ওথেলো সিনড্রম – ভালোবাসা থেকে জন্মানো ঈর্ষা জনিত একটি রোগ

সম্পর্কে নিত্য সমস্যাঃ আপনি যদি বিপরীত লিঙ্গের কোন বন্ধুর সাথে কথা বলছেন, মেলা মেশা করছেন, আপনার কাছের বিপরীত লিঙ্গের মানুষটা এই আচরণ বা বন্ধুত্ব মেনে নিতে পারছে না। সারাক্ষণ ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে সন্দেহ করে। যা আসলে আপাতত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে বিকৃত মস্তিষ্ক ছাড়া আর কিছুই না। সে আপনাকে ভালোবাসে। স্বাভাবিক ভাবেই অন্য লিঙ্গকে সে ঈর্ষা করবে। তবে তা অতিরঞ্জিত হয়ে যায়। সে আপনাকে নিয়ে ভয়ে থাকে।  হারানোর ভয়।

মনোবিজ্ঞানীরারা যা বলেনঃ  মনোবিজ্ঞানে ভালোবাসার সাথে ঈর্ষার একটি সম্পর্ক আছে।  “অতিরঞ্জিত ঈর্ষা ও অতিমাত্রায় সন্দেহবাতিক কে তারা একটি রোগ বলে। যে রোগের নাম ‘ওথেলো সিনড্রম`

ওথেলো সিনড্রোম আসলে কীঃ  স্ত্রীর সতীত্বের প্রতি সন্দেহ থেকে এবং সেগুলো বিশ্বাস করাকেই ‘ওথেলো সিনড্রোম’ বলে। সাধারণত পুরুষরা এই রোগে বেশি ভোগেন। তবে অনেক মহিলার মধ্যেও ‘ওথেলো সিনড্রোম’ দেখা যায়। নামটি এসেছে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের নাটক ‘ওথেলো’ থেকে। ওথেলো সিনড্রোমের রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না। নিজেকে সবসময় সুস্থ মনে করেন। নিজের ধারণাটিকে প্রবলভাবে বিশ্বাস করেন। এই মিথ্যা অলীক বিশ্বাসের কারণে অনেক সময় এসব রোগী তাদের স্ত্রীকে হত্যা পর্যন্ত করেন।

বিদেশে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নরহত্যা করার জন্য জেলে গেছেন এমন লোকের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশই ‘ওথেলো সিনড্রোম’-এর রোগী। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা, সিজোফ্রেনিয়া, মদে আসক্তি প্রভৃতি। এ ছাড়া কিছু শারীরিক অসুখের কারণেও ‘ওথেলো সিনড্রোম’ হতে পারে। যেমন মস্তিষ্কে টিউমার, এন্ডোক্রাইন ও বিপাক ক্রিয়ার ত্রুটি প্রভৃতি।

রোগের উপসর্গ : স্ত্রীর সতীত্বের প্রতি তীব্র সন্দেহবোধ হলো রোগের প্রধান উপসর্গ। রোগী মনে করেন, তার স্ত্রী গোপনে অন্য পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন। স্ত্রী যদি সামান্য সাজগোজ করেন, তাহলে রোগী মনে করেন গোপন প্রেমিকের জন্যই এই সাজগোজ। এ নিয়ে রোগী সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন। এক ধরনের ক্রোধ তার মধ্যে কাজ করে। সামান্য কথাতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তার বন্ধুদেরও সন্দেহের চোখে দেখেন। তার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে।  খাবারের প্রতি অনীহা আসে। স্ত্রীর অসততা প্রমাণ করার জন্য গোপনে স্ত্রীর প্রতি নজর রাখেন। স্ত্রীর কাপড়-চোপড় গোপনে পরীক্ষা করেন।  গোপনে স্ত্রীর ডায়েরি ও কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেন। স্ত্রীর নামে কোনো চিঠি এলে তা সরিয়ে ফেলেন। পড়ে দেখতে চান তা কার লেখা। অনেক সময় স্ত্রীর গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য লোক নিয়োগ করেন।

বাসায় ফোন থাকলে মাঝে মধ্যেই ফোন করে দেখেন স্ত্রী বাসাতেই আছে কি-না।  ফোন এনগেজড থাকলে তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়।  রোগীর মধ্যে প্রচ ঈর্ষার জন্ম নেয়। কথায় কথায় স্ত্রীকে মারধর করেন। রোগীর নিজের মধ্যে কোনো সততার বালাই থাকে না। তার নিজের যৌন অসততার প্রতিফলন তার স্ত্রীর মধ্যেই দেখেন।  স্ত্রীর চারিত্রিক কল্পিত অসততার কথা আত্মীয়-স্বজনকে বলেন।  পদে পদে স্ত্রীকে হেয় করতে চান। স্ত্রী অপমানিত হলে মনে মনে খুশি হন। স্ত্রীকে নানাভাবে নির্যাতন করেন। জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করতে চান। রোগী নিজেকে সবসময় অপূর্ণ মনে করেন। তার বিশ্বাস জন্মায় যে, স্ত্রী তার অর্জিত টাকা-পয়সা অবৈধ প্রণয়ের পেছনে খরচ করে তাকে নিঃস্ব করতে চায়। এসব চিন্তা করে তার স্ত্রীকে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। দুশ্চিন্তায় রোগীর স্বাস্থ্যহানি ঘটে। অনিদ্রা দেখা দেয়। মদে বা অন্য নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন।  স্ত্রী সন্তান প্রসব করলে সেই সন্তানকে অবৈধ মনে করে তাকেও তিনি নির্যাতন করে থাকেন। স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি তার প্রচণ্ড ঘৃণা জমে উঠতে থাকে।

অনেকেই বলে থাকেন এ রোগের চিকিৎসা কি? আসলে, ‘ওথেলো সিনড্রোম’ চিকিৎসা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।  চিকিৎসক স্ত্রী ও স্বামী দু’জনের সঙ্গে পৃথক পৃথক কথা বলেন এবং তাদের কথা শোনেন। দাম্পত্য জীবনের বিস্তারিত বিবরণ জানাটা অপরিহার্য। রোগীর বিশ্বাসের ভিত্তি এবং স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে হবে। রোগীকে বিশেষ মাত্রায় অ্যান্টি সাইকোটিক ওষুধের পাশাপাশি ‘বিহেভিয়ার থেরাপি’ প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। রোগীর অন্য কোনো অসুখ আছে কি-না, তাও ভালোমতো দেখতে হবে। সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হলো তাকে বোঝানো যে আপনি হারাবেন না। ভালোবেসে বুঝান। তাকে সাহায্য করুন।  লিখেছেনঃ নুসরাত জাহান জেরী, সুত্র নববার্তা

প্রকাশ করেছেন

Best Marriage Media Bangladesh

Best Marriage Media in Bangladesh | Bibahabd is the Leading Bangladeshi Matrimony website, Provides online and offline matchmaking service for marital relationship.