দাম্পত্য সম্পর্কের অশনি সংকেত গুলো জেনে রাখুন

বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ দুজন মানুষের মাঝে খুব সহজেই ফাটলের সৃষ্টি করতে পারে কিছু কিছু বিষয়। এর মাঝে একটি হলো শারীরিক সম্পর্ক। আপাতদৃষ্টিতে এ বিষয়টি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও সেক্স থেরাপিস্টরা জানিয়েছেন, সুস্থ যৌন জীবন বিবাহিত জীবনের জন্য খুবই জরুরি।  তারা এমন কিছু লক্ষণের কথা বলেছেন, যা দম্পতির মাঝে দেখা দিলে বুঝতে হবে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।  এ লক্ষণগুলো গুলোকে বিশেষজ্ঞগন দাম্পত্য সম্পর্কের অশনি সংকেত হিসাবে চিহ্নিত করেন —

দম্পতির মাঝে শারীরিক সম্পর্ক নেই: সেক্স থেরাপিস্ট সারি কুপার জানিয়েছেন, বছরে ১০ বারের কম যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ হন এমন সম্পর্ককে ‘সেক্সলেস রিলেশনশিপ’ বলে ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে গভীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অনেক সময় তারা শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে কোনো কথাই বলেন না। ফলে তাদের মাঝে দূরত্ব বাড়তেই থাকে। একটা সময়ে সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কোনো উপায় থাকে না।

দুজনের মাঝে একজন কোনো আকর্ষণ বোধ করেন না: সঙ্গী তার প্রতি কোনো আকর্ষণ বোধ করছেন না—এমন ভাবনাটা সাধারণত সম্পর্ক তেতো করে তুলতে যথেষ্ট, জানিয়েছেন সেক্স থেরাপিস্ট লরি ওয়াটসন। বিশেষ করে নারীর জন্য এ ব্যাপারটি বেশি প্রযোজ্য।

সম্পর্কে অবিশ্বাসের সূচনা : পরকীয়া বর্তমানে অপরিচিত কোনো বিষয় নয়। অনেক সময়ই পরকীয়া করতে গিয়ে সঙ্গীর হাতে ধরা পড়েন অনেকে। এতে বিশ্বাস ভেঙে যায় এবং সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় ও শ্রম দিতে হয়। অনেক সময়ে যৌন জীবনে অসন্তুষ্টি থেকেই পরকীয়ার পথে পা বাড়ান বিবাহিত মানুষ। এদিক থেকে বোঝাপড়ার অভাব মেটাতে পারলেই কেবল অবিশ্বাস দূর করা সম্ভব হয়।

সম্পর্কের মাঝে কোনো শারীরিক আকর্ষণ নেই: লম্বা সময় একত্রে জীবন কাটানোর জন্যই মানুষ বিয়ে করে। এ ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি আকর্ষণবোধ না করলে সম্পর্ক টেকে না, বলেন সেক্স থেরাপিস্ট মৌসুমি ঘোষ।

অসুস্থতার কারণে দূরত্ব তৈরি হয় : যৌন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কারণে দম্পতির মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। এ ছাড়া মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার কারণেও দূরত্ব তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের সহায়তা ছাড়াও দম্পতিদের পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকা জরুরি। নয়তো এই অসুস্থতার অজুহাতে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে।  সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

দাম্পত্য জীবনের টানপোড়ন

একজন মেয়ের স্বামীর ভালবাসা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে তার পরিবারকে আপন করে নেয়া।  হাতেগুনা দু’একজন ছাড়া মোটামুটি সব মেয়েই এটা বুঝে। তাই বিয়ের পর সাধারণত খুব কম মেয়েই স্বামীর মা-বাবা কে পর ভাবে।  বিয়ে কেন্দ্রিক পারিবারিক সমস্যাগুলো যা চোখে পরে তার মধ্যে একটা মূল সমস্যা হল, স্বামীর পরিবারকে স্ত্রীর আপন করে না নেওয়া।  কিন্তু অনেক সময় ব্যাপারটির উল্টোটাও ঘটে। আমরা ছেলের পরিবারের সদস্যরাই অনেক সময় তাদেরকে পর ভাবতে বাধ্য করি।  উঠতে বসতে, পদে পদে ভুল ধরে, দোষ বের করে তাদের এমনভাবে অপদস্থ করি যে আমাদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধার বোধটুকুও আর অবশিষ্ট থাকে না।

দেরি করে বাসায় ফেরা স্বামীকে কে রাতে সময় দেওয়ার পর সকালে উঠেই সবার জন্য রাস্তা রেডি করতে বা ঘুম থেকে উঠতে আধা ঘণ্টা বিলম্ব হলেই মহারাণী খেতাব দিয়ে খোঁটা দেওয়া, মেয়ের বাড়ির লোকদের নিয়ে কটু কথা বল- এগুলো হরহামেশাই আমরা করি।  আবার স্বামীর কাছে বেয়াদব বউ, অকর্মা বউ ইত্যাদি বলে এমনভাবে তার কান ভারী করে দেই যে বউয়ের প্রতি তার আগ্রহই নষ্ট হয়ে যায়।   এটার ধারাবাহিকতাও খুব খারাপ।  এর ফলে দাম্পত্য জীবনে টানপোড়ন সৃষ্টি হয়। এমনকি বাহিরের নারীদের প্রতি পর্যন্ত তখন আসক্ত হয়।

একজনকে অপদস্থ করতে গিয়ে, ছোট করতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্য হয়ে আমরা নিজেরাই আরেকজন সদস্যের জীবন এভাবে নষ্ট করি।  একজন মানুষ যে জায়গাতেই থাক না কেন, সে সব সময় একজন ভরসার মানুষ খুঁজে পেতে চায়। একজন মেয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের আগে সেই ভরসার জায়গা হয় তার বাবা, আর বিয়ের পর হয় স্বামী।  কিন্তু কোন কারণে যদি সেই ভরসার জায়গাটাও নষ্ট হয়ে যায়, তার মত হতভাগ্য আর কারো হয় না।

আমাদের পুরুষদের জীবন অনেক কঠিন। সব কিছু ম্যানেজ করে চলতে হয়। সন্তান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়, স্বামী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়।  দুটো দায়িত্ব ভিন্ন হলেও গুরুত্ব একই। মাকে কখনো বউয়ের সাথে আর বউকে কখনো মা’র সাথে তুলনা করতে হয় না। এই জিনিসটা অনেকেই করে। যখনই তুলনা করা শুরু হয়, তখন থেকেই অশান্তি শুরু হয়।

মা-বাবার প্রতি আমাদের দায়িত্বটা জন্মগত। এটা অবশ্যই পালন করতে হবে, নতুবা এর জন্য পরকালে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।  স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব হল অর্পিত, যা আমরা নিজেরাই নিজের উপর চাপিয়ে নেই। যে মেয়েকে নিজের ইচ্ছেয় ঘরে আনা হয়, তার দায়িত্বও যদি সঠিকভাবে না পালন করা হয়, তাহলে এর জন্যও আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

বিয়ের পর একজন মেয়ের পরম সাহসই হল তার স্বামী।  স্বামীই হল একজন মেয়ের গর্ব, পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন, তার পরম ভরসার জায়গা।  সেই ভরসাটুকু বজায় রাখাও আমাদের দায়িত্ব।   Source- Dr. Taraki Hasan Mehed

বাংলাদেশে ৪৩% প্রেমের বিয়েই সুখের হয় না গড়ায় বিচ্ছেদ পর্যন্ত

বিবাহবিডি ডট কম, সম্প্রতি “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ নির্নয়” শিরোনামে প্রশ্ন ভিত্তিক একটি জরিপ পরিচালনা করে।  এতে অংশ গ্রহন করেন ৪১২ জন।  যার মধ্যে ছিলেন দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছ্যেদ নেয়া ১০৪ জন ব্যাক্তি।   উক্ত জরিপের তথ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশী বিভাগীয় ও জেলা শহরে বসবাসকারীদের মাঝে যা যথাক্রমে বিভাগীয় শহরে ৪৯.০৩ % ও জেলা শহরে ৩৫.৫% ।

এবং উচ্চ শিক্ষিত নাগরিকদের মাঝেই বিচ্ছেদের প্রবনতা উল্লেখযোগ্য হারে বেশী – যা উচ্চতর ডিগ্রী ৪৯.৪২%, স্নাতক / সম্মান / সমসমান ৩৬.৫৮% , উচ্চ মাধ্যমিক বা সম সমান ৯.২% ।  জরিপে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে ৫৮.৬৫% চাকুরীজীবি ও ২০.১৯% ব্যবসায়ী তাছাড়াও  ৪.৮১% প্রবাসে কর্মরত রয়েছেন।  যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা মধ্যবিত্ত ৭২.১২ %,  নিম্ন মধ্যবিত্ত ১৭.৩% , উচ্চ বিত্ত ৪.৮% ও নিম্ন বিত্ত ৭.৭৬% ।

জরিপে অংশগ্রহনকারী (৪১.৪% যৌথ পরিবার, ৫৯% একক পরিবার থেকে আসা ) ডিভোর্স ব্যাক্তিদের প্রশ্ন করা হয় কিভাবে তাদের সংগীর সাথে পরিচয়ের সুত্রপাত (বিয়ের সম্মন্ধ) হয়েছিলো।  এর মধ্যে,  ৩০.৭৬% এর পরিচয় হয় নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে, ২৫ % এর পরিচয় হয় ট্রেডিশনাল ঘটকের সাহায্যে, ও ৪৩.৩% প্রেম ঘটিত পরিচয় ও অনলাইন ম্যাট্রিমনি বা স্যোশাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় মাত্র ১.৯২% ।

অংশগ্রহন কারী ৪৬% মনে করেন সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থ্যক্য ৫ বছরের কম হওয়া ভাল আর ৩১% মনে করেন সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থ্যক্য ১০ বছরের বেশী হওয়া উচিত নয়।  তবে বেশীর ভাগ অংশগ্রহন কারীই মনে করেন, অতিরিক্ত বয়সের পার্থ্যক্য বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারন নয়।

জরীপে অংশগ্রহনকারীদের প্রশ্ন করা হয় – কোন বিষয় গুলো আপনার সাথে ঘটলে আপনি একেবারেই সহ্য করবেন না, প্রয়োজনে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন এর প্রতি উত্তরে উঠে আসে প্রধান ৮ টি বিষয়

১) পরকীয়া ২) ক্রমাগত ভুল বুঝাবুঝি ও দুরত্ব বৃদ্ধি ৩) সংসারে কাজ কর্মে তীব্র অনিহা, সঙ্গীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা ৪) আসক্তি (মাদক / নারী / পরপুরুষ / জুয়া) ৫) মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ৬) সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ প্রবনতা ৭) স্বামী বা স্ত্রীর পরিবার হতে দুর্ব্যবহার বা অবমূল্যায়ন ৮) সঙ্গীর একঘেয়ে স্বভাব বা একক কর্তৃত্ব পরায়নতা।   তাছাড়াও সন্তান ধারনে অক্ষমতা বা সন্তান ধারনে সঙ্গীর দ্বিমত পোষণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম / ভারতীয় টিভি সিরিয়াল বা বিদেশী সংস্কৃতির অতিরিক্ত প্রভাব বা আসক্তির মত বিয়য়গুলোও জরিপে উঠে আসে।

জরীপে অংশগ্রহনকারীদের কাছে সর্বশেষ জানতে চাওয়া হয় কোন ৫টি বিষয় বিচ্ছেদ এড়াতে পারে বলে আপনি মনে করেন? এর মধ্যে ৫ টি বিষয় ক্রমান্বয়ে যে বিষয় গুলো ঊঠে আসে –

১) একে অপরকে সম্মান করা ২) সঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত থাকা ৩) আপস করার মানসিকতা ৪) সঙ্গীর সাথে মিথ্যাচার না করা ৫) সঙ্গীকে কখনো অবজ্ঞা বা অবহেলা না করা।


বিবাহবিডি ডট কম এর জরিপ তথ্যঃ

বিবরন সকল অংশগ্রহনকারী  (৪১২ জন) ডিভোর্স গ্রহনকারী (১০৪ জন)
অংশগ্রহন কারী পুরুষ – ৭৬.৫%
নারী-  ২৩.৫%
পুরুষ – ৭৮.৪৫%
নারী-  ২১.৫৫%
অংশগ্রহনকারীদের বয়স ১৮-২৪ বছর = ৬.২%
২৫-৩৫ বছর = ৬৪.৯%
৩৬-৫৫ / এর অধিক =  ২৮.৯%
১৮-২৪ বছর = ৩৮.৪৬%
২৫-৩৫ বছর = ৫২.৮৮%
৩৬-৫৫ / এর অধিক =  ৮.৬৫%
অংশগ্রহনকারীদের অবস্থান ৬১.৫ % বিভাগীয় শহরে
২৩.২% জেলা শহরে
১১.৮% উপজেলা শহরে
৩.৫% ইউনিয়ন / গ্রামে
৪৯.০৩ % বিভাগীয় শহরে
৩৫.৫% জেলা শহরে
১৩.৪৬% উপজেলা শহরে
১.৯২% ইউনিয়ন / গ্রামে
অংশগ্রহনকারীদের
শিক্ষাগত যোগ্যতা
৪৪.৩% উচ্চতর ডিগ্রী
৪১.৯% স্নাতক / সম্মান / সমসমান
৯.৯% উচ্চ মাধ্যমিক সম সমান
৩.৯% উচ্চ মাধ্যমিক এর নীচে
৪৯.৪২% উচ্চতর ডিগ্রী
৩৬.৫৮% স্নাতক / সম্মান / সমসমান
৯.২% উচ্চ মাধ্যমিক সম সমান
৪.৮% উচ্চ মাধ্যমিক এর নীচে
অংশগ্রহনকারীদের
বৈবাহিক অবস্থা
৫০.৪ % বিবাহিত
২২% অবিবাহিত
২৫.৭% ডিভোর্স
১.৯% বিধবা / বিপত্নীক
১০০% ডিভোর্স
অংশগ্রহনকারীদের
পেশা
৫৯.২% চাকুরীজীবি
১৬.৬% ব্যবসায়ী
১৩.১% বেকার ( নারী)
৮.৬% অধ্যয়নরত
২.৬% প্রবাসে কর্মরত
৫৮.৬৫% চাকুরীজীবি
২০.১৯% ব্যবসায়ী
১৫.৩৮% বেকার
০.৯৬% অধ্যয়নরত
৪.৮১% প্রবাসে কর্মরত
অংশগ্রহনকারীদের
পরিবারের ধরন
৬৫.৪% একক পরিবার
৩৪.৬% যৌথ পরিবার
৪১.৪% যৌথ পরিবার
৫৯% একক পরিবার
অংশগ্রহনকারীদের
আর্থিক অবস্থা
৭৩.৭ % মধ্য বিত্ত
২০.৬% নিম্ন মধ্যবিত্ত
৪.৬% উচ্চ বিত্ত
১.১% নিম্ন বিত্ত
৭২.১২ % মধ্য বিত্ত
১৭.৩% নিম্ন মধ্যবিত্ত
৪.৮% উচ্চ বিত্ত
৭.৭৬% নিম্ন বিত্ত
আপনি কি মনে করেন আর্থিক অসচ্ছলতা  বিবাহবিচ্ছেদের একটি কারন ৬০.৮% এ প্রশ্নে একমত নয়
৩৯.২% মনে করেন আর্থিক অসচ্ছলতা বিবাহবিচ্ছেদের একটি কারন হতে পারে
৫৮.৮% এ প্রশ্নে একমত নয়
৪১.২% মনে করেন আর্থিক অসচ্ছলতা বিবাহবিচ্ছেদের একটি কারন হতে পারে
জীবন সংগীর সাথে পরিচয়ের সুত্রপাত নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে ২৭.১%
ঘটকের সাহায্যে ১৩.৭ %
প্রেম ঘটিত ৩৭.৪%
অনলাইনে পরিচয়ঃ ৩.৪%
অবিবাহিত / প্রযোজ্য নয় ১৮.৪%
নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে ৩০.৭৬%
ঘটকের সাহায্যে ২৫ %
প্রেম ঘটিত ৪৩.৩%
অনলাইনে পরিচয়ঃ ১.৯২%
জরীপে অংশগ্রহনকারীদের প্রশ্ন করা হয় – কোন বিষয় গুলো আপনার সাথে ঘটলে আপনি একেবারেই সহ্য করবেন না , প্রয়োজনে বিচ্ছেদ চাইতে পারেন। এর উত্তরে যে ৮ টি বিষয়  উঠে আসে (ক্রমানুসারে)
১) পরকীয়া
২) ক্রমাগত ভুল বুঝাবুঝি ও দুরত্ব বৃদ্ধি
৩) সংসারে কাজ কর্মে তীব্র অনিহা, সঙ্গীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা
৪) আসক্তি (মাদক / নারী / পরপুরুষ / জুয়া)
৫) মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন
৬) সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ
৭) স্বামী বা স্ত্রীর পরিবার হতে দূর্ব্যবহার / অবমূল্যায়ন
৮)সঙ্গীর একঘেয়ে স্বভাব বা একক কর্তৃত্ব পরায়নতা
এর উত্তরে যে ৮ টি বিষয় উঠে আসে (ক্রমানুসারে)
১) পরকীয়া
২) ক্রমাগত ভুল বুঝাবুঝি ও দুরত্ব বৃদ্ধি
৩) সংসারে কাজ কর্মে তীব্র অনিহা, সঙ্গীকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা
৪) আসক্তি (মাদক / নারী / পরপুরুষ / জুয়া)
৫) মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন
৬) সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত সন্দেহ
৭) স্বামী বা স্ত্রীর পরিবার হতে দূর্ব্যবহার / অবমূল্যায়ন
৮)সঙ্গীর একঘেয়ে স্বভাব বা একক কর্তৃত্ব পরায়নতা
সঙ্গীর সাথে অতিরিক্ত বয়সের পার্থক্য বিচ্ছেদের কোন কারন হতে পারে ১৫.৩%  হ্যাঁ, মনে করি
৫৬.৯% না মনে করিনা
২৭.৮% অতিরিক্ত বয়সের পার্থক্য বিচ্ছ্যেদের কারন হতেও পারে
২৪.৩%  হ্যাঁ, মনে করি
৫৩.৯% না মনে করিনা
১৭.৮% অতিরিক্ত বয়সের পার্থক্য বিচ্ছ্যেদের কারন হতেও পারে
আপনার মতে সঙ্গীর সাথে বয়সের পার্থক্য কেমন হওয়া ভালো ২ বছরের বেশী নয় – ৭.৬%
৫ বছরের কম – ৫২.১%
১০ বছরের বেশী নয় – ৩৫.৫%
সমবয়সী হলে ভাল মনে করি – ৪.৬%
২ বছরের বেশী নয় – ৮.৬৫%
৫ বছরের কম – ৪৬%
১০ বছরের বেশী নয় – ৩১%
সমবয়সী হলে ভাল মনে করি-  ১৪%
আপনি কি মনে করেন – সন্তান ধারনে সঙ্গীর দ্বিমত পোষণ কি দাম্পত্য কলহের একটি কারন, যা বিচ্ছেদ পর্যন্ত পৌছাতে পারে? হ্যাঁ, মনে করি ৫১.৭%
না, মনে করি না ৪৮.৩%
হ্যাঁ, মনে করি ৫৮.২%
না, মনে করি না ৪১.৮%
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল বা বিদেশী সংস্কৃতির অতিরিক্ত প্রভাব বা আসক্তি কি দাম্পত্য অশান্তি – ক্ষেত্র বিশেষে বিচ্ছেদের কারন হতে পারে? হ্যাঁ, হতে পারে ৭৪.২%
না, মনে করি না ২৫.৮%
হ্যাঁ, হতে পারে ৬২.৯%
না, মনে করি না ৩৭.১%
কোন ৫টি বিষয় বিচ্ছেদ এড়াতে পারে বলে আপনি আপনি মনে করেন? উত্তর গুলো ক্রমানুসারেঃ
একে অপরকে সম্মান করা
সঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত থাকা
আপস করার মানসিকতা
সঙ্গীর সাথে মিথ্যাচার না করা
সঙ্গীকে কখনো অবজ্ঞা না করা
উত্তর গুলো ক্রমানুসারেঃ
একে অপরকে সম্মান করা
সঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত থাকা
আপস করার মানসিকতা
সঙ্গীর সাথে মিথ্যাচার না করা
সঙ্গীকে কখনো অবজ্ঞা না করা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ গুলো কি? – জরিপ

বিবাহিত জীবনে অনাকাংখিত বিচ্ছেদ হতেই পারে, অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ ডেকে আনে ভয়াবহ মানসিক বিপর্যয় আবার অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছেদেই মিলে মুক্তি। বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমান অনেকাংশেই বেড়েছে যা সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষনায় উঠে এসেছে।

বিবাহবিডি ডট কম এ ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ডিভোর্স পাত্র/পাত্রী রেজিষ্ট্রেশন করেছেন আমরা শুধু মাত্র ডিভোর্স পাত্র/পাত্রীদের কাছে চলমান এই জরিপের মাধ্যমে জানতে চাইবো সম্ভ্যাব্য কি কি কারনে তারা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্মানিত পাঠক, এই ইউজার জরিপের মাধ্যমে আপনারাও আপনাদের সুচিন্তিত ব্যাক্তিগত মতামত দিতে পারেন যা সামগ্রিক ভাবে একটি সামাজিক সমস্যার সমাধানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।


জরিপে অংশ গ্রহন করতে ক্লিক করুন


সাম্প্রতিক কিছু গবেষনায় জানা গেছে অধিকাংশ ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে মেয়েদের পক্ষ থেকে, যা শতকরা ৬৬ ভাগ। ডিভোর্সের ঘটনা বেশি ঘটছে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে।  ঢাকা সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী ২০১৪ সালে রাজধানীতে ডিভোর্সের ঘটনা ঘটেছে ৮২১৪ দম্পতির। এর আগে ২০১২ সালে ৭৬৭২ দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে।  ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসেই ৬১০ দম্পতির বিচ্ছেদ হয়েছে। তার মধ্যে ৪২৬ ডিভোর্সই হয়েছে স্ত্রী কর্তৃক।  ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তরের গুলশান, বনানী, মহাখালী, বাড্ডা, মগবাজার, রামপুরা নিয়ে অঞ্চল-৩ এই এলাকায় ২০১৫ সালে ৫৯৮ দম্পতির মধ্যে ডিভোর্স হয়েছে।  এর মধ্যে স্বামী ডিভোর্স দেয় ২৩৫ এবং স্ত্রী দেয় ৩৬৩টি। রাজধানী সূত্রাপুর, বংশাল, নবাবপুর, কাপ্তান বাজার, নাজিরাবাজার ও লালবাগের অর্ধেক নিয়ে গঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের অঞ্চল-৪ এই এলাকায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে আক্টোবর পযর্ন্ত ২৫৮ দম্পতির মধ্যে ডিভোর্স হয়েছে। এর মধ্যে স্ত্রীর পক্ষ থেকে ১৭৩ এবং ৮৫টি ডিভোর্স হয়েছে স্বামীর পক্ষ থেকে।  তার আগের বছর একই এলাকায় ২৯১ দম্পতির মধ্যে ডিভোর্স হয়েছে।  এর মধ্যে ১৮৪টি ডিভোর্স হয়েছে স্ত্রীর পক্ষ থেকে।  (সুত্রঃ দেশীয় পত্রিকার খবর)

আমরা এই জরিপের মাধ্যমে আপনার সুচিন্তিত ব্যাক্তিগত মতামত চাইছি যা সামগ্রিক ভাবে একটি সামাজিক সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখতে পারে।  এই জরিপে আপনার সম্পূর্ন গোপনীয়তা বজায় থাকবে।  আমরা আপনার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

নিবেদক
ইফফাত আরা ইসলাম ও শারমিন সুলতানা
এক্সিকিউটিভ – বিবাহবিডি ডট কম
ফোনঃ +88 09612211555

হারানো সুর ফিরে পাওয়া

বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্কের একটি স্বীকৃত কাঠামো যা বংশধারা ও অধিকার বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালক করে। বিয়ে যেহেতু একটি সম্পর্কের বন্ধন, সব সম্পর্কের মতো বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি এর মূল ভিত্তি। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও নির্ভরশীলতা এই বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।ভালোবাসাই এই বন্ধনের চালিকাশক্তি। এই বন্ধনের সফলতা নির্ভর করে ফলপ্রসূ যোগাযোগের উপর। এই যোগাযোগ প্রতিনিয়ত ঘটছে এবং সকল সম্পর্কের মতো বিয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত অবধারিত সত্য।

সম্পর্কের প্রথম দিকে ভালোবাসার আবেগ মনের জানালায় একটি রঙিন পর্দা টাঙিয়ে দেয়। ভালোলাগা এবং ভালোবাসাটাই প্রধান হয়ে দেখা দেয়। বাকি সবকিছু তুচ্ছ মনে হয়।

দাম্পত্য জীবনে একসঙ্গে অবস্থানের ফলে আবেগের সেই রঙিন পর্দায় সময়-অসময়ে বাস্তবতার দোলা লাগে। সাংসারিক টানপড়েনে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলাতে গিয়ে কল্পনার মানুষটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। কল্পনার মানুষটার সাথে সত্যিকার রূপের অমিল প্রকাশিত হয়। যে মানুষটা ভালোবাসার হাত ধরে সুখের নীড় রচনা শুরু করেছিল, সে যেন হয়ে ওঠে সবচেয়ে অচেনা।

প্রাত্যহিক জীবনে একসাথে চলার পথে কখনও কখনও ছন্দপতন খুবই স্বাভাবিক। দুটি ভিন্ন পরিবার ও পরিবেশে বড় হওয়া দুজন মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য, দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য, চাওয়া-পাওয়ার পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। এই পার্থক্য উপলব্ধি করে দুজনের মিলের জায়গাটি লালন করা এবং অমিল কমিয়ে আনার ইচ্ছা ও চেষ্টাই বৈবাহিক উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলে।

বিয়ের সৌন্দর‌্য নির্ভর করে মুক্ত আলোচনা, পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ ও উভয়ের মধ্যে সুস্থ সীমারেখা, সব বিষয়ে নিজেকে জড়িয়ে না ফেলা, উভয়ের চাহিদার প্রতি সমান গুরুত্ব দেয়ার উপর। এ ক্ষেত্রে দাম্পত্য কাউন্সেলিং প্রিয় মানুষটার অজানা দিকগুলো বুঝে নিয়ে নতুন করে বিয়ের বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে শেখায়। তালাকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।সেখানে এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।

  • শুধু সঠিকভাবে যোগাযোগ কৌশল শিখলেই বৈবাহিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত মোকাবেলা করা সম্ভব না। বরং সুখী বৈবাহিক জীবনের জন্য কার কী প্রয়োজন সেদিকে লক্ষ্য রাখাই দাম্পত্য কাউন্সেলিং সেবার প্রাথমিক ধাপ।
  • বেশিরভাগ দম্পতির সব কথার শেষ কথা, আমি তাকে খুব ভালোবাসি। হারানো সুরটা ফিরে পেতে দুজন দুজনের অবস্থান থেকে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
  • কী কারণে বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে এতদিন কোন শক্তিগুলো দুজনকে একসাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছে তা খুঁজে বের করা। পার্থক্য না মিলকে পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সদিচ্ছা দুজনের মধ্যে তৈরী করার ক্ষেত্রে দাম্পত্য কাউন্সেলিং সাহায্য করে।

দুটি ভিন্ন ব্যক্তির অভ্যাস ও চাহিদা ভিন্ন। উভয়ের চাওয়া-পাওয়ার সুক্ষ্ণ হিসাব-নিকাশ সম্পর্ককে খারাপ দিকেই নিয়ে যায়। এই ভিন্ন ব্যক্তিকে আপন করে নেওয়ার জন্য দুজনের আনন্দ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিলে তা সংসার জীবনে শান্তি আনতে সাহায্য করে।

এর জন্য করণীয় যা কিছু তার দায়িত্ব নিজে বহন করার মানসিকতা তৈরী ও সীমারেখা অনুধাবন করে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠাতে হবে। পারস্পরিক সম্মানবোধ ও সহনশীলতা দাম্পত্যজীবনে সুখ আনতে সাহায্য করে। একইভাবে তা হারানো সম্পর্ক ফিরে পেতেও সাহায্য করে। অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো সম্পর্ক রক্ষায়ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার দরকার হয়। নিজের জায়গা থেকে প্রত্যেকে উদ্যোগ নিলে দাম্পত্য সুখ নতুন করে উপলব্ধি করা সম্ভব।

লিখেছেনঃ

ড. শাহীন ইসলাম
মনোবিজ্ঞানী,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন

সন্তানের উপর বিচ্ছেদের প্রভাব

বিবাহবিচ্ছেদ একজোড়া নারী-পুরুষ আর সেই সাথে তাদের সন্তানদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। যে কারণেই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হোক না কেন, শিশু সন্তানটির উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।অত্যন্ত সচেতনতা, পারদর্শিতা আর অগাধ ভালোবাসা ও মানসিক সহায়তার মাধ্যমেই শিশুর মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব, হতাশা, অনিশ্চয়তা দূর করে তার সুস্থ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হয়। তা না হলে এর বিরূপ প্রভাব থেকে সারা জীবনেও হয়ত সে বের হতে পারবে না, তার ব্যক্তিত্বের মধ্যে সমস্যা থেকে যাবে এবং পরবর্তী জীবনে অন্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপনেও তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরী করবে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিবাহবিচ্ছেদের মতো বিষয় সাধারণত খুব সহজে সম্পাদিত হয় না, এর কিছু পূর্বগামী ঘটনা থাকে যেগুলো মোটেও সুখকর না। এই অপ্রীতিকর ঘটনাগুলোর সাক্ষী কিন্তু ছোট্ট শিশুটি। দীর্ঘদিন ধরে চলা দাম্পত্য কলহ, মানোমালিন্য, শারীরিক নির্যাতন, কান্নাকাটির মতো অপ্রীতিকর কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শিশুটিকে যেতে হয়।বাড়ির ছোট শিশু এসব দেখে বাড়ির আবহ বুঝতে পারে। সরাসরি মা-বাবার কলহ না দেখেও মা-বাবার চেহারা, প্রকাশভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি দেখে তাদের রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, কষ্ট বুঝতে পারে। আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে যে, বাচ্চারা কিছু বোঝে না। প্রকৃতপক্ষে শিশুরা সবই বোঝে আর তারা তাদের নিজেদের মতো করে বিষয়টি বুঝে নেয়। অনেক স্বামী স্ত্রী সন্তানদের সামনেই পরস্পরের প্রতি কটূক্তি, গালাগালি, হাতাহাতি করে থাকে কিংবা শিশুটিকে ঘটনার সাক্ষী রাখে। এর সবই শিশুসন্তানটির উপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বড়রা অনেক সময়ই নিজেদের স্বার্থে শিশুদের ব্যবহার করে যা অত্যন্ত অনুচিত।

একজন শিশুর পরিস্থিতি বোঝার দক্ষতা বড়দের মতো নয়। সে সব বোঝে, তবে নিজের মতো করে। তাই পরিস্থিতির সাথে নিজের মতো করে খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করে। অনেক সময় ছোট ঘটনা তার মধ্যে বড় অনিশ্চয়তা তৈরী করে। সামান্য উদ্বেগ তার মধ্যে বিশাল ভীতির সঞ্চার করে। এর সবকিছু নিয়ে শিশুটি খুব নাজুক পরিস্থিতিতে থাকে। মা কিংবা বাবার মৌখিক আশ্বাসও তাকে নিরুদ্বেগ রাখতে পারে না। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে যেসব সমস্যা থাকে তা হলঃ

  • নিজেকে গুটিয়ে নেয়া
  • পারিবারের বাইরের লোকের সামনে লজ্জা পাওয়া, মিথ্যা বলা
  • মা বা বাবাকে (বা যার সাথে শিশুটি এখন থাকে )হারিয়ে ফেলার ভয়, অনিশ্চয়তার অনুভূতি
  • বিষন্ণতা
  • নিজের চাহিদার কথা না বলা
  • আগের তুলনায় চুপচাপ হয়ে যাওয়া
  • অস্থিরতা প্রকাশ করা বা অল্পতেই রেগে যাওয়া
  • পড়াশোনায় মনোযোগ হারানো
  • বাবা-মা অথবা নিজেকে দোষারোপ করা
  • নেশা করা বা অপরধমূলক কাজে জড়িয়ে যাওয়া
  • আচরনগত বৈকল্যের শিকার হওয়া

বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে এমন পরিবারের বিভিন্ন বয়সী শিশুদের উপর পরিচালিত গবেষণা থেকে দেখা যায়, ৭-৮ বছরের শিশুদের মাঝে দুঃখবোধ, মনমরা ভাব, হারানোর অনুভূতি- সেই সাথে ভয় আর অনিশ্চয়তা বিরাজ করে। একই সাথে তারা নিজেদের পরিত্যক্ত ও অবাঞ্ছিত ভাবে।৯-১০ বছর বয়সী শিশুরা রাগান্বিত বোধ করে। কারণ তারা নিজেদের অবহেলিত, বঞ্চিত এবং একাকী মনে করে। অপরদিকে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা রাগ, লজ্জা, মনখারাপ ইত্যাদি বোধ করে।

৫ বছরব্যাপী আরেকটি গবেষণাঃ জরিপে অংশগ্রহণ করেছে এমন শিশুদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জানিয়েছে তারা এখন সুখী।২৯ শতাংশ মোটামুটি মানিয়ে চলছে। ৩৭ শতাংশ জানিয়েছে, তারা এখনও বিষন্ণতায় ভুগছে। এ ধরণের বহু গবেষণায় শিশুদের বিবাহবিচ্ছেদের নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে।

এ ক্ষেত্রে তার সাথে বেশি সময় কাটান। তার হতাশা, দুঃখ ও ভয় বোঝার চেষ্টা করুন। বাস্তবসম্মতভাবে মোকাবেলার উপায় শেখান। শিশু মা-বাবার (যিনি শিশুর সাথে থাকেন না ) অভাব অনুভব করছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন।কারণ শিশু হয়ত আপনাকে হারানোর ভয়ে অথবা আপনি কষ্ট পাবেন এ চিন্তা থেকে তার সত্যিকারের অনুভূতি আড়াল করে রেখেছে। তাকে আশ্বস্ত করুন, যা কিছু হয়েছে তার জন্য সে দায়ী নয়। কারণ ছোট শিশুরা অনেক সময় ভেবে থাকে যে, তার কারণেই এমনটি ঘটেছে। কখনোই শিশুর সামনে তার মা-বাবা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। এতে শিশুরা অত্যন্ত অসহায় বোধ করে এবং দিশেহারা হয়ে পড়ে। সম্ভব হলে তাকে এই বলে আশ্বস্ত করুন, যা কিছু হয়েছে তা আমাদের মধ্যে, তুমি আমাদের সন্তান, আমরা তোমাকে ভালোবাসি। একসাথে না থাকলেও। অনেক সময় যে পরিবারে শিশুটি রয়েছে সেখানে মা-বাবার প্রসঙ্গ কঠোরভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। এতে শিশুর মধ্যে মা-বাবা সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা থাকলেও সে ভয়ে কোন কিছু বলতে পারে না। তাই তার মনে কোনো প্রশ্ন এলে তা যেন অবলীলায় জিজ্ঞেস করতে পারে-এরকম পরিবেশ বজায় রাখুন।

শিশুটির বাবা (অথবা মা )নেই।তাই তাকে বেশি বেশি খেলনা দেওয়া বা এধরণের আচর থেকে বিরত থাকুন। বস্তুর চেয়ে বড় তার আবেগ-অনুভূতির সঙ্গী হওয়া, তাকে আশ্বস্ত করা এবং এই কষ্টকর অনুভূতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করা।

বাবা-মা যে-ই থাকুক না কেন, শিশুর মানসিক সহয়তার জন্য তার পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান বা কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞানের সহায়তা নিতে হবে।

মানসিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এ ধরণের শিশুদের প্রতি আমাদের সচেতনতা, ভালোবাসা ও সহায়তা তাদের হতাশা, অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ, একাকীত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হবার সাহস ও মনোবল জোগাবে।

লিখেছেনঃ

মেহজাবীন হক
প্রফেসর, 
এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সন্তানের অভিভাবকত্ব

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন কারণে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে সন্তানেরা কার কাছে থাকবে বা কে হবে তাদের অভিভাবক- এই প্রশ্ন দেখা দেয়। মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তানের অভিভাবকত্ব (বিলায়াত ) এবং সন্তানের জিম্মাদারি (হিজানাত ) দুটি বিষয়কে আলাদা আইনগত প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।অর্থাৎ মুসলিম আইনে অভিভাবকত্ব এবং জিম্মাদারি দুটি আলাদা বিষয়। আবার হিন্দু পারিবারিক আইনে বিষয়টি ভিন্ন।

মুসলিম আইনে সন্তানের অভিভাবকত্ব ও জিম্মাদারি

বাংলাদেশের প্রায় সব পারিবারিক আইনেই সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক (লিগাল গার্ডিয়ান )থাকেন পিতা। মুসলিম পারিবারিক আইনে সন্তানের জিম্মাদারির (কাস্টডি )অধিকার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের হাতে থাকে।শিশুসন্তানের দেখাশোনার বিষয়ে (জিম্মাদারির ক্ষেত্রে )সবচেয়ে বড় অধিকারী হলেন মা। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্তানের জিম্মাদার হয়ে থাকেন; কিন্তু কখনও অভিভাবক হতে পারেন না। এই সময়কাল হল ছেলেসন্তানের ক্ষেত্রে ৭ বছর আর মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল পয্যন্ত। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে বা স্বামী মারা গেলে ছেলেসন্তান ৭ বছর পয্যন্ত এবং মেয়েসন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পয্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে, এটাই আইন । এক্ষেত্রে মায়ের অধিকার সর্বাগ্রে স্বীকৃত।

সাধারণত সুন্নি হানাফি আইনের অধীনে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর সন্তানের হেফাজতের কোনো অধিকার মায়ের থাকে না। তবে পরে আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, শুধু নাবালক থাকাকালেই নয়, সন্তানের কল্যাণার্থে নির্দিষ্ট বয়সের পরও মায়ের জিম্মাদারিত্বে সন্তান থাকতে পারে। যদি আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান মায়ের হেফাজতে থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, তার কল্যাণ হবে এবং স্বার্থরক্ষা হবে-সেক্ষেত্রে আদালত মাকে ওই বয়সের পরও সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন।আবু বকর সিদ্দিকী বনাম এসএমএ বকর ৩৮ ডিএলআরের মামালায় এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, মনে রাখতে হবে, মুসলিম আইনে মা সন্তানের আইনগত অভিভাবক নন; কেবল জিম্মাদার বা হেফাজতকারী।

মায়ের অবর্তমানে শিশুর জিম্মাদারি নিকটাত্মীয়দের কাছে চলে যাবে। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ক্রমধারা অবলম্বন করা হবে। মায়ের অবর্তমানে নাবালক শিশুর হেফাজতকারী পর্যায়ক্রমে হবেন মায়ের মা (নানি, নানির মা যত উপরের দিকে হোক ), পিতার মা (দাদি, দাদির মা যত উপরের দিকে হোক ), পূর্ণ বোন (পিতা মাতা একই ), বৈপিত্রেয় বোন (মা একই কিন্তু বাবা ভিন্ন), আপন বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক ), বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে (যত নিচের দিকে হোক ), পূর্ণ খালা (যত উপরের দিকে হোক ), বৈপিত্রেয় খালা (যত উপরের দিকে হোক ), পূর্ণ ফুপু (যত উপরের দিকে হোক ) । উল্লেখিত আত্মীয়রা কেবল ক্রমানুসারে একজনের অবর্তমানে বা অযোগ্যতার কারণে অন্যজন জিম্মাদারিত্বের অধিকারী হবেন।

কিছু কারণে মা সন্তানের জিম্মাদারিত্ব হারাতে পারেনঃ ১. নীতিহীন জীবনযাপন করলে ২. সন্তানের প্রতি অবহেলা করলে ৩. দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে ৪. বিয়ে থাকা অবস্থায় বাসার বসবাসস্থল থেকে দূরে অবস্থান করলে ৫. ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করলে ৬.যদি সন্তানের পিতাকে তার জিম্মায় থাকা অবস্থায় দেখতে না দেয়।

স্মর্তব্য, আদালতের আদেশ ছাড়া সন্তানের জিম্মাদারের অধিকার থেকে মাকে বঞ্চিত করা যায় না।

মা বা অন্য নারী আত্মীয়দের অবর্তমানে শিশুর জিম্মাদার হতে পারেন যারা, তারা হলেনঃ বাবা, বাবার বাবা (যত উপরের দিকে হোক ), আপন ভাই, রক্তের সম্পর্কে ভাই, আপন ভাইয়ের ছেলে, রক্তের সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে, বাবার আপন  ভাইয়ের ছেলে, বাবার রক্তের সম্পর্কের ভাইয়ের ছেলে। মনে রাখতে হবে, েএকজন পুরুষ আত্মীয় নাবালিকার জিম্মাদার কেবল তখনই হতে পারবেন যখন তিনি ওই নাবালিকার নিষিদ্ধস্তরের আত্মীয় হন।

সন্তানের সম্পত্তির দায়িত্ব

আমরা আগেই জেনেছি, সন্তানের অভিভাবক হচ্ছেন পিতা। তবে মুসলিম আইনে কোনো নাবালক শিশুর সম্পত্তির তিন ধরণের অভিভাবক হতে পারে। আইনগত অভিভাবক, আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক এবং কার্যত অভিভাবক। আইনগত অভিভাবকেরা হলেন, বাবা, বাবার ইচ্ছাপত্রে (উইল )উল্লেখিত ব্যক্তি, বাবার বাবা (দাদা ), বাবার বাবার ইচ্ছাপত্রে (উইল ) উল্লেখিত ব্যক্তি।

উল্লেখিত আইনগত অভিভাবকেরা কিছু জরুরী কারণে নাবালকের সম্পত্তি বিক্রি অথবা বন্ধক দিতে পারেন। ওই সন্তানের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য তার অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি অথবা বন্ধক দিতে পারেন। কিংবা নাবালকের ভরণপোষণ, উইলের দাবি, ঋণ, ভূমিকর পরিশোধ ইত্যাদির জন্য একজন আইনগত অভিভাবক নিচের একবা একাধিক কারণে স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন। যেমন: ক. ক্রেতা দ্বিগুণ দাম দিতে প্রস্তুত খ. স্থাবর সম্পত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গ. সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে।

নাবালককে রক্ষার জন্য আেইনগত অভিভাবক বা আদালক নিযুক্ত অভিভাবক না হয়েও যেকেউ নাবালকের অভিভাবক হিসেবে কাজ করতে পারেন। বাস্তবে এরকম যিনি অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন তিনিই হলেন কার্যত অভিভাবক। তবে তিনি কোন অবস্থাতেই সম্পত্তির স্বত্ব, স্বার্থ বা অধিকার হস্তান্তর করতে পারবেন না।

হিন্দু পারিবারিক আইনে অভিভাবকত্ব

মুসলিম আইনের মতো এখানে সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং জিম্মাদারিকে আলাদা আইনগত প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। হিন্দু আইনে ৩ ধরণের অভিভাবক স্বীকৃত। ক.স্বাভাবিক অভিভাবক খ.বাবা কর্তৃক উইলদ্বারা নিযুক্ত অভিভাবক গ.গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৯০ অনুযায়ী আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক। এছাড়া কার্যত অভিভাবক হিসেবেও অভিভাবক দেখা যায়। হিন্দু আইনে পিতা একমাত্র প্রকৃত ও স্বাভাবিক অভিভাবক। এবং পিতার জীবিত অবস্থায় অন্যকেউ অভিভাবক হতে পারে না। কিন্তু, সন্তানের মঙ্গল ও শিক্ষার জন্য পিতা ইচ্ছা করলে অন্য কারও উপর নাবালকের দায়িত্ব দিতে পারেন। আবার প্রয়োজনে ইচ্ছা করলে তিনি এই দায়িত্ব ফিরিও নিতে পারেন। বাবার অবর্তমানে মা নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির আইনগত অভিভাবক, কিন্তু বাবা যদি উইল করে অন্য কাউকে নাবালকের অভিভাবক নিযুক্ত করেন, তাহলে মা অপেক্ষা সেই ব্যক্তির দাবি অগ্রগণ্য হবে। মা-বাবা কেউ না থাকলে প্রয়োজনে আদালত নাবালকের নিকটবর্তী আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজনকে অভিভাবক নিযুক্ত করতে পারেন। নাবালকের বয়স ২১ হয়ে গেলে সে সাবালক হয়ে যায় এবং তখন আর তার কেনো অভিভাবক প্রয়োজন হয় না। আদালত অভিভাবক নিযুক্তির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেবেনঃ ক.নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক মৃত্যুকালে যদি অভিভাবক নিয়োগের ব্যাপারে কোন ইঙ্গিত দিয়ে যায় তা; খ.নাবালক যদি তার বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন হয় তবে সেক্ষেত্রে তার মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

কোন হিন্দু নাবালকের সম্পত্তির জন্য আদালত যদি অভিভাবক নিযুক্ত করে তবে সে অভিভাবক আদালতের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তি বিক্রি, বন্ধক বা হস্তান্তর করতে পারে না এবং তা কেনার অধিকারও নেই।

খ্রিষ্টান আইনে সন্তানের অভিভাবকত্ব

খ্রিষ্টান ধর্মে অভিভাবকত্ব নির্ধারণ হয় দুইভাবে: বিবাহবিচ্ছেদ বা জুডিশিয়াল সেপারেশনের মাধ্যমে এবং গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্টের মাধ্যমে। সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালতের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হবে সন্তানের কল্যাণ। অর্থাৎ বাবা অথবা মা, কার কাছে থাকলে সন্তানের লালন পালন বেশি ভালো হবে। সুতরাং সন্তানের ভালো থাকাই সর্বোচ্চ বিবেচনার বিষয়।

এছাড়া আরও দুটি বিষয় সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসবে। প্রথমত, সন্তানের ধর্ম। খ্রিষ্টান পারিবারিক আইন অনুযায়ী সন্তানের প্রকৃত অভিভাবক পিতা। ফলে সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও পিতার ধর্মবিশ্বাসেই তাকে বড় করতে হবে এমনকি মায়ের ধর্মবিশ্বাস ভিন্ন হলেও। মা যদি সন্তানকে বাবার ধর্মবিশ্বাসে বড় করতে ব্যর্থ হন তাহলে তিনি অভিভাবকত্ব হারাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, মায়ের অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ভালো না হয় তাহলে সন্তানের লালনপালন, ভরণপোষণ, প্রতিপালন, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদিতে ব্যাঘাত ঘটবে বলে যদি আদালত মনে করেন, তাহলে আদালতও সন্তানের পিতামহকেই গুরুত্ব দেবে। এক্ষেত্রে পিতামহের আর্থিক অবস্থা মায়ের চেয়ে স্বচ্ছল হতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে গঠিত পারিবারিক আদালতে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের নাগরিক সন্তানের অভিভাবকত্ব বিষয়ে মামলা করতে পারবেন।

লিখেছেনঃ

এডভোকেট লায়েকুজ্জামান মোল্লা
সিনিয়র এডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

পারিবারিক আইন, ডিভোর্স ও অন্যান্য

পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দুটো ভিন্ন চরিত্রের একসাথে জীবন পার করে দেওয়া সহজ না। মানিয়ে চলাই তাদের প্রিলিমিনারি সামাজিক শিক্ষা। মানিয়ে নিতে না পারলেও একে অপরকে ছেড়ে যাওয়া মুখের কথা নয়। আবার কিছু আইনী প্রক্রিয়াও রয়ে যায়। বদলে যাওয়া সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন হ্য় সামাজিক ও আইনি সাহায্য। এসবের ঠিকুজি জানতেই ড.শাহনাজ হুদার মুখোমুখি লুক।

লুক: বাংলাদেশের মুসলিম আইনে তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর অধিকার কতটুকু?

শাহনাজ হুদা: আমাদের দেশের মুসলিম আইন অনুযায়ী, তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর অধিকার স্ত্রীদের চেয়ে বেশি।কিন্তু এটা বলা যাবে না যে, তালাক দেওয়া কেবল স্বামীর অ্যাবসল্যুট রাইট। তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে কিছু আই্নগত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। নোটিশ প্রদান, সালিশ-বোর্ডের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা, নোটিশ দেওয়ার পর ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া আমাদের আইনে স্বামীর তালাক দেওয়ার অধিকারকে নিকাহনামার ১৯ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে খর্ব করা সম্ভব। ১৯ নং অনুচ্ছেদের যথাযথ প্রয়োগের জন্য নিকাহ রেজিষ্ট্রারদের কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা দরকার। দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদটিকে অবহেলা করে রেজিষ্ট্রাররা শুধ না শব্দটি লিখেই চলে যায়।

লুক: এই একই আইনে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর অধিকার কতটুকু?

শাহনাজ হুদা: এ দেশে মুসলিম আইনে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর তুলনায় স্ত্রীর অধিকার অনেকখানি খর্ব করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে, দীর্ঘদিন স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে, স্বামী নপুংসক হলে ইত্যাদি কারণে স্ত্রী স্বামীকে কোর্টের মাধ্যমে তালাক দিতে পারে। এছাড়া নিকাহনামায় যদি স্ত্রীকে তালাকে তাওফিজের অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে।

লুক: তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রীর কী কী অধিকার রয়েছে?

শাহনাজ হুদা: স্বামী স্ত্রীকে তিন মাসের ভরণপোষণ ও মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। ভরণপোষণের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

লুক: তিন মাসের ভরণপোষণ কি স্ত্রীর জন্য যথেষ্ট বলে আপনি মনে করেন?

শাহনাজ হুদা: এটা কোনভাবেই স্ত্রীর জন্য যথেষ্ট না। কিছু মুসলিম দেশে এই বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন মিশরে, স্বামী যদি স্ত্রীকে কোন উপযুক্ত কারণ না দেখিয়ে তালাক দেয়, তাহলে একবছরের ভরণপোষণ দিতে হয়। আবার কিছু দেশে স্ত্রীর পুনর্বিবাহ কিংবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দিতে হয়।

লুক: বর্তমান সময়ে নারীর সমান অধিকারের কথা বলা হয়। সমান অধিকারের কথা বিবেচনা করলে স্ত্রীর ভরণপোষণের যৌক্তিকতা কতটুকু?

শাহনাজ হুদা: এক্ষেত্রে সমান অধিকারের কথা বললে আরো অনেক আইন পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার দিতে হবে। কারণ, পিতা-মাতার মৃত্যুর পর মেয়েরা ছেলের অর্ধেক সম্পত্তি পায়। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির যে পরিমাণ পায়, স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী তার দ্বিগুণ পায়। এগুলো পরিবর্তন করার সাথে সাথে নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি এই পরিবর্তনগুলো করতে পারি, তাহলেই স্ত্রীর স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ কেন পাবে, এই প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারি। অন্যথায় নয়।

লুক: বিভিন্ন দেশ যেমন মিশরে কোর্টের অনুমতি ছাড়া স্ত্রীকে তালাক দেয়া সম্ভব না। বাংলাদেশে এরকম আইনের দ্বারা তালাকের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব? হলে কতটুকু?

শাহনাজ হুদা: কোর্টের অনুমতি নিয়ে তালাক দিতে হলে এর অপব্যবহার অনেকখানি রোধ করা সম্ভব।কিন্তু এক্ষেত্রে দেশের মানুষকে শিক্ষিত ও সচেতন হতে হবে। যেটা এ মুহুর্তে বাংলাদেশে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে আমাদের অধিকাংশ লোকজন কোর্টে যাবে না।এবং তালাক না দিয়েই স্ত্রীকে রেখে চলে যাবে। এতে স্ত্রী ভরণপোষণও পাবে না আবার পুনরায় বিয়ে করার বৈধতাও পাবে না। আরেকটি বড়ো কারণ হলো, বাংলাদেশের বেশিরভাগ কোর্টের অ্যাকসেস টু জাস্টিস কতোটুকু, তা নিয়েই প্রশ্ন আছে।

লুক: বাংলাদেশে কিছুদিন থেকে গ্রামের তুলনায় শহরে স্ত্রী কর্তৃক তালাকের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

শাহনজ হুদা: অতীতে গ্রামে তালাকের পরিমাণ বেশি ছিলো। বর্তমানের গ্রামের তুলনায় শহর এলাকার স্ত্রীরা বেশি তালাক দিচ্ছে।তালাকের ইতিবাচক দিক হলো, স্বামীর সংসারে অপমান অবহেলা সহ্য করার চেয়ে পৃথক হয়ে যাওয়াই নারীর জন্য ভালো। নারীদের মাঝে সামাজিক সচেতনতা ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির কারণে পৃথক থাকতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। যা পরে তালাকে রূপ নিচ্ছে।

লুক: বিদ্যমান মুসলিম আইন পুরোপুরি কার্যকর করে তালাকের ক্ষেত্রে নারীর অধিকার রক্ষা করা কতটুকু সম্ভব?

শাহনাজ হুদা: আমি মনে করি, পুরোপুরি না হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নারীর অধিকাংশ অধিকারই সংরক্ষণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তালাকের পদ্ধতি, যেমন সালিশি-বোর্ড গঠন, বোর্ডের কাছে উপযুক্ত কারণ দর্শানো, নোটিশ দেওয়া, ৯০ দিন অপেক্ষা করা- এগুলোর নিশ্চয়তা প্রদানের সাথে সাথে যারা এগুলো ভঙ্গ করবে তাদের বিচারের আওতায় আনলে অহেতুক তালাকের পরিমান অনেকখানি হ্রাস পাবে।

আমাদের বিদ্যমান আইন কার্যকর করার সাথে সাথে আমরা যদি সোশ্যাল প্র্যাকটিস চেঞ্জ করতে পারি তাহলে তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের অধিকাংশ অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব।

লুক: বাংলাদেশে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালুর ক্ষেত্রে আপনার অভিমত কি?

শাহনাজ হুদা: ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশে অভিন্ন আইন চালুর পক্ষপাতী। কিন্তু, বাস্তবিক অর্থে এ মুহুর্তে এটা চালু করা অনেকখানি অসম্ভব। এটা চালু করতে গেলে মুসলিম-হিন্দু-খ্রীষ্টান, সকল ধর্মের অধিকাংশ পারিবারিক আইন পরিবর্তিত হয়ে যাবে। যা দেশের ধর্মীয় জনগোষ্ঠি সহজে মেনে নেবে না। অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করতে গেলে আমাদের শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

লুক: বাংলাদেশের হিন্দু আইনে তালাকের ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?

শাহনাজ হুদা: বাংলাদেশের হিন্দু আইনে শুধু ১৯৪৬ সালের নারীর পৃথক বসবাসের অধিকার আইন দ্বারা বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব। যদিও ভারতে ১৯৫৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য পৃথক আইন করা হয়, যার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব। বাংলাদেশের হিন্দু আইন সংস্কারের জন্য অনেকবার সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু, ধর্মীয় নেতাদের আপত্তির কারণে তা আজও  কার্যকর করা সম্ভব হয় নি। তবে, বর্তমানে হিন্দু স্বামী-স্ত্রীরা এফিডেভিটের মাধ্যমে নিজেরা তালাক নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

লুক: তালাক পরবর্তী সময়ে সন্তানের কাস্টডি কেমন হওয়া উচিত?

শাহনাজ হুদা: বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে পিতাই সন্তানের গার্ডিয়ান। কিন্তু, ছেলেসন্তানের বয়স সাত বছর এবং মেয়ে সন্তানের পিউবার্টির পূর্ব পর্যন্ত কাস্টডিয়ান হবে মা। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে কোর্টের অনেক ডিসক্রিয়েশনাল পাওয়ার আছে। কোর্ট সন্তানদের কাস্টডি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেষ্ট ইন্টারেষ্ট অব দ্যা চাইল্ড বিবেচনা করবে। আর সন্তান যদি মতামত দেয়ার মতো অবস্থায় থাকে, তাহলে কোর্ট তার মতামত বিবেচনা করবে। এক্ষেত্রে আমি বলতে চাই, পারিবারিক আইনের সব ব্যাপারে কোর্ট যদি কাস্টডি নির্ধারণের মতো বেষ্ট ইন্টারেষ্ট বিধি বিবেচনা করে তাহলে সব ব্যাপারই সহজভাবে সমাধান সম্ভব।

তালাকের মতো স্পর্শকাতর এমনভাবে আইন প্রনয়ন করতে হবে, যাতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হয়। কেউ যেন কাউকে হয়রানি করতে না পারে। একটা বিষয় আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, অনেক সাধ করে দুজন মানুষ ঘর বাঁধে। এটা ভেঙে যাওয়া কম কষ্টের না। তাই এমন কোন রিএ্যাকটিভ বা উস্কানিমূলক কিছুকরা উচিত হবে না যাতে অহেতুক তালাক বৃদ্ধি পায়।

লুক: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

শাহনাজ হুদা: ধন্যবাদ লুক।

# লুকের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন নোমান হোসাইন ও আলাল আহমেদ

ভরণপোষণের অধিকার

মিতুর বিয়ে হয়ে পেরিয়ে গেছে বছর তিনেক। বিয়ের পরপরই জানা গিয়েছিলো স্বামী মাদকাসক্ত। মাদকের গ্রাস থেকে স্বামীকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেছে মিতু। লাভ হয় নি। এরইমধ্যে কোল জুড়ে এসেছে একটি সন্তান।

সন্তান জন্মানোর পর স্বামী মিতুকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কোনো ভরণপোষণ এমনকি একমাত্র সন্তানের জন্যও কোন টাকা পাঠায় না। মিতু লেখাপড়া তেমন একটা করে নি যে চাকরী করবে। আবার বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। নিজের এবং সন্তানের ভরণপোষণের জন্য এখন কী উপায় খুঁজবে সে? আইনে তার ভরণপোষণের অধিকার নিশ্চিত করা রয়েছে। মুসলিম আইনে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা তাদের স্ত্রী, সন্তানসন্ততি, মা-বাবা, যারা আর্থিকভাবে অসমর্থ, তাদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিয়ে বর্তমান থাকা অবস্থায় ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার লাভ করে। ছেলেসন্তান সাবালক না হওয়া পর্্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বিয়ে না হওয়া পয্যন্ত বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভের দাবিদার। ছেলেসন্তান সাত বছর পয্যন্ত এবং মেয়ে সন্তান বিয়ে না হওয়া পয্যন্ত যদি মায়ের কাছে কিংবা মায়ের মা অর্থাৎ নানির কাছে থাকে, তবু বাবা তার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

এছাড়া পঙ্গু, অক্ষম, পাগল এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী সাবালক সন্তানও বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবে। তবে সন্তান যদি অন্যায়ভাবে বাবার সাথে থাকতে অস্বীকার করে কিংবা যে শিশু নিজস্ব সম্পত্তির আয় থেকে নিজের ভরণপোষণ করতে সক্ষম, তার ভরণপোষণ দিতে বাবাকে বাধ্য করা যাবে না। কিছু ক্ষেত্রে আলাদাভাবে বসবাস করলেও স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রাখেন। যেমন, স্ত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে দেনমোহর পরিশোধ না করলে, স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে, স্বামী যদি অভ্যাসগতভাবে খারাপ ব্যাবহার করেন, দীর্ঘকাল স্ত্রীর কাছ থেকে স্বামী দূরে থাকলে ও অনুমতি ছাড়া স্বামী দ্বিতীয়বিয়ে করলে।

ভরণপোষণের পরিমাণ স্বামী-স্ত্রীর মর্যাদা ও আর্থিক সঙ্গতির উপর নির্ভর করে। অনেক সময় নিকাহনামায় লেখা থাকে ভরণপোষণ হিসেবে স্বামী কতোটাকা মাসিক দেবেন। সাধারণ অবস্থায় স্বামী তার নিজ গৃহেই স্ত্রীর খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান দিয়ে থাকে। আইনসঙ্গত বা যুক্তিযুক্ত কারণে যখন স্ত্রী আলাদা বসবাস করে, তখন স্বামী নগদ অর্থ দ্বারা ভরণপোষণ জোগাবে।

আইনসম্মত স্বামী যদি স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ না দেয়, তাহলে পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাওয়া যায়। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী এ অধিকার রয়েছে। সন্তান ও বৃদ্ধ মা-বাবাও আদালতের মাধ্যমে ভরণপোষণ পাওয়ার জন্য মামলা করতে পারেন।

এছাড়া ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী স্ত্রী খরপোশ দাবি করে স্বামীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে আবেদন করতে পারেন। আবেদন পাওয়ার পর চেয়ারম্যান স্ত্রী ও স্বামী উভয়পক্ষের পছন্দমতো একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সালিস-পরিষদ গঠন করবেন। সালিস-পরিষদ স্ত্রীর দাবির যৌক্তিকতা যাচাই করে ভরণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত এবং সেই মোতাবেক একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে।

স্বামী স্ত্রী আলাদা থাকলে ভরণপোষণ

স্ত্রী যদি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া স্বামীর কাছ থেকে আলাদা বসবাস করেন, তবে, স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবেন না। তবে, বিবাহিত থাকা অবস্থায় স্ত্রী আলাদাভাবে বসবাস করা স্বত্ত্বেও কয়েকটি ক্ষেত্রে ভরণপোষণ পেতে পারেন।

স্বামী যদি স্ত্রীর তাৎক্ষণিক দেনমোহরের দাবি অস্বীকার করেন; স্বামী বর্বর বার নিষ্ঠুর আচরণ করেন, স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। এছাড়া স্বামী আরেকটি বিয়ে করলে বার রক্ষিতা রাখলে স্ত্রী স্বামীর সাথে থাকতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন এবং তারপরও স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ দাবি করার অধিকার রাখেন।

বিয়েবিচ্ছেদের পর ভরণপোষণ

বিয়েবিচ্ছেদের পরও কিছুদিন স্ত্রী ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হন। যেদিন থেকে বিচ্ছেদ কার্কর হয় সেদিন থেকে ৯০ দিন (এসময়কে ইদ্দত বলা হয়)পয্যন্ত স্ত্রী ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হন। {হেফজুর রহমান বনাম শামসুন্নাহার বেগম ৪ এমএলআর (অউ ) (১৯৯৯ )}

কোনো স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে মামলা দায়ের করার আগের সময়ের জন্য অথবা বিয়েবিচ্ছেদের আগে যে সময় স্বামী ভরণপোষণ দেয় নি সে সময়ের জন্যও ভরণপোষণ চাইতে পারেন। সিরাজুল ইসলাম বনাম হেলেনা বেগম (৪৮ উখজ )মামলায় আদালত বলেন, স্ত্রীর বকেয়া ভরণপোষণের বিষয়ে আদালতের ডিক্রি জারি করার বিচারিক ক্ষমতা আছে।

হিন্দু আইনে ভরণপোষণ

হিন্দু আইনে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে:

একজন হিন্দুর কোন সম্পত্তি না থাকলেও সে তার নাবালক ছেলে, অবিবাহিত মেয়ে ও বাবা-মায়ের ভরণপোষণ করতে আইনত বাধ্য। দায়ভাগামতে, বাবা সাবালক ছেলেকে ভরণপোষণ করতে আইনত বাধ্য নন।

কর্তা যৌথ পরিবারের সকল পুরুষ, তাদের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের ভরণপোষণে আইনত বাধ্য। একজন মৃত ব্যক্তি যাদের ভরণপোষণে বাধ্য ছিলো, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধীকারীরাও মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে তাদের ভরণপোষণ করতে আইনত বাধ্য।

বিয়ে না হওয়া পয্যন্ত বাবা তার কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। বাবার অবর্তমানে কন্যার ভরণপোষণ বাবার সম্পত্তি হতে চলতে থাকবে। অক্ষমতা বা অযোগ্যতা হেতু কেউ পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকলে তাকে ও তার পরিবারবর্গকে অক্ষম ব্যক্তির বাবা ও বাবার অবর্তমানে বাবার উত্তরাধীকারী যথাযোগ্য ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

১৯৪৬ সালের বিবাহিত হিন্দু নারীর পৃথক বাসস্থান ও ভরণপোষণ আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী, স্ত্রী অসতী না হলে বা অন্য ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম থেকে বহিস্কৃত না হলে সে তার জীবনকালে স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী।

১৯৪৬ সালের বিবাহিতা হিন্দু নারীর পৃথক বাসস্থান ও ভরণপোষণ আইন অনুযায়ী, নিম্নোক্ত কারণ সমূহের উদ্ভব হলে একজন বিবাহিত নারী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থেকেও ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী:

  • স্বামী যদি এমন কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকে যা সে তার স্ত্রীর কাছ থেকে পায় নি
  • স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে এবং নিষ্ঠুরতা যদি এমন পয্যায়ের হয় যে স্বামীগৃহে তার জীবনাশঙ্কার ভয় রয়েছে
  • স্বামী যদি স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই তাকে পরিত্যাগ করে
  • স্বামী যদি স্ত্রীর বর্তমানে পূনরায় বিয়ে করে
  • স্বামী যদি ধর্মান্তরিত হয়
  • স্বামী যদি ঘরেই কোন উপপত্নী রাখে অথবা অভ্যাসগতভাবে উপপত্নীর সাথে বসবাস করে
  • অন্যান্য যৌক্তিক কারণ

স্বামীর মৃত্যুকালীন পৃথক সম্পত্তি বা স্বামীর সহ-অংশীদারী সম্পত্তি থেকে একজন বিধবা স্ত্রী ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। স্বামীর মৃত্যুকালীন সময়ে পৃথক বসবাস করলেও তার এ অধিকার বজায় থাকে। অসৎ উদ্দেশ্য ব্যতীত স্বামীগৃহ ত্যাগ না করলে সে বকেয়া ভরণপোষণও পাওয়ার অধিকারী।

খ্রিষ্টান আইনে ভরণপোষণ

১৮৬৯ সালের ডিভোর্স অ্যাক্টের ৩৭ নং ধারা অনুযায়ী, স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদের পর থেকে স্থায়ীভাবে ভরণপোষণ পেতে পারে। এছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মে সন্তান ভরণপোষণের কথাও বলা হয়েছে। পারিবারিক আইন অনুযায়ী, স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামী বা পিতার। বিয়ে বর্তমান থাকাকালীন অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ দেবেন। মা-বাবার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সন্তানের ভরণপোষণের প্রশ্নটি আদালতের এখতেয়ারাধীন। সন্তানের কল্যাণের কথা চিন্তা করে, আর্থিক সামর্থের বিবেচনায় আদালত রায় দেবেন, কী পরিমাণ ভরণপোষণ সন্তানদের দেবেন। এই আইন অনুযায়ী, জেলা আদালত বা হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করতে হয়।

উল্লেখ্য, অবহেলিত সন্তানরা ফৌজদারী দন্ডবিধির ৪৮৮ ধারার অধীনে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে পিতাকে ভরণপোষণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার জন্য মামলা করতে পারে। এক্ষেত্রে সব ধর্মের সন্তানেরা তা পারবে।

লিখেছেনঃ

লোকমান বিন নূর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর

বিচ্ছেদের ব্যবচ্ছেদ

বিচ্ছেদ কাম্য নয়। আমরা চাইও না। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ভাঙনের সুর বেজে উঠতেই পারে জীবনে। যে অবস্থায় সুস্থ এবং মানসিক শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের স্বার্থে দুজনের চলার পথ দুটি দিকে বেঁকে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় খোলা থাকে না- তেমনি কিছু পরিস্থিতিতে অনিবার্য করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত এবং প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ আমাদের এই বিচ্ছেদ-ব্যবচ্ছেদ টেবিলে।

ঘটনা ১

শাহেদের সাথে হৃদির বিয়ের দেড় বছরের মাথায় শাহেদ জানতে পারে, হৃদি এখনও তার আগের এক বন্ধুর সাথে প্রেম করে। বিষয়টি জানার পর দুজনের মধ্যে ঝগড়া ও মনোমালিন্য। তৈরী হয় দূরত্ব। এখন দুজনের কেউ চাইছে না এমন অসুস্থ দাম্পত্য জীবন কাটাতে। কী করা যায়?

ঘটনা ২

বিয়ের কদিন পর থেকেই রোজির স্বামী তাকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। বাবা-মাকে বলে একলাখ টাকা এনে দিলেও স্বামীর চাহিদা ফুরোয় না। আবারও যৌতুকের জন্য চাপ! না পেয়ে চলে দুর্ব্যবহার, শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে পাঠিয়ে দেয় বাবার বাড়িতে। জানিয়ে দেয়, চাহিদামতো যৌতুক না দিলে তাকে আর ঘরে ফেরানো হবে না। যৌতুকলোভী এমন একটা মানুষের সাথে সংসার চালিয়ে নেওয়া রোজীর জন্য দুঃসাধ্য। সে কীভাবে তার স্বামীকে তালাক দেবে?

মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদ

বিবাহবিচ্ছেদের বহুল প্রচলিত মাধ্যম হচ্ছে তালাক।ইসলামি  আইন অনুযায়ী, তালাক স্বামীর একটি ক্ষমতা যা সে কল্যাণের উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করবে। খামখেয়ালে বা অন্যায়ভাবে সে এটি তার স্ত্রীর উপর প্রয়োগ করবে না। ১৯৬১ সালের আইন অনুযায়ী তালাক কার্যকর করার আগে সালিসের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মীমাংসা করার চেষ্টা করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে এই আইনে চেয়ারম্যান নোটিশ এবং সালিশ গঠনের বিধান রাখা হয়। অপরদিকে বিবাহনিবন্ধন ফরম তথা কাবিননামার ১৮ অনুচ্ছেদে স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। সেই অনুযায়ী, স্ত্রী চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।

স্বামী যেভাবে তালাক দেবে

সাধারণভাবে ধরা হয় যে, তালাক স্বামীর একচ্ছত্র ক্ষমতা। স্বামী যখন ইচ্ছা তখন একতরফাভাবে তালাক দিতে পারে। স্ত্রীকে কারণ জানানোরও প্রয়োজন নেই। তবে, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে এই ক্ষমতার খামখেয়ালি ব্যবহাররোধে তালাক কার্যকর করার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, তালাক উচ্চারণ এবং কার্যকর হওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। মুখে তালাক উচ্চারণ করলেই হবে না। চেয়ারম্যান নোটিশ দিতে হবে এবং নোটিশের পর ৯০ দিন পার না হলে তালাক কার্যকর হবে না।

তালাকের নোটিশ

১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭ (১) ধারা অনুযায়ী, যে ব্যক্তি তালাক দেবে, সে লিখিতভাবে নোটিশ পাঠাবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও স্ত্রী বরাবর।নোটিশ না পাঠালে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান অথবা মেয়র সালিস পরিষদ গঠন করবেন এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা করানোর চেষ্টা করবেন।

সালিস পরিষদ উভয়কে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতি ৩০ দিনে ১টি নোটিশ করে মোট ৩ টি নোটিশ পাঠাবেন। এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে। নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।

তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে তালাক কার্যকর হবে না। তবে সন্তান হওয়ার পর পর্যন্ত নোটিশ বহাল রাখলে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। কিন্তু এর মধ্যেও তা প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।

নোটিশ ছাড়া তালাক কার্যকর হবে কি?

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের কোথাও নোটিশ না দিলে তালাক হবে না বলে উল্লেখ নেই। তবে স্বামী শাস্তি পাবেন।কিন্তু উচ্চ আদালত বিষয়টির একটি ভিন্ন সমাধান দিয়েছেন। কাজী রাশেদ আখতার শহিদ বনাম মোসাম্মৎ রোখসানা বেগম চৌধুরী ছন্দা মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ বলেছেন, স্বামী কর্তৃক চেয়ারম্যান বরাবর নোটিশ না দিলে তালাক কার্যকর হবে না। তালাক উচ্চারণের সময় স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ পাঠাতে হবে।

স্ত্রীও তালাক চাইতে বা দিতে পারেন

নিকাহনামার ১৮ অনুচ্ছেদে স্ত্রীকে দেওয়া বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষমতাবলে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ছাড়াই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বামীর মতোই স্ত্রী তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যান ও স্বামীর কাছে পাঠাবেন। নোটিশ পাবার ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।সাধারণত বর্তমানে নিকাহ রেজিষ্ট্রেশনের সময় স্ত্রীকে এ ধরণের অধিকার দেওয়া হয়। তারপরও মেয়েদের উচিত বিবাহের সময় নিকাহনামায় এই বিধান রাখা হয়েছে কিনা তা দেখে নেওয়া।

এছাড়া ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইনে, কী কী কারণে স্ত্রী আদালতে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবেন, তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

  • চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে
  • দুই বছর পর্যন্ত স্বামী স্ত্রীর খরপোশ দিতে ব্যর্থ হলে
  • স্বামীর সাত বছর কিংবা তারচেয়ে বেশি কারাদণ্ড হলে
  • স্বামী কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে
  • বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে
  • স্বামী দুই বছর ধরে মানসিক অথবা কুষ্ঠ কিংবা মারাত্মক যৌন ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকলে
  • স্বামী বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা ব অভিভাবক যদি ১৮ বছর বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙে দিতে পারে। স্বামীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক (সহবাস )না হয়ে থাকলে বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
  • স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে
  • স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে

নীচের কাজগুলো নিষ্ঠুরতা হিসেবে স্বীকৃত-

ক) অভ্যাসগতভাবে স্ত্রীকে আঘাত করা। এটা দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়লেও তার জীবন শোচনীয় করে তুললে এটি নিষ্ঠুর আচরণ বলে বিবেচিত হবে

খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবন যাপন করলে

গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করলে

ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে

ঙ) স্ত্রীকে ধর্মপালনে বাঁধা দিলে

চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে

  • মুসলিম আইনে স্বীকৃত অন্য যেকোন যুক্তিসঙ্গত কারণে স্ত্রী আদালতে তালাকের অনুমতির জন্য মামলা করতে পারেন।

ওপরের যেকোন এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে বিবাহবিচ্ছেদেরর আবেদন করতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। প্রমাণিত হলে স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারেন। আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেওয়ার ৭ দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন।

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চেয়ারম্যান নোটিশকে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ হিসেবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন এবং চেয়ারম্যানের নোটিশ পাবার দিন থেকে ৯০ দিন পর তালার চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।

খুলা

স্ত্রীর পক্ষ থেকে দাম্পত্য অধিকারমুক্তির প্রস্তাবকে বলে ‍খুলা। এক্ষেত্রে স্ত্রী কোনকিছুর বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদে রাজি করানোর চেষ্টা করবেন।স্বামী রাজি থাকলে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। বিচ্ছেদের উদ্যোগ অবশ্যই স্ত্রীর পক্ষ থেকে আসতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মোহরানা এবং ভরণপোষণের দায় স্বামী স্ত্রীকে বাধ্য করেন খুলা তালাকেরর জন্য। প্রচলিত ভুল ধারণা হচ্ছে, খুলা হলে মোহরানা এবং ভরণপোষণ দেওয়ার দরকার নেই। খুলার বিনিময় সাধারণত মোহরানার চেয়ে কম। বেশি বা সমানও হতে পারে। স্ত্রীই এর পরিমাণ নির্ধারণ করবেন। ‍এর জন্য তার অন্যান্য অধিকার খর্ব হবে না। মোহরানা হচ্ছে বিয়ের সাথে সাথে স্ত্রীর পাওনা। যা স্ত্রী চাইলেই স্বামী দিতে বাধ্য। অপরদিকে, খুলার যে বিনিময় তা বিবাহবিচ্ছেদের সাথে সম্পর্কিত। বিয়ের সাথে নয়।

মুবারত

স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হলে তাকে মুবারত বলে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক ইচ্ছার ভিত্তিতে চুক্তির মাধ্যমে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।

তালাকের পর স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে স্ত্রী তালাক দেওয়ার পর তা কার্যকর হওয়ার আগে স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারেন কি? ইদ্দতকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী অন্যত্র বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন না।

হিল্লা বিয়ে

১৯৬১ সালের মুসলিম আইন অধ্যাদেশে হিল্লা বিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালাকের পর স্বামী-স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে হিল্লা বিয়ের দরকার হয় না।

গর্ভাবস্থায় তালাক

গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে তা কার্যকর হয় না। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর অথবা নোটিশ প্রদান থকে ৯০ দিন- যেটি দেরিতে শেষ হবে সেটি পার হলে তালাক কার্যকর হয়। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানেচ নোটিশের মাধ্যমে সালিস বসবে।

তালাকের ফলাফল ও ভরণপোষণ

খুলা ব্যাতীত সকল প্রকার তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে সম্পূর্ণ মোহরানা এবং ইদ্দতকালীন সময় পর‌্যন্ত ভরণপোষণ পাবেন। সন্তান থাকলে সন্তানের আইনগত অভিভাবক হবেন বাবা। সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব তারই। ছেলেসন্তান সাত বছর বয়স পর‌্যন্ত এবং মেয়েসন্তান বিয়ে পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে। তবে সন্তানের সর্বোচ্চ কল্যাণ বিবেচনায় আদালত চাইলে মামলাভেদে অন্য সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

ক) সাবালক না হওয়া পরযন্ত পিতা তার সন্তানের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

খ) তালাক বা বিচ্ছেদের পর সন্তান যদি মায়ের কাছে থাকে, তবুও বাবাই ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে ছেলে ৭ বছর, মেয়ে বিবাহ পর্যন্ত। উল্লেখ্য, মেয়ের বিবাহের খরচও বাবাকেই দিতে হবে।

গ) যদি কোন সাবালক সন্তান অসুস্থতার জন্য কিংবা পঙ্গুত্বের জন্য রোজগার করতে না পারে, তবে বাবা তাকে আজীবন ভরণপোষণ দিতে বাধ্য।

ঘ) পিতা-মাতা গরীব বা দৈহিকভাবে অসমর্থ হলে দাদার অবস্থা সচ্ছল হলে ওই সকল ছেলেমেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব দাদার ওপর ন্যস্ত হবে।

ঙ) সন্তানদের অভিভাবক বাবা, মা সন্তানের জিম্মাদার, লালনপালনকারী এবং হেফাজতকারীর ভূমিকা পালন করবেন। সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকবে এবং বাবা সব খরচ বহন করবেন।

চ) মুসলিম আইনে বাবা তার দায়িত্ব পালন না করলে অভিভাবকত্বের দাবি করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পরও সন্তানেরা মায়ের কাছে থাকতে পারবে।

মা কখন সন্তানের জিম্মাদার থাকতে পারবেন না

  • মা অসৎ জীবন যাপন করলে
  • মা এমন কাউকে বিয়ে করলে যার সঙ্গে তার নিজের কন্যার বিয়ে হওয়ার ব্যাপারে ধর্মীয় নিষেধ নেই
  • সন্তানের প্রতি উদাসীন, দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে

দেনমোহর

দেনমোহরের মোট পরিমাণকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে: আশু এবং বিলম্ব। চাইলেই পরিশোধযোগ্য অংশটিকে আশু দেনমোহর বলে। বিলম্বিত দেনমোহর মৃত্যু অথবা তালাকের ফলে পরিশোধযোগ্য। সুতরাং তালাকের সাথে সাথে স্ত্রী তার মোহরানা না পেয়ে থাকলে তার জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন। স্বেচ্ছায় দেনমোহর আদায় না করলে স্ত্রী এবং তার ওয়ারিসরা তা আদায়ের জন্য নিম্নলিখিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন।

  • আশু দেনমোহর: এর দাবি অস্বীকার করার তারিখ থেকে স্বামীর মৃত্যুর পর তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করা যাবে।
  • বিলম্বিত দেনমোহর: লিখিত তালাকনামার মাধ্যমে তালাক দিলে ১৯০৪ সালের তামাদি আইনের ১০৩ ও ১০৪ ধারা অনুযায়ী তালাকের বিষয়টি অবগত হওয়ার তারিখ থেকে মামলা করার মেয়াদ তিন বছর।

১৯৮৫ সালের পারিবাহিক আদালত অধ্যাদেশের ৫ ধারায় পারিবারিক আদালতকে মোহরানার জন্য মোকদ্দমা বিচারের নিরঙ্কুশ এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। মোহরানা বা দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর একটি দায়। সেই দায় পরিশোধের নীতিমালা এখানে প্রযোজ্য হবে। সেই অনুযায়ী, গ্রহীতা দাদাতে খুঁজে বের করে দায় পরিশোধ করেন। স্ত্রী যে এলাকায় বাস করেন সে এলাকায় অবস্থিত পারিবারিক আদালতে মোহরানা আদায়ের জন্য মামলা করতে পারেন।স্বামীর বসবাসের এলাকায় গিয়ে মামলা করার প্রয়োজন নেই।

তালাক বিনন্ধন

মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন অনুসারে, বিয়ের মতো তালাকও রেজিস্ট্রি করতে হয়। এ সংক্রান্ত বিধিমালা ১৯৭৫ (১৮/২ ) অনুসারে, নিকাহ নিবন্ধক এ জন্য ২০০ টাকা ফি নিতে পারেন। যিনি তালাক কার্যকর করেছেন তিনি রেজিস্ট্রির জন্য আবেদন করবেন এবং ফি দেবেন। নিকাহ বিবন্ধক পরীক্ষা করে দেখবেন দুই পক্ষের মধ্যে সত্যি তালাক কার্যকর হয়েছে কিনা। স্বামী-স্ত্রী উভয়পক্ষেরেই দায়িত্ব নিকাহ নিবন্ধন ও তালাক রেজিস্ট্রির প্রত্যয়নপত্র তুলে সংরক্ষণ করা। যদি নিকাহ রেজিস্ট্রার কোনো তালাক রেজিস্ট্রেশনে অস্বীকৃতি জানান, সেক্ষেত্রে যিনি রেজিস্ট্রেশনের জন্য দরখাস্ত করেছিলেন তিনি ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের আদেশই চূড়ান্ত।

বিয়ে একটি চূক্তিমাত্র নয়, একটি পবিত্র বন্ধনও। কাজেই সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টা করাই কাম্য। তারপরও সমস্যা সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়লে বা দাম্পত্য জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়লে বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আর তালাক বা বিবাহবিচ্ছেদের অবিবেচনাপ্রসূত ব্যবহার ওই যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দেয়। ইসলামে এটি বৈধ কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে চিহ্নিত।

হিন্দু বিবাহ-বিচ্ছেদ

হিন্দু ধর্মমতে বিয়ে একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব। তাই বাংলাদেশের আইনে হিন্দুদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের ব্যবস্থা নেই। ভারতে পঞ্চাশের দশকের আইন সংস্করণের মাধ্যমে  হিন্দু বিয়েকে একটি চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে আইনগতভাবে বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগ তৈরী করা স্ত্রী যদি একান্তই মনে করেন যে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করা সম্ভব নয়, তাহলে তিনি পিত্রালয়ে বা অন্য নিরাপদ স্থানে পৃথকভাবে থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী। ১৯৪৬ সালে বিবাহিত নারীর পৃথক বাসস্থান এবং ভরণপোষণ আইন পাস হওয়ার পর, এক স্ত্রীর বর্তমানে স্বামী অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকলেও স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য থাকবেন। এছাড়া নিচের কারণগুলোর উদ্ভব হলেও একজন বিবাহিত নারী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী:

  • স্বামী কোন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, যা সে স্ত্রীর কাছ থেকে পায় নি
  • স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে এবং নিষ্ঠুরতা যদি এমন হয় যে স্বামীগৃহে তার জীবননাশের আশঙ্কা রয়েছে
  • স্বামী যদি স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই তাকে পরিত্যাগ করে
  • স্বামী যদি স্ত্রীর বর্তমানে পুনরায় বিয়ে করে
  • স্বামী ধর্মান্তরিত হলে
  • স্বামী যদি ঘরেই কোন উপপত্নী রাখে অথবা অভ্যাসগতভাবে উপপত্নীর সাথে বসবাস করে
  • অন্যান্য যৌক্তিক কারণে

খ্রিস্টান ধর্মমতে বিবাহ-বিচ্ছেদ

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। এটি ১৮৬৯ সালের, ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্ট নামে পরিচিত। কিন্তু এ আইনের মাধ্যমে কোনো ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বিবাহবিচ্ছেদ ঘটালে তা ক্যাথলিক মণ্ডলি কর্তৃক গৃহীত হবে না। কেননা ক্যাথলিক মণ্ডলি বৈধ বিয়েতে বিচ্ছেদ মানেন না। প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বৈধ বিয়ের বিচ্ছেদ মেনে নেয়। তবে মহামান্য পোপের (ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মযাজক ) বিশেষ বিবেচনায় অথবা চার্চের হস্তক্ষেপে কিছু ক্ষেত্রে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হতে দেখা যায়।

১৮৬৯ সালের ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্টে বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে নারীকে অধিকার দিয়েছে। এক্ষেত্রে স্ত্রীর ক্ষমতা ও অধিকারকে স্বামীর পাশাপাশি সমতা দেওয়া হয় নি। ভারতে কয়েক বছর আগে আইনটি সংশোধন করে স্বামী ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনটির ১০ ধারায় কোন কোন কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করা যাবে তা উল্লেখ করা আছে। আইনটির ১৮ ধারা অনুযায়ী, পুরুষত্বহীনতা, বিবাহনিষিদ্ধ আত্মীয়তার সম্পর্ক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ও একাধিক বিয়ের কারণে বিয়ে বাতিলের বিধান আছে। ২২ এবং ২৩ ধারার অধীনে তারা আইনগত বিচ্ছেদ (জুডিশিয়াল সেপারেশন ) তথা উভয়ে আলাদা থাকার জন্য আবেদন করতে পারেন। স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে স্ত্রী এটা চাইতে পারেন। তবে নিষ্ঠুরতার জন্য ডিভোর্স চাইতে পারেন না।খ্রিস্টান বিবাহবিচ্ছেদ বা ওপরের যেকোনো ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতের পরিবর্তে হাইকোর্ট বিভাগ অথবা জেলা আদালতে মামলা করতে হয়।

লিখেছেনঃ

নোমান হোসাইন তালুকদার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর