মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যেতে বসেছে সম্পর্কের ভাষা? তৈরি হচ্ছে কমিউনিকেশন গ্যাপ? সম্পর্কের চৌহদ্দি থেকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরিয়ে রাখুন প্রযুক্তিকে। বিশেষ আলোচনা।
ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল ফোন…আমাদের জীবনযাপনের সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে এগুলো। কাজের জগতে এদের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না তা নিঃসন্দেহ। কিন্তু সেই কাজের জগৎ পেরিয়ে গ্যাজেট যখন ঢুকে পড়ে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে, তখন সম্পর্কগুলোও গ্যাজেটের ভারে কিছুটা আড়াল হয়ে যায় বই কী! এমন অনেক দম্পতিই চোখে পড়ে যাঁরা হয়তো ঘটা করে ‘ডেট’-এ বেরিয়েছেন, বা সারাদিনের শেষে নিজেদের মতো করে একান্তে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তাঁদের সেই মহার্ঘ্য একান্ত মুহূর্তেও তো বাধ সাধছে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ। পাশাপাশি বসে নিঃশব্দে দু’জনে কাজ করে যাচ্ছেন কম্পিউটারে। বা চ্যাট করে চলেছেন দুূরের কোনও বন্ধুর সঙ্গে। এ দৃশ্য মোটেও বিরল নয়! যন্ত্রের চাপে কোথাও স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে কথাবার্তা, প্রেমালাপ। অভ্যেসের বশে না চাইলেও হাত চলে যায় ফোনের দিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনবরত স্ক্রোল করে চলেন আপনি।
ডিজিটাল দুনিয়া কোথাও বাস্তবের কমিউনেকশনের বিরোধী হয়ে গেলে সম্পর্কে কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই। তাই, এ ধরনের ডিজিটাল জগতে বুঁদ হয়ে থাকা যুগলদের জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল ডিটক্সের। একে অপরের প্রতি আকর্ষণ যেন প্রযুক্তির কারণে হারিয়ে না যায়, তাই এই প্রচেষ্টা। প্রথমেই আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ কমিয়ে দিন। তাঁকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে পারেন। তবে সামনাসামনি কথা না বলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাট করার কোনও অর্থ নেই! একে অপরের ছবিতে লাইক বা কমেন্টসও যথাসম্ভব কমিয়ে দিন। ধীরে ধীরে দেখবেন এটি আপনার অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে। বাড়িতে কোনও বিষয় নিয়ে মন কষাকষি হলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করুন। মোবাইলে চ্যাটিং অ্যাপে ঝগড়া করবেন না। নিজেদের জন্য রোজ কিছুটা সময় বার করুন।
ওই নির্দিষ্ট সময়টুকুতে মোবাইল সাইলেন্ট মোডে দিয়ে রাখতে পারেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনও ফোন না এলে বাকি ফোন ধরারই প্রয়োজন নেই। সাধারণত বেশিরভাগ দম্পতিই সারাদিন কাজের শেষে রাতে কিছুটা অবসর পান। কিন্তু রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ল্যাপটপ বা মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটিতে ব্যস্ত থাকায় সেই অবসরটুকুও কাজে লাগে না। এই সময়টুকু অন্তত চেষ্টা করুন প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখতে। কমিউনিকেশন যে কোনও সম্পর্কের মূল ভিত্তি। কোথাও বেড়াতে গেলে কয়েকদিন অন্তত মোবাইলের ব্যবহার কমান। ক’দিন পরেই তো আবার সেই চেনা জগতে ফিরতে হবে। তার আগের সময়টুকু না হয় নিজেদের মতো করেই কাটালেন। তবে এই ডিটক্স পিরিয়ড কতদিন চলবে, তা নির্ভর করবে আপনাদের উপরেই। প্রথম প্রথম ডিজিটাল জগৎকে একেবারে দূরে সরিয়ে রাখতে না পারলে ল্যাপটপে একসঙ্গে কোনও সিনেমা দেখুন। বা মোবাইলে একসঙ্গে গান শুনুন। সুত্রঃ সানন্দা