দাম্পত্য কলহ সামলাবেন কিভাবে?

দাম্পত্য কলহে যদি স্বামী-স্ত্রী নিজেরে মধ্যে বনিমনা না হয় তবে পারিবারিকভাবে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে। এছাড়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বা কাছের মানুষের সহযোগিতা নিতে হবে।কারণ দাম্পত্য কলহ থেকে হতে পারে মানসিক রোগ। 

বিয়ে হচ্ছে একজন নর ও নারীর মধ্যে স্বর্গের সম্পর্কের বন্ধন। তবে এখানে যখন বিষাদের ছাড়া নেমে আসে তখন আসে দাম্পত্য কলহ। 

দাম্পত্য কলহের কারণ

১. দু’জন মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে কিন্তু একসঙ্গে থাকতে হলে, মতপার্থক্য দূর করে আনতে হবে। এতে দু’জনকেই ছাড় দিতে হবে। 

২. স্বামী  অনেক সময় দেখা যায় স্ত্রীকে ডমিনেট করে। উচ্চশিক্ষিত স্বাবলম্বী অনেক মেয়ে তা মেনে নিতে পারছে না। এতে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. বিয়ের আগে অতিরিক্ত আবেগ কাজ করে। অনেকেই ভেবে চিন্তে জীবনসঙ্গী বাছাই করতে পারে না। পরবর্তীতে আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতার বিশাল পার্থক্য, মানসিক চাপে, দ্বন্দ্বের কারণ হয়।

৪. দীর্ঘদিন ধরে যৌন জীবনে অতৃপ্ত থাকলে, সম্পর্কের ভয়াবহ অবনতি ঘটে। বিশেষ করে স্ত্রীরা তা প্রকাশ করতে পারে না।

৫. অনেক স্বামী-স্ত্রী তাদের মনের সুখ দুঃখগুলো নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতে পারে না। শেয়ারিং না থাকলে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, সমাধান বের হবে না।

৬. বর্তমানে অনেকেই দাম্পত্য বা বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা ভয়াবহতম দাম্পত্য দহনের কারণ। 

৭. দাম্পত্য দহনে লিপ্ত দায়ী স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন বা দু’জনই মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে। আপনার জীবনসঙ্গীর অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হতে পারে মানসিক রোগ।

৮. যারা নেশা করে, তারা তাদের পার্টনারকে অমূলক সন্দেহ করে, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে। শুরুতে বন্ধু পরে পরিণত হয় অবৈধ প্রেমে।

কীভাবে দাম্পত্য কলহ দূর করবেন

মতামতের পার্থক্য কমিয়ে আনা, দায়িত্ব পালন, পরনারী বা পরপুরুষে সম্পর্কে না জড়ানো, শারীরিক মানসিক নির্যাতন না করা, পার্টনারকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া। প্রয়োজনে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে Couple Therapy নিতে হবে। দু’জনকেই Co-Operative হতে হবে। 

ভালোবাসাহীন দাম্পত্য জীবনের চেয়ে একা থাকা ভালো। সম্পর্ককে বাগানের মতো পরিচর্চা করতে হবে। যেসব মানসিক রোগ হতে পারে- বিষণ্ণতা, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি।

ডা. মো. হারুনুর রশীদ 
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

মানুষের একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা

আমরা মানুষরা কি একা থাকতে পারি? উত্তর আসবে- পারি না। কারণ, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে পৃথিবীতে একা রাখেননি। পৃথিবীর প্রথম মানবের জন্য তিনি সঙ্গী সৃষ্টি করে পাঠিয়েছেন একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর জন্য। শুধু মানুষ নয়; সৃষ্টি জগতের কোনো সৃষ্টিই একা নয়।

আমরা মানুষেরা একা থাকতে চাই না। খুব কম মানুষই চায় একাকী থেকে জীবন কাটাতে। কেউ পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে একা থাকে, কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায়। যারা একাকী জীবন বা একাকীত্বকে উপভোগ করতে চায় বা পারে বা কিভাবে করতে হয় জানে তারাই একাকী পাড়ি দেয় জীবন নামক অজানা ও রহস্যময় সমুদ্র।

একাকীত্ব কখন আসে? আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। যখন বুঝি তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায়। জীবনে কখনও কখনও এমন সময় আসে যখন না চাইলেও একা থাকতে হয়। হয়ত সারা জীবনের জন্য নয় তবুও যতটুকু সময়ই একা থাকতে হয়, হয়ত মাস বা বছর বা দীর্ঘসময় ধরে। আবার কখনও কখনও আজীবনই একাকী।

একা থাকাকে যখন আমরা নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করি তখনই একাকীত্ব বোধ আসে। এই বোধ তখন আমাদেরকে ভেতর থেকে ভেঙ্গেচুরে দেয়। কুড়ে কুড়ে খায়। এর যন্ত্রণা কতটা ভয়ংকর সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ সুন্দরভাবে বর্ণনা দিতে পারবে না।

মানসিকভাবে কেউ যখন কোনো একজনকে যার সাথে তার সামাজিক সম্পর্ক বা বন্ধন আছে, যাকে সে আশা করছে, যোগাযোগ করতে চাচ্ছে ও মিশতে চাচ্ছে কিন্তু তার চাওয়ার গভীরতা অনুযায়ী সে তাকে পাচ্ছে না, তখন তার মনে যে কষ্টকর অনুভূতি হচ্ছে সেটিই একাকীত্ব।

আমাদের জীবনে চলার পথে আমরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হই। সমস্যার সমাধান যখন করতে পারি না, তখন নিজেকে একা মনে হয়, তুচ্ছ মনে হয় নিজের কাছে নিজেকে। বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
 
আর এভাবেই জমতে জমতে গড়ে ওঠে মনের মধ্যে একাকীত্বের পাহাড়। একাকীত্ব যখন গ্রাস করে তখন আমাদের কর্মক্ষমতা কমে যায়। মনোযোগ কমে যায়। কোনো কাজ সুন্দর করে করা হয় না। আত্মবিশ্বাস কমতে কমতে আমাদের জীবনের আনন্দগুলোও ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে। এরপর একসময় এটি মানসিক সমস্যায় পরিণত হয়। ধীরে ধীরে সমস্যাটি অনেক বড় রূপ ধারণ করে। এটি তখনই আশংকার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তাই আমাদের  মনে রাখতে হবে- একাকীত্বকে আমরা যত প্রশ্রয় দেবো, এটি তত বেশি গ্রাস করতে থাকবে আমাদেরকে অর্থাৎ ভুক্তভোগীকে। একাকীত্ব জীবনকে ঝামেলা না ভেবে মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া এবং এটিকে উপভোগ করা প্রয়োজন অনেক বেশি। আমরা কখনই বুঝে উঠতে পারি না, একা থাকার মুহূর্তগুলোতে আমরা কী করবো বা কী করবো না।

কেউই বলতে পারবে না যে, তার কখনও একা লাগেনি। কোনো না কোনো সময় একা লাগেই মানুষের। যাদেরকে আমরা জনপ্রিয় বলে মনে করি, তারাও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ একজন ব্যক্তির অনেকজন বন্ধুবান্ধব থাকা মানেই সে একাকী বোধ করে না, এমন নয় ব্যাপারটি। তাদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা না থাকলে সে একা বোধ করতে পারে এবং অনেকজন লোক থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত বন্ধু না থাকায় সে একাকী বোধ করতে পারে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন আমি বা আপনি একা থাকি তখন নিজেকে নতুন করে জানতে পারা যায়। একা থাকলে নিজের প্রতি খেয়াল রাখার সময় বেশি পাওয়া যায়। তখন আমাদের নিজেদের কাজ নিজেকেই করতে হয় বিধায় আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারি। জগতে সম্পর্ক ভাঙ্গার কষ্ট সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক। যখন একটা ভালোবাসার সম্পর্ক ভাঙ্গে তখন সেটা আমাদের মানসিক শক্তি এবং শান্তি দুটোই নষ্ট করে দেয়। 

একা থাকার ক্ষেত্রে নিজের জন্য সময় পাওয়ার ব্যাপারটা খুব কাজে দেয়। নিজের জন্য নিজের কিছু একা সময় পাওয়া যায়। নিজের অতীতের কষ্ট, অতীতের ভুলগুলো নিয়ে নিজের সাথে নিজে বোঝাপড়া করা ও নিজেকে শুধরাতে পারা যায়। প্রথমে কিছুটা কষ্ট হলেও পরে একসময় একাকীত্ব ও নির্জনতার সাথে যুদ্ধ করে করে শিখে ফেলি কিভাবে নিজের সাথে নিজে চমৎকার সময় কাটানো যায়।

সবচেয়ে সুন্দর দিকটি হচ্ছে, পরবর্তী সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে আর ভুল হয় না। আমরা একদমই ভুলে যাই যেটি, একা থাকা মানেই কিন্তু জীবন প্রেমবিহীন নয়। সেই সময়টা জীবনকে সমৃদ্ধ করতে ভালভাবে ভালো কাজে লাগানো যায়। একাকীত্বের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এটি আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না, কখনই না।

যদি দেখা যায় কেউ কারো সাথে ব্যস্ততার অজুহাতে অবহেলা করছে, বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করছে কিংবা ভালোবাসার ছলনা করছে সেক্ষেত্রে তাকে এড়িয়ে চলতে পারাটাই উত্তম। কারণ তার মিথ্যে ভালোবাসা সুন্দর জীবনটা আস্তে আস্তে শেষ করে দিতে পারে। তার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন ব্যক্তির শক্তিশালী ও দৃঢ় মনোবল। তবে অনেকেরই এই রকম মনোবল থাকে না বিধায় একাকীত্ব তাকে শেষ করতে থাকে ধীরে ধীরে।

আমরা আমাদের একাকীত্ব দূর করতে পারি যদি স্বদিচ্ছা থাকে এবং নিজের জীবনটাকে খানিকটা হলেও ভালোবেসে থাকি। যখন আমরা ভালোকাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখতে সক্ষম হবো, একাকীত্ব বোধ তখন আমাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে না। এজন্য আমরা নিজের কিছু কিছু শখ পূরণ করার চেষ্টা করতে পারি। প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে পারি বাগান করার মাধ্যমে।

এছাড়া সেলাই করতে পারি, ঘর গোছাতে পারি, ছবি আঁকার চেষ্টা করতে পারি, মিউজিক শুনতে পারি ইত্যাদি আরও অনেক কাজ। নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারি। ব্যায়াম হিসেবে হাঁটতে পারি। হাঁটতে হাঁটতে অনেক সৃষ্টিশীল ভাবনা আসে মাথায়। চাইলে লিখতে শুরু করা যায়। ভাবুন আর লিখুন। কাগজ কলম তো হাতের কাছেই! নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে ছোট গল্প বা বড় গল্প লেখা যায়, আর্টিকেল লেখা যায়, কিছু সুন্দর মুহূর্ত নিজের সঙ্গেই কাটানো যায় এভাবেই। 

একঘেয়েমি কাটানোর জন্য আমরা ভ্রমণ করতে পারি নতুন নতুন জায়গায়। ভ্রমণ করার ফলে আমাদের মানসিক প্রশান্তি মেলে এবং আমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডার প্রশস্ত হয়। নিজেকে চেনা যায়। এ জন্যই হয়ত ডাক্তার রোগীকে ঘুরে আসতে বলে। ভ্রমণ তাই একাকীত্ব দূর করার উপায়গুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে এবং আমার নিজের পছন্দের শীর্ষে। 

আরেকটি ব্যাপার যেটা সবাই ধরতে পারে না, সেটি হচ্ছে- আমাদের চেয়ে বয়সে বড় এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় যারা তাদের বিচারবুদ্ধি অনেক পরিপক্ব আর তারা হলেন নির্ভরযোগ্য। নতুন মানুষের সাথে মিশে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারলে একা বোধ হয় না। আসলে একাকীত্বকে দুঃখ হিসেবে না দেখে বরং এটাকে উপলব্ধি করা উচিত। একা থাকা মানেই একাকিনী নয়।

একা থাকলে ক্ষমা করতে পারার মতো মহৎ গুনটি চলে আসে। যখন একাকী নিজের ভুল-ত্রুটি নিয়ে ভাবা হয়, দেখা যায় তখন অন্যের জন্য আমাদের মনে একটা সফট কর্নার তৈরি হয়। ক্ষমা করে দিতে পারি আমরা তখন। আমাদের কষ্টগুলো সহজ হয়ে যায় তখন। একা থাকার সবচেয়ে বড় অর্জন এটিই মনে করি আমি। 

এর সাথে সাথে আর একটা বড় ব্যাপার  হয় যে, আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ফিল করতে পারি খানিকটা হলেও নিজেদের শুদ্ধ চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে। নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারি সৃষ্টিকর্তার কাছে। একটা ঐশ্বরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে আমরা যে বিশেষ জ্ঞানটি অর্জন করতে পারি তা হচ্ছে, আমরা সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে পারি। পুরোপুরি হয়ত নয়; হোক সামান্য তবুও তা একজন মানুষের জন্য বিশাল যা একাকীত্বই দিতে পারে। আর সৃষ্টিকর্তাকে অনুভব করতে পারা যায় বলেই অন্তরে মানুষের জন্য ক্ষমা অটোমেটিক চলে আসে।

একাকী হয়ে যাবার ভালো দিকের আরও একটি ভালো দিক- আমরা প্রকৃত বন্ধু চিনে নিতে পারি। একা হয়ে গেলে আমরা যেটা করি- নিজেকে একদম আলাদা করে ফেলি। কোনো সমস্যা হলে আমরা নিজেকে টেনে তুলতে একা একা অনবরত চেষ্টা করে যাই যা একদমই ভুল। এটি না করে সমস্যা কেন সৃষ্টি হয়েছে তা বের করার চেষ্টা করা আর সমাধানের জন্য সাহায্য চাওয়া। এই অন্যের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতায় নিজেদেরকে আর একা মনে হয় না। 

আমাদের আশেপাশে আমাদেরকে পছন্দ করে এমন মানুষ আছে। অন্যের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সুন্দর কাজ করে। আর একাকীত্বের এই দুঃসময়ে যে ব্যক্তি বা বন্ধুটি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, বুঝতে হবে সেই প্রকৃত বন্ধু। যখন কেউ পাশে থাকে না, তখন কে আমাদের বন্ধু বা শত্রু তা চিনে নিতে ভুল করা উচিত নয় একদমই।

একাকীত্ব বোধ করার খারাপ দিকও আছে যা জানা আমাদের জরুরি। একাকীত্বের প্রথম সমস্যা হচ্ছে, শারীরিক ক্ষতি। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ১৫টি সিগারেট খেলে যে ক্ষতি হয় শরীরের, একাকীত্ব ঠিক ততটাই ক্ষতি করে। দীর্ঘদিন ধরে এই একাকীত্বে ভুগতে থাকলে সেটা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকারক। 

এরপর যেটা হয়, আমাদের কায়িক পরিশ্রম বেড়ে যায়। সব কাজ নিজেকেই করতে হয়। রান্না করা, বাজার করা, কাপর কাচা থেকে শুরু করে থালা বাসন ধোয়া, নিজের রুম সবকিছু নিজেকেই পরিষ্কার করা ইত্যাদি আরও অনেক কাজ একাই করতে হয়। এরমধ্যে ভালো দিকটি আমি আগেই বলেছি। শারীরিক খাটুনি বেশি হয় এই যা।

বাংলায় একটা কথা আছে, “চিন্তার চেয়ে চিতার আগুন ভালো”। আমরা যখন একা হয়ে যাই, সাধারণত তখন আমাদের মনে নানা রকম নেতিবাচক চিন্তা এসে ভিড় করে। আর এই নেতিবাচক চিন্তা যেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি শরীরের জন্যও। অনবরত নেতিবাচক চিন্তা করার ফলে শরীরে নানা অসুখ বাসা বাঁধে। তাই ইতিবাচক চিন্তা করা প্রয়োজন সব সময়।

আমরা যে ভুলটা করি একা হয়ে গেলে সেটি হচ্ছে নিজেকে ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলি। একাকীত্ব আমাদেরকে ভুল পথে নিয়ে যায় অনেক সময়ই। একাকীত্ব কাটিয়ে ওঠার কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে আমরা হয়তো বাছবিচারহীনভাবে যে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। যে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। হয়তো অনেকেই এইরকম মনে করি যে, কোনো ভালো বন্ধু না থাকার চেয়ে যে কোনো বন্ধু থাকা ভালো। আর এটাই বিপদ ডেকে আনতে পারে জীবনে।

আর যেটা করি, আমরা ডিভাইস আসক্ত হয়ে পড়ি। আমাদের মনে রাখা দরকার যে, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট সবসময় একাকীত্ব দূর করতে পারে না। একা থাকলে আর যেটি হয়, আমরা কথা বলা কমিয়ে দেই মানে কথা বলার সুযোগ থাকে না, ফলে আমরা কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ি। আমরা নীরব প্রকৃতির মানুষ হয়ে যাই।

যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, সৃষ্টিসমূহ থাকবে, মনুষ্য সমাজ থাকবে, ততদিনই এই একাকীত্ব বোধও থাকবে। মানুষ একা বাস করতে পারে না বলেই সমাজের সৃষ্টি। ক্ষুধা লাগলে খাবার খাই, তৃষ্ণা পেলে পানি পান করি তেমনি একাকীত্ব বোধ হলেও তা মেটানোর প্রতি মনোযোগী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। একা না হলে নিজেকে আবিষ্কার করা যায় না, এটি জীবনের উন্নতির জন্যও অন্তরায় নয়, বরং সহায়ক। তবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যেদিন একা থাকার মুহূর্তগুলোকে ভালোবাসতে পারা যাবে, সেদিন আর একাকীত্ব আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না।

লেখক: রেহানা রহমান রেনু, শিক্ষক ও কলামিস্ট

পরিস্থিতি বুঝে সম্পর্ক

ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্ক চাই খুব গোছালো আর মানুষটা তো হবে একদম নিখুঁত। একটি সম্পর্কে যাওয়ার সময় সবারই মনে থাকে রঙিন প্রত্যাশা। সাধারণত ভঙ্গুর বা এলোমেলো কারো সাথে সঙ্গী হতে চায় না কেউ। অথচ ভালোবাসার মূল্য কিন্তু এ মানুষগুলোই দিতে পারে।

যে কারনে কারো খারাপ সময়ের সঙ্গী হবেনঃ

আপনি যখন দুঃসময়ে কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবেন তখন সে আপনাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাবে না এতে করে আপনি প্রত্যাশার জালে ডুবে থাকবেন না বিধায় কষ্টও পাবেন না।

আবেগের চেয়ে বাস্তবতার উপলব্ধি উভয়ের মাঝে বিরাজ করবে যা আপনাদের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কাউকে গড়ে নেয়ার মাঝে আলাদা একটা সুখ আছে। নিজে কিছু তৈরি করলে যেমন মনে এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়।

কারো খারাপ সময়ে যদি তার সঙ্গী হতে পারেন তাহলে বন্ধুত্বের জায়গাটা সহজেই তৈরি হয়ে যায়। সম্পর্কে বন্ধুত্ব সম্পর্ক খুব জরুরী।

আপনি যখন তার দুঃসময়ে পাশে থাকবেন পরবর্তীতে আপনাকে নিয়েই তার ভালো সময় কাটাবে তাই চলার পথে হতাশ হবেন না।

স্বাভাবিক ভাবে সে আপনাকে অবিশ্বাস করতে পারে যে আপনিও হয়তো তার জীবন থেকে চলে যাবেন এমন অবস্থায় তাকে মানসিক শক্তির যোগান দিন। তাকে বলুন আপনি তার পাশে আছেন ও সারাজীবন থাকবেন।

আপনার প্রতি সঙ্গীর আস্থা বাড়াতে তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেন বা তার সাথে বেশী সময় কাটান। এতে করে ব্যাক্তি যে খারাপ সময় কাটাচ্ছে সে বিষয় থেকে তার মনোযোগের পরিবর্তন ঘটবে।

সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ রাখুন। তার ভালো লাগা আর আপনার ভালো লাগার মধ্যে অমিল হতে পারে তাই ধৈর্য্য রাখুন।

কারো খারাপ সময়ে পাশে থাকার ফলে সম্পর্কের ভালো সময়গুলো আসতে সময় লাগে, ধীরে ধীরে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ে। আর এ সম্পর্ক গুলো সহজে ভাঙ্গে না বরং সুখী হয়।

কারো ভালো সময়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোর চেয়ে তার খারাপ সময়ে তাকে ভালোবাসুন এতে আপনি যেমন কাউকে নতুন জীবন গড়ার সুযোগ দিচ্ছেন তেমনি এর থেকে ভালো প্রতিদান সে আপনাকে দিবে।

জর্জ চ্যাপম্যানের মতে-

‘ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবাসা দেওয়াতেই বেশি আনন্দ।’

সম্পর্কে যত্নশীল আচরণ

জীবনসঙ্গীকে কেবল ভালবাসলেই হয়না ভালো রাখতেও জানতে হয়। আপনি হয়তো আপনার জীবনসঙ্গীকে ভালবাসছেন ঠিকই কিন্তু আপনি তার প্রতি যত্নশীল নন। এতে করে কিন্তু আপনাদের সম্পর্ক হঠাৎ বিরুপ হয়ে যেতে পারে।

সম্পর্কের যত্নশীল আচরণ গুলো কি?

যোগাযোগঃ

আপনি হয়তো খুব ব্যস্ত অথবা সময় করে জেনে নিচ্ছেন আপনার সঙ্গী কি করছে, কেমন আছে, ঠিকঠাক ভাবে আছে কিনা এ বিষয়গুলো হল সঙ্গীর প্রতি যত্নশীল আচরণ। আর আপনি যখন এ বিষয়গুলোর খোঁজ রাখছেন না ব্যস্ততার জন্য বা মনের ভুলে তখন বিষয়টি দাঁড়ায় সম্পর্কের প্রতি অযত্নশীল আচরণ যা আপনার সম্পর্কের মাঝে একসময় দূরত্ব তৈরি করবে।

একান্ত সময় কাটানঃ

দাম্পত্য সম্পর্কে যে বিষয়টি প্রতিদিন করা উচিত তা হল দুজন একান্ত কিছু সময় কাটানো। আপনাদের একান্ত সময়ে আপনারা পরস্পরের ভালো লাগা, অভিমান, অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়া বিষয়গুলো বুজতে পারবেন তাই কিছু সময়ের জন্য হলেও একান্ত সময় কাটান।

কাজে সহযোগিতা করাঃ

সাংসারিক বা ব্যক্তিগত যেকোনো ধরনের ছোট-বড় কাজে আপনার সঙ্গীকে সহযোগিতা করুন এতে করে আপনার সঙ্গী আপনার প্রতি ভরসা পাবে। দাম্পত্যে সম্পর্কে কাজে সহযোগিতা বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে বেশ হিসাবনিকাশ হয় যার ফলে ঝগড়া হতে থাকে।

মানসিক অবস্থার খোঁজ নিনঃ

মানসিক অবস্থা ব্যক্তির আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। যেমন- আপনার সঙ্গী অকারনে রেগে যাচ্ছে, বিষণ্ণ থাকছে, কথা কম বলছে, উদাসীন হয়ে যাচ্ছে এসব আচরণ যদি দেখতে পান তাহলে তার থেকে জেনে নিন কেন সে ভালো নেই। যখন আপনার সঙ্গী তার মনের অবস্থা আপনার কাছে জানাবে হতে পারে কিছু বিষয় আপনার তাকে সঠিক মনে হচ্ছে না তাই বলে ঐ অবস্থায় তাকে এমন কিছু বলবেন না যাতে তার কষ্ট আরও বেড়ে যায়। ঠিক এরকম সময়ে তার কথাগুলো জানুন ও তাকে হালকা হতে দিন। এছাড়া আপনারা দুজনই আপনাদের ব্যাপারে পরস্পরের কাছে সচ্ছ থাকুন।

শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানুনঃ

আপনার সঙ্গীর শারীরিক সকল অবস্থা ভালো আছে কিনা সে বিষয় খোঁজ নিন। এ খোঁজ নেয়াটা যেন শুধু জৈবিক চাহিদার জন্য না হয়ে থাকে। শারীরিক সুস্থতা মানুষের মানসিক অবস্থার উপরও প্রভাব ফেল। যদি আপনার সঙ্গী অসুস্থ থাকে তাহলে তার সেবা করুন। মনে রাখবেন ডাক্তার দেখানো আর ওষুধ কেনা কারো প্রতি যত্নশীল আচরণ হতে পারেনা।

সম্মান করুনঃ

সম্পর্কে সম্মান প্রদর্শন বিষয়টি থাকা অতি জরুরী। আপনাদের মাঝে হয়তো পর্যাপ্ত প্রেম-ভালোবাসা রয়েছে আবার আপনি যখন তখন হয়তো যা তা আচরণ পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা বাহিরের কারো সামনে সঙ্গীর সাথে করে ফেলছেন এতে করে কিন্তু আপনার প্রতি তার মনোভাব ও সম্মান নষ্ট হতে থাকবে যা আপনাদের সম্পর্কে ধীরে ধীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সঙ্গীর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিনঃ

আপনার সঙ্গীর ছোট-বড় চাওয়া বা আবদারগুলো পূরণ করার চেষ্টা করুন। হতে পারে আপনার সঙ্গী অসময়ে ঘুরতে যেতে চাচ্ছে অথবা কিছু কিনতে চাইছে তার চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ করুন এতে করে আপনার সঙ্গী একসময় আপনার ইচ্ছেগুলোকে তার ইচ্ছের চেয়ে বড় করে দেখবে।

মাঝে মধ্যে সঙ্গীকে চমকে দিনঃ

আপনার সঙ্গীর ভালো লাগা কিছু উপহার দিয়ে মাঝে মধ্যে তাকে চমকে দিন। কখনও কখনও আপনার বা তার ব্যস্ততার মাঝে ফোন করে বলুন ঘুরতে যাবেন এভাবে চমকে দিন। ব্যস্ততা কে ছুটি দিয়ে দুজন ভালো সময় কাটান এতে দুজনার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ভালো থাকবে।

সঙ্গীর পরিবারের প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ করুনঃ

আপনি সঙ্গীকে ভালবাসছেন, ভালো রাখছেন কিন্ত তার পরিবারের সাথে আপনার সম্পর্ক তেমন ভালো নয় বা আপনি ভালো ব্যবহার করছেন না এতে করে আপনার সঙ্গী পরিবারের কাছে ছোট হচ্ছে। সঙ্গীর পরিবারের প্রতি আন্তরিক হন এতে আপনার সঙ্গীর প্রতি অনেকটা যত্নশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ পায়।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুনঃ

আপনার সঙ্গী আপনার খুশির জন্য কিছু করলে তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। যেমন- আপনার জন্য রান্না করা, উপহার দেয়া, আপনার পছন্দমত ঘর সাজানো ইত্যাদি বিষয়ে তার করনীয় কাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

দাম্পত্য সম্পর্ক মানে কেবল প্রেম-ভালবাসা, জৈবিক চাহিদা বা অর্থ-সম্পদ নয়। একটি সম্পর্কে যত্নশীল আচরণ থাকা প্রয়োজন।

কিছু পরামর্শ নিতে নেই এতে সম্পর্ক নাজুক হয়

দাম্পত্য সম্পর্ক সুখের হোক বা না হোক – সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব একমাত্র আপনার। অনেক সময়ই সম্পর্কের নানা সমস্যায় আমরা পরামর্শ চাই কাছের বন্ধু বা আত্মীয়দের কাছে। কখনও কখনও সে সব পরামর্শে কাজ হয়, কখনও আবার হয় না।

তবে কাজ হোক বা না হোক, পরিস্থিতির দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে এবং নিজেই পথটা খুঁজে বের করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে বন্ধু বা আত্মীয়দের পরামর্শগুলোর ব্যাপারেও সাবধান থাকা দরকার।

স্বামীর সঙ্গে তর্ক কোরো নাঃ

কোনও মতেই এই পরামর্শে কান দেবেন না! তর্ক করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেই ভয়ে চুপ করে থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়। নৈর্ব্যক্তিক হয়ে বিষয়টা পর্যালোচনা করা এবং কোথায় আপনাদের দু’জনেরই ভুল হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি মনে হয় আপনাকে বিনা কারণে দোষী করা হচ্ছে, তা হলে চুপ করে না থেকে মুখ খুলুন। সম্পর্ক সফল করতে দু’জনেরই সক্রিয় ভূমিকা থাকা দরকার।

স্বামীকে পালটানোর চেষ্টা করোঃ

এটা আর একটা ভুল পরামর্শ। কোনও দুটো আঙুল যেমন একরকম হয় না, তেমনি দু’জন মানুষও একরকম হতে পারেন না। সেই পার্থক্যটা মেনে নিতে হবে। স্বামী বা পার্টনারকে যদি পালটাতে চেষ্টা করেন, সেটা হবে আপনার সবচেয়ে বড়ো ভুল। পরস্পরের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকে মেনে নিয়ে জীবনটা গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

সংসারের রাশ নিজের হাতে রাখোঃ

সম্পর্কের মূল কথা হল দু’জনের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা। সব কিছুর রাশ নিজের হাতে রাখলে মাথায় অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে ফেলবেন, এবং তা থেকে এক সময় হতাশা আর ভুলবোঝাবুঝি তৈরি হবে যা যথেষ্টই এড়ানো সম্ভব। তাই সব দায়িত্ব নিজের উপর রাখবেন না, স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিন।

স্বামীর ফোনের উপর নজর রাখোঃ

এরকম পরামর্শ শুনলে সেই পরামর্শদাতা ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলাই ভালো। অপরের ফোন ঘাঁটা একইসঙ্গে অনৈতিক এবং অভদ্রতার চূড়ান্ত উদাহরণ। স্বামীর ব্যাপারে কোনও কারণে আপনার সন্দেহ তৈরি হতেই পারে, কিন্তু তার জন্য স্বামীর ফোন লুকিয়ে দেখতে যাবেন না। বরং সরাসরি স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন।

দাম্পত্য সম্পর্কে দুজনের মনের যোগাযোগের পথটা হওয়া চাই মসৃণ। হঠাৎ করেই সঙ্গীর চেনা আচরণে অচেনা সুর, ছোটখাটো ভুলত্রুটিতে বড় চেহারা দাম্পত্যে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতিতে সম্পর্কে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়। দুজনের মনের যোগাযোগের পথ হতে হবে দূর্দান্ত;

পারস্পারিক বুঝাপড়া সমান্তরাল। তাই নিজেদের অকৃত্রিম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে দুজনেই যথেষ্ঠ সচেতন হোন।

ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা আদায় করে নিতে হয়!

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত এবং আলোচিত শব্দ “ভালোবাসা”। ভালোবাসা মূলত সাধনার বিষয়। আপনি যত বড় সাধক হবেন তত সফল হবেন। আপনি আজ উজাড় করে দিবেন পরবর্তীতে এর পরিমাণ উত্তম কিছু পাবেন এটাই প্রকৃতির ধর্ম। প্রকৃতির এ নিয়ম যদি আপনি বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে হতাশায় না ভুগে ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা আদায় করে নিন।

প্রত্যাশা রাখবেন নাঃ কি পেলাম, কতটুকু পেলাম এ নিয়ে হিসেব-নিকাশ করবেন না। মানুষ বেশী কষ্ট পায় যখন সে মনে প্রত্যাশা রাখে।

তার প্রিয়জন হনঃ আপনি তখনই একজন মানুষের প্রিজন হতে পারবেন যখন আপনার সঙ্গ তার ভালো লাগবে। তাই সম্পর্কে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তুলন।

স্বার্থপর হবেন নাঃ ভালোবাসার বিষয়ে স্বার্থ থাকতে নেই আর প্রকৃত ভালোবাসয় স্বার্থপরতা নেই ।

বিশ্বস্ত হনঃ যে কোন সম্পর্কে বিশ্বাস অতি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন কারো বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারবেন তার কাছে আপনার চেয়ে মূল্যবান কিছু থাকবে না। সে আপনার কাছেই আসবে বার বার।

প্রয়োজন হবার চেষ্টা করুনঃ তার প্রয়োজন হওয়ার জন্য অবশ্যই ব্যক্তির কাজে সহযোগী হওয়ার চেষ্টা করুন, এর ফলে আপনাদের বোঝাপড়া বিষয়টি মজবুত হবে। প্রয়োজন থেকেই কিন্তু প্রিয়জন হওয়া সম্ভব।

ছাড় দিনঃ সম্পর্কে তখনই ফাটল ধরে বা ব্যক্তি অপছন্দের কারন হয়ে যায় যখন সম্পর্কে ছাড় দেয়ার বিষয়টি থাকে না। হারাবার ভয় হবেই এটাই স্বাভাবিক। পোষা পাখির মত আটকে রাখবেন না। মানুষটি যদি আপনাকে ভালোবাসে যে যতদুরেই যাক আপনার কাছে ফিরবেই।

ঈর্ষাঃ ব্যক্তিকে ভালোবাসেন আর মনে ঈর্ষা জন্মাবে না তা আসলে হয় না, তবে এর পরিমাণ যেন তীব্র না হয়। কারন অতিরিক্ত ঈর্ষাবোধ একটি রোগ ও সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়।

হতাশা হবেন নাঃ চিন্তা করুন তো; দিন গড়িয়ে যেমন রাত আসে তেমনি রাত পেরিয়ে আবার ভোর হয়! তাই আজ যা কিছু করবেন সময় আপনাকে ফলাফল দিবেই তাই হতাশ হবেন না।

ভালো লাগা বা সম্পর্ক বিষয়টি চট করে হয়ে গেলেও ভালোবাসা তৈরি হয় ধীরে ধীরে। ভালোবাসা গড়ে উঠে পরস্পরের বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে। সম্পর্ক আছে কিন্তু ভালোবাসা নেই বা একপক্ষের অনুভূতি এ বিষয়টি অনেক সম্পর্কেই দেখা যায়। আর এ সম্পর্ক গুলো প্রতিনিয়ত হতাশায় ভুগে, অতঃপর কারো কারো ক্ষেত্রে হয়ে যায় বিচ্ছেদ।

ভালোবাসা নিয়ে ‘ টমাস ফুলার বলেছেন -ভালোবাসতে শিখুন, ভালোবাসা দিতে শিখুন তাহলে আপনার জীবনে ভালোবাসার অভাব হবে না।

সখি ভালোবাসা কারে কয়!

ভালোবাসা মানুষের মনের এক অদ্ভুত অনুভূতি। ভালোবাসার আরেক নাম কেউ কেউ প্রেম ও বলে থাকেন। যখন কেউ ভালোবাসা অনুভূতি অনুভব করে তার মনের উপর বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। ভালোবাসা বা প্রেম একটি মানবিক আবেগ তবে যুগের সাথে ভালোবাসার ধরন ও বহিঃপ্রকাশের বেশ ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

ভালোবাসার প্রকৃত কোন সংজ্ঞা নেই তবে রয়েছে নানান বিতর্ক ও মতামত। পৃথিবীতে এমন কোনো কবি বা সাহিত্যিক নেই যিনি ভালোবাসা নিয়ে কিছু সৃষ্টি করেননি, কবি রফিক আজাদের মতে-

“ভালোবাসা মানে দু’জনের পাগলামি,পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা;ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া,বিরহ-বালুতে খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও খুঁজেছেন ভালোবাসার প্রকৃত উত্তর তাই তো লিখেছিলেন –

‘তোমরা যে বল দিবস-রজনী, ভালোবাসা, ভালোবাসা, সখী ভালোবাসা কারে কয়? সে তো কেবলই যাতনা নয়।’

ভালোবাসা কাল্পনিক নির্মলেন্দু গুণের কবিতার মতোই-

‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই’।

লেখক সমরেশ বসুর মতে – ভালবাসা। কী কঠিন! ভালবাসা, কী যে নিষ্ঠুর আর কী বিচিত্র তাঁর সংবেদ!

বাংলা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নারী-পুরুষের মনে গড়ে উঠা ভালোবাসা ও প্রেম নিয়ে অসংখ্য মতামত দিয়েছেন তার গল্প, উপন্যাস গুলোতে তার মতে –

“ভালোবাসাবাসির ব্যাপারটা হাততালির মতো। দুটা হাত লাগে। এক হাতে তালি বাজে না। অর্থাৎ একজনের ভালোবাসায় হয় না।

ভালোবাসা কি? এ অনুভূতি কেন হয় বা কেমন? এ প্রশ্ন জীবনে একবার হলেও মনে জাগেনি বা জানতে চায়নি এমন মানুষ পাওয়া সম্ভব নয়। শুধু কবি-সাহিত্যিকগন নয় মনোবিজ্ঞানীগন ও বিজ্ঞানীরাও গবেষণা করেছেন মানব মনের ভালোবাসা নামক অনুভূতি নিয়ে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, একজন ব্যক্তি অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক মোট চার মিনিট ৯০ সেকেন্ড সময় নেয়। গবেষকরা এটাও দেখেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির কিছু বিষয় বিবেচনা করে। তার মধ্যে ৫৫ শতাংশ হলো তার অঙ্গভঙ্গি বা বাহ্যিক রূপ, ৩৮ শতাংশ কণ্ঠস্বর ও কথা বলার ভঙ্গি এবং মাত্র ৭ শতাংশ তাদের মূল বক্তব্য শোনে।

যুক্তরাষ্ট্রের রটার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেলেন ফিসার জানান -প্রেমের তিনটি স্তর রয়েছে। এই তিনটি স্তরের প্রতিটি স্তরই ভিন্ন ভিন্ন হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়।

স্তরগুলো হলো- ভালোবাসার ইচ্ছে, আকর্ষণ ও সংযুক্তি।

ভালোবাসা হলো পার্থিব জীবনের এক বিস্ময়কর অনুভূতি। যা আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দরতম ও টিকে আছে।

ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা না থাকলেও রয়েছে কিছু বৈশিষ্ট্যঃ

ভালোবাসা কখনও পারফেক্ট হয় না। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি ভালো খারাপ সব জেনেও কারও সঙ্গ ভালো লাগা।

নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ভালো লাগা মানুষটিকে মনে করা।

ভালো লাগার মানুষটিকে না পেলে হয়তো জীবনের কোন অর্থ নেই এরকম অনুভূতি হবে।

বিপরীত স্বভাবের মানুষের প্রতি ভালোবাসা বা প্রেম জন্মাতে পারে।

ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টিশীল তাই চিন্তা – চেতনার উন্মোচন ঘটতে পারে।

ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হতে দেখলে ঈর্ষাবোধ সৃষ্টি হবে।

ভালো লাগার মানুষটিকে বার বার কল্পনা করা বা তার উপস্থিতি অনুভব করা।

মনে ভালোবাসা জন্মালে সহজাত ভাবে ব্যাক্তিকে আগের চেয়ে আরো বেশি আকর্ষণীয় এবং প্রফুল্ল দেখাবে।

ভালোবাসার মানুষটির সাথে বার বার দেখা করার বা কাছে যাওয়ার অজুহাত খোঁজা।

হয়তো কোন ব্যাক্তির মাঝে বিশেষ কোন মুগ্ধতা নেই তবুও প্রবল আকর্ষণ অনুভব করা।

ভালোবাসার উল্টো পিঠে যাতনা জেনেও ভালোবাসতে ইচ্ছে করা।

ভালোবাসা কোন সময় কেন্দ্রিক থাকেনা আবার ভালোবাসা একদিন এর জন্যও হয় না। প্রতিদিন একটু একটু করে বা দীর্ঘ সময় ধরে এটি বিরাজ করতে পারে।

যে কোন বিষয়কে পরোয়া না করে, চক্ষুলজ্জা ডিঙ্গিয়ে কাউকে নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার যে প্রবল ইচ্ছা বা ভাবনা মনে জাগে তাই ভালোবাসা।

কারও প্রতি সহানুভূতি বা শ্রদ্ধাবোধও ভালোবাসার একটি অন্যতম লক্ষণ।

ভালোবাসার নেই কোন সংজ্ঞা, চিত্র বা পরিমাপ। কারও প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মনের কনে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে যে অনুভূতিগুলো নাড়া দেয় তাই ভালোবাসা। তবে শুধু ভালবাসলেই হয় না এ ভালোবাসা ধরে রাখতে পরিচর্চার প্রয়োজন।

কথায় আছে –

ভালোবাসার বাগানে সম্পর্কগুলো হলো এক একটি জীবন্ত গাছ আর সেই বাগানের মালী হিসেবে নিজেকে বসিয়ে দিয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করলেই ভালোবাসা সুগন্ধ ছড়াতে থাকবে আপনার চারপাশে। তাই ভালোবাসার যত্ন নিতে হয়। গাছে পানি না দিলে যেমন গাছটি মরে যায়, ভালোবাসার যত্ন না নিলে ভালোবাসাও মরে যায়!

ভালোবাসার পরিচর্চা

ভালোবাসা হৃদয়ের একটি অনুভূতি। ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব করা। কখনও কখনও সময়ের কোন ঠাসায় পরে ভালোবাসার রুপের পরিবর্তন ঘটে। মনে সংকোচ জাগে ভালোবাসার মানুষটি বোধ হয় আর আগের মত নেই বা ভালোবাসছে না। তাই প্রয়োজন ভালোবাসার পরিচর্চার। সঙ্গীর কাছে থেকেও যদি মনে হয় মানুষটি দূরে। তাহলে কিছু বিষয়ে সতর্ক হবেন যে আপনাদের মধ্যে ঘটছে কি না।

যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেনঃ

ছোটখাটো ভুল গুলোতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে না পারা। আগে হয়ত দুজন মানিয়ে নিতেন কিন্তু এখন আর ইচ্ছে হয় না।

অহেতুক ঝগড়া। কারনে অকারনে দুজনার বার বার ঝগড়া হওয়া।

কটু কথা বলা অর্থাৎ শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়া। হয়ত দুজন দুজনার ইচ্ছে কে আগে যেমন প্রাধান্য দিতেন এখন তা আপনি বা আপনার সঙ্গী করছেন না।

সঙ্গীর ভালো লাগা কিছু করতে আপনারও ভালো লাগতো বা তার জন্য শপিং করতে ভালো লাগতো। এখন আর সে অনুভূতিগুলো কাজ না করা।

ব্যাস্ততায় তার সঙ্গ বা কথা আপনার বিরক্ত লাগে। অথবা আপনার সঙ্গী ব্যাস্ততা কে আপনার চেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে।

দুজন কোথাও ঘুরতে বের হলেন কিন্তু আপনার বা আপনার সঙ্গীর মন উদাসীন থাকছে।

আগের মত বোঝাপড়া হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আপনার সব বিষয়ে সে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে অথবা আপনি করছেন।

সঙ্গীর সাথে সময় কাটাতে গিয়ে যদি আপনার মনে হয়, কোন কাজের পিছনে সময় দিলে ভালো হতো অথবা সঙ্গী কাজকে আপনার চেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছে।

যদি আপনার সাথে অন্যের রুপ বা গুনের তুলনা করতে থাকে অথবা আপনার মনে তার থেকে অন্যের রুপ বা গুন ভালো লাগতে থাকে।

ছোট বা বড় যে দোষ হোক যদি সঙ্গীর মানসিক বা শারীরিক শাস্তি দেয়ার মন-মানসিকতা বার বার কাজ করে। উপরিউক্ত বিষয়গুলো যদি আপনাদের মধ্যে ঘটতে থাকে তাহলে আপনাদের ভালোবাসার পরিচর্চার প্রয়োজন।

যেভাবে পরিচর্চা করবেনঃ

সঙ্গীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করে নিন যে আপনাদের সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটছে ও ভালোবাসার পরিচর্চা করা দরকার।

সঙ্গীর সাথে আগের চেয়েও বেশী সময় কাটান।

ব্যাস্ততা কে এড়িয়ে চলুন সঙ্গী কে নয়।

নতুন পরিবেশে অথবা নিজেদের পছন্দের জায়গায় ঘুরে আসুন।

সারপ্রাইজ কিছু করতে পারেন যেমন- গিফট দিতে পারেন, ঘরের ডেকরেশন পরিবর্তন করতে পারেন, সঙ্গীর পছন্দের খাবার রান্না করতে পারেন, এক সাথে সিনেমা দেখতে পারেন, শপিং করতে পারেন ইত্যাদি।

সঙ্গীর ভালোলাগা বিষয়গুলো প্রাধন্য দিন। তখন সেও আপনার ভালো লাগার বিষয়ে পুনরায় আগ্রহী হয়ে উঠবে।

হয়ত আপনার সঙ্গীর কোন বিষয় আপনার ভালো লাগছে না একেবারেই চুপ থাকুন তবুও কটু কথা বা তাকে ছোট করে কোন কথা বলবেন না।

সঙ্গীর ভুলের জন্য ক্ষমা করুন। কোনোভাবেই মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন করবেন না।

আমাদের যেমন নিজেদের শারীরিক ও মানসিক চর্চার দরকার হয় ও আমরা করে থাকি। তেমনি দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার পরিচর্চা করা অবশ্যই প্রয়োজন। ভালোবাসা ঠিক রঙ বদলায় না রঙ বদলায় সময় আর আমাদের উচিৎ নিজেদের সমঝোতায় এসে ভালোবাসার পরিচর্চা করা।

প্রত্যাশার উর্দ্ধে সম্পর্ক

বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের জীবনে সম্পর্কগুলিকে যেভাবে বজায় রাখেন, সেটিই মূলত তারা যেভাবে বেঁচে থাকেন তার মান নির্ধারণ করে। এটি যখন আপনার জীবনে এতখানি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করছে, তখন এটির দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। কোন একটি সম্পর্কের ভিত্তি কী? মানুষের সম্পর্কের প্রয়োজন কেন পড়ে? বিভিন্ন স্তরে সম্পর্ক তৈরি হয়; বিভিন্ন ধরণের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরণের সম্পর্ক রয়েছে। চাহিদাগুলি শারীরিক, মানসিক, আবেগ সংক্রান্ত, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক হতে পারে – এগুলি যে কোনও ধরণের হতে পারে। 

জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি সম্পূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে?

সম্পর্কের প্রকৃতি যাই হোক না কেন, সম্পর্কের ধরণ যাই হোক না কেন, তবুও আসল ব্যাপারটি হলো আপনার একটি চাহিদা আছে যেটা পূরণ করা প্রয়োজন। “না, আমার কিছু পাওয়ার নেই, আমি দিতে চাই।” দেওয়াও গ্রহণ করার মতই একটি প্রয়োজন। “আমাকে কাউকে কিছু দিতে হবে” – এটি “আমাকে কিছু পেতে হবে” এর মতোই একটি চাহিদা। এখানেও একটা চাহিদা আছে। চাহিদাগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, সেই অনুযায়ী সম্পর্কগুলিও বৈচিত্র্যময় হতে পারে।  

মানুষের ভেতর চাহিদা বেড়ে গেছে কারণ তাদের মধ্যে অসম্পূর্ণতার একটি বিশেষ অনুভূতি আছে এবং লোকেরা নিজের ভিতরে একটি বিশেষ পরিপূর্ণতা অনুভব করার তাগিদে সম্পর্ক তৈরি করছে। আপনি যখন আপনার কোন প্রিয়জনের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখেন তখন আপনি নিজেকে সম্পূর্ণ অনুভব করেন। আপনার যখন সেটা থাকে না, আপনি অসম্পূর্ণ বোধ করেন। কেন এমনটা হয়? জীবনের এই অংশটি নিজেই একটি পরিপূর্ণ সত্তা – কেন এটি অসম্পূর্ণ বোধ করছে? কেন এটি অন্য একটি জীবনের সাথে অংশীদারি করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করছে? মূল কারণটি হ’ল আমরা এই জীবনটিকে তার পূর্ন গভীরতা এবং মাত্রায় অনুসন্ধান করিনি। যদিও এটিই হলো ভিত্তি, সম্পর্কের একটি জটিল প্রক্রিয়া রয়েছে। 

প্রত্যাশার উৎস

যেখানে সম্পর্ক আছে সেখানে প্রত্যাশাও রয়েছে। বেশিরভাগ লোকেরা এমন সব প্রত্যাশা করে চলেছে, যা এই গ্রহের কোনও মানুষই কখনও পূরণ করতে পারে না । বিশেষত একটি পুরুষ-নারী সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রত্যাশাগুলি এতটাই বেশি যে আপনি কোনও দেব-দেবীকে বিয়ে করলেও তারা আপনাকে ব্যর্থই করবে। আপনি যখন প্রত্যাশা বা প্রত্যাশার উৎস বুঝতে অক্ষম, তখন আপনি প্রত্যাশা পূরণ করতেও পারবেন না। তবে আপনি যদি এইসব প্রত্যাশাগুলির উৎস বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি একটি খুব সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন। 

যদি আপনি নিজের স্বাভাবিক প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, সম্পর্কগুলি আপনার কাছে সুখ খোঁজার উপায় না হয়ে নিজের আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে।

মূলত, আপনি সম্পর্ক খুঁজতে যান কেন ? কারণ আপনি দেখবেন যে আপনার জীবনে কোনও ধরণের সম্পর্ক ছাড়া আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। আপনি একটি সম্পর্ক চাইছেন কারণ আপনি সুখী হতে চান, আপনি আনন্দে থাকতে চান। বা অন্য কথায় আপনি অপর এক ব্যক্তিকে আপনার সুখের উৎস হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। আপনি যদি নিজের প্রকৃতিতেই খুশি থাকেন, তবে সম্পর্কগুলি আপনার জন্য সুখ খোঁজার প্রচেষ্টা না হয়ে আপনার আনন্দ প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠবে। আপনি যদি কারও কাছ থেকে সুখ নিঙড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সেই ব্যক্তি যদি আপনার কাছ থেকে‌ আনন্দ বার করে নেওয়ার চেষ্টা করে- তবে কিছু সময় পর এটি একটি যন্ত্রনাদায়ক সম্পর্কে পরিণত হবে। শুরুর দিকে এটি ঠিক মনে হতে পারে কারণ কিছু একটা পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি নিজের আনন্দ প্রকাশ করার জন্য সম্পর্ক তৈরি করেন তবে কেউ আপনার সম্পর্কে অভিযোগ করবে না- কারণ আপনি অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে আনন্দ চাইছেন না বরং নিজের আনন্দ প্রকাশ করার প্রক্রিয়াতে আছেন।  

আপনার জীবন যদি সুখের অন্বেষণ না হয়ে, আপনার আনন্দের অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে তবে সম্পর্কগুলি স্বাভাবিকভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে । আপনার লক্ষাধিক সম্পর্ক থাকলেও সেগুলিকে ভালভাবে ধরে রাখতে পারেন। অন্য কারোর প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টার এই পুরো সার্কাসটাই হয় না; কারণ আপনি নিজেই যদি আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হয়ে ওঠেন, তবে যেভাবেই হোক তারা আপনার সাথেই থাকতে চায়। আপনার জীবনকে সুখের পশ্চাদ্ধাবন থেকে আনন্দের বহিঃপ্রকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া -, সম্পর্কগুলিকে যদি সত্যিই সমস্ত স্তরে কাজ করতে হয়, এটাই হওয়া প্রয়োজন; কারণ তারা বিভিন্ন ধরণের।  

বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক

আপনার শরীর এই মুহূর্তে এমনভাবে তৈরি যে এটি এখনও এমন অবস্থায় রয়েছে যেখানে এটির একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। আপনার মন এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন পড়ে। আপনার আবেগগুলি এমনভাবে রয়েছে যে এটির এখনও একটি সম্পর্কের প্রয়োজন আছে। এবং আরো গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে- আপনার শক্তিগুলি এমনভাবেই তৈরি যে আপনার এখনও সেই স্তরে একটি সম্পর্কের প্রয়োজন। যদি আপনার শরীর কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে যৌনতা বলি। আপনার মন যদি সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে সাহচর্য বলি । যদি আপনার আবেগ সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা তাকে ভালবাসা বলে থাকি । যদি আপনার শক্তিগুলি কোনও সম্পর্কের সন্ধানে যায় তবে আমরা একে বলি যোগ।.  

আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকেনা এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়।

আপনি দেখবেন যে এই সকল প্রচেষ্টা- সেটি যৌনতা, সাহচর্য, প্রেম বা যোগ, যাই হোক না কেন, আপনি অন্য কোনও একটা কিছুর সাথে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করছেন; কারণ কোনও একটি কারণে এই মুহুর্তে আপনি যা, তা যথেষ্ট নয়। আপনি অন্য একজনের সাথে এক হতে পারেন কি করে ? শারীরিকভাবে আপনি চেষ্টা করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় আপনি এটা করে ফেলবেন কিন্তু আপনি জানেন যে আপনি আলাদা হয়ে যান। মানসিকভাবেও আপনি চেষ্টা করেছেন, অনেক সময়ই আপনার মনে হয়েছে যে ওখানে সত্যিই পৌঁছে গেছেন; তবে আপনি জানেন দুটি মন কখনও এক হয় না। আবেগ বশত আপনার মনে হয়েছে আপনি এটি সত্যিই করে ফেলেছেন, কিন্তু বিভাজন খুব সহজেই চলে আসে। 

কোনো একটা কিছুর সাথে এক হয়ে যাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষাটি পূরণ করার উপায় কী? অনেক ভাবে এটিকে দেখা যায়। আপনি হয়ত আপনার জীবনের কোনও একটা সময় এটি লক্ষ্য করেছেন- ধরুন আপনি খুবই আনন্দিত বা প্রেমময় বা পরমানন্দময় এবং আপনার জীবনীশক্তি খুবই উচ্ছ্বসিত বোধ করছে, আপনি একটি বিশেষ প্রসার অনুভব করছেন। এই যে বিস্তার, এর অর্থ কী? প্রথমত, ঠিক কাকে আপনি ‘আমি’’ বলে সম্বোধন করেন ? “এটি আমি এবং এটি আমি নই” – আপনার জানার ভিত্তিটা ঠিক কী? অনুভূতি, তাই না? আপনার অনুভূতির পরিসীমার মধ্যে যা কিছু আছে, তাই আপনি। এই অনুভূতির সীমানার বাইরে যা কিছু তাই “অন্য” এবং অন্যটি সর্বদাই খারাপ। আপনি এই খারাপের অভিজ্ঞতা নিতে চান না, তাই আপনি নিজের অংশ হিসাবে মানবতার অন্তত একটি ছোট্ট অংশ অনুভব করতে চান। আপনার জীবনের অংশ হিসাবে কাউকে বা অপরকে অন্তর্ভুক্ত করার এই ব্যাকুলতাকেই সম্পর্ক বলে। আপনি যদি অপরকে অন্তর্ভুক্ত করেন তবে সেই ‘খারাপ’ আপনার কাছে ‘স্বর্গের মতো সুন্দর’ হয়ে উঠতে পারে। সেই স্বর্গের অভিজ্ঞতা লাভ করতে, আপনার জীবনে স্বর্গের সেই টুকরোটিকে পেতেই সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এত ব্যাকুলতা। 

কোনও সম্পর্কের পেছনে যে আকাঙ্ক্ষাই থাকুক না কেন, তা যদি আপনি দেহ বা মনের মাধ্যমে বা আবেগের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেন, আপনার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যাবে; কখনই সেই একাত্মতা জানতে পারবেন না। আপনি একাত্মতার কোন মুহুর্ত হয়তো অনুভব করবেন, তবে এটি কখনই বাস্তবায়িত হবে না। আপনার চারপাশের সমস্ত জীবনকে যদি আপনি নিজের অংশ হিসেবে অনুভব করেন – যোগ হ’ল এই একাত্মতা অনুভব করার মাধ্যম ; এখানে আপনার অস্তিত্বের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্যরকম হবে। যখন এটা ঘটবে, তখন সম্পর্ক কেবল অন্যের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখার একটি উপায় হয়ে উঠবে, নিজের নয়; কারণ আপনার নিজের আর কিছুই প্রয়োজন নেই। আপনার মধ্যে যখন কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না এবং আপনি যা কিছু করেন তা যদি সচেতন হয়ে ওঠে, সম্পর্ক সত্যিকারের আশীর্বাদে পরিণত হয়, কোনও আকাঙ্ক্ষা বা দ্বন্দ্ব নয়। 

ফিচার টি সদগুরুর সম্পর্ক ও প্রত্যাশা বিষয়ক বক্তিতা থেকে সংকলিত

প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা কি ও কত প্রকার

আপনি একজন কে ভালোবাসেন কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা কি তা আপনি নিজেই জানেন না। অথচ সে মানুষটি হতে পারে আপনার বান্ধবী, সহকর্মী, দুরের কেউ অথবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী।  আপনি এই ফিচারটি পড়ে  আপনি আপনাদের মধ্যে সম্পর্কটির কোন পর্যায়ে রয়েছে সেটা খুব সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন এবং সম্পর্কটির মাঝে কিসের খাটতি রয়েছে তাও নিরুপম করতে পারবেন খুব সহজেই।   একটি সুস্থ সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন প্রকৃত ভালোবাসা ও পরিপূর্ণ প্রেম আসুন সেটাই একটু আলোচনা করি যা আমাদের সারাজীবন কাজে লাগবে –

সাইকোলোজিষ্ট ষ্টার্নবার্গ  এর “ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ”  এর মতে –

মানুষের ভালোবাসাকে একটি ট্রায়াংগেল বা  ত্রিভুজ আকারে ভাগ করেছেন যেখানে ৩ টি উপাদান থাকে যা হলো –

১) আবেগ আসক্তি বা আকর্ষন Passion
২) অন্তরঙ্গতা Intimacy
৩) প্রতিশ্রুতি Commitment

আর “ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ”  অনুযায়ী ভালোবাসা ৮ প্রকারের হয়ে থাকে আসুন দেখি সেগুলো কি কি –

১) None Love – ভুমিকাহীন ভালোবাসা
– যে সম্পর্কে কোন আবেগ নেই, অন্তরঙ্গতা ও প্রতিশ্রুতি নেই সেই সম্পর্কে ভালোবাসার কোন ভূমিকাই নেই তাই হলো Non Love । যেমন – একজন অপর জনকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে ভালবাসার প্রস্তাব দিলো অপরজন তা প্রত্যাখান করে ফিরিয়ে দিলো । যার ফলশ্রুতিতে যে যার মত নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গেলো এটাই হলো ভুমিকাহীন ভালোবাসা বা None Love

২) Liking Love –  পছন্দের ভালবাসাঃ

এ ধরনের ভালোবাসার সম্পর্কে মধ্যে অন্তরঙ্গতা বা Intimacy আছে। এখানে অন্তরঙ্গতা বা Intimacy বলতে বুঝানো হচ্ছে দুজনেই পাশাপাশি সহবস্থান করে কিন্তু আবেগ বা কোন প্রতিশ্রুতি নেই এমন সম্পর্ক গুলো Liking Love হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন – সহপাঠি বা সহকর্মীদের মাঝে অনেক সময় একে অন্যকে পছন্দ করে এক সাথে পড়ছে বা কাজ করছে প্রায়সই ভালো মন্দ অনেক কিছুই শেয়ার করছে কিন্তু তাদের মাঝে কোন প্রকার প্রতিশ্রুতি নেই।  আবার একটি সম্পর্ক গঠনের জন্য যে আবেগটুকু দরকার তাও নেই। শুধু অন্তরঙ্গতা Intimacy টুকুই রয়েছে এটাই Liking Love ।

৩) Infatuated love প্রফুল্লতম ভালোবাসা :
এই ধরনের ভালোবাসায় প্রচন্ড আবেগ Passion আসক্তি বা আকর্ষন কাজ করে অথচ অন্তরঙ্গতা এবং কোন প্রতিশ্রুতি নেই। এই ভালোবাসার ধরনটিকে বুঝাতে একটি কেইস ষ্টাডি উল্লেখ করা যাক –

একজন বিবাহিত নারী যার কিনা ৩ বছরের একটি সন্তান আছে, স্বামী চাকুরীতে ব্যস্ত থাকায় যথাযথ ভাবে স্ত্রীকে সময় দিতে পারেন না, হঠাৎ করেই ঐ মহিলার সাথে একজন ভদ্রলোকের ফোনে পরিচয় ঘটে। পুরুষটি অন্য শহরে থাকায় ফোনেই প্রতিদিন কথাবার্তা হয়। এভাবে কথা বলতে বলতে ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে পৌছে গেলো এখন প্রতিদিন ঐ পুরুষটির সাথে ফোনে কথা না বললে তার ভালো লাগে না বরং অস্থিরতা কাজ করে। একসময় বাড়ির সবাই তা জেনে গেলে তার মোবাইলটি নিয়ে নেয়া হয়। তারপরও সে লুকিয়ে আরেকটি ফোন কিনে তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকে। এমন সম্পর্ক গুলোকেই বলা হয় Infatuated love বা প্রফুল্ল প্রেম যেখানে অন্তরঙ্গতা ও প্রতিশ্রুতি কোনটায় নেই অথচ আবেগ, আসক্তি বা আকর্ষণের পরিমানটা অনেক তীব্র।

৪) Empty Love শূন্য ভালোবাসাঃ
এই ভালোবাসার ধরনটি Infatuated love বা প্রফুল্ল ভালোবাসার ঠিক উল্টো এখানে অন্তরঙ্গতা আছে, প্রতিশ্রুতিও আছে কিন্তু একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা নেই, আসক্তি বা আকর্ষন নেই।। শূন্য ভালোবাসার একটা উদাহারন দেয়া যাক –

আগেকার দিনের মত এযুগেও এখনো কিছু বিয়ে হয় যারা আগে থেকে কেউ কাউকে চিনতো না, জানতো না – কিন্তু বিয়ে হয়েছে। তারমানে একসঙ্গে থাকতে হবে আমৃত্যু পর্যন্ত। এখানে একজন আরেকজন কে ভালো লাগছেনা, বনিবনা হচ্ছে না, মানসিক ও শারিরিক সম্পর্কেও কেউ কারো উপযুক্ত না অথচ এসম্পর্কে এসব ভাবারও কোন সুযোগ নেই। ব্যাপারটা এমন যে, বিয়ে হয়েছে মানেই সঙ্গী যেমনই হোক তার সাথেই বাকী জীবন কাটাতে হবে। এধরনের সম্পর্ক গুলো Empty Love শূন্য ভালোবাসার আওতাধীন।

৫) Romantic love রোমাঞ্চকর (ভাব বিলাসী) ভালোবাসাঃ   

রোমান্টিক ভালোবাসায় দুজনের মাঝে প্রবল আবেগ আসক্তি বা আকর্ষন থাকে আবার অন্তরঙ্গতা বা Intimacy ও থাকে । একে অন্যের সাথে অনেক কিছুই শেয়ার করে । দুজনের মধ্যে একে অপরের প্রতি যৌন আকর্ষণ ও উদ্দীপনাও থাকে কিন্তু যা থাকেনা যেটা হলো প্রতিশ্রুতি বা Commitment । যেহেতু এধরনের সম্পর্ক কিংবা ভালোবাসায় কেউ কারো সাথে প্রতিশ্রুতিবন্ধ নয় তাই এমন সম্পর্কে নতুন করে কারোজীবনে কেউ এলে – যদি তাকে ভীষন ভালোলাগে, তাহলে তারা যে যার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে যায় কেননা এই ধরনের সম্পর্কে কোন প্রতিশ্রুতি বা Commitment একেবারেই থাকেনা।

৬) Companionate love সহচর ভালোবাসাঃ

এ ধরনের ভালোবাসা হলো অনেকটা বন্ধুর মত এখানে একে অন্যের সাথে সবকিছুই শেয়ার করে, একজনের প্রয়োজনে আরেকজনকে সবসময় পাশে পায়। যে কথাটাগুলো স্বামী বা স্ত্রীকে বলা যায়না সেটাও তার সাথেও শেয়ার করে। এ ধরনের সম্পর্কে একেবারেই আবেগ বা আকর্ষন থাকে না আবার অন্তরঙ্গতা বা Sexual Intimacy ও থাকে না । এইধরনের সম্পর্কগুলোই সহচর ভালোবাসা বা Companionate love ।

৭) Fatuous Love নিষ্ঠুর প্রেমঃ
এই ধরনের ভালোবাসায় একজন আরেকজনের সাথে কোন কিছুই শেয়ার করে না, এমন কি কথাও হয় না কিন্তু বড্ড আবেগ ও আকর্ষন বা আসক্তি কাজ করে।  আসক্তির পরিমান এতই বেশী থাকে যা থেকে মনে হতে পারে সারাজীবনের জন্য কেউ একজন বড্ড প্রতিশ্রুতিবন্ধ। প্রচলিত ভাষায় একতরফা ভালোবাসার মত একটা ব্যাপার। এখানে কোনধরনের অন্তরঙ্গতা Intimacy একেবারেই নেই। তাই প্রতিশ্রুতি Commitment এর তো কোন উদাহারনই আসেনা ।

৮) Consummate Love ভালোবাসা বা পরিপূর্ন প্রেমঃ

আমরা সবাই সাধারনত সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালোবাসা বা পরিপূর্ন প্রেমটাই চাই।  বিশ্বখ্যাত সাইকোলোজিষ্ট ষ্টার্নবার্গ এর  ট্রায়াংগুলার থিওরী অফ লাভ এর মতে -একটি পরিপূর্ণ প্রেম ও ভালোবাসায় –

১) আবেগ ও আকর্ষন  ২) অন্তরঙ্গতা  ৩) প্রতিশ্রুতি  এই তিনটি উপাদানই সমান ভাবে থাকবে। এবং একজন আরেকজনের সুখে দুখে, সময়ে অসময়ে, সারা জীবন একে অন্যের পাশে থাকার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং দুজনের মধ্যে বুঝাপড়ার ব্যাপারটাও চমৎকার ভাবে সন্নিবেশিত থাকবে।

সম্মানিত পাঠক আপনি এখন উপরে ৮ প্রকার ভালোবাসা ও সম্পর্কের বিভাজন থেকে আপনার সম্পর্কটি কোন ধাপে আছে সেটা সহজেই নিরুপম করতে পারবেন এবং সম্পর্কটির ভবিষ্যত নিয়ে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।  লেখাটি ভালো লাগলে অন্যকে জানাতে শেয়ার করুন ।  বিবাহবিডি ডট কম।