বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি থাকা জরুরি

সামাজিক বন্ধন হিসেবে বিয়ের আবেদন সেই পুরনো এবং রীতিটাকে সর্বজনসিদ্ধ রীতি বলা চলে।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো অনেকেরই বিয়ের মতো বড় একটি বিষয়ে আগাম কোনো মানসিক কিংবা শারীরিক প্রস্তুতি থাকে না। পরিবারের সিদ্ধান্তে অথবা নিজের পছন্দে হুট করেই বিয়ের পিড়িতে বসে যাওয়া হয়।কিন্তু জেনে রাখা উচিত, বিয়ে মানেই হচ্ছে একটি নতুন জীবনের সূচনা। যে নতুন জীবনে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গেও আরেকজনের সক্রিয় অংশীদারিত্ব শুরু হবে। দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করতে বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। তাহলে সম্পর্ক হয় অটুট, আজীবন।আজীবন।যারা বিয়ে করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা জেনে নিন বিয়ের আগের মানসিক প্রস্তুতিগুলো।

বিয়ের বাস্তবতা উপলব্ধি :  মানসিক প্রস্তুতির প্রথম ধাপটি হচ্ছে বিয়ের বাস্তবতা উপলব্ধি করা। কেউ কেউ নিজের ভাবনা কিংবা ইচ্ছার সূত্র ধরেই বৈবাহিক সম্পর্কের তাত্পর্য বুঝতে পারেন। আবার অনেক মেয়ে বা ছেলে আগে থেকেই এসব বুঝবে না। তাই মা কিংবা কাছের অভিজ্ঞ কেউ তাকে ইতিবাচকভাবে জীবনের বাস্তবতা বুঝিয়ে বলতে পারেন। ছেলেমেয়ে দুজনকেই পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে। তা হলে দাম্পত্য জীবনে অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা যাবে।

দায়িত্ববান হতে হবে:  নিজের, পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববান হতে হবে। নিজের স্বভাবের কোনো নেতিবাচক দিক থাকলে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে।

মানিয়ে চলা: ছেলেমেয়ে দুজনকেই পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকতে হবে। তা হলে দাম্পত্য জীবনে অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

ধৈর্যশীল শ্রদ্ধাশীল হতে হবে:  ছেলে-মেয়ে দুই জনকেই ধৈর্যশীল ও পরস্পরের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এ দুইটি গুণের অভাবে পরিবারগুলোতে দাম্পত্য কলহ বাড়ছে। ছোট খাটো বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার ইতিবাচক মানসিকতা রাখতে হবে।

আলোচনা ও বোঝাপড়া ভালো: নিজের সব দিক নিয়ে বিয়ের আগে উভয়ে আলোচনা করলে বোঝাপড়ার শুরুটা ভালো হবে। এটিও ঠিক যে, একেকজনের জীবনযাপন একেকভাবে নির্ধারিত হয়। পারিপার্শ্বিকতায় ভিন্নতা থাকে।প্রতিটি পরিবারের আলাদা নিয়মকানুন, আচার-ব্যবহার থাকে। সেসব আগে থেকে একটু জানলে পরবর্তী সময় নতুন সদস্যের বুঝতে সহজ হয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু মেয়েরাই মানিয়ে চলবে, তা নয়, ছেলেটিকেই বরং সহযোগিতাপরায়ণ হতে হবে। মেয়েটি সব ছেড়ে তাদের পরিবারে আসছে। ছেলেটির পরিবারকে এ বিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। ছেলেকে বোঝাতে হবে সামান্য বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া না করতে। যে কোনো সমস্যা হলে তারা যেন খোলাখুলি আলোচনা করে নেয়।

আন্তরিকতা জরুরি: বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীর পর্যালোচনায় উঠে আসে বিয়েতে একজন ছেলের নিবাসের তেমন পরিবর্তন হয়না। কিন্তু একজন মেয়ের যে বাড়িটিতে বাবা-মা, ভাইবোনোর সঙ্গে শৈশব-কৈশোরের স্বর্ণালী সময়টুকু কাটানো হয় সেই শিকড় থেকে তাকে উপড়েই নিয়ে যেতে হয় নতুন পরিবেশে। তাই নতুন অতিথিকে বরণ করতে হবে কন্যারুপে, ভগ্নিরুপে। এক্ষেত্রে স্বামীর ভূমিকা এবং ছেলেপক্ষের ভূমিকা-আন্তরিকতা জরুরি।শাশুড়ি নিয়ে অনেক মেয়ের মনে ভয় থাকে। বিয়ের আগে সুযোগ থাকলে মেয়ের সঙ্গে ছেলের পরিবার কথা বলে নিতে পারে। তবে শুরুতেই মেয়েকে নেতিবাচক কোনো বিষয় বলা উচিত নয়।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত নয়: ছেলের বিয়ের আগেই পরিবারের সদস্যদের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে তারা যেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী না হন। এমনকি ছেলেরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত নয়। অনেক সময় কল্পনা আর বাস্তবতা মিলে যায় না। তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। একটু সচেতন, সহযোগিতাপরায়ণ ও বোঝাপড়া ভালো হলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হতে বাধ্য। এটি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের মনোবিজ্ঞানী তামিমা তানজিন বলেন, আসলে মানসিক প্রস্তুতিটা নেওয়া দরকার বিয়ে-পরবর্তী জীবনে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। শুধু মানসিক নয়, শারীরিক প্রস্তুতিটাও নিতে হবে।  দাম্পত্য জীবনে শারীরিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কাছের কেউ বা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া যেতে পারে।   শেষ কথা, বিয়ের আগের সময়টা পরিবারের সবার সঙ্গে উপভোগ করুন।  একদম মানসিক চাপমুক্ত থাকুন।  শুভকামনা।

সংকলিত, সূত্র : অর্থসূচক ,বাংলাদেশ প্রতিদিন, প্রথম আলো