সম্পর্কে প্রনয় আছে কিন্তু বন্ধুত্ব নেই; কি করবেন?

প্রণয় ও বন্ধুত্ব আলাদা দুটি শব্দ হলেও একটি সম্পর্কে এর দুটির উপস্থিতি এক সাথে থাকা খুব জরুরী। আপনার সঙ্গীকে আপনি ভালোবাসেন, তার সব দিক খেয়াল রাখছেন, একই ছাদের নিচে দুজন বাস করছেন, কিন্তু একে অপরের কাছে মন খুলে সব কথা বলছেন না বা বলতে পারেন না। এটি আপনাদের সম্পর্কের মাঝে জটিলতা আনতে পারে। স্বামী-স্ত্রী বন্ধুত্বের রূপ হয় অন্য রকম। তাই আপনাকে আগে বুঝতে হবে বন্ধুত্ব কার সাথে কি রকম হবে। পরিবারের সাথে বন্ধুত্ব, বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব আর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব এক নয় কেননা সম্পর্ক গুলো আলাদা।

সম্পর্কে প্রনয় ও বন্ধুত্ব বজায় রাখতে যা করা উচিৎঃ

একে অপরের পছন্দ সম্পর্কে জানুন, অনেকটা আইস ব্রেকিং গেম এর মত একে অপরকে ব্যাক্তিগত ভালো লাগা খারাপ লাগা নিয়ে প্রশ্ন করুন।

দুজন ব্যাক্তির ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক; এতে হতাশ হবার কিছু নেই। একে অন্যের পছন্দকে শ্রদ্ধা করুন, নিজের পছন্দকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেন না।

স্বামী স্ত্রী’র নিজেদের ব্যাক্তিগত বিষয় গুলো অন্য কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

নিজেদের ভালো মুহূর্ত গুলোর গল্প আপনার সঙ্গীকে মনে করিয়ে দিন।

আপনার অনেক স্মৃতি হয়ত আপনার সঙ্গী ভুলে যেতে পারেন তাই মনে করিয়ে দিতে আপনি ডায়েরি লিখতে পারেন, হতে পারে সেটি কবিতা কিংবা ছোট গল্প চাইলে আদি নিয়মের মত চিঠি লিখে বা চিরকুট লিখে তাকে উপহার দিতে পারেন।

ভালোমন্দ বোঝাপড়া নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিবেন পরিবারকে বা বন্ধুবান্ধব দিয়ে নিজের স্ত্রী বা স্বামী কে বোঝাতে যাবেন না।

দুজন ব্যাক্তির উচিৎ একে অপরকে জানা এবং প্রতিদিন জানতে চাওয়া। নিজেদের বারংবার জানতে চাওয়ার মাঝে গড়ে উঠবে বন্ধুত্ব আর যেটা থাকা চাই সেটা হল – বন্ধুত্বের শ্রদ্ধাবোধ।

কী করবেন যখন দাম্পত্য জীবনে স্বামী বা স্ত্রী উদাসীন

বাইরে থেকে দেখলে সব ঠিক আছে।  সংসার, সন্তান, পরিবার, ভালোবাসা সবকিছুকেই অন্যরা মনে করছে পরিপাটি। কিন্তু বেডরুমের দরজার ওপাশে স্বামী বা স্ত্রী কেউ একজন হয়ে পড়ছেন উদাসীন। আগের সেই ভালোবাসা নেই, আন্তরিকতা নেই, যৌন সম্পর্ক নেই, পরস্পরের সাথে সেই আবেগীয় বিনিময় নেই, কেবল রোবটের মত চলছে যেন জীবনটা। এমন অবস্থায় কী করবেন আপনি?

১)  প্রথমেই আপনাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে যে জীবন সঙ্গী এমন আচরণ কেন করছেন? একেক দম্পতির ক্ষেত্রে একেকটি কারণ থাকতে পারে, তবে কারণ অবশ্যই থাকে। তবে মূল কারণ হচ্ছে দাম্পত্য একঘেয়ে বা বোঝা মনে হওয়া কিংবা কোন কিছু নিয়ে বিরাট মনোমালিন্যের কারণে এই দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া।

২) মনোমালিন্যই যদি কারণ হয়ে থাকে, তবে আপনি নিজে থেকেই চেষ্টা করুন মিটিয়ে ফেলতে। যা হবার তা হয়ে গিয়েছে, সেটা নিয়ে এভাবে আঁকড়ে ধরে বসে থাকলে হবে না।  হয়তো আপনার স্বামী বা স্ত্রী সেটা আঁকড়ে ধরে বসে আছেন, এখন আপনিও একই কাজ করলে মুশকিল।

৩) দাম্পত্য একঘেয়ে হয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক একটি সমস্যা। একইসাথে কয়েক বছর কেটে যাবার পর প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই সংসার জীবন ভীষণ বোরিং মনে হতে শুরু করে। পরস্পরকে পেয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় জীবনের হাজারো বাস্তবতার চাপ, আর সেগুলোর ভিড়ে হারিয়ে যান আপনাদের আবেগ ও অনুভব। তবে দাম্পত্যে একঘেয়েমি থেকেই কিন্তু জন্ম নেয় পরকীয়া ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। তাই এক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। নিজের সঙ্গীকে ঘিরে রাখুন ভালোবাসায়।

৪) আপনাদের ঝিমিয়ে পড়া সম্পর্কে আবারও রোমান্স ফিরিয়ে আনতে নতুন কিছু করুন।  নিজের লুক বদলে ফেলা থেকে শুরু করতে পারেন।  বিয়ের পর প্রায় সবাই-ই নিজের খেয়াল রাখা ছেড়ে দেন।  মুটিয়ে যান, সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেন, নিজের স্টাইল বা ফ্যাশন সেন্স মেইনটেইন করেন না অনেকেই। এই ব্যাপারটি যে কত বড় ভুল, এটা কেউ বোঝেন না। নিজের প্রিয় মানুষটির চোখে সুন্দর থাকাটাই তো সবচাইতে জরুরী, তাই না? আপনার নতুন লুক সঙ্গীর আগ্রহ ফিরিয়ে আনবেই।  নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।  হয়ে উঠুন ফিট ও স্মার্ট, ফিরে পাবেন নিজের আকর্ষণ।

৫) এমন কিছু কাজ করুন যেগুলো আগে কখনো করতেন না।  দুজনে মিলেই করুন। কিংবা করুন তারুণ্যের সেই ছেলে মানুষী। যৌন জীবনেও থ্রিল ফিরিয়ে আনতে করতে পারেন নানান রকম অ্যাডভেঞ্চার, স্বাদ নিন নতুন নতুন যৌন আচরণের।  এতে দাম্পত্যে ফিরে আসবে নতুনত্ব।  সম্পর্কে নতুন আনন্দ যোগ হলে যৌন জীবনও ফিরে পাবে গতি।

৬) সঙ্গী যৌন শীতলতা দেখালে তাঁকে বুঝুন। এটা বোঝার চেষ্টা করুন যে তিনি কেন শীতলতা দেখাচ্ছেন। কাজের চাপে তিনি কি মারাত্মক ক্লান্ত থাকেন সারাদিন, স্ট্রেস আছে ভীষণ বা কিছু নিয়ে অশান্তি কিংবা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন? কারণগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোর সমাধান করতে চেষ্টা করুন। ভালোবাসা ফিরে আসলে যৌন সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

৭) সঙ্গী মূল্য দিক বা না দিক, তাঁকে প্রতিনিয়ত নানান ভাবে বোঝান যে আপনি তাঁকে কত ভালোবাসেন।  মাঝে মাঝে বলেও ফেলুন।  আপনার ভালোবাসার প্রকাশ যেন তাঁকে ঘিরে থাকে সারাক্ষণ।  দেখবেন, সঙ্গীর উদাসীনতা দূর হয়ে যাবেই। তিনি উদাসীন বলে আপনি কখনো গাল ফুলিয়ে থাকবেন না।

৮) তাঁর পছন্দের কাজগুলো তাঁর জন্য করুন, জীবনে একটা শান্তির আবহাওয়া ধরে রাখতে চেষ্টা করুন, সঙ্গীর কাজ ভাগ করে নিয়ে তাঁকে একটু আরাম দিন। যখন তিনি রিল্যাক্স করার সুযোগ পাবেন, তখন আপনাকে ভালোবাসারও সুযোগ পাবেন। একই সাথে ঘরদোরের সাজসজ্জাও বদলে ফেলুন। মনের ওপরে ভালো প্রভাব ফেলে।

৯) নিজেদের একান্ত নিরিবিলি সময় কোন ভাবেই বিসর্জন দেবেন না। সকাল কিংবা বিকালে নিরিবিলি এক কাপ চা, এক সাথে টিভি বা মুভি দেখা, নিয়ম করে বেড়াতে যাওয়া, এক সঙ্গে পছন্দের কিছু করা ইত্যাদি কাজগুলো যে দাম্পত্যে আনন্দ ধরে রাখতে কত কার্যকর আপনি কল্পনাই করতে পারবেন না। দাম্পত্য শীতল হয়ে গেলে কেবল দুজনে দূরে কোথাও একটা লম্বা সময় বেড়াতে যাওয়া খুবই কাজে দেয়।

১১) সময়ের সাথে দাম্পত্যের ধরণ বদলে যায় আর এটাই স্বাভাবিক।  সঙ্গী একটু দূরে সরে গিয়েছেন বলেই যে তিনি যে আপনাকে ভালোবাসে না কিংবা পরকীয়ায় জড়িয়েছেন, এমন ভাবনা বাদ দিন।  চেষ্টা করুন সম্পর্কটিকে ফিরে পাবার, আরেকবার নতুন করে প্রেমে ফেলের চেষ্টা করুন তাঁকে।  প্রয়োজনে কাউন্সিলরের সাহায্যও নিতে পারেন।  সূত্র: প্রিয় লাইফ