সুখ কাকে বলে

সুখ কাকে বলে

যদি কেউ আপনাকে সুখ কাকে বলে এমন প্রশ্ন করেন তাহলে আপনি নিশ্চয় নানা ধরনের উত্তর দিতে পারেন। 

যেমন সুখ হল মায়ের যত্ন, সুখ হল শিশুর হাসিমুখ । সুখ হল সবুজ রঙের জীবনযাত্রা, সুখ হল পাহাড়ী পথ, সুখ হল মুঠোভরা আশা, সুখ হল ফুল ভরা মাঠ, সুখ হল বন্ধুদের আন্তরিকতা আর যত্ন, সুখ হল নীরবে কাউকে ভালবাসার উপলব্ধি।  সুখ হল নিজের প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনের আনন্দ । 

সুখ হল বিশ্বে নিজের জীবনসংগীর উপস্থিতি, সুখ সম্বন্ধে প্রতিটি লোকের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভংগী আছে ।

ওয়াং জুনসিয়া, চীনের একজন বিখ্যাত দূরপাল্লার দৌড়বিদ।  তিনি চীনদেশে বা বিশ্বে বহু বার প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন । তিনি নিজের সুখী জীবন সম্পর্কে বলেছেন, নিজের ছেলের সংগে থাকা সবচেয়ে সুখের ব্যাপার। একদিন ওয়াং জুনসিয়া নিজের বাড়ির উঠানে দুবছর বয়সের ছেলের জন্যে দোলনা বানাছিলেন । তিনি জায়গা বেছে নিয়েছেন এবং দড়ি নিয়ে গাছে উঠেছেন ।

দোলনা বানানোর কাজ শেষ হওয়ার মুহুর্তে তার ছেলে অনেক কষ্ট করে গাছে উঠার চেষ্টা করছিল, ওয়াংজুনসিয়া দেখে ছেলেকে বলেন, দোলনা বানানো হয়েছে, মা এখনি নামছি, তুমি উঠো না, বিপদজ্জনক । ঠিক এই সময়ে ছেলে তার পা ধরেছে, গাছে উঠার চেষ্টা ছেড়ে দিল এবং চীত্কার করে বলল, মা আমি তোমাকে রক্ষা করতে এসেছি । এই সময়ে ওয়াং জুনসিয়ার দু-চোখ-ভরা জল । তবে তা দুঃখের নয়, আনন্দাশ্রু ।

ওয়াং চি, চীনের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র ও টিভি-শিল্পী । তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বছর কাটিয়েছেন।  অভিনয়ের জন্যে তিনি দেশে ফিরে এলেন ।

তিনি বলেছেন, আমার এই বয়সে আমার কাছে সবচেয়ে সুখীব্যাপার হল নিজের সন্তানের সুষ্ঠু-বড় হওয়া চাক্ষুষ করা, তাদের আনন্দ উপভোগ করা, তাদের সুখ অনুভব করা।  যখন বাচ্চারা ইস্কুল থেকে পড়াশোনার ফলাফল হাতে নিয়ে বাসায় ফিরে উচ্চস্বরে আমাকে বলে, মা আমি আবারও প্রথম স্থান অধিকার করেছি। তখন আমি সংগে সংগে তাকে কোলে নিয়ে তার গালে চুমো খাই এবং তার সংগে তার আনন্দ উপভোগ করি ।

চিনলি, এক নামকরা কম্পানির কর্মচারী। তিনি বলেছেন, অনেক বছর আগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন ।যখন বাবামাকে দেখতে স্বদেশে ফিরে আসেন তখন বাবামা তার জন্যে যে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তা দেখা তার কাছে সবচেয়ে সুখী ব্যাপার ।

বিশেষ করে প্রতিদিন সকালে যখন তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠেন তখন দেখতে পারেন যে, মা রান্না ঘরে নাস্তা বানাছেন, আর বাবা বারান্দায় ফুলের টবসাজাছেন, এই সময়ে তিনি যেন আবার মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময়ে ফিরে এসেছেন, যেন বাবামার কাছে থাকার সেই আনন্দের বাল্যবয়সে ফিরে গেছেন ।

চেন স্যুলান একজন বিখ্যাত গায়িকা, তার কন্ধে গাওয়া “একবার যেতে দেয়না আমার ছোট সোনার গায়” গানটি শ্রোতাদের সমাদর পেয়েছে । সুখী জীবন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, গান গাওয়া আমার সারা জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার ।

একবার, তার ব্যক্তিগত সংগিতানুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অনেক দর্শক ও শ্রোতা তাকে ঘিরে তার স্বাক্ষর চেয়েছিলেন । তার চৌদ্দ বছর বয়সের ছেলে তার পাশে দাড়িয়ে গর্বিত কন্ঠে অন্যদের বলছিল, “তিনি আমার মা”। ছেলের কথা শুনে খুশীতে চেন স্যুলানের দুচোখের জল গড়িয়ে পড়তে থাকে ।

সুখ মানে আরও বেশি জিনিস পাওয়া নয়, সুখ হল, যে জিনিস পাওয়া গেছে তা উপভোদ করতে শেখা, এক কথায়, সুখের অর্থ যাই হোক না কেন, এটা বলা যায় যে, তা প্রতিটি মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং প্রতিটি লোকের জীবনযাত্রার গুনগতমান যাচাইয়ের মানদন্ড। প্রিয় বন্ধু, আপনার দৃষ্টিতে সুখের অর্থ কি?

আসুন  দেখি উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে সুখ কাকে বলে –

সুখ একটি মানবিক অনুভুতি।  সুখ মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।  জৈবিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, দর্শনভিত্তিক এবং ধার্মিক দিক থেকে সুখের সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং এর উৎস নির্ণয়ের প্রচেষ্টা সাধিত হয়েছে।  

সঠিকভাবে সুখ পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন।  গবেষকেরা একটি কৌশল উদ্ভাবন করেছেন যা দিয়ে সুখের পরিমাপ কিছুটা হলেও করা সম্ভব।  মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা তাত্ত্বিক মডেলের ভিত্তিতে সুখ পরিমাপ করে থাকেন।  এই মডেলে সুখকে ইতিবাচক কর্ম ও আবেগ সমূহের সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  এছাড়া এক্ষেত্রে তিনটি বিশেষ অবস্থাকেও বিবেচনা করা হয়: আনন্দ, অঙ্গীকার এবং অর্থ।

গবেষকগণ কিছু বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করেছেন যেগুলো সুখের সাথে পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত: বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক, বহির্মুখী বা অন্তর্মুখী অবস্থা, বৈবাহিক অবস্থা, স্বাস্থ্য, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা, আশাবাদ, ধর্মীয় সম্পৃক্ততা, আয় এবং অন্যান্য সুখী মানুষের সাথে নৈকট্য।

সুখ পুরোপুরি বহিরাগত বিষয় নয় এমনকি মুহূর্তের আনন্দ থেকেও তা প্রাপ্ত হয় না । প্রকৃতপক্ষে, প্রচলিত ধারণায় সুখ দ্রুতগামী বলা সত্ত্বেও গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে সময়ের সাথে সাথে সুখ স্থিতিশীল হয় । সুখ আংশিকভাবে জিনগত ।

যমজ গবেষণা করে প্রাপ্ত তথ্য থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, মানুষের সুখ স্তরের ৫০ শতাংশ জিনগতভাবে নির্ধারিত হয়, ১০ শতাংশ জীবনের চলমান পরিস্থিতি এবং অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ সুখ আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়।

এ্যাক্রোনিম পিইআরএমএ সুখের সাথে সম্পর্কযুক্ত পাঁচটি বিষয়কে সংক্ষেপ করে:

১. আনন্দ (সুস্বাদু খাদ্য, উষ্ণ বাথ, ইত্যাদি), ২. যোগদান (বা প্রবাহ, একটি উপভোগ্য কার্যকলাপ যা এখনো চ্যালেঞ্জিং পর্যায়ে আছে), ৩. সম্পর্ক (সামাজিক সম্পর্ককে সুখের অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য নির্দেশক বলা যায় ), ৪. অর্থ (একটি অনুভূতির খোঁজ করা বা বড় কিছুর সাথে সম্পর্কিত), এবং ৫. অর্জন (বাস্তব লক্ষ্য উপলব্ধি করা)

এবং বিশেষ করে পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কযুক্ত ভালোবাসার ক্ষমতা এবং পারষ্পরিক সংযুক্তি যা মানুষের জীবনে সুখের একটি দৃঢ় অবস্থার কথা বলে ।

মস্তিষ্কের বামদিকের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের উচ্চ কার্যকলাপের দিকে লক্ষ্য করে বুঝা যায় যে এই অংশটির সাথে মানুষের সুখানুভূতির আন্তঃসম্পর্ক আছে ।

এটি যুক্তিযুক্ত করা হয়েছে যে টাকার মাধ্যমে কার্যকরভাবে সুখ কিনতে পারা যায়না যদি না একে সুনির্দিষ্ট উপায়ে ব্যবহার করা হয় । ” এটি ছাড়াও ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ আছে যার মাধ্যমে তারা সহজেই খাবার কিনতে পারে, নতুন কাপড় পরিধান এবং ঘর বাড়ি বানাতে পারে”

– এমনকি অনেক লোকের বেশি অর্থ আছে যা তাদের সামান্য সুখী করতে পারে ।
“অন্যদের জন্য অর্থ ব্যয় করে সত্যিই আমরা অনেক সুখ অনুভব করি কিন্তু নিজেদের জন্য ব্যয় করলে ততটা করিনা “।

ধর্ম কীভাবে সুখের সাথে সম্পর্কযুক্ত তা নিয়ে কিছু গবেষণা করা হয়েছে । সাধারণ সম্পর্ক অস্পষ্ট, কিন্তু ধর্মের মধ্যে মানুষকে বেশি সুখী দেখা যায় ।  PERMA এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, ধর্ম নিজের চেয়ে আরও ব্যাপক অর্থবোধক এবং সংযোগের অনুভূতি প্রদান করতে পারে ।

ধর্ম মানুষকে সাম্প্রদায়িক সদস্যপদ দিতে পারে যা সাধারণ সম্পর্ক থেকেও বেশি শক্তিশালী । অন্য একটি উপাদান এর কথা বলা যায় যা রীতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ।

মাসলো চাহিদার অনুক্রমের একটি পিরামিড অঙ্কন করেছেন যা মানবিক চাহিদা, মানসিক এবং শারীরিক মাত্রার চিত্র তুলে ধরে । যখন একজন মানুষ পিরামিডের ধাপে উঠবে, সে আত্মতৃপ্তির চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছবে। 

প্রয়োজন পূরণের রুটিনের বাহিরে, Maslow অসাধারণ অভিজ্ঞতার মুহূর্তের কথা বলেছেন যা চূড়ান্ত অভিজ্ঞতা হিসাবে পরিচিত । তাছাড়া প্রেমের গভীর মুহূর্ত, বোঝা, সুখ, বা পরমানন্দ যার ফলে একজন ব্যক্তি অনুভব করে আরও পুরো, জীবিত, স্বয়ংসম্পূর্ণ, এবং নিজেকে বিশ্বের একটি অংশ হিসেবে অনুভব করে । এটি মিহালি সি্স্কসজেন্টমিহালি প্রবাহ ধারণার অনুরূপ।  স্ব-সংকল্প তত্ত্ব তিনটি চাহিদার সাথে সম্পর্কিত: দক্ষতা, স্বায়ত্তশাসন এবং সংশ্লিষ্টতা।

আরো ব্যাপক অর্থে সুখের খোঁজ করতে হলে আপনাকে এই লিংকে যেতে হবে। 

প্রকাশ করেছেন

Best Marriage Media Bangladesh

Best Marriage Media in Bangladesh | Bibahabd is the Leading Bangladeshi Matrimony website, Provides online and offline matchmaking service for marital relationship.