বিয়ের আগে সঙ্গীর সম্পর্কে যা জানা জরুরি

সংসার মানে গোলাপের বিছানা নয়; সেখানে কাঁটার খোঁচাও খেতে হয়। আবার এমন করা যাবে না যে ঝড় আসবে বলে ঘর বাঁধব না। বরং শক্ত করে বাঁধব। ঝড়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকব আপন জনের পাশে। সে জন্য একটা খসড়া পরিকল্পনা আন্তত থাকা চাই। সঠিক পরিকল্পনাতেই বদলে যায় অনেক কিছু। সংসারযাত্রার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বুঝেশুনে চলতে হয়।  মাথা খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু ভালোবাসায় সংসার টেকে না; সঙ্গীকে ভালোবাসার পাশাপাশি স্মার্টনেসও দেখাতে হয়। এক্ষেত্রে দুজনকেই একটু মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়। বিপত্তি বাঁধে তখনই যখন দুজনের কোনো একজন সম্পর্কে ছাড় দিতে না চায়! আপনি তার সঙ্গে কতটা মিলেমিশে থাকতে পারবেন তা জানা যাবে কিছু বিষয়ে খেয়াল করলেই। সম্ভব হলে তার বিষয়ে জেনে নিন-

বয়স: বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি বয়সে বিয়ে হলে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। আবার মেয়েদের বেশি বয়সে বিয়ে হলে সন্তান শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়াসহ ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে মেয়েদের ত্রিশ বছরের পর প্রথম বাচ্চা নেয়াটা খুবই ঝুঁকির কারণ হয়ে যায়। তবে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হলেও বেশ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যায়। অল্পবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণটা খুবই ঝুঁকির। তাই বিয়ের জন্য ছেলেমেয়ের উভয়ের বয়স বিবেচনা করাটা খুব জরুরি একটি বিষয়। বিয়ের পাত্র পাত্রী দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। ছেলের বয়স মেয়ের বয়সের থেকে ৪/৫ বছর বেশি হলে ভালো।

সম্মতি : বিয়েতে ছেলের সম্মতি আছে কি না জেনে নেয়াটা যেমন জরুরী একই ভাবে মেয়ের সম্মতি আছে কি না সে বিষয়ে ছেলেরও জানা দরকার।

আয়ের উৎস : পাত্র বা পাত্রীর কর্মক্ষেত্রে খোঁজ নিন, তার উপার্জনের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। তিনি কোনও অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত কি না বা তার আয়ের উৎস যথাযথ কি না সে ব্যাপারে খোঁজখবর করুন। অনেক সময় ছেলে কম বেতন পেলেও তা বাড়িয়ে বলা হয়। আবার কর্মক্ষেত্রে পদমর্যাদা ছোট হলে তা-ও গোপন করা হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটতে পারে। বিয়ের পূর্বে নিজের আর্থিক সচ্ছলতার দিকটিও বেশ ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত।

বিশেষ কোন রোগ আছে কি না:  আমাদের সমাজে এর তেমন প্রচলন না-হলেও বিয়ের আগেই ছেলে এবং মেয়ের মেডিক্যাল টেস্ট করা জরুরি। এইডস, হেপাটাইটিস বা কোনও যৌন রোগ আছে কি না, তা জানা খুবই দরকার। যাতে তাঁর সঙ্গী সেই রোগে আক্রান্ত না-হয়। তাই বিয়ের আগে মেডিক্যাল টেস্টের প্রয়োজন আছে। বিশেষ কিছু রোগ বংশগতির মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে বিস্তার করে। এর মধ্যে রয়েছে থ্যালাসেমিয়া, মাসকুলার ডিসট্রফি (মাংসপেশীতে একধরনের দুর্বলতা), স্নায়ুর বিশেষ কয়েকটি অসুখ, (মৃগী রোগ), অ্যাজমা, গ্লুকোমা ইত্যাদি। এসব রোগের যাবতীয় পরীক্ষা বিয়ের আগেই করে নেয়া উচিৎ। আর সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন বিয়ে পরবর্তী সতর্কতা বিষয়ে।

ব্লাডগ্রুপ :  স্বামীর ব্লাডগ্রুপ নেগেটিভ হয় তাহলে স্ত্রীর ব্লাডগ্রুপ পজেটিভ বা নেগেটিভ যে কোনো একটি হলেই হবে। কিন্তু স্বামীর ব্লাডগ্রুপ যদি পজেটিভ হয়, তাহলে স্ত্রীকেও পজেটিভ ব্লাড গ্রুপের একজন হতে হবে। স্ত্রীর ব্লাডগ্রুপ নেগেটিভ হলে পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।। একজন নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের নারীর সাথে একজন নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের পুরুষের বিয়ে হওয়াটা নিরাপদ।।

পরিকল্পনা আলোচনা করে নিতে পারেন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করুন। এতে বিয়ের পরে সংসার, ক্যারিয়ার ইত্যাদি বিষয়ে সমস্যা কম হবে। সম্ভব হলে বাচ্চা কবে নিতে চান এ ব্যাপারেও কথা বলুন। এছাড়াও আপনারা বিয়ের পর যৌথ পরিবারে থাকবেন, নাকি আলাদা থাকবেন, তাও বিয়ের আগে আলোচনা করে নিশ্চিত হয়ে নিন।কোথায় থাকবেন, কারও কর্ম নিয়ে কারও সমস্যা আছে কি না? তাও জেনে নিন।

সে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: বিয়ের আগে ভালো করে খেয়াল করুন সে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিষয়ে কোনো দ্বিধা থাকলে বিয়ে না করাটাই ভালো।

সঙ্গীর পরিবার: বিয়ের আগে সঙ্গীর পরিবারের সঙ্গে একবার হলেও দেখা করে নিন। তাহলে বিয়ের কথা শুরুর হওয়ার আগে আপনি বুঝতে পারলেন তাঁরা কেমন ধরনের মানুষ। এতে সব কথাবার্তা মানাতে সহজ হবে।

আপনাকে কতটুকু সম্মান করে: প্রতিটি সম্পর্কে সম্মান থাকাটা খুবই জরুরি। তাই বিয়ের আগে ভালো করে খেয়াল করুন সে আপনাকে কতটুকু সম্মান দিচ্ছে। এই বিষয়ে ঘাটতি থাকলে সংসারে কখনোই সুখী হতে পারবেন না। আপনার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয় কি না যে বিয়ের আগে আপনার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয়, সে বিয়ের পরও দেবে। তাই এমন মানুষকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে ফেলুন। আর এমনটা যদি না হয়, তাহলে ভাবুন, ভাবুন, আরো ভাবুন ।

ঝগড়া কীভাবে সামলায়: ঝগড়া হওয়ার পর সে বিষয়টাকে কীভাবে সামলে নেয়, ভালো করে খেয়াল করুন। যদি দেখেন আপনার ওপর সব দোষ চাপিয়ে নিজে ভালো সাজে, তাহলে তাকে বিয়ে করাটা ঠিক হবে না। কারণ বিবাহিত জীবনেও সে এমনটাই করবে। ভালবাসা আর ক্ষমা এই দুটি জিনিষের কাছে পৃথিবীর অনেক যুক্তি ম্লান হয়ে যায়। বেঁচে থাকে পথ চলা। যারা নতুন বিয়ে করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য শুভ কামনা রইল।  সূত্র: সংগৃহিত