সংসারের দায়-দায়িত্ব কি শুধুই স্ত্রীর, স্বামীর নয়?

সংসার হল এক ধরণের সামাজিক চুক্তি যেখানে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই বিয়ের মাধ্যমে একে অন্যের উপর কিছু দায়িত্ব ও আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়। একটা সংসার শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী নয় বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সকলকে নিয়ে গঠিত হয়।

আমাদের বর্তমান সমাজে অনেকই নিজেকে আধুনিক বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু আসলেই কি তারা আধুনিক? যদি তাই হয়, তাহলে এখনো সংসারের সব দায়-দায়িত্ব শুধুমাত্র ঘরের বউ এর কেন ধরা হয়? ছেলেরা বাইরে থেকে অর্থ উপার্জন করে এনে নিজের উপর অর্পিত সব দায়িত্ব সুসম্পন্ন হয়ে গেছে ভেবে নাক উঁচিয়ে বসে থাকে। ঘরের বউটা যে তার বর ও পরিবারের নাশতা বানানো দিয়ে সকাল শুরু করে সারাদিন এর ওর সকল প্রয়োজন  মেটাতে মেটাতে নিজের সব ভুলে গিয়ে আবার রাতে স্বামীর চাহিদা মেটাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছে তার দিকে ছেলেদের ঠিক কতটা খেয়াল আছে? সাধারণত একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে ছেলেরা বাইরে কাজ করে থাকে আর মেয়েরা সেই ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে আবার ঘুমানো পর্যন্ত  একটানা কাজ করে আর যে মেয়েরা চাকুরি করে তারা বাইরে ও ঘরে সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তার দিকে কয়জন নজর দিচ্ছে?

স্বামীরা চাইলেই পারে তার স্ত্রীর কাজে একটু সাহায্য করতে। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, সংসার সামলানোতে স্ত্রীকে একটু সাহায্য করাও তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যেমন- সংসারের কিছু কাজের সিদ্ধান্ত নিতে স্বামী তার স্ত্রীকে সাহায্য করতে পারে। যদিও মেয়েরা ছেলেদের থেকে পারিবারিক ও সাংসারিক সিদ্ধান্তগুলো বেশি ভালো নিয়ে থাকে। টুকিটাকি কিছু কাজ যেমন- বাচ্চাকে পড়ানো, অফিসে যাওয়ার সময় বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে যাওয়া, বাবা-মাকে ওষুধ খাওয়ানো, তাদের কিছু লাগবে কিনা তার খেয়াল রাখা, নিজের কাজের দায়িত্ব যেগুলো নিজেরই করা সম্ভব তা স্ত্রীর করার জন্য বসে না থেকে নিজেই করে ফেলা, রাতে বিছানাটা গোছানো, মশারি টাঙ্গানো, ঘুমাতে যাওয়ার আগে দরজা ও লাইট, ফ্যান চেক করে ঘুমানো, বোতলে পানি ঢালা ইত্যাদি কাজ বর চাইলেই করতে পারে।

ঘরের বউটা সারাদিন ধরে সবার খেয়াল রাখে তাই বর যদি একটু তার বউ এর  দিকে খেয়াল রাখে তাহলে বউটার মন অনেক ভাল ও ফুরফুরে থাকে। আর বউ এর মন ভালো থাকলে সংসারটাও সুন্দর ও সুখী হয়। স্ত্রীকে খুশি রাখতে স্বামী মাঝে মধ্যে বিশেষ কিছু উপহার দিতে পারে আর সেটা যদি হয় স্ত্রীর পছন্দের কিছু তাহলেতো কথাই নেই। এছাড়া স্বামী মাঝে মাঝে স্ত্রীকে দূরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে পারে। এতে স্ত্রীর সাথে সময় কাটানোর সাথে সাথে বোঝাপড়াও আরো ভালো হবে।

নারীরা জন্মগতভাবে শারীরিক দিক থেকে তুলনামূলক পুরুষের থেকে একটু দুর্বল হয়। তাই স্বামীর উচিত স্ত্রীর সাথে সবসময় সুমধুর ভাষায় কোমল করে কথা বলা। স্বামী-স্ত্রীর নিবিড় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও স্বামীকে একটু যত্মশীল হওয়া দরকার। স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বুঝে তারপর মনের বাসনা প্রকাশ করা উচিত। এতে সম্পর্ক মধুর হওয়ার সাথে সাথে বাড়বে পরস্পরের ভরসা ও নির্ভরতা। স্ত্রীর অন্যান্য কিছু কাজ যেমন- রান্না, সাজসজ্জা, আচরণ ইত্যাদি ব্যাপারগুলোতে প্রশংসা করা উচিত এতে করে স্ত্রী খুশি থাকবে আর কথায় আছে মন ভালোতো সব ভাল।

সুতরাং বলা যায়, সংসারে স্বামীর একটু শ্রম দেয়ায় বেড়ে যাবে পরস্পরের নির্ভরতা, দায়িত্বশীলতা, অধিকারবোধ ও শ্রদ্ধা। ফলশ্রুতিতে স্বামী ও স্ত্রী মিলে সংসারটাকে অতি সহজে পরিপূর্ণ ও স্বার্থক করতে সক্ষম হবে।