ হোক বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ, নিজের সঙ্গী এবং নতুন জীবন নিয়ে সকলের মনেই একটা স্বপ্ন থাকে। তবে অনেকসয়মই মনের মিল হলেও দেখা য়ায় সঙ্গীর সঙ্গে নানা বিষয়ে পছন্দের পার্থক্য রয়েছে। বিয়ের দিন যত এগিয়ে আসে, নতুন জীবন শুরু করার আগে সঙ্গীকে নিয়ে কনফিউশন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে দু’জনের মধ্যে যদি পছন্দ অপছন্দের পার্থক্যটা বেশি হয় তাহলে তা আরও বড় হয়ে দেখা দেয়।

সাব্বির আর ফারজানার গল্পটাই ধরুন না। বিয়েটা ঠিক হয়েছিল সম্বন্ধ করেই। তারপর দু’জনেই একবছর সময় চেয়ে নেয় মেলামেশা করার জন্য। দু’জনের পরিবারেরও সকলেই এই সম্পর্কে খুশি। কিন্তু একটা সমস্যা ফারজানাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তোলে। সাব্বিরকে তাঁর এমনিতে খুবই পছন্দ। হ্যান্ডসাম চেহারা, ভাল চাকরি, সুন্দর পার্সোনলিটি। কিন্তু ফারজানার সঙ্গে তাঁর পছন্দের আকাশপাতাল তফাৎ। ফারজানার পছন্দ লেটেস্ট বলিউড মুভি। আবার সাব্বির ভালবাসে থিয়েটার, নাটক। ফারজানা কন্টিনেন্টাল ডিশ প্রেফার করে। সাব্বির আবার বাঙালি কিংবা মোগলাই খানা ছাড়া মুখেই তুলবে না। বিয়ের পর ফ্ল্যাট উত্তরা হবে নাকি বসুন্ধরা, সেখানেও মতবিরোধ। ফলে টুকটাক ঝামেলা লেগেই থাকে। যদিও ঝগড়া মিটেও যায়। কিন্তু রিয়ার প্রশ্ন, ছোটখাট সব বেশিরভাগ বিষয়ে যদি মতের অমিল হয়, তাহলে সারা জীবন একসঙ্গে কাটানো যে মুশকিল! এদিকে বিয়ের দিন ক্রমশ এগিয়ে আসছে।

•  আমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, মতামত নিয়েই গড়ে ওঠে আমাদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব। এই ব্যক্তিত্বই আকর্ষণ করে অন্য ব্যক্তিত্বকে। আপনার প্রিয় মানুষটির স্বাতন্ত্রর জন্যেই তো তাকে ভালবাসেন। সেই নিজস্বতাকে বাদ দিয়ে মানুষটিকে তো কল্পনাই করা যায় না। সেইজন্যে যাঁকে ভালবাসেন তাঁর ভালমন্দ সব মিলিয়েই বাসুন। তবে তার মানে কিন্তু আপনার পছন্দ অপছন্দ বিসর্জন দেওয়া নয়। নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দের সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা সম্পর্ক বজায় রাখার একটা প্রধান শর্ত। আপনার সঙ্গী যদি সেটা না বোঝেন, তা হলে একটু কৌশলী হওয়ার দায়িত্ব আপনার উপরেই বর্তাবে। তবে একটা মানুষকে বদলে ফেলার চেষ্টা করলে ভুল করবেন।

• যখনই কোনও পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাববেন, তখন একবার সঙ্গীর মতামত নিন। ওঁর মতামতকে গুরুত্ব দিন। এভাবে যদি আপনি ওঁর পছন্দ-অপছন্দকে মেনে চলেন। তা হলে উনিও আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। ফলে নিজেদের মধ্যে অশান্তিও কমে যাবে।

•  নিজেকে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ও আপডেটেড রাখার চেষ্টা করুন। তা হলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তার সপক্ষে যুক্তিটা ভাল করে সাজাতে পারবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য থাকলে অন্যকে কনভিন্স করতে সুবিধে হবে।            

•  নিজের পছন্দ-অপছন্দ কখনও জোর করে আপনার সঙ্গীর উপর চাপাবেন না। ওঁকে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করার স্বাধীনতা দিন। এরপর যদি উনি আপনার উপর কিছু চাপিয়ে দিতে যান, তা হলে নিজের উদারতার কথা মনে করিয়ে দিন।

•  খাওয়াদাওয়া, জামাকাপড়, বেড়াতে যাওয়া, এইসব সিদ্ধান্ত ,সবসময় নিন সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে। তাহলে দুজনে মতামতই গুরুত্ব পাবে। একজন হুকুম করছেন, অন্যজন সেই হুকুম মেনে চলছেন, সিচুয়েশনটা যেন কখনই এরকম না হয়।

•  আপনার সঙ্গী যদি আপনাকে ডমিনেট করতে চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁর সঙ্গে তর্কাতর্কিতে না গিয়ে একটা ছোটখাট চুক্তি করে নিন। একে অন্যের কথা মেনে চলা এবং নিজের স্বাধীন মতামতের মিশেল দিয়ে তৈরি করুন আপনাদের চুক্তির শর্ত। পুরো ব্যাপারটা সিরিয়াস পর্যায়ে টেনে না গিয়ে, একটা মজার আবহে রাখুন। এতে কাজ বেশি হবে। 

প্রথম দেখা, প্রথম কথা

যাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তাঁকে কোনওদিন দেখেননি! কিছুই জানেন না তাঁর ব্যাপারে। মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বশে রেখে বরং উপভোগ করুন মুহূর্তগুলোকে।  গল্পগুজবের ফাঁকে চিনে নিন পরস্পরকে। এটাই ব্লাইন্ড ডেট-এর সার্থকতা সেখানেই।

সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা একজন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ।  অবশ্য এ আবার যে-সে সাক্ষাৎ নয়, একেবারে ব্লাইন্ড ডেট! তবে ব্লাইন্ড ডেট-এর সঙ্গে আর পাঁচটা ডেট-এর তফাৎ হল, এক্ষেত্রে আপনি উলটোদিকের মানুষটির ব্যাপারে কিছুই জানেন না।  মনের মধ্যে এক ধরনের চাপা উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করাই দায়! সাধারণত, বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতরাই আয়োজন করেন এ ধরনের ডেট।  তবে, ডেটিংয়ে পৌঁছে আপনার অনুভূতি কীরকম হবে, সে নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবেন না! তা বলে কি ব্লাইন্ড ডেটে যাবেন না? অন্তত একবার তো এরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতেই পারেন। শুধু মাথায় রাখুন কয়েকটি বিষয়:

  • কোনও প্রত্যাশা নিয়ে যাবেন না। যদি ভাবেন আপনার স্বপ্নের মানুষটিকে আপনি খুঁজে পাবেন, তাহলে আশাহত হতে পারেন।  আপনার প্রিন্স চার্মিংয়ের কথা ভেবেছেন আর বাস্তবের মানুষটি একেবারে আলাদা হতে পারে।
  • কথাবার্তার শুরুতেই উলটোদিকের মানুষটার সম্পর্কে কোনও ধারণা তৈরি করে ফেলবেন না। কারও ব্যাপারে সম্যক ধারণা তৈরি করতে একটা ব্লাইন্ড ডেট মোটেও যথেষ্ট নয়। তবে গল্পগুজবের মাধ্যমে একটা প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়েই যাবে।  তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিন ভবিষ্যতে আবার এই লোকটির
  • সঙ্গে দেখা করবেন কি না। মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু ইন্টারেস্টিং এলিমেন্ট থাকে। সেই ছোট ছোট দিকগুলো উপভোগ করার চেষ্টা করুন।
  •  যদি মনে হয় একেবারে ভুল লোকের সঙ্গে ডেটিং করে দিনটাই মাটি হয়ে গেল, তাহলেও আফশোস করবেন না। খাওয়াদাওয়া, ড্রিংক উপভোগ করুন।  আগে থেকেই ঠিক করে নিন কোনও নতুন রেস্তরাঁয় যাবেন, কোনও নতুন ডিশ ট্রাই করবেন।  যদি খুব বোরিং লাগে, তাহলে সংক্ষিপ্ত কথায় সেরে ফেলুন।
  • একেকজন মানুষের ব্যক্তিত্ব একেক রকমের।  হতেই পারে যে উলটোদিকের মানুষটির সঙ্গে
  • প্রেম সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি অন্য নানা বিষয়ে বেশ খোঁজখবর রাখেন। তাহলে সেই বিষয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলার সুযোগটা হারাবেন না যেন।  বন্ধুত্ব রাখা যেতেই পারে।
  •  অতিরিক্ত খাবার গ্রহন করে ফেলবেন না। আর সেন্স অফ হিউমার বজায় রাখা দু’পক্ষের জন্যই জরুরি।

সম্পর্ক যখন অসমবয়সি

দু’জনেই প্রেমে মশগুল হয়ে রয়েছেন। একে অপরকে চোখে হারান। কিন্তু একজন যৌবন উত্তীর্ণ এবং আর একজন সদ্যযুবক বা যুবতী। এই ধরনের ‘মে-ডিসেম্বর’ প্রেম দেখলে অনেকেরই হয়তো ভ্রুযুগল ঈষৎ বাঁকতে পারে। কিন্তু তাতে কী যায় আসে! প্রকৃত প্রেম বলতে কি স্রেফ সমবয়সি যুগলকেই বোঝায়? হলই না হয় প্রেমে ‘এজ গ্যাপ’!

যে কোনও সম্পর্ক ধরে রাখার মূলমন্ত্রই দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া। তাই নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে নিজেরা যদি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হন তাহলে এগিয়ে যেতে বাধা কোথায়? তবে বয়সের অনেকটা ফারাক থাকলে পরবর্তীকেলে কিছু সমস্যা আসতে পারে। তাই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবে নিন।

দুটো মানুষের একে অপরকে ভাল লাগা, কাছে আসা, একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করা— এর সঙ্গে বয়সের খুব একটা সম্পর্ক নেই। তবুও প্রেমের সম্পর্কে দু’জনের মধ্যে যদি বয়সের অনেকটা ফারাক থাকে তাহলে সেই সম্পর্ক নিয়ে দোটানায় থাকেন অনেকেই। কিন্তু দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক যদি যথেষ্ট মজবুত হয় তাহলে বয়সের পার্থক্য থাকলেও খুব একটা সমস্যা হয় না। বলিউড থেকে শুরু করে খেলার জগতে এরকম উদাহরণ কিন্তু নেহাত কম নয়। তবুও অসমবয়সি সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের দিক থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে নিজের মনের মধ্যেও প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয়। তাই অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন।

  • অসমবয়েসি প্রেমের ক্ষেত্রে নিজেদের মনে কোনও দ্বিধা থাকলে ভবিষ্যতের দাম্পত্যে তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে নিজেকে একটু সময় দিন। ভাল করে ভেবে দেখুন আপনি যা করতে যাচ্ছেন, তা আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার বা কাছের মানুষজনের কাছে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে মেলে ধরতে পারবেন তো?
     
  • নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে যদি যথেষ্ট কনফিডেন্ট থাকেন তাহলে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে তা লুকিয়ে রাখবেন না। ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে তা পরিবারের কাছে খুলে বলুন। নিজেরা বলতে না পারলে কোনও পারিবারিক বন্ধু আত্মীয়র সাহায্য নিতে পারেন বাড়ির বড়দের বোঝানোর জন্যে। একে অপরের পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ান। একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে দুই পরিবারের মধ্যেই আপনাদের সম্পর্কটা মেনে নেওয়া অনেক সহজ হবে। পারিবারিক সম্মতি সবসময়ই একটা ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
     
  • অসমবয়সি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে সন্তান চাওয়া নিয়ে একে অপরের সঙ্গে পরিষ্কার ভাবে আলোচনা করে নিন। আপনার সঙ্গী যদি বয়সে আপনার চেয়ে অনেকটা বড় হন হতে পারে তাঁর আগের সম্পর্কে সন্তান আছে। তিনি নতুন সম্পর্কে হয়তো সন্তান নাও চাইতে পারেন। আবার সঙ্গী বয়সে অনেকটা ছোট হলে দেরিতে সন্তান চাইতে পারেন। তাই সম্পর্কের শুরুতেই এই ধরনের বিষয়গুলি নিয়ে পরিষ্কার করে আলোচনা করে নিন। একে অপরের মানসিকতা এবং কম্প্যাটিবিলিটি ভাল করে বুঝে নিন। এতে সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় থাকে। 
     
  • বয়সের ফারাক বেশি হলে তাই নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা ঠাট্টাতামাশা করতে পারেন, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীরা বিভিন্নরকম মন্তব্য করতে পারেন। এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকুন। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার সময় বয়েসের পার্থক্যের ব্যাপারটা সবসময় এড়িয়ে যাবেন না। বরং দুজনে মিলেই ঠিক করুন যে চারপাশের প্রতিবন্ধকতা কীভাবে জয় করতে পারেন।

অতীত সম্পর্ক এবং …

পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টেনেছেন। অথচ মাঝেমধ্যেই আপনার জীবনে ঘুরে ফিরে আসছে সেই অনুষঙ্গ। হঠাত্‌ আপনার সঙ্গে যদি তাঁর দেখা হয়ে যায় আবার? তাও আবার বর্তমান সঙ্গীর উপস্থিতিতে! রইল পরিস্থিতি সামলানোর কিছু টিপস।

আমাদের অনেকের জীবনেই ‘এক্স’ সত্যিই একটা বড় ফ্যাক্টর! প্রেমের বা দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে গেলে এতদিনের খুব কাছের মানুষটা যখন প্রাক্তন বা ‘এক্স’ হয়ে যায়, তখন সম্পর্কের সমীকরণগুলোও খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। নতুন সম্পর্ক তৈরি হলেও কোথাও একটা ফাঁকা জায়গা বোধহয় থেকেই যায়। সময়ের নিয়মে আপনি ও আপনার পুরনো সঙ্গী দু’জনেই যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেন, তাহলেও একে অপরকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। আসলে, সম্পর্কে ইতি টানলেই যে মাথা থেকে পুরনো সঙ্গীকে ঝেড়ে ফেলতে পারেন না অনেকেই। আর পুরনো কারওর জায়গায় যদি নতুন কেউ আসে, তখন নতুন সেই সম্পর্কের উষ্ণতায় পুরনো দিনগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। 

কিন্তু হঠাত্‌ করে যদি কোনওদিন দেখা হয়ে যায় পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে? অনেকেই এধরনের সিচুয়েশনের জন্য তৈরি থাকেন না বলে রীতিমতো এমব্যারাসড হয়ে পড়েন। অনেক সম্পর্ক শেষ হয় তিক্তভাবে। প্রেমে প্রতারিত হয়ে বা তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতির কারণে যদি আপনার ব্রেক আপ হয়ে থাকে, তখন পুরনো সঙ্গীটির প্রতি চাপা রাগ থেকেই যায়। হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে রাগের বহিঃপ্রকাশ আপনি আর নাও করতে পারেন। তবে পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হলে মাথা ঠান্ডা রাখাই শ্রেয়। আপনার বর্তমান সঙ্গীকে পুরনো সম্পর্কের ব্যাপারে খোলাখুলি জানাবেন। উনি যদি সত্যিই আপনাকে বিশ্বাস করেন তবে এ ব্যাপারে জানলেও তিনি আপনাকে ভুল বুঝবেন না। প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স বা সেপারেশনের কারণটাও তাঁকে খোলাখুলি জানান। 

এমনটাও তো হতে পারে, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে আপনার পুরনো প্রেমিকা বা স্ত্রীর দেখা হয়ে গেল! ‘প্রাক্তন’ সিনেমার সেই দৃশ্যটার মতো! যেখানে ট্রেনের কামরায় উজানের বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে হঠাত্‌ই দেখা হয়ে যায় তাঁর প্রাক্তনের। বাস্তবে, এরকম অবস্থায় পুরনো সম্পর্কের কথা লুকোলে বর্তমান সম্পর্কের উপর তার অনর্থক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কোনওদিন রাস্তায় বা শপিং মলে দেখা হলে হাসিমুখে তাঁর সঙ্গে বর্তমান সঙ্গীর আলাপ করিয়ে দিন।

সম্পর্ক নিয়ে কেন অসুখী হই আমরা!

সাধারনত প্রতিটি মানুষের মাঝেই হতাশা, রাগ, অভিমান, বিষণ্ণতা মোটকথা কোনো না কোনো মানসিক সমস্যা একটু-আধটু থাকেই। যাকে উদ্বেগ বা প্যাথলজিক্যাল অ্যাংজাইটি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু যখন তা আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায় তখন সেটি আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে শুরু করে। বিশেষত Relationship anxiety বা সম্পর্কের উদ্বেগ আমাদের জীবনে এতোটাই বাজেভাবে প্রভাব ফেলে যা আমাদের আশে-পাশে থাকা আপন মানুষগুলোর সাথে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।

‘সম্পর্কের উদ্বেগ’ যার সাথে কম-বেশি প্রত্যেকটি মানুষ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। এটি আপনার সম্পর্কের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধির করার পরিবর্তে ভয়, সন্দেহ, ঈর্ষা, একঘেয়েমি ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তোলে যা আপনার সুন্দর সম্পর্কটিকে দীর্ঘস্থায়ী হতে বাঁধা প্রদান করে।

আসুন দেখে নেয়া যাক যেসব কারণে আমরা অসুখী সম্পর্কের সম্মুখীন হই

অতিরিক্ত রাগ রাগ সাধারনত আবেগের একটি অংশ। যা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কম-বেশি বিদ্যমান। তবে এটি মানবজীবনে ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বেশি বিস্তার করে। কারণ, যখন একজন ব্যক্তি রেগে যায় তখন তার আপাদ-মস্তকে তাপের সৃষ্টি হয়। ফলে তার হিতাহিত জ্ঞান বলতে কিছু থাকে না। তখন সে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

‘অতিরিক্ত রাগ’ যা আমাদের আপনজনদের সাথে সুন্দর সম্পর্কগুলোর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে। অল্পতেই রেগে যাওয়া এবং সেই রাগগুলোর দীর্ঘ স্থায়ীত্বকাল সম্পর্কগুলোর মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। রেগে গিয়ে অনেকেই অনেক অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে যার ফল তাকে সারাটা জীবন ভোগ করতে হয়। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। কারণ এই অতিরিক্ত রাগই আমাদের মধুর সম্পর্কগুলোতে অসুখী হবার অন্যতম কারণ।

বিশ্বাসের ঘাটতি: একটি সম্পর্কের মূল স্তম্ভই হলো বিশ্বাস। একটি সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস যত দৃঢ়তর সে সম্পর্কটি তত শক্তিশালী হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি বিশ্বাস বিহীন একটি সম্পর্ক বড্ড নড়বড়ে যা সম্পর্কগুলোর মাঝে বিশাল দূরত্বের সৃষ্টি করে। বিশ্বাস হচ্ছে সম্পর্কের খুঁটি। যার উপর ভর করে সম্পর্কগুলো চলতে থাকে বছরের পর বছর।

সাধারনত কারো সম্পর্কে অবিশ্বাসের বীজ বপন হয় তৃতীয় পক্ষের কোনো ব্যক্তি দ্বারা অথবা নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে। অবিশ্বাসের বীজ বপন হওয়া সম্পর্কগুলোর মাঝে সবসময় একধরনের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে যা ধীরে ধীরে সেই সম্পর্কের মাঝে ফাটল ধরিয়ে দেয়। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় সম্পর্কগুলোর মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আর এভাবেই সুন্দর সুন্দর সম্পর্কগুলো বিচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে অসুখী করে তুলি।

আর্থিকভাবে অসচ্ছলতা: আমরা যতই বলে থাকিনা কেন; ‘ভা্লোবাসার কাছে অর্থ মূল্যহীন’ কিন্তু বাস্তবতা ঠিক সেরকম নয়। ক্ষেত্র বিশেষ ভালোবাসা, অর্থ এবং ভালোবাসা ও অর্থ উভয়ই সম্পর্কগুলোর মাঝে পার্থক্য গড়ে তুলতে পারে। মানবজীবনে ভালোবাসা যেমন অপরিহার্য একটি জিনিস ঠিক তেমনি বেঁচে থাকতে হলে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বর্তমান সময়ে অর্থ ব্যতীত যেখানে এক কদম আগানো প্রায় অসম্ভব সেখানে অর্থ ব্যতীত ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে জীবন পাড়ি দেওয়া শুধুই স্বপ্ন। এই অর্থ যেমন প্রায় সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারে ঠিক তার বিপরীত এই অর্থের অসচ্ছলতা একটি সম্পর্কের মাঝে শত সমস্যার সৃষ্টি করে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দেয়। বর্তমান সময়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে অর্থ না থাকলে খুব আপন মানুষগুলোও দূরে সরে যায়। এতে সম্পর্কগুলোর মাঝে সুখ নামক জিনিসটা উধাও হয়ে যায়।

সম্পর্কের প্রতি অযত্নবান: যে সম্পর্ক যতবেশি যত্নবান সে সম্পর্ক ততবেশি দৃঢ়। একটি ভালো সম্পর্ক কখনোই একদিনে গড়ে উঠে না। তিলে তিলে যত্নসহকারে সম্পর্কগুলোকে ভালোবাসায় পরিণত করতে হয়। প্রতিটিক্ষেত্রে এই সম্পর্কগুলোকে যথাযথ যত্ন ও ভালোবাসার সহিত আগলে না রাখলে একদিন সে সম্পর্কগুলোর মাঝেও মরিচা ধরা শুরু করে।

প্রিয় মানুষগুলো আপনার কাছ হতে অনেক কিছুই আশা করে। তারা চায় আপনি তাদের প্রতি একটু যত্নবান হোন, তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলোকে গুরুত্ব দিন। মোটকথা, যেকোনো জিনিসের যত্ন না নিলে যেমন তা অকেজো হয়ে যায় ঠিক তেমনই কোনো সম্পর্কের যদি যত্ন না নেওয়া হলে সেই সম্পর্কটিও আস্থাহীন হয়ে পড়ে। জীবন থেকে হারিয়ে যায় সুখ নামক জিনিসটি।

সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাহীন : প্রতিটি সম্পর্কই অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের। শ্রদ্ধা ও সম্মানে পরিপূর্ণ সম্পর্কগুলো অত্যন্ত সুন্দর ও সুখময় হয়ে উঠে। এবং সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কগুলো আরও পরিপক্বতা লাভ করে। এমনকি সম্পর্কগুলো অটুট থাকে জীবনাবসান অবধি।

কিন্তু কিছু মানুষ তাদের সম্পর্কগুলোকে সম্মান করে না বা করতে জানে না। অহমিকা, অবিশ্বাস ও শ্রদ্ধাহীনতায় সম্পর্কগুলো বরং অশান্তির খোরাকে পরিণত হয়। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাহীন সম্পর্কগুলোও খুব বেশি স্থায়ী হয় না। জীবনযুদ্ধের মাঝপথে এসে থমকে দাঁড়ায়। যেখান থেকে নতুন করে সুখ খুঁজে নেবার আর কোনো পথ থাকে না।

সম্পর্কের প্রতি অবহেলা: অবহেলা অত্যন্ত নিগৃহীত একটি জিনিস। কোনো ব্যক্তিই কারো অবহেলার পাত্র হতে চায় না। যে অবহেলিত হয় সে নিজেও হাজারো চেষ্টা চালিয়ে যায় তার ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে অবহেলার পরিবর্তে একটু ভালোবাসা পেতে। অথচ অধিকাংশক্ষেত্রেই সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা পাবার চেয়ে অবহেলিত হবার পরিমাণটা আরো বেড়ে যায়।

সবকিছু সহ্য করা যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছ থেকে অবহেলা জিনিসটা সহ্য করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অবহেলিত হতে হতে তা যখন মানুষটির ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলে তখন সে শত কষ্ট হলেও সে পথ হতে মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু তারপরও একটু ভালোবাসা পাবার জন্য প্রিয় মানুষটির শত অবহেলা উপেক্ষা করেও পথ চেয়ে থাকে। দিনশেষে একরাশ অবহেলা, হতাশা ও ব্যর্থতা নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় মানুষটিকে।

অহংকার: অহংকার বা অহমিকা মানুষের অস্বাভাবিক, বিকৃত ও জঘন্যতম একটি স্বভাব। অহংকার শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পতনের মূল কারণই নয়, এই অহংকার একটি সুন্দর সম্পর্ক পতনেরও অন্যতম কারণ।

একজন অহংকারী ব্যক্তি নিজেকে সবসময়ই বড় মনে করে থাকে। এবং তার পাশে থাকা মানুষটিকে সবসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে থাকে। এতে করে একটি সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলোর মনে ঐ অহংকারী ব্যক্তির প্রতি একপ্রকার ঘৃনার জন্ম নেয়। যা তাদের মধ্যে বেশ দূরত্ব সৃষ্টি করে দেয়। বয়ে আনে অশান্তি। পতন হয় হাজারো যত্নে গড়ে তোলা একটি সুখী সম্পর্কের।

আপনজনদের সময় না দেওয়া: ব্যস্ততম জীবনের মাঝেও প্রতিটি মানুষ চায় তার প্রিয়জনদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে। আপনজনদের সাথে কাটানো সময়গুলো সবসময়ই মধুর হয়ে থাকে। তাদের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো সম্পর্কের গভীরতা আরো বাড়িয়ে দেয়। নিজেদের মধ্যে অপ্রকাশিত ভালোবাসাগুলো ফুটে উঠে খুব সহজেই।

কিন্তু বাস্তবতা কিছু মানুষকে সবসময়ই তার ভালোবাসার মানুষগুলো থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে। বাস্তবতার সাথে হেরে যাওয়া মানুষগুলো সবসময় এক ধরনের অপূর্ণতায় ভুগে। যদিও অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। তবে যাই হোকনা কেন; ভালোবাসায় আপন মানুষগুলো যখন তাদের প্রিয় মানুষটির কাছ হতে প্রাপ্য সময় না পায় তখন তাদের মাঝেও সবসময় একধরনের বিষণ্ণতা বিরাজ করে।

সকলের মতামতকে প্রাধান্য না দেওয়া : যখন আপনি কারো সাথে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলবেন তখন আপনাকে তার মতামতকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। একতরফাভাবে যেরকম একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে না ঠিক তেমনই একতরফাভাবে কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহন করা ঠিক না। সেক্ষেত্রে সম্পর্কগুলোর সাথে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির মতামত মন দিয়ে শোনা এবং তাদের মতামতকে যথাসাধ্য প্রাধান্য দেওয়া অপরিহার্য।

কিন্তু যখন আপনি সেই সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত কোনো কাজে তার মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো সম্পন্ন করার চেষ্টা করবেন তখন সে নিজেকে মূল্যহীন মনে করবে। এমনকি এভাবে চলতে চলতে একটা সময় তা সম্পর্কের মাঝে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দিন শেষে জীবনযুদ্ধে তারাই বিজয়ী যারা শত ব্যস্ততা, ব্যর্থতা, ও অপূর্ণতা দূরে সরিয়ে রেখে আপনজনদের নিয়ে সুখে জীবনযাপন করছে। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই জীবন। সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আপন মানুষগুলোকে ভালোবেসে ভালো রাখাটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা। সবশেষে, ভালো থাকুন এবং ভালো রাখুন আপনার আপনজনদের।

সম্পর্কের সুখ দুখ

জানালার শিক ধরে আকাশ পানে চেয়ে আছে তামান্না। পড়ন্ত বিকেলে মেঘেরা বাহারী রঙ গায়ে মাখিয়ে ছোটাছুটি করছে। অপরূপ সে দৃশ্য। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে থেকেও তা দেখছে না তামান্না। কিংবা বলা চলে দেখতে পারছে না। পারবে কিভাবে, তার মন তো তার নিজের মাঝে নেই। উদাস মন মহাশূন্য ভেদ করে ছুটে যাচ্ছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে তার হারানো ঠিকানা। কিন্তু পাচ্ছে না। এ জন্য তামান্নার কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট। বুকের মাঝে কষ্ট যেন কামড়ে ধরছে। বার বার ঘুরে ফিরে একটি মুখ ভেসে আসছে হৃদয়পটে। আর সঙ্গে সঙ্গে ফাকা হয়ে যাচ্ছে বুক, ফিরে আসছে কষ্টগুলো। দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালবাসার মানুষের সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। কিন্তু বার বার ফিরে আসছে কাটানো মধুময় সে সময়গুলো আর সেই সঙ্গে ভালবাসা হারানোর কষ্ট। কোন কিছুতেই মন দিতে পারছে না সে। অথচ আর কিছুদিন পরেই তার পরীক্ষা। এখন কি করবে তামান্না? এরকম পরিস্থিতি তামান্নার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর। হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিশ্বখ্যাত সংবেশনবিদ (হিপনটিসট) পল ম্যাককেনা এবং মনোচিকিৎসক ড. হগ উইলবর্ন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেই আলোকেই কিভাবে ভগ্ন হৃদয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা তুলে ধরা হলো।

কষ্টকে মেনে নিন

যাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন, তার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কষ্ট লাগাই স্বাভাবিক। কষ্ট না লাগলে বরং বলতে হবে আপনার ভালবাসায় খাদ আছে। তাই কষ্ট লাগবেই, এমনটা ভাবা শুরু করুন, দেখবেন কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে। মনে রাখবেন মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ মিলেই। ভালবাসার রঙিন সময়টাতে সুখের ভেলায় চড়ে কল্পজগতে পাড়ি দিয়েছেন মহাসমুদ্র, বুনেছেন কতসহস্র স্বপ্ন তার ইয়ত্তা নেই। তাই বলে যে জীবন সবসময় একরকমভাবেই যাবে, তা তো নয়। এটা জীবনের ধর্মও নয়। রাতের অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করে কোন কিছু চিন্তা না করেই আপনি লাইটের সুইচ দেন, ঠিক তেমনি ভালবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে অচেতনভাবেই আপনার মনে অতীতের স্মৃতি চলে আসবে আর তা আপনাকে পোড়াবে, ভেঙ্গেচুড়ে দিতে চেষ্টা করবে, এটাকে স্বাভাবিক ধরে নিন। দেখবেন ধীরে ধীরে কষ্ট কমে যাবে।

পুরনো অভ্যাসগুলোকে পাত্তা দেবেন না

ভালবাসার সময়টাতে আপনাদের জানতে কিংবা অজানন্তে অনেক অভ্যাসই তৈরি হয়ে গেছে। এই অভ্যাসগুলোই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই না? এক কথায় বলব, ঝেড়ে ফেলুন। যে অভ্যাসগুলো আপনি সে সময়ে করেছেন, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। জানি কষ্ট হবে, কিন্তু কী আর করা। মাথায় কেউ আর আঙুল চালিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে না, আঙুলে আঙুলে কাটাকাটি খেলা আর হচ্ছে না। এরকম হাজারো রোমান্টিক কাজ, কত খুনসুটিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তা পোড়াচ্ছে। মনে করার চেষ্টা করুন, এগুলো নিতান্তই সে সময়কার অভ্যাস, এগুলো চিরন্তন নয়। সে সময় এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলে এখনও যে তা করতে হবে এমনটা তো নয়, এভাবেই ভাবা শুরু করুন। দেখবেন অভ্যাসগুলোর শূন্যতা আপনাকে আর পীড়া দিচ্ছে না। ও, আর হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই দুঃখবাদী রোমান্টিক গান শুনবেন না। এটা আপনার পোড়ামনের জ্বালা না কমিয়ে শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সম্পর্ক ভাঙ্গার পর বেশিরভাগ মানুষই দুঃখের গান শোনে। না, একদমই না। আপনি মোটেও এ ধরনের গান শুনবেন না।

পরিবর্তন আনুন ভাবনায়

প্রেমময় সময়ে কত কিছুই না চিন্তা করেছেন ভাললাগার মানুষটিকে নিয়ে। কত স্বপ্নই না বুনেছেন। এখন ছাড়ুন তো এসব। অনেক হয়েছে, এবার ভাবনা থামান। ভাবনায় ভাললাগার মানুষটি বার বার চলে আসলেও মাথা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। দেখুন তো অন্য কোন কিছু ভাবা যায় কিনা। যেমন ধরুন, আপনি আপনার চারপাশের পরিবেশ, মানুষ, সমাজ ইত্যাদি নিয়ে ভাবা শুরু করতে পারেন। মনে রাখবেন, ভাবনার আগের ফ্রেম থেকে নিজেকে সরিয়ে এনে নতুন ফ্রেম বসাতে হবে, নাহলে আপনার মুক্তি নেই। কী বুঝলেন তো? আরে ভাই, পুরনোকে আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকলে তো হবে না, পৃথিবীতে কত কিছুই তো হচ্ছে, এগুলো নিয়ে ভাবা শুরু করুন, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা শুরু করুন। দেখবেন, একটা সময় কষ্ট ফিঁকে হয়ে আসবে।


অতীতকে যেভাবে দেখছেন তা পাল্টে দিন

সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, তাই বলে কী স্মৃতিরা চলে গেছে? মোটেই না। অতীত সম্পর্ক নিয়ে ভাবা, কষ্ট কষ্ট খেলা এক ধরনের বদঅভ্যাস। কী, এই কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গেল? ভাবছেন, আপনাকে নিয়ে ইয়ার্কি করা হচ্ছে। তা নয়। অনেক নিরাশাবাদী মানুষ আছেন যারা অতীতের দুঃখ নিয়ে পড়ে থাকতেই বেশি ভালবাসেন। এটা তাদের বদঅভ্যাস। এই বদঅভ্যাসের জন্য তাদের দীর্ঘ সাধনা দরকার। সেটার অন্য সমাধান আছে। আর আপনি যদি নিরাশাবাদী না হন, তাহলে অতীতের স্মৃতি মনে চলে আসলে ভাবুন ঐটা আপনার কল্পনা ছিল। আপনি ওগুলো সিনেমায় দেখেছেন, বাস্তবে নয়। হোক না মিথ্যা, সমস্যা থেকে যদি ভাল থাকা যায়। মনকে যা বোঝাবেন তাই বুঝবে। মন বড় বোকা, হে।

বিবাহবিডি কল সেন্টারঃ +৮৮ ০১৯২২১১৫৫৫৫

মনে মনে প্রিয়ার ছবি আঁকুন

কী পাগল ভাবছেন। এতক্ষণ স্মৃতি ভুলে থাকতে বলে, এখন আবার বলছি প্রিয়ার ছবি আঁকতে, পাগল ছাড়া আর কী। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার বিষয়টা তো জানেন। এ পদ্ধতিটি আসলে সেরকমই। প্রথমে আপনি একটা দৃশ্যকল্প নিজের মনের মধ্য সেট করুন। চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকুন আপনার ভালবাসার মানুষটি হাসছে, গাইছে, নাচছে, আপনার সঙ্গে খুনসুটি করছে। দেখতে বেশ ভালই লাগছে, তাই না। কিন্তু এ ভাললাগা তো বেশিক্ষণের নয়। একটু পরেই আসবে যন্ত্রণা। চিন্তা করবেন না। এবার দেখতে থাকুন আপনার ভাললাগার মানুষটি আপনার ওপর অযৌক্তিকভাবে রেগে যাচ্ছে, আপনি মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন তবু কমছে না। দেখতে থাকুন তার বদ অভ্যাসগুলো আর সেই সঙ্গে আপনার খাপ খাওয়ানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা। ভাবুন আপনি একজন সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতা। আপনি আর আপনার ভাললাগার মানুষটি তাতে অভিনয় করছেন এবং দেখা দৃশ্যকল্পগুলো আপনার অভিনয় ও পরিচালনার মধ্য দিয়েই হচ্ছে। দেখুন তো আপনার অনুভূতিতে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা। পরের দৃশ্যগুলোর কারণে আগের দৃশ্যকল্পের রঙিন ছবিগুলো সাদা কালো হয়ে যাচ্ছে, তাই তো। হ্যাঁ, এটাই আপনার বাস্তব জীবনে হতো যদি আপনার সম্পর্ক ছেদ না হতো। রঙিন জীবন সাদা কালো হয়ে যেত। এভাবে দৃশ্যকল্প আঁকলে দেখবেন ভালবাসার বেগ কমে গেছে।

সম্পর্কের উল্টো দিকটা তলিয়ে দেখুন

একটা কথা সবসময়ই সত্য, এক হাতে তালি বাজে না। এটা মাথায় আপনাকে রাখতেই হবে। যে সমস্যাগুলোর জন্য আপনার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। সমস্যাগুলো তো নিশ্চয় ছোট ছিল না, তাই না? সম্পর্ক টিকে থাকলে সে সমস্যাগুলো আরও সৃষ্টি হতে পারত। তাই যা হয়েছে, ভাল হয়েছে, এমনটাই ভাবুন। মনে রাখবেন, দুষ্টু গরুর চেয়ে যেমন শূন্য গোয়াল ভাল, তেমনি সমস্যা তথা জটিলতাপূর্ণ সম্পর্কের চেয়ে না থাকাই ভাল। তাহলে আর সারা জীবন পস্তাতে হবে না। সম্পর্কের এই উল্টোদিকটি ভেবে দেখুন। দেখবেন, পুরনো সম্পর্কটি নিয়ে আপনার মধ্যে আর আপসোস জাগবে না। বরং মনে হবে, বেঁচে গেছি। আর যদি পারিবারিক কারণে আপনি নিজেই সম্পর্ক ছেদ করে থাকেন, তাহলেও সেটাকে আত্মত্যাগ হিসেবেই নিন। জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়, অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই একে স্বাভাবিক ধরে নিন। নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। পরিবারের মানুষদের হাসিভরা মুখগুলোর কথা মনে করুন, দেখবেন আপনার কষ্ট অনেকটাই মনে যাচ্ছে।

নিজের দিকে তাকান

অনেক তো হলো, এবার নিজের দিকে তাকান। কান্নাকাটি অনেক করেছেন। আয়নায় নিজের চেহারাটি দেখুন। কী বিমর্ষ। চাঁদবদনের কী হাল করেছেন, দেখেছেন? এ কী সহ্য করা যায়! একটা কথা অপ্রিয় শোনায়, তবু চিরন্তন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। আর কিছু বলতে হবে? অনেক স্মৃতি স্মৃতি খেলা খেলেছেন, এবার নিজের দিকে একটু নজর দিন। এই দেশ সমাজ, আপনার পরিবারের প্রতি আপনার অনেক দায়িত্ব, এভাবে ভাবুন না একবার। নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্য আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে, ভুলে যেতে হবে পুরনো স্মৃতি, এমন কথামালা আওড়াতে থাকেন। দেখবেন, আপনার ভেতর থেকে পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাঁচার তাগিদ সৃষ্টি হবে।

বিশ্বাস করুন আপনি আবারও প্রেমে পড়বেন

সময় বহমান, তাই তো? জীবনও বহমান। কারও জন্যই জীবন থেমে থাকে না। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে বলে যে আবার কোন সম্পর্ক হবে না, তা তো না। এমন কোন নিয়ম তো কোথাও নেই যে, জীবনে আপনাকে একবারেই ভালবাসতে হবে। আর এমনটাও নয় যে, আপনি অতীতের ভালবাসা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারবেন না। কেউ যদি বলে থাকে, তবে হয় আবেগের বশে বলে নয় ডাহা মিথ্যা কথা বলে। নতুন কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার চিন্তা করুন। বন্ধু খুঁজুন। পারলে বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব করুন। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব আপনার পুরনো স্মৃতিকে ভুলে যেতে সাহায্য করবে। আর প্রেম করতে পারলে তো সোনায় সোহাগা।

হল্লার মাঝে ডুবে যান

দুঃখের সময় মানুষ যদি নিঃসঙ্গ থাকে, তখনই মানুষ বেশি কষ্ট পায়। স্মৃতিরা তাড়া করে ফেরে। এজন্য একাকী না থেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হৈহল্লায় মেতে উঠুন। জানি, মন সায় দেবে না। তবু বলছি, একটু মনে জোর এনেই আড্ডা দিতে যান। প্রয়োজনে বেশি সময় আড্ডা দিন। দেখবেন নির্মল আড্ডার মধ্যে দিয়েই আপনি ভুলে যেতে থাকবেন, পুরনো স্মৃতি। বন্ধুদের নিয়ে দূরে ঘুরে আসতে পারেন, পিকনিক করতে পারেন। কিংবা জড়িয়ে পড়তে পারেন সমাজসেবামূলক কাজে। আর ঘর থেকে বের হওয়ার অসুবিধা থাকলে বই পড়া শুরু করেন কিংবা লেখালেখি। যেভাবেই হোক নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার কষ্ট কমে যাচ্ছে। আপনি আবার ফিরে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনে।

সম্পর্কে জড়ানোর আগে

ভালো লাগা থেকে সম্পর্কে জড়ানোর আগে এর গুরুত্বটা বুঝতে হবে। তা না হলে শুরুতে যে আকর্ষণবোধ থাকে, পরে তা তেতো হয়ে ওঠে। সম্পর্ক গড়লে তার পরিণতি কী হবে, সেটি ভেবে সম্পর্কে জড়ানো উচিত।  এ ছাড়া সম্পর্কে জড়ানোর আগে আরও কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত।  জেনে নিন বিষয়গুলো:

প্রত্যাশা: সম্পর্কে প্রত্যাশার বিষয়টি আগে মিটমাট করে নিন। সঙ্গীর আবেগের সঙ্গে আপনার আবেগ কতটুকু যায়, সেটা আগে বুঝতে হবে। প্রয়োজনে সম্পর্কের ধরন ও প্রত্যাশাগুলোর বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করে নিন। এতে পরে সম্পর্কে ঝুট-ঝামেলা কম হবে, দুজনের বোঝাপড়া শক্ত হবে।

ত্যাগ: সম্পর্কের ক্ষেত্রে কে কতটুকু ছাড় দেবেন, সম্পর্কে জড়ানোর আগে তা নির্ধারণ করে নিতে পারলে ভালো। দুজনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমন্বয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। সম্পর্কে জড়ানোর আগে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সম্ভাব্য সবকিছু ভেবে তারপর সম্পর্কে জড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

পরিচয়: সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের পরিচয়ের সঙ্গে আপস করতে হচ্ছে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। মনে রাখবেন, কোনো কিছু সমন্বয় করা মানে আপস করা নয়। নিজের ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিতে হয়—এমন সম্পর্কে জড়ানোর আগে সতর্ক থাকুন।

অতীত: নতুন সম্পর্কে জড়ানোর আগে অবশ্যই পুরোনো সম্পর্কের সবকিছু ছেড়ে দিতে হবে। এতে নতুন সম্পর্কে ঝড় ওঠার আশঙ্কা কম। এ ছাড়া সঙ্গীর সঙ্গে অতীত নিয়ে প্রতারণা করা ঠিক নয়। পুরোনো সম্পর্কের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র থাকলে তা নতুন সঙ্গীকে আগে খোলাসা করে বলা উচিত।

সময়: সুখী সম্পর্ক গড়তে সঙ্গীর সঙ্গে ভালো সময় কাটানো গুরুত্বপূর্ণ। হাতে যখন সঙ্গীকে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় থাকবে, তখনই কেবল সম্পর্কের কথা ভাববেন। তা না হলে সঙ্গীকে সময় না দেওয়ার অভিযোগে খুটখাট লেগেই থাকবে। সম্পর্ক বিষিয়ে উঠবে। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হাফিংটন পোস্ট, প্রথম আলো