পাত্র বাছাইয়ে নারীদের যেমন পুরুষ পছন্দ

একজন মানুষের গুণাগুণ মাপার শর্টকাট কোন যন্ত্র নেই । সৎ ও আদর্শবান মানুষ হতে হলে কী কী গুণাবলী থাকা দরকার এ বিষয়ে হাজারো মন্তব্য পাওয়া যাবে। তারপর যখন আরো একটু বিস্তারিত ভাবে জানতে চাইবেন যে, একজন পুরুষের মধ্যে কী কী গুণাবলী থাকা উচিৎ; সেখানেও নানান মন্তব্য পাওয়া যাবে। একজন পুরুষ যেমন একজন সুন্দরী, শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্ববান নারী পছন্দ করেন।  তেমনি একজন নারীও চান তার সঙ্গীটি সৎ, ব্যক্তিত্ববান এবং বিশ্বস্ত হবেন।

পৃথিবীতে সমস্ত গুণাবলীর ভাণ্ডার নিয়ে কোনো পুরুষই জন্মায়নি।  সবদিক থেকে গুণাবলীসম্পন্ন পুরুষ সঙ্গী মেলা ভার। কিছু মৌলিক জিনিস আছে যেগুলো নারী-পুরুষের চাওয়ার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে পাওয়ার মধ্যে অনেক অনেক পার্থক্য আছে।  সবার দৃষ্টিভঙ্গি কিন্তু এক নয়। আপনার চোখে যা সুন্দর অন্যের চোখে তা তেমন সুন্দর নাও হতে পারে।  নারীর পছন্দ, অপছন্দ চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদির বিস্তর সন্ধান করেছেন গবেষকরা।  অনাবৃত রয়েছে অনেক রহস্য।

অস্ট্রেলিয়ান মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড মনে করেন, মেয়েদের মন পুরুষদের চেয়ে অনেক পরিষ্কার থাকে। আর সে কারণে মেয়েরা তাদের মনটাকে ঘন ঘন বদলান। আবার তাদের অনেক প্রিয় বিষয় আছে যা তারা একেবারেই বদলান না।

একজন নারী সঙ্গী বা পাত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন কোন গুণাগুণ যাচাই করেন তারই কিছুটা –

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ পাত্র নির্বাচনের জন্য অনেক তোড়জোড় দিয়েই শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা হয়। কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে ক্যারিয়ার জড়িত থাকে। সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্র না হলে এবং ভালো ক্যারিয়ার না থাকলে পাত্রীর বাবা মা বিয়ে দিতে চান না। কিন্তু বর্তমান ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ক্যারিয়ার ভিত্তিক চিন্তা ভাবনা, যোগ্যতা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতটাও দেখা উচিত।

সঠিক বয়সের পার্থক্য: আজকাল অনেকে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। সমবয়েসি কিংবা পাত্রী বড়ও বিয়ে করে থাকেন। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী পাত্রের পাত্রীর চাইতে ৩-৫ বছরের বয়সের পার্থক্য থাকা উচিত। কারণ সাইকোলজিস্টদের মতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ম্যচিউরিটি একটু দেরিতে আসে।

শারীরিক সুস্থতা: অনেকেই শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্য, বয়স, ক্যারিয়ারের কারণে পাত্র পছন্দ করে ফেলেন। কিন্তু বয়সের আগে শারীরিক সুস্থতা নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত। এর মানে এই নয় যে সাধারণ বিষয় ধরে বসে থাকা উচিত। ভবিষ্যৎ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে পাত্র/পাত্রীর সুস্থতার পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ন।

মানবিক গুণাবলী: মানুষটির মানবিক মূল্যবোধ কতোটা ভালো তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। কারণ নিজের চাইতে ছোটো এবং পজিশনের ছোটো মানুষের প্রতি তার আচরণ খারাপ হলে তার মানসিক এবং মানবিক মূল্যবোধ না থাকারই কথা। এবং এই ধরণের মানুষের সাথে সংসার পাতা যায় না।

ব্যক্তিত্ববান : আপনি দেখতে আকর্ষণীয় নাও হতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিত্ববান তো হতে পারেন। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন পুরুষদের নারীরা বেশি পছন্দ করে থাকেন। কারণ ব্যক্তিত্ববান পুরুষ সঙ্গীর পাশাপাশি অন্যের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম।

সৎ এবং বিশ্বস্ত : সঙ্গী সৎ এবং বিশ্বস্ত হবে এমনটা প্রতিটি নারী আশা করেন। তারা চান সঙ্গী যেন অবশ্যই সৎ ও স্মার্ট হয়।  নারীরা সততার মাপকাঠিতে পুরুষকে সবার আগে যাচাই করেন তার বিশ্বস্ততা। এ ক্ষেত্রে সবসময় আপনার সঠিক অবস্থানটাই জানান। এতে তার মধ্যে বিশ্বস্ততা তৈরি হবে।

পরিপক্ষ ও শান্ত স্বভাবের : লক্ষ্য করে দেখুন তিনি কতোটা খোলা মানসিকতার মানুষ। কারণ মানসিকতা যদি ছোটো হয় তাহলে আপনার ব্যক্তিস্বাধীনতায় তিনি হস্তক্ষেপ করবেন এবং আপনার ওপর কারণে অকারনে সন্দেহের দৃষ্টি দেবেন। তাই এই ধরণের মানুষ নির্বাচন করে বসবেন না। সাধারণত নারীদের মানসিক পরিপূর্ণতা পুরুষের আগে আসে। নারীরা চান তার পুরুষ সঙ্গীটি যেন মানসিকভাবে পরিপক্ক এবং শান্ত স্বভাবের হন। ভালোবাসার ক্ষেত্রে আবেগ প্রকাশ করেন এবং একইসঙ্গে সাহস করে সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা থাকে। এক কথায় নারীরা তার সঙ্গীর ওপর নির্ভর করতে পছন্দ করেন। তাই মুহূর্তে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা পুরুষের সঙ্গ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন।

কিছুটা হলেও হাসিখুশি মেজাজের: অনেকেই আছেন অনেক গম্ভীর মেজাজের হয়ে থাকেন কিন্তু তার মধ্যে কিছুটা হলেও রসবোধ থাকে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থেই একেবারে গম্ভীর তাদের সাথে সংসার করা এবং সময় কাটানো বেশ কঠিন।

আপনার সাথে মনের মিল: বিয়ের আগেই দেখে নিন আপনাদের মধ্যে মিলটা কতোখানি। আপনারা কি একই ধরণের চিন্তা করেন কিনা বা একই আদর্শে বিশ্বাসী কিনা। কারণ একজন অনেক খোলামেলা মনের অধিকারী হয়ে নিচু মনমানসিকতার মানুষের সাথে সংসার টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।

সত্যবাদী : নারীরা সত্যবাদী পুরুষদের বেশি পছন্দ করেন। যদি দীর্ঘ সম্পর্কে জড়াতে চান সঙ্গিনীর সঙ্গে কখনো সত্য গোপন করবেন না। অথবা কোনো কিছু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সঙ্গিনীকে বিব্রত করবেন না। আপনি অপছন্দনীয় কিছু একটা করে ফেললেও তা লুকোনো হবে আপনার জন্যে আরো বড় ভুল। কারণ আপনার দোষের যদি কোনো কিছু থাকে তা সত্যি করে বলাটাকে মেয়েরা আরো বেশি পছন্দ করেন। তাই নারীদের সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পাত্র কতটুকু সত্যবাদী তা পরখ করে নেয়াই শ্রেয়।

আর্থিক নিরাপত্তা: প্রতিটি নারীই কর্মঠ সঙ্গী পছন্দ করেন, এযুগে উচ্চ শিক্ষিত অনেক নারীই কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন,  তারপর ও বেশীর ভাগ নারীই চান নিজের জীবন সঙ্গী অবশ্যই কর্মঠ হবেন।  তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক নারীই সঙ্গী বাছাইয়ে সরকারী চাকুরীজীবীদের বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।  আবার শহরের বেড়ে উঠা সচ্ছল ও উচ্চ শিক্ষিত নারীদের মাঝে উন্নত দেশে প্রতিষ্ঠিত অথবা প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী, বহুজাতিক কোম্পানীর চাকুরীজীবীদের পছন্দের প্রধান্য লক্ষ্য করা যায়।  আবার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে খুব বেশী চাহিদা না থাকলেও শিক্ষিত ও কর্মক্ষম পুরুষ তাদের প্রথম পছন্দ হয়, হোক সে সরকারী, বেসরকারী চাকুরে কিংবা প্রবাসী; সেখানে আর্থিক নিরাপত্তার বিয়য়টি ব্যাপক প্রাধান্য পায়। এজন্য কর্মক্ষম, স্বাবলম্বী ও ব্যাক্তিত্ববান একজন পুরুষই প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

পোশাকে রুচিশীল : বিশেষজ্ঞদের মতে, রুচিহীন পোশাকের পুরুষদের কোনো কিছুই মেয়েদের আকর্ষণ করে না। সাধারণত চলতি ফ্যাশন নারীদের কাছে প্রিয়। তাই একটু ফ্যাশনেবল থাকতে হবে। ভালো পোশাকই আপনার রুচির পরিচায়ক।

চুলে স্টাইলিশ : চুলের ভালো একটা কাটিং আপনার চেহারা বদলে দেবে অনেকখানি। চেহারার আদলের সঙ্গে মানানসই চুলের ছাঁট নারীদের কাছে আপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। তাদের সামনে আপনার উপস্থিতির ওপর চুলের ছাঁট অনেক গুরুত্ব রাখে।

কথা বলার স্টাইল : আপনার স্টাইলেই কথা বলুন। অন্যকে একদম নকল করবেন না। কথা বলার সময় অপ্রয়োজনীয় কিছু কথা একদম বলবেন না। বারবার যেন আঞ্চলিকতার টান কথার মাঝে চলে না আসে। শুদ্ধ সহজ ও সাবলীল ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভালোভাবে কথা বলতে জানলে আপনার সঙ্গিনী শুধু আপনার কথা শোনার প্রতীক্ষায় থাকবেন।

উপহার দেয়া : মেয়েরা হঠাৎ করে পছন্দনীয় গিফট পেয়ে চমকে যেতে মারাত্মক ভালোবাসেন। চকোলেট, সুন্দর কথা লেখা গিফট কার্ড বা ফুল এগুলোর কথা নিশ্চয় সবাই জানেন। আরো কি কি জিনিস রয়েছে তাদের পছন্দের তালিকায় সেগুলো কৌশলী হয়ে জেনে নিতে হবে। তাকে হঠাৎ করে সুসজ্জিত কিছু একটা উপহার দিয়ে চমকে দেয়া খুব পছন্দ করেন। দেখবেন, আপনার কাছ থেকে এমনই একটা গিফট আশা করেছিলেন আপনার সঙ্গিনী।

কেউই চান না তার বিবাহবিচ্ছেদ হোক। মানুষ যখন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন সারাজীবন একসাথে একই ছাদের নিচে বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু একে অপরকে বুঝতে না পারা এবং ভুল বোঝাবুঝি বা সন্দেহের কারণে হয়তো বিবাহের সম্পর্কে টানাপোড়নের সৃষ্টি হয়। এবং বেশি টানাপোড়নের কারণে অনেক সময় না চাইতেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। তাই বিয়ের আগেই ভাবুন। পাত্র  পছন্দের সময় মাথায় রাখুন ভবিষ্যতের ব্যাপারগুলো। পাত্র পছন্দ হলেও মিলিয়ে দেখুন তার কিছু গুণ রয়েছে কিনা যা ভবিষ্যতে আপনাদের দাম্পত্যজীবন সুখী করে তুলবে।

প্রকাশ করেছেন

Best Marriage Media Bangladesh

Best Marriage Media in Bangladesh | Bibahabd is the Leading Bangladeshi Matrimony website, Provides online and offline matchmaking service for marital relationship.